সড়ক-মহাসড়কে 'বন্যা বিপর্যয়'-মেরামতে ১১৮ কোটি টাকা চেয়েছে সড়ক ও জনপথ by পার্থ সারথি দাস

এবারের 'বর্ষা বিপর্যয়' ঠেকাতে মহাসড়ক ও সড়কে তৎপর হয়ে উঠেছিল যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। কিন্তু বর্ষা বিপর্যয়ের আগেই দেশের বিভিন্ন সড়কে 'বন্যা বিপর্যয়' দেখা দিয়েছে। চলতি বর্ষায় দেশের ২৪টি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মহাসড়কে সার্বক্ষণিক যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে মন্ত্রণালয়ের ৩২ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।


পরিস্থিতি তদারকির জন্য মন্ত্রণালয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হলেও সমন্বয়হীনতার অভাবে সেটি নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় রয়েছে। বর্ষা বিপর্যয় ঠেকাতে এমনিতেই অর্থের সংস্থান নেই, তার ওপর দেশের সাত জেলার বন্যাবিধ্বস্ত ৭২টি সড়ক মেরামতেই ১১৮ কোটি টাকা চেয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন আগে পাহাড়ি ঢল ও অতিবর্ষণের কারণে সৃষ্ট বন্যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ব্যবস্থা যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে বাঁধ ভেঙে সড়ক তলিয়ে গেছে, ভেঙে গেছে সেতু। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর চট্টগ্রামসহ দেশের সাত জেলায় ৭২টি সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করেছে। অন্য জেলাগুলো হচ্ছে- কক্সবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও কুড়িগ্রাম। চট্টগ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়ক-সড়কের মধ্যে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যানবাহন চলাচলের জন্য পুরোপুরি উপযোগী করতে এই মহাসড়ক মেরামতের জন্য অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৭০ লাখ টাকা।
অধিদপ্তরের সিলেট জোন থেকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের চার জেলায় সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১২টি সড়ক। শুধু সিলেট জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৯টি সড়ক। এ ছাড়া সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে একটি করে সড়ক বিধ্বস্ত হয়। এর মধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কও রয়েছে। সিলেটে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো হচ্ছে- সারি-গোয়াইনঘাট, দরবস্ত-কানাইঘাট-শাহবাগ, সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ, বিমানবন্দর-বাদাঘাট, সিলেট-গোলাপগঞ্জ-চারখাই সড়ক।
সওজের তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রামে আটটি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক হলো ছয়টি, যার মধ্যে রাজীবপুর-রৌমারী-দাঁতভাঙ্গা সড়কের অবস্থা বেশি কাহিল। এ সড়কের এক জায়গায় ৩০ মিটার অংশ বানের পানির তোড়ে ভেসে গেছে। এখানে তৈরি করা হয়েছে বাঁশের সেতু। কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আপাতত আমরা সড়ক মেরামতের জন্য এক কোটি টাকা চেয়েছি। আশা করছি, শিগগিরই তা পাব। এখন এ সড়কের এই অংশ দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।' সওজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, একইভাবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন সড়কও মেরামত করতে হবে জরুরি ভিত্তিতে।
গত ১ জুলাই থেকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে চালু হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এখানে অভিযোগ গ্রহণ ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। এ জন্য গঠিত মনিটরিং কমিটির বৈঠক গত রবিবার মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কুড়িগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলার সড়ক পরিস্থিতি স্থানীয় সওজ অধিদপ্তর থেকে এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জানানো হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্ব পালন নিয়ে সমন্বয়ের অভাব লক্ষ করা গেছে। গত সোমবার দুপুরে মন্ত্রণালয়ে গেলে কর্মকর্তাদের অনেকেই বলতে পারেননি নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রটি কোন কক্ষে। নির্দিষ্ট ৮০৫ নম্বর কক্ষে গেলে দুপুর আড়াইটায় দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশিত প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফরহাদ মাহমুদকে পাওয়া যায়নি। তাঁর সঙ্গে একপর্যায়ে দেখা হলে তিনি বলেন, 'কোনো নির্দেশ আমি পাইনি।' তাঁর কী কাজ সেটাও তিনি বলতে পারেননি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্ব পালনরত মন্ত্রণালয়ের হিসাবরক্ষক মো. সেলিম কালের কণ্ঠকে বলেন, আজ বিভিন্ন স্থান থেকে চারটি ই-মেইল এসেছে। তিনি জানান, বন্যা ছাড়াও সাধারণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত খুলনা, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক জরুরি সংস্কারের জন্যও আবেদন আসছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে।

No comments

Powered by Blogger.