ইতিহাসের বাঁকে : মতিউল-কাদের হত্যাকাণ্ড-সমঝোতার রাজনীতি! by ফিরোজ আহমেদ

ভিয়েতনামে মার্কিন হামলার বিরুদ্ধে ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি 'ভিয়েতনাম দিবস' উপলক্ষে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মসূচিতে পুলিশের হামলায় নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মতিউল ইসলাম এবং মীর্জা কাদেরুল ইসলাম। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বাংলাদেশে পুলিশের গুলিতে ছাত্রহত্যার মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটল। পুলিশ লাঠিপেটা বা টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ না করেই বিনা হুঁশিয়ারিতে এই গুলিবর্ষণ করে। প্রেসক্লাবের খুব কাছেই উল্টোদিকে এই


গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে, পুলিশ ফটোগ্রাফারদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে। ছাত্রহত্যার সংবাদে সারা শহরের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, ইট দিয়ে মতিউল-কাদের নিহত হওয়ার স্থানটি গোল করে চিহ্নিত করা হয়। হাজার হাজার মানুষ ওই স্থানটি এক পলক দেখার জন্য জড়ো হয়, গলিতে-গলিতে মানুষ মৌন মিছিল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। স্বাভাবিক সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রটিতে এ ঘটনা অভাবিত ছিল, আজকের মতো মানুষ হত্যায় তখনো অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি রাষ্ট্র, আর নতুন দেশের কাছে মানুষের আকাঙ্ক্ষার তখনো অবসান ঘটেনি।
কিন্তু মতিউল-কাদেরের মৃত্যু শুধু স্রেফ পুলিশের একটি হত্যাকাণ্ড হিসেবে নয়, এ ঘটনার ফলে ঘটে যাওয়া আরো কিছু ঘটনার কারণে গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পেশীশক্তির প্রদর্শনী, প্রগতিশীল শক্তির আপসকামিতা, রাষ্ট্রের পুলিশীকরণ এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার অবসানের মতো অনেক পরবর্তী বৈশিষ্ট্যের সব লক্ষণ মতিউল-কাদের হত্যাকাণ্ডের পরে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলির মধ্যে পাওয়া যাবে।

