ক্ষয়ে যাচ্ছে মানবিক মূল্যবোধ

সামাজিক অবক্ষয় মানুষের শান্তি কেড়ে নিচ্ছে। মানবিক মূল্যবোধও প্রশ্নের মুখে আজ। জীবন যেন খেলার বিষয়। প্রায়ই এমন মনে হয়। জীবনকে জীবন হিসেবে গণ্য করার বোধই কি হারিয়ে যাবে সমাজ থেকে? চিন্তা হয় বয়সে তরুণ এমন অনেকের অনাকাঙ্ক্ষিত গন্তব্য দেখে।


অথচ এ তরুণদেরই হাল ধরার কথা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের। দেশ ও সমাজকে সঠিক পথে চালিত করতে পারবে কি তারা? তারুণ্যের বেহাল অবস্থা কম নাকি বেশি, এ বিতর্ক না করে অন্তত প্রশ্ন তো করা যায়_কোন কারণে তারা বখাটে হয়? কোন কারণে তাদের একটি অংশ প্রেমের নামে নারীকে মানুষের মর্যাদা দেওয়া থেকে বিরত থাকে, এমনকি নিজের হীন আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটাতে দ্বিধা করে না?
বখাটের অপমান সহ্য করতে না পেরে গাজীপুরের সিংগারদিঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী শারমিন সুলতানা ইতি গলায় শাড়ি পেঁচিয়ে আত্মহত্যার মাধ্যমে দুনিয়ার ইতি টেনেছে। সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে কালের কণ্ঠে। একই পৃষ্ঠায় ঠিক পাশের কলামেই আরেকটি সংবাদ চোখে পড়ে টুম্পার লাশ হওয়ার। ইতির জীবনকে ইতি টানার পেছনে বখাটের নির্যাতন থাকলেও টুম্পার ব্যাপারটি তার উল্টো। অভিযোগ করা হয়েছে, রাজধানীর সেগুনবাগিচার মেয়ে আয়েশা চৌধুরী টুম্পাকে খুন করেছে তারই প্রেমিক। তাও আবার ভালোবাসা দিবসে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে। কী দুর্বিষহ! কথিত প্রেমিক আকাশকে যে আকাশের মতো বিশাল বলে মনে করত, সেই বিশালত্বই কি দেখাল সে? আমরা একের পর এক এসব ঘটনা শুধু দেখছিই। এ যেন দিবা-রাত্রির মতো অবশ্যম্ভাবী কোনো বিষয়। এতটা খারাপ পরিস্থিতি কিন্তু ১০-২০ বছর আগে ছিল না। অন্তত নাটোরের শিক্ষক খুন হওয়া, ফরিদপুরের মা খুন হওয়ার মতো ঘটনা দু-চার বছরেও একবার ঘটত না। কিন্তু হালে এ বিস্তৃতির কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। কারণ এসব ঘটনা আইন করে বন্ধ করা যাবে না। এগুলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সূচক বা চিহ্ন নয়। একান্তই ব্যক্তিগত এবং পরিবারসৃষ্ট বিষয়। কিন্তু এর পরিণতি ভোগ করতে হয় সমাজকে। বৃহত্তর অর্থে গোটা তরুণ সমাজ ও দেশের ভবিষ্যৎও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আইনের দুর্বলতা দূর করতে না পারলে যেমন যৌন হয়রানি রোধ করা যাবে না, তেমনি সামাজিক পরিবর্তন সম্ভব না হলেও এ থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দ্রুত আইনে বিচার করার ব্যবস্থা করার সুপারিশও কেউ কেউ করেন। তরুণ সমাজকে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমেও এ অন্ধকার থেকে সরিয়ে আনা যেতে পারে। সর্বোপরি মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে সমাজের মধ্যে। তাহলেই কেবল সম্ভাবনা রয়েছে ইতি কিংবা তার মতো মেয়েদের আত্মহত্যার হাত থেকে রক্ষা করার।

No comments

Powered by Blogger.