হারিয়ে যেতে নেই মানা by প্রণব বল

উচ্ছল প্রাণবন্ত ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একদল অভিযাত্রী। বাঁধনহারা বেণির মতো তারা আজ উড়ে বেড়াচ্ছে ফয়’স লেকের টিলা-হ্রদ। লক্ষ্যটা জিজ্ঞেস করতেই কাঠখোট্টা জবাব, ‘লক্ষ্যটক্ষ্য কিছু নয়। বাবা-মায়ের ইচ্ছায় এতটুক আসা। তাঁদের ইচ্ছায় ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হব। নইলে অন্য কিছু।’


জবাবটা ভাববার উদ্রেক করে বৈকি। আমাদের পরিবার ও সমাজ এখনো নির্ধারণ করে দেয়, কে কোন বিষয় নিয়ে পড়বে। ভবিষ্যতে কার কী লক্ষ্য। তাই সেই অভিযাত্রী দল চাপিয়ে দেওয়া এসব লক্ষ্য থেকে কিছু সময়ের জন্য একটু দূরে থেকে নিজেদের সময়টাকে নিজের মতো করে কাটাতে আগ্রহী হয়েছে। অন্য কিছুতে সময়টাকে নষ্ট করতে চায়নি। তার চেয়েও ঢের ভালো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, ঘুরে বেড়ানো কিংবা রাইডে চড়ে বসা। আজ যেন কোথাও তাদের হারিয়ে যেতে নেই মানা।
প্রথম আলো এসএসসি জিপিএ-৫ কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান তাদের এ সুযোগ করে দিয়েছে। হ্রদ আর পাহাড়ঘেরা ফয়’স লেকের মনোরম পরিবেশ। এমন জায়গায় কে বা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববে। বর্তমান নিয়ে হারিয়ে যাওয়ার এই তো সময়। তাই তো তারা কলকাকলিতে মুখর।
এ জন্য প্রস্তুতিও তাদের কম ছিল না। কে কীভাবে আসবে। কোথায় থাকবে। কোথায় একসঙ্গে মিলিত হবে। সদ্য মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনো বন্ধুদের কোথায় খুঁজে পাবে, বন্ধুকে না-বলা কথাগুলো কীভাবে বলবে—এসব হিসাব-নিকাশ তো আজই করতে হবে। গত রোববার এভাবে প্রাণের মেলা বসেছিল ফয়’স লেকে। এই যেমন সেন্ট প্লাসিডস স্কুলের সমরশ্বর সিংহ বলে ফেলল, ‘আমরা একসঙ্গে অনেক বন্ধু স্কুলে ছিলাম। কলেজে যাওয়ার পর একেকজন একেকটা জায়গায়। সেখানেও অনেক নতুন বন্ধু। তবু পুরোনোদের এখানে এসে পেলাম।’
সেই বিনি সুতোর টান থেকেই সেন্ট প্লাসিডসের জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীরা সাদা টি-শার্টে নিজেদের মুড়িয়ে নিয়েছিল। নতুন বন্ধুরা পাঁচ বছরের পুরোনোদের স্থান এখনো দখল করতে পারেনি। তাই পুরোনো সেই দিনের দিকে তাদের ফিরে চাওয়া।
সমরশ্বরের বন্ধু আওসাফ, সুদীপ্ত সমস্বরে বলল, ‘এত দিন একই ক্লাসে ছিলাম। এখন ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। তাই এখানে এসে সবাইকে পেয়ে ভালো লাগছে।’ ফয়’স লেকের হ্রদের ওপর অনেকটা ভাসমান সেই গোলচত্বরটাতেই ছিল সেন্ট প্লাসিডস স্কুলের শিক্ষার্থীদের আড্ডা।
কলেজিয়েট স্কুলের ছেলেদের তো তর সইছিল না। তারা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছে। ইঞ্জিননৌকায় চড়ে হ্রদ ভ্রমণ করবে। যাবে ওয়াটার ওয়ার্ল্ডেও। সবার পরনে কালো টি-শার্ট। তাতে আবার সাদা হরফে কী কী লেখাও। দলের একজন মিনহাজ; জানিয়ে দিল, ‘আমরা এখানে ৬০ জনের মতো এসেছি। আসার আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল, কে কীভাবে আসব তা। তাই সবাই কালো টি-শার্ট পরেছি।’
মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ের ছেলেদের পরনে ছিল ধুসর টি-শার্ট। এদিক-ওদিক ছোটাছুটিতে সবাই ব্যস্ত। কথা বলারও সময় নেই; বরং বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর রাইড নিয়ে মেতে থাকাটাই বিভিন্ন স্কুল-উত্তীর্ণ ছেলেমেয়েদের কাছে প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। প্রাণবন্ত একেকটা পাখি যেন ডানা মেলে আপন মনে উড়ছে, প্রকৃতির সান্নিধ্যে।

No comments

Powered by Blogger.