জলদস্যুতার অপবাদমোচন-জলদস্যুতার অপবাদমোচন

সুখবর বটে। আন্তর্জাতিক মেরিটাইম ব্যুরোর (আইএমবি) ওয়েবসাইটের জলদস্যুতার উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম মুছে ফেলা হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের জলসীমায় সংঘটিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডগুলোকে জলদস্যুতা নয়, বরং দস্যুতা কিংবা ডাকাতি হিসেবে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। গত ২০ বছর আইএমবি বাংলাদেশকে জলদস্যুতাপ্রবণ এবং আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে তাদের


ওয়েবসাইটে চিহ্নিত করে আসছিল। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানালে প্রাথমিক তদন্ত শেষে বাংলাদেশের বিষয়ে অবস্থান পরিবর্তন করে আইএমবি।
কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা যখন যাচাই-বাছাই ব্যতিরেকেই এমন একটি নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করে, তখন তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক। এখন সারা বিশ্ব একটি 'ভুবনগ্রাম' হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। কাজেই যেকোনো দেশের ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক কোনো বিষয় সংগত কারণেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাব ফেলে। এ ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছিল এবং এর পুরোটাই নেতিবাচক। এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড অবশ্যই নিন্দনীয়। অভিযোগ আছে, চট্টগ্রাম বন্দরে আসা বিদেশি কোনো কোনো জাহাজের পক্ষে জলদস্যু তথা পাইরেট কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে আইএমবির কাছে অতিরঞ্জিত কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বানোয়াট তথ্য পাঠনো হয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি জাহাজগুলোকে আইএমবি সতর্ক করে আসছিল। আন্তর্জাতিক আইনে উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত কোনো জলদস্যুতার ঘটনা ঘটতে পারে না। সেই হিসেবে বাংলাদেশের জলসীমায় এমন ঘটনা কখনোই ঘটেনি। যদি এমনটি ঘটে, তাহলে জলপথে শুধু ইন্স্যুরেন্স খরচই অনেক বেড়ে যায় না; দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়।
বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মসিলিপ্ত করার অপচেষ্টায় যারা লিপ্ত ছিল, তাদের শনাক্তকরণ জরুরি হয়ে পড়েছে এবং এ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কথা বলার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে যাতে কেউ আর এমন অপচেষ্টা চালাতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। বাংলাদেশের বিদ্যমান ফৌজদারি আইনেও উপকূলের কাছে যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে, তা ডাকাতি হিসেবে বিচার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। একটি স্বাধীন দেশে এ রকম একটি আইন কার্যকর থাকা সত্ত্বেও এ নিয়ে জলদস্যুতার অপবাদ দেওয়ার অবকাশ আছে কি? তা ছাড়া বিশ্বের জলদস্যুতাপ্রবণ দেশগুলোর পরিচিতি প্রতিষ্ঠিত তাদের কার্যকারণের কারণেই। এ ব্যাপারে দেশের মিডিয়াগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের পাশাপাশি সরকারের তরফে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের ভাবমূর্তি নিয়ে কারোরই ছিনিমিনি খেলার অবকাশ নেই।

No comments

Powered by Blogger.