গরম পোশাকে নয় গরমকালের পোশাকে by আসিফ আহমেদ

পৌষে শীত জাঁকিয়ে বসলে খবর হয় না। কিন্তু গরম পড়লে শুধু তা খবর হয় না, উদ্ব্বেগেরও কারণ হয়। কয়েকদিন আগে শীতে অনেক মানুষ কাবু ছিল। ঘন কুয়াশায় চলাচল হয়ে পড়ছিল অনিশ্চিত। লঞ্চযাত্রীরা অনেক পড়ে গন্তব্যে পেঁৗছাতে পেরেছেন। ফেরিপথেও ঘটেছে ভোগান্তি। কিন্তু হঠাৎ করেই আবহাওয়া উষ্ণ হয়ে পড়ল। মানুষ গরম পোশাকে নয়, গরমকালের পোশাকে চলতে শুরু করেছে। শুধু টি-শার্ট বা হাতাকাটা পোশাকে অনেকে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন।


আমেরিকায় বলা হয়, গরম যত বাড়তে থাকে, নারীর পোশাক তত ছোট হতে থাকে। আমাদের এবারের পৌষে তেমন গরম অবশ্য পড়ছে না। গ্রীষ্মে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলেও নারীদেহ যথেষ্ট ঢাকা থাকে। শীতে তাদের বাহারি পোশাকে দেখা যায়। রঙবেরঙের চাদরে তারা সাজেন। কিন্তু এবারে তো ভিন্ন চিত্র। শীতবস্ত্র নিয়ে উদ্বেগ অনেকটা কমে গেছে। যারা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কম্বল-সোয়েটার সংগ্রহে নেমে পড়ব পড়ব করছিলেন, তারা কেউ কেউ থমকে আছেন। গরমে শীতবস্ত্র নিয়ে গেলে সেটা মোটেই ভালো দেখাবে না। আর যারা ইতিমধ্যে এ দায়িত্ব পালন করে ফেলেছেন, তারা বলবেন_ ভাগ্যিস, দেরি করিনি।
প্রবাদ আছে_ মাঘের শীত বাঘের গায়। মাঘ আসতে দিন দশেক এখনও বাকি। আবার জাঁকিয়ে শীত আসবে কি-না সেটা বড় প্রশ্ন। তবে তার চেয়েও বড় প্রশ্ন_ আবহাওয়া কি সত্যিই বদলে গেল? বিশ্বের উষ্ণায়ন নিয়ে উদ্বেগের শেষ নেই। এখন শীত না পড়লে বলা হয়, জলবায়ু বদলে গেছে। বৃষ্টি কম হলেও এ কথা বলি, বেশি হলেও বলি। আইলা বা সিডর আঘাত হানলেও বলি। সমুদ্র প্রচণ্ড গর্জনে ভূখণ্ডে সুনামি হিসেবে আছড়ে পড়লেও বলি। এমনকি কারও বাড়ির গভীর নলকূপে ঠিকভাবে পানি না উঠলেও আঙ্গুল চলে যায় জলবায়ুর প্রতি। এবারের পৌষে সর্বনাশা শীত না পড়াতেও তেমনটি বলা হতে পারে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শীতের সামনে পাঁচিল তুলে আছে উচ্চচাপ বলয়। তাতে আপাতত কয়েকদিন শীত ফেরার সম্ভাবনা কম। তারা এটাও বলেন, কয়েকদিন আগে সাগরে যে নিম্নচাপ হয়েছিল, তার সঙ্গে অপরিচিত গরমের সম্পর্ক রয়েছে। ফের আরেকটি নিম্নচাপ নাকি হতে পারে। তার অর্থ আরেক দফা শীতেও গরম। তবে রোববার রাতে এবং সোমবার দিনে ঢাকাসহ দেশের কয়েক স্থানে বৃষ্টি পড়েছে। কোথাও কোথাও বৃষ্টির মাত্রা একটু বেশিই। এতে শীত বাড়তে পারে।
আরেকটি শঙ্কা, সেটাও প্রবাদের কারণে_ 'যদি বরষে পৌষে, কড়ি হয় তুষে।' এ প্রবাদের মানে দাঁড়ায়, পৌষ মাসে বৃষ্টি হলে তুষের দামও আগুন হয়ে যায়। অন্য সব পণ্যের দামও বাড়ে। বাংলাদেশের বাজারে আগুন লেগে আছে অনেক দিন ধরে। নতুন করে আর কী আগুন লাগবে? প্রবাদটির সঙ্গে আমন ধানের সম্পর্ক রয়েছে। এ সময়ে ধান পাকে এবং বৃষ্টি পড়লে তার ক্ষতি হয়। তবে বাংলাদেশের নতুন ফসলচক্রে এমনটি নাও হতে পারে। শীতের সবজি এখন গরম শেষ হতে না হতেই মিলতে থাকে। আমন উঠতে না উঠতেই বোরো ধান চাষের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। তাই তুষে কড়ি হওয়ার প্রবাদটি আগের অর্থ হারাতেই পারে। তা ছাড়া তুষও তো এখন ফেলনা পণ্য নয়। এ থেকে নাকি তেলও মেলে। ভালো মানের জ্বালানি দণ্ডও মেলে তুষ থেকে। শীতেই যদি গরম চলতে থাকে, তাহলে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির পিকনিকের পরিকল্পনাও কিন্তু ভেস্তে যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.