৬৪টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি লোকসান দিয়েই চলেছে by অরুণ কর্মকার
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) আওতাধীন সারা দেশের ৭০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) মধ্যে মাত্র পাঁচটি লাভজনক। একটির আয়-ব্যয় সমান সমান। বাকি ৬৪টি সমিতি বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে চলেছে।
লাভজনক পাঁচটি সমিতি হচ্ছে ঢাকা-১, নরসিংদী-১ ও ২, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ। এ ছাড়া ময়মনসিংহ পবিসের আয়-ব্যয় প্রায় সমান সমান।
লাভজনক পাঁচটি সমিতি হচ্ছে ঢাকা-১, নরসিংদী-১ ও ২, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ। এ ছাড়া ময়মনসিংহ পবিসের আয়-ব্যয় প্রায় সমান সমান।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ও পবিসের কয়েকটি সূত্র জানায়, লোকসানের কারণে কোনো কোনো পবিস ব্যাংকে গচ্ছিত স্থায়ী আমানত (এফডিআর) ভাঙিয়ে নৈমিত্তিক রক্ষণাবেক্ষণ ও বেতন-ভাতা মেটাচ্ছে। পবিসগুলোর গড় পদ্ধতিগত লোকসান (সিস্টেম লস) এখন সাড়ে ১৩ শতাংশ হিসাব করা হলেও কোনো কোনোটিতে তা ২৫ শতাংশের বেশি।
জানতে চাইলে আরইবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পাইকারি বিদ্যুতের দাম যে হারে বাড়ানো হয়েছে, গ্রাহকের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সে হারে দাম বাড়ানো হয়নি। ফলে বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে আরইবির গড় লোকসান ৪২ পয়সা। প্রতি মাসে মোট লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া আরইবির ৬৫ শতাংশ গ্রাহক আবাসিক। এর মধ্যে আবার অধিকাংশ ‘লাইফ লাইন’ গ্রাহক। অর্থাৎ তাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ মাসে ১০০ ইউনিটের কম। এদের কাছ থেকে বিদ্যুতের দাম পাওয়া যায় সর্বনিম্ন স্লাবে। ১২ শতাংশ আছে মৌসুমি সেচ গ্রাহক। যেসব সমিতির এলাকায় যথেষ্ট সংখ্যক শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহক আছেন, সেগুলোই শুধু লাভজনক।
অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদ্যুতের পাইকারি দাম বৃদ্ধি ছাড়াও কয়েক বছর কোনো উন্নয়ন প্রকল্প না থাকা, অত্যধিক লোডশেডিং ও পবিসগুলোর ব্যয় বৃদ্ধিও লোকসানের কারণ। আরইবির বিতরণ এলাকাগুলোয় দিনের অধিকাংশ সময় লোডশেডিং থাকায় ট্রান্সফরমার, উপকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি প্রভৃতি কম লোডে চলায় পদ্ধতিগত লোকসান বাড়ে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পবিসগুলোর পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ (ওঅ্যান্ডএম) ব্যয় কমিয়ে আরও কয়েকটি পবিসকে লাভজনক করার সুযোগ আছে।
এ ছাড়া লোকসানের অরেকটি বড় কারণ হচ্ছে বাণিজ্যিক বিবেচনাকে প্রাধান্য না দিয়ে অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিতরণ লাইন স্থাপন। রাজনৈতিক চাপে আরইবি এ ধরনের লাইন করতে বাধ্য হয়। প্রতিটি সরকারের মতো বর্তমান সরকারও ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মন্ত্রী ও সাংসদেরা নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় নতুন বিদ্যুৎসংযোগ ও বিতরণ লাইন স্থাপনের জন্য তদবির শুরু করেন। ফলে প্রচুর রাজনৈতিক লাইন হচ্ছে।
