দেশকে ধ্বংস করার জন্য একজন তৌফিক-ই-ইলাহীই যথেষ্ট by বি.ডি. রহমত উল্লাহ
বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য একজন তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীই যথেষ্ট। তিনি আগে যা করেছেন এবং এখন যা করছেন, সে আলোকেই এই বক্তব্য প্রমাণিত হয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিশাল জনপ্রিয়তা নিয়ে সরকার গঠন করে।
তারা নির্বাচনী ইশতেহারেও জনচাহিদাকে প্রাধান্য দেয়, যার মধ্যে অন্যতম ছিল দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যার সমাধান করা। কিন্তু জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর কর্মকাণ্ড সেই লক্ষ্য অর্জন ব্যর্থ করে দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের কথা উল্লেখ করা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সমস্যা বিবেচনা করে কি এই কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের মতো জগদ্দল পাথর মাথায় নেওয়া ঠিক হয়েছে? এ প্রশ্নটি শুরু থেকেই উত্থাপিত হয়েছে। আমি মনে করি, প্রথম সিদ্ধান্তই ভুল হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এ সিদ্ধান্তটি ছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গেও অসংগতিপূর্ণ এবং ইশতেহারবিরোধী। ইশতেহারে ছিল- আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে দেশে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করবে এবং পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। অথচ তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে জ্বালানি উপদেষ্টা করায় সব কিছুই ওলটপালট হয়ে যায়। চৌধুরী সাহেব এখন উল্টোপথে হাঁটলেন। তিনি ভুলেই গেলেন সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার কথা। তিনি ঝুঁকে পড়লেন কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে। যুক্তি দেখালেন, দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে দ্রুততর পদ্ধতি হচ্ছে এটা। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে তিনি কেন যাচ্ছেন, সেই যুক্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে বললেন, 'এ ছাড়া তাঁদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।' কিন্তু তাঁর এই বক্তব্য যুক্তিসংগত নয়। তিনি বললেন, 'নতুন পাওয়ার স্টেশন করতে অনেক সময় লেগে যাবে।' ঠিক আছে। নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার সময়টা কি বসে বসে কাটাতে হবে? বিকল্প ব্যবস্থা না নিয়ে কেন সেদিকে যাওয়া হলো, তা বুঝি না। সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করে এগিয়ে যাওয়া যেত। এ পথে আমাদের প্রতিবেশী সার্কভুক্ত দেশগুলো গিয়েছে। ইশতেহার এবং সার্কভুক্ত দেশগুলোর গৃহীত পদক্ষেপ অনুযায়ী বাংলাদেশ এগিয়ে গেলে আজ বিদ্যুতের এই নাজুক পরিস্থিতি হতো না। সাশ্রয়ী কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয়নি। এর জন্য বিশাল কোনো যজ্ঞের প্রয়োজন হতো না।
জনসচেতনতা এবং আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ হিসেবে একটি অধ্যাদেশই যথেষ্ট ছিল। সাশ্রয়ী হলে দেশে অন্তত ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। কতটা সময় লাগত বাংলাদেশে মোটর এবং বাল্বগুলো পরিবর্তন করতে?
দেশের পুরনো পাওয়ার স্টেশনগুলো মেরামত করলে কি আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ত না? যখন পুরনো বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রগুলো মেরামত করার প্রসঙ্গ এলো, তখন সরকারের ভূমিকা ছিল নীরব। তিনি সময়ের দোহাই দিলেন। কিন্তু একবারও হিসাব করলেন না, এসব পুরনো স্টেশন মেরামত করতে পারলে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ত অন্তত ৭০০ মেগাওয়াট। আর সরকারের ক্ষমতার তিন বছর যাওয়ার পরও কি তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলবেন, এখনো সময়ের অভাব আছে? অনেক সময় লাগবে এ সমস্যার সমাধান করতে! যদি যথাসময়ে উদ্যোগ নেওয়া হতো, তাহলে মেরামত করতে তিন মাস সময় লাগত। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রথম তিন মাসে কি আমাদের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হয়েছিল কিংবা আজ তিন বছরেও কি সে সমস্যার সমাধান হয়েছে? কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র করে রাষ্ট্রকে যে পরিমাণ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে, সেই টাকা কি লাগত পুরনো কেন্দ্রগুলো মেরামত করতে? নিশ্চয়ই নয়। আরেকটি কথা, মেরামত করতে গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখতে হবে বলে যা আমাদের শোনানো হয়েছে, তারও সমাধান আছে। সেই পথেও কি তিনি চলেছেন? সব বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র একবারে মেরামত না করে ধাপে ধাপে করে নিলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখতে হতো না। সেটা কেন করা হয়নি, তা তিনিই বলতে পারবেন ভালো করে। টাকা লাগত অনেক কম। পুরনো উৎপাদনকেন্দ্রগুলো মেরামত করতে ৩০০ কোটি টাকাই যথেষ্ট হতো। আসল কথা হলো, আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমি কী ভেজাল জিনিস খাব, নাকি ভালো জিনিস খাব। এর জন্য প্রয়োজন কমিটমেন্ট।