৭ তারিখের প্রতিবাদ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়নি
২ জানুয়ারি, ১৯৭৩ এ ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। ছাত্র ইউনিয়ন ও ডাকসু ছাত্রহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে সাত দফা দাবি উত্থাপন করে, যার মধ্যে ছিল ছাত্রহত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও মন্ত্রীর অপসারণ ও শাস্তি প্রদান, বাংলাদেশে মার্কিন তথ্যকেন্দ্র বন্ধ, দক্ষিণ ভিয়েতনামের বিপ্লবী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন, ১ জানুয়ারির মিথ্যা প্রেস নোট প্রত্যাহার, দমনীতি বাতিলসহ আরো কিছু দাবি।
ন্যাপপ্রধান মোজাফফর আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ ভট্টাচার্য ঘটনার প্রতিবাদে বলেন, 'আওয়ামী লীগ সরকারের এ বর্বরোচিত ছাত্রহত্যা ইয়াহিয়া-মোনায়েম স্বৈরাচারী সরকারের কার্যকলাপের নামান্তর। যে সরকার ছাত্র-জনতার রক্তে হাত কলুষিত করেছে, সে সরকারের বিরুদ্ধে দেশবাসীর সংগ্রামকে অব্যাহত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা দেশবাসীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে খুনি আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি। সব দেশবাসী ভাইবোন, গণতান্ত্রিক শক্তি ও ব্যক্তির প্রতি আমাদের আহ্বান, ঐক্যবদ্ধভাবে এ সংগ্রামে এগিয়ে আসুন।' ৩ জানুয়ারির সংবাদপত্র অনুযায়ী তিনি ঘোষণা করেন : নুরুল আমিনের সরকারের যে পরিণতি ঘটেছিল, শেখ মুজিবের সরকারের ভাগ্যেও সেই পরিণতি অনিবার্য।
৩ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ঘোষণা করেন, দরকার হলে আরো রক্ত দেব, তবু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের লেজুড় সরকারকে উৎখাত করে সমাজতন্ত্র কায়েম করবই। এ সভাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহসভাপতি সেলিম ডাকসুর আজীবন সদস্যপদ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের বহিষ্কারের ঘোষণা দেন এবং সদস্যপদ বই থেকে সংশ্লিষ্ট পাতাটি ছিঁড়ে ফেলেন। তিনি ডাকসুর পক্ষ থেকে দেওয়া 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিটিও প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে বলেন, এখন থেকে সেটি আর ব্যবহার করা যাবে না।
ন্যাপ মোজাফ্ফর ও ছাত্র ইউনিয়নের বক্তব্য এভাবে সরকার পতনের মতো চড়া হলেও মস্কোপন্থী সিপিবির গলার স্বর অবশ্য বেশ নমনীয়ই ছিল, সরকারকে সম্পূর্ণ অযোগ্য ঘোষণা করলেও ৪ জানুয়ারির সংবাদে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী প্রথম থেকেই তারা সমঝোতার মাধ্যমে সংকট এড়ানোর রাস্তাই গ্রহণ করে; তাদের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বলা হয় : 'পহেলা জানুয়ারির সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্রদের হত্যা করার মর্মান্তিক ঘটনা, তৎপরবর্তী মিথ্যা সরকারি প্রেসনোট ও বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর শাসক দলের হামলা বর্তমান সংকটকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। আমরা মনে করি, সরকার পাকিস্তান আমলের মতো পিচ্ছিল ও দমননীতির পথে না গিয়ে এখনো পল্টন ময়দানে ঘোষিত ছাত্র সমাজের সাত দফা দাবি মেনে নিয়ে পরিস্থিতিকে জাতীয় স্বার্থে স্বাভাবিক করতে পারে।'
প্রতিক্রিয়াও খুব দ্রুতই শুরু হয়ে যায়, ৩ জানুয়ারি প্রেসক্লাবের বিপরীত দিকে অবস্থিত মোজাফ্ফর ন্যাপের অফিসে হামলা হয়, তাদের নেতা-নেত্রীদের লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগকর্মীরা। শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগের সমাবেশে শেখ শহীদুল ইসলাম ঘোষণা করেন, ক্ষমা না চাইলে ন্যাপ মোজাফ্ফর ও ছাত্র ইউনিয়নের কোনো সমাবেশ বাংলার মাটিতে অনুষ্ঠিত হতে দেওয়া হবে না। সারা দেশে অসংখ্য হামলার ঘটনা ঘটে ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীদের ওপর। এ ঘটনায় দুখঃপ্রকাশ করার আদৌ কোনো লক্ষণ সরকারি মহলে দেখা যায়নি, বরং ৬ জানুয়ারি গোপালগঞ্জে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, "বিদেশ থেকে যাতে কোনো সাহায্য না আসতে পারে সেই উদ্দেশ্যে 'ওরা' বিশ্বে বাঙালি জাতির মান-মর্যাদা ক্ষুণ্ন্ন করার চেষ্টা করছে।" প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণায় পরিষ্কার যে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দলগত সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা রক্ষা এবং উন্নয়নে সরকার ও সরকারি দল উদগ্রীব, ভিয়েতনামে যুদ্ধবিরোধী মিছিলে গুলি চালিয়ে ছাত্রহত্যার বিষয়ে সরকার তাই এমনকি মিত্রদেরও দমন করতে দ্বিধাহীন-বেপরোয়া।
৬ জানুয়ারি এক সাংবাদ সম্মেলন ডেকে ন্যাপের মোজাফ্ফর আহমেদ তাঁদের ৭ তারিখের প্রস্তাবিত জনসভা বাতিলের ঘোষণা দেন। তিনি যে যথেষ্ট ভয় পেয়েছেন, তা সরকার সমর্থিত বাংলার বাণীতে প্রচারিত হয়। এই সম্মেলনে তিনি ছাত্রহত্যার বিচার বা ভিয়েতনামের প্রসঙ্গটি আর উত্থাপন করেননি। একই দিন কমিউনিস্ট পার্টি কার্যালয়ে বলা হয়, 'মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী, চীনা ও পাকিস্তানি চররা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। মস্কোপন্থী এই নেতারা নানা মহলে তদবির করে একটি আপসের চেষ্টা করেন এবং ২২ জানুয়ারি সাক্ষাৎ পান। তাঁরা আপসের শর্ত হিসেবে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করবেন না, এমন গুজব প্রচারিত হয়। সেটা সত্যি কি না তা জানা না গেলেও এই শাসনামলে মতিউল-কাদেরের প্রাণদান প্রসঙ্গটি মস্কোপন্থীদের দিক থেকে আর উত্থাপিত হয়নি।