আরইবি গত অর্থ বছরে সাত হাজার কিলোমিটার লাইন স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছিল। অথচ স্থাপন করা হয়েছে প্রায় নয় হাজার কিলোমিটার। গত অর্থবছরে আরইবির ১২টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন ছিল। এর মধ্যে সাতটিই বিতরণ লাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প। অথচ আরইবির প্রায় দুই লাখ ৪০ হাজার কিলোমিটার বিদ্যমান বিতরণ লাইনের অন্তত এক-চতুর্থাংশ বেশির ভাগ সময় থাকে বিদ্যুৎহীন। অনেক এলাকায় লাইন স্থাপন করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা হয়েছে।
আরইবির চেয়ারম্যান অবশ্য রাজনৈতিক বিবেচনায় লাইন করার বিষয়টি পুরোপুরি স্বীকার করেননি। এ বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ১০ শতাংশ লাইন জরুরি প্রয়োজন ও বিশেষ বিবেচনায় তৈরির জন্য রাখা হয়। এর প্রয়োজন আছে। এ ক্ষেত্রেও বাণিজ্যিক বিষয়টি বিবেচনা করা হয় বলে তিনি দাবি করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আরইবির বিতরণ অবকাঠামো সম্প্রসারণের মৌলিক পূর্বশর্ত হচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে ‘না লাভ, না ক্ষতি’র নীতি অনুসরণ করা। কোনো এলাকায় তাদের বিতরণ অবকাঠামো সম্প্রসারণের আগে সংশ্লিষ্ট এলাকায় একটি জরিপ চালানোর কথা। এই জরিপের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিতরণ অবকাঠামো সম্প্রসারণের ব্যয়, বিভিন্ন শ্রেণীর সম্ভাব্য সর্বোচ্চ গ্রাহকসংখ্যা নির্ধারণ, তাদের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করে সম্ভাব্য আয়, বিদ্যুৎ বিতরণের ফলে ওই এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নের সম্ভাবনা ও তার আর্থ-সামাজিক মূল্যায়ন করার কথা।
যত দিন এ ধরনের জরিপের ভিত্তিতে আরইবির অবকাঠামো সম্প্রসারণ করা হতো, তত দিন পবিসগুলোর দীর্ঘমেয়াদি লোকসানের কোনো প্রশ্নই ওঠেনি। এরপর মন্ত্রী-সাংসদদের প্রভাব ও কোটায় বিদ্যুৎ লাইন দেওয়া শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে এমনও নজির আছে যে দুই কিলোমিটার লাইন তৈরি করে ২২ জন গ্রাহককে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে। ফলে লাইন হলেও আরইবির আয় বাড়েনি।
বর্তমানে আরইবির প্রতি কিলোমিটার লাইনে গ্রাহকসংখ্যা গড়ে মাত্র ৩২। তার পরও বিভিন্ন প্রকল্পের অধীন পর্যায়ক্রমে মোট ৪৭ হাজার ৫০০ কিলোমিটার লাইন তৈরির কাজ চলছে। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক বিবেচনা প্রধান না হলে পবিসগুলো লোকসানই থাকবে বলে আরইবির সূত্রগুলো জানায়।
জানতে চাইলে আরইবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পাইকারি বিদ্যুতের দাম যে হারে বাড়ানো হয়েছে, গ্রাহকের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সে হারে দাম বাড়ানো হয়নি। ফলে বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে আরইবির গড় লোকসান ৪২ পয়সা। প্রতি মাসে মোট লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া আরইবির ৬৫ শতাংশ গ্রাহক আবাসিক। এর মধ্যে আবার অধিকাংশ ‘লাইফ লাইন’ গ্রাহক। অর্থাৎ তাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ মাসে ১০০ ইউনিটের কম। এদের কাছ থেকে বিদ্যুতের দাম পাওয়া যায় সর্বনিম্ন স্লাবে। ১২ শতাংশ আছে মৌসুমি সেচ গ্রাহক। যেসব সমিতির এলাকায় যথেষ্ট সংখ্যক শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহক আছেন, সেগুলোই শুধু লাভজনক।
অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদ্যুতের পাইকারি দাম বৃদ্ধি ছাড়াও কয়েক বছর কোনো উন্নয়ন প্রকল্প না থাকা, অত্যধিক লোডশেডিং ও পবিসগুলোর ব্যয় বৃদ্ধিও লোকসানের কারণ। আরইবির বিতরণ এলাকাগুলোয় দিনের অধিকাংশ সময় লোডশেডিং থাকায় ট্রান্সফরমার, উপকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি প্রভৃতি কম লোডে চলায় পদ্ধতিগত লোকসান বাড়ে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পবিসগুলোর পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ (ওঅ্যান্ডএম) ব্যয় কমিয়ে আরও কয়েকটি পবিসকে লাভজনক করার সুযোগ আছে।
এ ছাড়া লোকসানের অরেকটি বড় কারণ হচ্ছে বাণিজ্যিক বিবেচনাকে প্রাধান্য না দিয়ে অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিতরণ লাইন স্থাপন। রাজনৈতিক চাপে আরইবি এ ধরনের লাইন করতে বাধ্য হয়। প্রতিটি সরকারের মতো বর্তমান সরকারও ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মন্ত্রী ও সাংসদেরা নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় নতুন বিদ্যুৎসংযোগ ও বিতরণ লাইন স্থাপনের জন্য তদবির শুরু করেন। ফলে প্রচুর রাজনৈতিক লাইন হচ্ছে।
আরইবি গত অর্থ বছরে সাত হাজার কিলোমিটার লাইন স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছিল। অথচ স্থাপন করা হয়েছে প্রায় নয় হাজার কিলোমিটার। গত অর্থবছরে আরইবির ১২টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন ছিল। এর মধ্যে সাতটিই বিতরণ লাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প। অথচ আরইবির প্রায় দুই লাখ ৪০ হাজার কিলোমিটার বিদ্যমান বিতরণ লাইনের অন্তত এক-চতুর্থাংশ বেশির ভাগ সময় থাকে বিদ্যুৎহীন। অনেক এলাকায় লাইন স্থাপন করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা হয়েছে।
আরইবির চেয়ারম্যান অবশ্য রাজনৈতিক বিবেচনায় লাইন করার বিষয়টি পুরোপুরি স্বীকার করেননি। এ বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ১০ শতাংশ লাইন জরুরি প্রয়োজন ও বিশেষ বিবেচনায় তৈরির জন্য রাখা হয়। এর প্রয়োজন আছে। এ ক্ষেত্রেও বাণিজ্যিক বিষয়টি বিবেচনা করা হয় বলে তিনি দাবি করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আরইবির বিতরণ অবকাঠামো সম্প্রসারণের মৌলিক পূর্বশর্ত হচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে ‘না লাভ, না ক্ষতি’র নীতি অনুসরণ করা। কোনো এলাকায় তাদের বিতরণ অবকাঠামো সম্প্রসারণের আগে সংশ্লিষ্ট এলাকায় একটি জরিপ চালানোর কথা। এই জরিপের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিতরণ অবকাঠামো সম্প্রসারণের ব্যয়, বিভিন্ন শ্রেণীর সম্ভাব্য সর্বোচ্চ গ্রাহকসংখ্যা নির্ধারণ, তাদের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করে সম্ভাব্য আয়, বিদ্যুৎ বিতরণের ফলে ওই এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নের সম্ভাবনা ও তার আর্থ-সামাজিক মূল্যায়ন করার কথা।
যত দিন এ ধরনের জরিপের ভিত্তিতে আরইবির অবকাঠামো সম্প্রসারণ করা হতো, তত দিন পবিসগুলোর দীর্ঘমেয়াদি লোকসানের কোনো প্রশ্নই ওঠেনি। এরপর মন্ত্রী-সাংসদদের প্রভাব ও কোটায় বিদ্যুৎ লাইন দেওয়া শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে এমনও নজির আছে যে দুই কিলোমিটার লাইন তৈরি করে ২২ জন গ্রাহককে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে। ফলে লাইন হলেও আরইবির আয় বাড়েনি।
বর্তমানে আরইবির প্রতি কিলোমিটার লাইনে গ্রাহকসংখ্যা গড়ে মাত্র ৩২। তার পরও বিভিন্ন প্রকল্পের অধীন পর্যায়ক্রমে মোট ৪৭ হাজার ৫০০ কিলোমিটার লাইন তৈরির কাজ চলছে। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক বিবেচনা প্রধান না হলে পবিসগুলো লোকসানই থাকবে বলে আরইবির সূত্রগুলো জানায়।
No comments