অবরোধবাসিনীদের স্বপ্ন
গাজি স্টেডিয়ামের অবস্থান আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের প্রাণকেন্দ্রে। তালেবান শাসনামলে এখানে শাস্তি কার্যকর হতো। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান শাসন করে কট্টরপন্থী তালেবান। তালেবানের পতন ঘটেছে। আফগানরাও নতুন করে জেগে উঠছে। একসময়ের সেই শাস্তি কার্যকরের স্টেডিয়ামকেই আজ দেখা হচ্ছে আফগান নারী মুষ্টিযোদ্ধাদের জাগরণের কেন্দ্র হিসেবে। স্টেডিয়ামের ভেতরে একটি জরাজীর্ণ ব্যায়ামাগার আছে। দেয়ালের রং উঠে
গেছে। মেঝের অবস্থাও খারাপ। গোলাপি ও সবুজ রঙের মাদুর দিয়ে কোনো রকমে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। সেখানে চলছে আফগান নারী মুষ্টিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ। এখানে আছে চারটি পাঞ্চিং ব্যাগ। ব্যায়ামাগারটির অবকাঠামো এতই খারাপ যে ধুলা থেকে বাঁচতে মেয়েদের প্রশিক্ষণের সময় মুখে মাস্ক পর্যন্ত ব্যবহার করতে হয়।
শবনম ও সাদাফ রাহিমি দুই বোন। দুজনেই মুষ্টিযোদ্ধা। প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন গাজি স্টেডিয়ামের রিংয়ে। ১৮ বছরের সাদাফ বলেছেন, ‘মুষ্টিযোদ্ধা হওয়াটা ছিল আমার স্বপ্ন। প্রথমে আমার বাবা বিষয়টি মেনে নেননি। তিনি বলতেন, মেয়েদের মুষ্টিযোদ্ধা হতে নেই। তবে আমি একটি পদক জেতার পর তাঁর সিদ্ধান্ত বদলে যায়।’
আফগানিস্তানে নারীরা এখনো শিক্ষা ও কাজের অধিকার পাচ্ছেন না। বাড়িতে বাড়িতে ঘটছে নারী নির্যাতনের ঘটনা। তালেবান শাসনামলে নারীদের জন্য সব ধরনের খেলা ছিল নিষিদ্ধ। এমনকি তালেবানের পতনের পর আজও নারীরা মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকে হচ্ছেন বঞ্চিত।
‘তালেবানের শাসনামলে আমাদের পরিবার ইরানে পালিয়ে গিয়েছিল...এখানে নারীদের হত্যা করা হতো। স্টেডিয়ামে একা একা অনুশীলনের সময় মাঝেমধ্যেই আমি ভয় পাই।’ বলছিলেন সাদাফ।
তাঁর বোন ১৯ বছরের শবনম বলেন, ‘দুই বছর আগেও কেউ একজন আমার বাবাকে ফোন করতেন...এবং হুমকি দিতেন যে আমাদের প্রশিক্ষণে পাঠালে তিনি আমাদের অপহরণ অথবা হত্যা করবেন।’ এরপর তাঁরা প্রায় এক মাস স্টেডিয়ামে যাননি। তবে তাঁদের প্রশিক্ষক মেয়েদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করলে তাঁরা আবার প্রশিক্ষণে যেতে শুরু করেন।
আফগানিস্তানের নারী মুষ্টিযোদ্ধাদের প্রথম দলটি ২০০৭ সালে গঠন করা হয়। দলের কোচ সাবের শরীফ বলেন, ‘আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে চাই যে আফগান মেয়েরাও নেতৃত্ব দিতে পারে, তারাও যেকোনো কিছু করতে পারে।’
২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জয় ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আর কোনো সফলতা নেই আফগান নারী মুষ্টিযোদ্ধাদের। ওই পদক জিতে জাতীয় বীরে পরিণত হয়েছিলেন রুহুল্লা নিকপাই। এবার তাঁর স্বপ্ন আরও বড়, ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে স্বর্ণজয়। শবনব বলছিলেন, ‘দেশের জন্য আফগানিস্তানের পতাকা তুলে ধরাই আমার স্বপ্ন।’ রয়টার্স।
No comments