স্বাধীন সাংবাদিকতার অবসান
১ জানুয়ারির ঘটনা নিয়ে দৈনিক বাংলা পত্রিকা একটি তাৎক্ষণিক টেলিগ্রাম বের করে। এই টেলিগ্রাম বের করার দায়ে দৈনিক বাংলার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান এবং সম্পাদক তোয়াব খান চাকরি হারান। দৈনিক বাংলার কর্মচারীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ দুজনের চাকরি পুনর্বহালের দাবি জানালে তিনি তা করেননি, ৫ জানুয়ারি ছাত্রলীগ নেতা শেখ শহীদুল ইসলাম পল্টন ময়দানে বলেন, 'দৈনিক বাংলা থেকে দুজন পাকিস্তানি দালালকে অপসারণ করা হয়েছে।' সেই সংবাদ ছাপা হয় ৬ জানুয়ারির দৈনিক বাংলায়ই। ওই সমাবেশে শেখ শহীদ অন্যান্য পত্রিকা থেকেও কথিত এই 'দালাল'দের অপসারণ না করা হলে ছাত্রলীগের অভিযানের হুমকিও প্রদান করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রকাশ্য রাজপথে পুলিশের গুলিবর্ষণে ছাত্রহত্যা নিশ্চিতভাবেই অচিন্ত্যনীয় ছিল সাংবাদিকদের কাছে, মুক্ত বাংলাদেশে তাঁরা যে পাকিস্তান আমলের মতো প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা করেননি, সেটা তাঁদের তৎপরতায় স্পষ্ট। চাকরিচ্যুতি আর অভিযানের হুমকি অবশ্য তাঁদের অচিরেই বাস্তব জগতে নিয়ে এল, স্বাধীন সাংবাদিকতার বেলায়ও যে পাকিস্তান রাষ্ট্রটাই সমূলে বহাল থেকে গেছে, সেটা তাঁরা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করলেন। বস্তুত এ ক্ষেত্রে যে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো, তার ধারাবাহিকতা পরবর্তীকালের সাংবাদিকতার জগৎকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করেছে, সৎ-সাহসী সাংবাদিকতার বদলে পদলেহনই ক্রমেই পরিপুষ্ট হয়েছে।