বলা হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপাদান গ্যাসের কথা। গ্যাসের অভাবে গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন করা যাবে না। কতটা যৌক্তিক এই বক্তব্য? আমাদের গ্যাস সীমিত- এ কথা সত্য। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন করার মতো গ্যাসের ব্যবস্থা একবারেই যে নেই, এটা মেনে নেওয়া যায় না। আজ তো কিছু গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সে ব্যবস্থাটা প্রথমেই নেওয়া হয়নি কেন? যদি তাঁরা ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে উদ্যোগ নিতেন, তাহলে আজ এ অবস্থায় পড়তে হতো না।
১০-১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা যেত গ্যাসক্ষেত্রগুলোকে ভিত্তি করে। এতে মোট ২০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে যেত। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানও বলেছেন, সংরক্ষণ করলে বিদ্যুৎ ব্যবহার কম হতো। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন সেদিকে যাওয়া হলো না। সংরক্ষণব্যবস্থা কার্যকর হলে ৭০০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম কেন্দ্রগুলো সচল হতো। এই হিসাবগুলো বলে দেয়, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে এবং সঠিক পথে গেলে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন ছিল না। গ্যাসের দুর্মূল্য করেছেন তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তিনি করেছেন নিজ স্বার্থে- এ কথা বললে ভুল হবে না। ভুল পথে হেঁটে তিনি দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। এর দায় থেকে তিনি মুক্তি পাবেন না। দায়মুক্তি বিলের কারণে তিনি আপাতত মুক্তি পেয়ে গেলেও জনগণের আদালতে ঠিকই দোষী সাব্যস্ত হবেন। তিনি যে অপরাধ করেছেন, তার বিচার হওয়া উচিত। কোর্টে যাওয়া না গেলেও গণ-আদালত হবে। সেখানে ঠিকই বিশ্লেষণ হবে সব কাজের। একজন মানুষের কারণে দেশের এত বড় ক্ষতি হতে পারে, এটা কি এভাবেই মুখ বুজে সহ্য করবে দেশের মানুষ?
তিনি যে এখনই এমনটি করেছেন, তা নয়। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি যা করেছেন, তা গেছে জনগণের বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে। ওই সময়ের কৃতকর্মের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং উপহার পেয়েছেন সরকার বদল হওয়ার পর। মহাজোট সরকারে স্থান করে নিলেন জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে। অবস্থানের পরিবর্তন হলেও তাঁর কাজের পরিবর্তন হয়নি। এই আমলেও তিনি একই কাজ করছেন। তাঁর কর্মকাণ্ডের মতো জনদুর্ভোগও অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। মাঝখান থেকে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়ে গেছে কোটি কোটি টাকা। এই দায় তাঁকে বহন করতেই হবে।
(অনুলিখন)
লেখক : জ্বালানি বিশেষজ্ঞ
এ প্রসঙ্গে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের কথা উল্লেখ করা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সমস্যা বিবেচনা করে কি এই কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের মতো জগদ্দল পাথর মাথায় নেওয়া ঠিক হয়েছে? এ প্রশ্নটি শুরু থেকেই উত্থাপিত হয়েছে। আমি মনে করি, প্রথম সিদ্ধান্তই ভুল হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এ সিদ্ধান্তটি ছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গেও অসংগতিপূর্ণ এবং ইশতেহারবিরোধী। ইশতেহারে ছিল- আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে দেশে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করবে এবং পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। অথচ তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে জ্বালানি উপদেষ্টা করায় সব কিছুই ওলটপালট হয়ে যায়। চৌধুরী সাহেব এখন উল্টোপথে হাঁটলেন। তিনি ভুলেই গেলেন সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার কথা। তিনি ঝুঁকে পড়লেন কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে। যুক্তি দেখালেন, দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে দ্রুততর পদ্ধতি হচ্ছে এটা। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে তিনি কেন যাচ্ছেন, সেই যুক্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে বললেন, 'এ ছাড়া তাঁদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।' কিন্তু তাঁর এই বক্তব্য যুক্তিসংগত নয়। তিনি বললেন, 'নতুন পাওয়ার স্টেশন করতে অনেক সময় লেগে যাবে।' ঠিক আছে। নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার সময়টা কি বসে বসে কাটাতে হবে? বিকল্প ব্যবস্থা না নিয়ে কেন সেদিকে যাওয়া হলো, তা বুঝি না। সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করে এগিয়ে যাওয়া যেত। এ পথে আমাদের প্রতিবেশী সার্কভুক্ত দেশগুলো গিয়েছে। ইশতেহার এবং সার্কভুক্ত দেশগুলোর গৃহীত পদক্ষেপ অনুযায়ী বাংলাদেশ এগিয়ে গেলে আজ বিদ্যুতের এই নাজুক পরিস্থিতি হতো না। সাশ্রয়ী কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয়নি। এর জন্য বিশাল কোনো যজ্ঞের প্রয়োজন হতো না।
জনসচেতনতা এবং আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ হিসেবে একটি অধ্যাদেশই যথেষ্ট ছিল। সাশ্রয়ী হলে দেশে অন্তত ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। কতটা সময় লাগত বাংলাদেশে মোটর এবং বাল্বগুলো পরিবর্তন করতে?
