সরকারি জায়গায় মার্কেট-ক্ষমতার দাপটে জনস্বার্থ উপেক্ষিত
গণতন্ত্রে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার বন্দোবস্ত না থাকলেও সরকারি দলের এক শ্রেণীর নেতার কর্মকাণ্ড দেখে তা কিন্তু মনে হচ্ছে না। 'পুরান ঢাকার সরকারি জমি দখল করে মার্কেট' শিরোনামে বুধবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সরকারি দলের নেতাকর্মীদের আদর্শ ও নৈতিকতাবর্জিত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয়।
মনে হয়, তারা ধরে নিয়েছে যে, তাদের আর জনগণের সামনে ভোটের জন্য দাঁড়াতে হবে না, তাই 'যা পার কামাই করে নাও' মানসিকতার দৃশ্যমান প্রকাশ দেখা যায়। এ কারণেই পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকার শরৎগুপ্ত চৌধুরী লেনে দুটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নামে সরকারি জায়গা দখল করে সরকারি দলের কিছু নেতাকর্মী মার্কেট নির্মাণ এবং মোটা অঙ্কের সেলামির বিনিময়ে সেসব দোকান ভাড়া দিতে লজ্জাবোধ করেন না। অথচ এই জায়গাটিকে চারদলীয় ক্যাডারদের দখলমুক্ত করে সেখানে একটি পার্ক নির্মাণ করে দিয়েছিল বিগত তত্ত্বাধায়ক সরকার। আর স্কুলের সামনে মার্কেট না হয়ে পার্ক হবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই পার্ক ভেঙে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সরকারি জায়গাটি দখলে নিয়ে মার্কেট নির্মাণ করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এর সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্যের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আর আশ্চর্যের বিষয় হলো, জায়গাটিতে এ ধরনের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করার জন্য এলাকাবাসী অভিযোগ করার পরও মার্কেট তৈরি বন্ধ করা যায়নি। জেলা প্রশাসন নিশ্চয়ই বিষয়টি অবগত হয়ে থাকবে। কিন্তু তিনিও জনস্বার্থের কথা বিবেচনা না করে সরকারি দল-ভজা নীতি গ্রহণ করে অবৈধ দখলকে প্রকারান্তরে উৎসাহিত করেছেন। সরকারি দলের কর্মীদের আয়-রোজগারের তো অনেক উপায় আছে। তাই বলে জনস্বার্থ তথা হাজার হাজার শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীর জন্য উন্মুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার পরিবর্তে সেখানে স্থায়ী ব্যবস্থার মতো করে মার্কেট বসানো নিশ্চয়ই শুভবুদ্ধির পরিচায়ক নয়। যারা মার্কেট বানিয়েছেন এবং যারা সেলামি দিয়ে সেখানে ব্যবসা করছেন তাদের সবারই বোঝা উচিত, ক্ষমতা যেহেতু চিরস্থায়ী নয় তাই মার্কেটটিও স্থায়ী স্থাপনা হতে পারে না। জনস্বার্থেই সরকার মার্কেটটি অবিলম্বে তুলে দিয়ে নাগরিকদের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখাবেন, সেটাই প্রত্যাশিত।
No comments