রুশ-মার্কিন-ভারত সংযোগ
শুধু ছাত্রলীগের পিটুনি বাহিনীর মুখে কমিউনিস্ট পার্টি ও ন্যাপ তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে, সেটা কিছুতেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। ওই একই সময়ে অন্যান্য কমিউনিস্ট দল ও জাসদ প্রবল নিপীড়নের মধ্যেও রুখে দাঁড়িয়েছিল; শুধু তা-ই নয়, তাদের বিকাশও ঘটছিল দ্রুত। কাজেই পরিস্থিতির মোড় বোঝার জন্য আমাদের সিপিবির আন্তর্জাতিক যোগাযোগের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। ভারত বিশ্বরাজনীতির সেই পরিপ্রেক্ষিতে ছিল সোভিয়েত বলয়ের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তার একটা শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সব সময় বহাল ছিল। মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি ও ন্যাপ সোভিয়েত ইউনিয়নের আজ্ঞাবহ থাকায় ভারত সহজেই তাদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে বাধ্য করে, আন্তর্জাতিক রাজনীতির হিসাব-নিকাশ ভারতকে নিজ বলয়ে রাখার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নও তার অনুগত সিপিবিকে ভারত ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে মৈত্রীর সম্পর্কটি বজায় রাখার হুকুম দেয়। বাংলাদেশে এর বাইরে খুব সামান্য স্বার্থই সোভিয়েত ইউনিয়নের ছিল। বলা উচিত হবে যে ভারতের স্বার্থে নবীন এই রাষ্ট্রটির সব ভবিষ্যৎ বলি দেয়, সিপিবিও তার শিকার হয়। সে সময়কার সিপিবির বহু দলিলপত্রে তাই দেখা যাবে কোনো ঘটনাকে তারা বিচার করার ক্ষেত্রে রুশ-ভারত মৈত্রীর বিষয়টির বিবেচনাই প্রথমে করত। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ কাগমারী সম্মেলনের পর থেকেই মার্কিন বলয়ের অন্তর্ভুক্ত রাজনৈতিক দল, ঐতিহাসিকভাবেই তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা যে তীব্র মার্কিন বিরোধিতা এবং সমাজতন্ত্রের প্রতি ইতিবাচকতার জন্ম দিয়েছিল, তার ফলে আওয়ামী লীগ রুশ বলয়ে অবস্থান নিতে বাধ্য হলেও তার ঐতিহ্যিক স্বার্থ তাকে ক্রমেই আবারও মার্কিনিদের দিকেই টেনে নিয়ে আসছিল। মস্কোপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণকে তাই এই জটিল পরিস্থিতিতে একদিকে জনগণের মধ্যে ধূমায়িত ক্ষোভের প্রতি সাড়াও দিতে হয়েছে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নির্যাতক চরিত্রকে শেষ পর্যন্ত মেনেও নিতে হয়েছে ভারতীয় চাপে রুশ-আনুগত্যের কারণে। রাজনীতির এই সমীকরণে সব সময় লাভবান হতো ভারত, সদ্য স্বাধীন দেশটি ছিল তার সস্তা কাঁচামালের উৎস, শিল্পপণ্যের বাজার এবং এই বাজারে আধিপত্য ও লুণ্ঠন চালানোর প্রয়োজনে দেশীয় শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলে তারা।
এই জটিল আবর্তেই মতিউল-কাদের হত্যাকাণ্ড, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রথম ছাত্রহত্যা (ছাত্রহত্যার আলাদা রাজনৈতিক তাৎপর্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঐতিহাসিকভাবেই আছে, জনগণের অপরাপর অংশে হত্যার সংবাদ এটি প্রথম নয়) চাপা পড়ে গেল। মতিউল-কাদেরের সংগঠন অচিরেই তার দায় পরিত্যাগ করে, শুধু তা-ই নয়, অবিলম্বে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ত্রিদলীয় ঐক্যজোটে তারা অন্তর্ভুক্ত হয়, যার একটি প্রধান অঘোষিত কাজ ছিল অন্য বিরোধী দলগুলোকে দমন। এর পর থেকে তারা আর কখনোই পুরো আওয়ামী লীগের আমলে বড় ধরনের বিরোধিতায় যায়নি শুধু নয়, ওয়ালিউর রহমান (লেবু ভাই) ও কমলেশ বেদজ্ঞর মতো তাদের জাতীয় স্তরের নেতা হেমায়েত বাহিনীর হাতে খুন হলেও এই মৈত্রীতে খুব একটা চিড় ধরেনি। বরং যে দলগুলো ওই সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিরোধিতা করছিল, তাদের বিরোধিতাই তার প্রধান রাজনীতি হয়ে দাঁড়ায়। এরই একটা ধ্রুপদী উদাহরণ পাওয়া যাবে জাসদের ঘেরাও মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিক্রিয়ায় তাদের বক্তব্যে : 'সুপরিকল্পিতভাবে উস্কানিমূলক ও উত্তেজনা সৃষ্টির রাজনীতি করিয়া আসিতেছিল...এই অবস্থায় আইনরক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে কয়েকজন মৃত্যুবরণ করেন।'
মতিউল-কাদের মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের অসংখ্য রাজনৈতিক শহীদের দুজন মাত্র। কিন্তু তাঁদের মৃত্যুবরণ যে জটিল চক্রাবর্তের উন্মোচন করে, সেটা থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি আজও বেরোতে পারেনি।

No comments

Powered by Blogger.