দেশের পুরনো পাওয়ার স্টেশনগুলো মেরামত করলে কি আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ত না? যখন পুরনো বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রগুলো মেরামত করার প্রসঙ্গ এলো, তখন সরকারের ভূমিকা ছিল নীরব। তিনি সময়ের দোহাই দিলেন। কিন্তু একবারও হিসাব করলেন না, এসব পুরনো স্টেশন মেরামত করতে পারলে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ত অন্তত ৭০০ মেগাওয়াট। আর সরকারের ক্ষমতার তিন বছর যাওয়ার পরও কি তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলবেন, এখনো সময়ের অভাব আছে? অনেক সময় লাগবে এ সমস্যার সমাধান করতে! যদি যথাসময়ে উদ্যোগ নেওয়া হতো, তাহলে মেরামত করতে তিন মাস সময় লাগত। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রথম তিন মাসে কি আমাদের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হয়েছিল কিংবা আজ তিন বছরেও কি সে সমস্যার সমাধান হয়েছে? কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র করে রাষ্ট্রকে যে পরিমাণ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে, সেই টাকা কি লাগত পুরনো কেন্দ্রগুলো মেরামত করতে? নিশ্চয়ই নয়। আরেকটি কথা, মেরামত করতে গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখতে হবে বলে যা আমাদের শোনানো হয়েছে, তারও সমাধান আছে। সেই পথেও কি তিনি চলেছেন? সব বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র একবারে মেরামত না করে ধাপে ধাপে করে নিলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখতে হতো না। সেটা কেন করা হয়নি, তা তিনিই বলতে পারবেন ভালো করে। টাকা লাগত অনেক কম। পুরনো উৎপাদনকেন্দ্রগুলো মেরামত করতে ৩০০ কোটি টাকাই যথেষ্ট হতো। আসল কথা হলো, আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমি কী ভেজাল জিনিস খাব, নাকি ভালো জিনিস খাব। এর জন্য প্রয়োজন কমিটমেন্ট।
বলা হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপাদান গ্যাসের কথা। গ্যাসের অভাবে গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন করা যাবে না। কতটা যৌক্তিক এই বক্তব্য? আমাদের গ্যাস সীমিত- এ কথা সত্য। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন করার মতো গ্যাসের ব্যবস্থা একবারেই যে নেই, এটা মেনে নেওয়া যায় না। আজ তো কিছু গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সে ব্যবস্থাটা প্রথমেই নেওয়া হয়নি কেন? যদি তাঁরা ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে উদ্যোগ নিতেন, তাহলে আজ এ অবস্থায় পড়তে হতো না।
১০-১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা যেত গ্যাসক্ষেত্রগুলোকে ভিত্তি করে। এতে মোট ২০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে যেত। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানও বলেছেন, সংরক্ষণ করলে বিদ্যুৎ ব্যবহার কম হতো। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন সেদিকে যাওয়া হলো না। সংরক্ষণব্যবস্থা কার্যকর হলে ৭০০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম কেন্দ্রগুলো সচল হতো। এই হিসাবগুলো বলে দেয়, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে এবং সঠিক পথে গেলে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন ছিল না। গ্যাসের দুর্মূল্য করেছেন তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তিনি করেছেন নিজ স্বার্থে- এ কথা বললে ভুল হবে না। ভুল পথে হেঁটে তিনি দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। এর দায় থেকে তিনি মুক্তি পাবেন না। দায়মুক্তি বিলের কারণে তিনি আপাতত মুক্তি পেয়ে গেলেও জনগণের আদালতে ঠিকই দোষী সাব্যস্ত হবেন। তিনি যে অপরাধ করেছেন, তার বিচার হওয়া উচিত। কোর্টে যাওয়া না গেলেও গণ-আদালত হবে। সেখানে ঠিকই বিশ্লেষণ হবে সব কাজের। একজন মানুষের কারণে দেশের এত বড় ক্ষতি হতে পারে, এটা কি এভাবেই মুখ বুজে সহ্য করবে দেশের মানুষ?
তিনি যে এখনই এমনটি করেছেন, তা নয়। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি যা করেছেন, তা গেছে জনগণের বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে। ওই সময়ের কৃতকর্মের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং উপহার পেয়েছেন সরকার বদল হওয়ার পর। মহাজোট সরকারে স্থান করে নিলেন জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে। অবস্থানের পরিবর্তন হলেও তাঁর কাজের পরিবর্তন হয়নি। এই আমলেও তিনি একই কাজ করছেন। তাঁর কর্মকাণ্ডের মতো জনদুর্ভোগও অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। মাঝখান থেকে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়ে গেছে কোটি কোটি টাকা। এই দায় তাঁকে বহন করতেই হবে।
(অনুলিখন)
লেখক : জ্বালানি বিশেষজ্ঞ
No comments