রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের দায় নয় by মাসুদ ফরহান

মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ওপর মগ-রাখাইনরা চালাচ্ছে ভয়াবহ জুলুম আর নির্যাতন। অধিকারবঞ্চিত আর জন্মভূমি থেকে এক প্রকার বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের ঠাঁই যেন মিলছে না খোলা আকাশের শামিয়ানার নিচেও। নাফ নদীর স্রোতে ভাসছে রোহিঙ্গা নারীর বিকৃত লাশ।


রোহিঙ্গাদের আর্তনাদে প্রকম্পিত হচ্ছে অতলান্ত নাফ নদীর দু'কূল। রাখাইনদের নির্যাতন থেকে বাদ পড়েনি বৃদ্ধ থেকে রুগ্ণ, নারী থেকে শিশু পর্যন্ত। একদিকে রোহিঙ্গাদের ওপর রাখাইনরা খুন, ধর্ষণসহ নানা রকম নির্যাতন করছে, অন্যদিকে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চালানো হচ্ছে লুটপাট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের বেশকিছু ছবি দেখে মনে হচ্ছে সেখানকার এই জাতিগত দাঙ্গা হালাকু খান আর চেঙ্গিসীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। নিজ দেশের প্রশাসন অসহায় রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা দেওয়ার পরিবর্তে তাদের তুলে দিচ্ছে শত্রু মগ-রাখাইনদের হাতে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রাণ বাঁচাতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী, শিশু, বৃদ্ধ লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়গুলোতে। আর কিছু রোহিঙ্গা কাঠের নৌকা বেয়ে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে আশ্রয় চাইছে বাংলাদেশের কাছে।
আশ্রয় দিয়েছেও বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল এ দেশ সরকারি ও বেসরকারিভাবে চার লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আসছে বহুদিন ধরে। এ খবর নিশ্চয় জানে সারাবিশ্ব। কিন্তু এ খবর তাদের নিশ্চয় জানা নেই, আশ্রয় দেওয়া লাখ লাখ অভাবী রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে গিয়ে জড়িয়ে পড়ছে চুরি-ডাকাতিসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপে। ইতিমধ্যে ব্যাহত হয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারের সামাজিক নিরাপত্তা। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের কক্সবাজার অঞ্চলের শ্রমবাজার দখল করে নিচ্ছে তারা। অনেকে আবার অবৈধভাবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করে পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। সেখানেও তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় দুর্নাম হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের। সার্বিকভাবে এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ না হয়ে দাঁড়িয়েছে অভিশাপ হিসেবে।
এ অভিশাপ সত্ত্বেও বর্তমানে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতনের পর আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী কিছু সংস্থা ও রাষ্ট্র বাংলাদেশে আবার আরও রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে বলছে। এটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আন্তর্জাতিক মহলসহ মানবাধিকারের বুলি আওড়ানো শক্তিশালী এসব সংগঠন গণমাধ্যমে বিবৃতি দেওয়া ছাড়া আর কি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পেরেছে? না, পারেনি। বরং তারা অসহায় রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি না করে উল্টো বাংলাদেশের ঘাড়ে রোহিঙ্গাদের তুলে দিতে চাপ সৃষ্টি করছে। এটি কারও কাম্য হতে পারে না। এতে বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া নয়, বরং সময় হয়েছে বাংলাদেশে বছরের পর বছর ধরে আশ্রয় নেওয়া চার লক্ষাধিক রোহিঙ্গাসহ বর্তমান সহিংসতায় বিতাড়িত রোহিঙ্গারা যাতে নিজ ভূমে অধিকার নিয়ে বসবাস করতে পারে, সে জন্য মিয়ানমার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা। একই সঙ্গে বর্তমান আপদকালীন সময়ে তাদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা মৌলিক চাহিদা পূরণে মানবিকতার প্রশ্নে ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশ, বিশ্বের প্রভাবশালী দেশসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।
য় মাসুদ ফরহান
শিক্ষার্থী, তৃতীয় বর্ষ
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
forhanovi6@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.