ছাত্ররাজনীতি কি অধিকার আদায়ের অন্তরায় by শামীম রাহমান

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর ধরে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে। সাময়িকভাবে এই নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হলেও তিন বছরেও সেই 'সাময়িক' মেয়াদ শেষ হয়নি। ফলে ছাত্রছাত্রীরা তাদের বিভিন্ন দাবি জোরালোভাবে প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করতে পারছে না।


এক সময় ছাত্র সংগঠনগুলো শিক্ষার্থীদের নানা অধিকার ও স্বার্থ নিয়ে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন করত। কিন্তু এখন আর সেসবের দেখা মেলে না। কোনো আন্দোলন সংগঠিত করতে গেলেই প্রশাসন বাধা দিয়ে জানায়, ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ। প্রশাসন বলছে, শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তাতে রাজনৈতিক সংঘাত বন্ধ হয়নি। ওই নিষেধাজ্ঞার পর এ পর্যন্ত তিন ছাত্রের তাজা প্রাণ ঝরে গেছে এই ক্যাম্পাসে। অসংখ্য সংঘাতে আহতের তালিকা তো আরও দীর্ঘ।
২০০৯ সালের ১১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর চৌধুরী মো. জাকারিয়া এক নোটিশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি সাময়িকভাবে বন্ধের ঘোষণা দেন। দুটি ছাত্র সংগঠনের মারমুখী অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে এমন নির্দেশ এলেও পরে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কর্তৃক গৃহীত হয়। সেই থেকে এই নিষেধাজ্ঞা এখনও পর্যন্ত বহাল রয়েছে। এতে করে প্রশাসনের সুবিধাই হয়েছে নানামুখী, শিক্ষা ব্যয় বাড়লেও এখন আর জোরালো আন্দোলন গড়ে ওঠে না। এমনিতেই অকার্যকর ছাত্র সংসদের কারণে বছর বছর ধরে ছাত্র অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তবুও এই নিষেধাজ্ঞার আগে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, বিশেষ করে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্রছাত্রীদের অধিকার নিয়ে কথা বলত, আন্দোলন করত। এখন আর সেই অবস্থাও নেই। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করার মতো। নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগেও অসমতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে ক্যাম্পাসে। সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন কোনো কর্মসূচি নিলে তাতে কোনো বাধা আসে না। তারা প্রায়ই নানা ইস্যুতে মিছিল-সমাবেশ করে। কিন্তু অন্য কোনো সংগঠন সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করলেই নানাভাবে হেনস্তা করা হয়। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে তারা বিভিন্ন দাবি আদায়ের জন্য একত্র হতে পারছে না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক অবস্থা বজায় রাখতে ছাত্ররাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আন্তরিক হতে হবে। শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ করে দিতে হবে। এ জন্য ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পাশাপাশি অবিলম্বে ছাত্র সংসদের নির্বাচন দেওয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে।
য় শামীম রাহমান :শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
shamimmcj10@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.