বাংলাদেশে নববর্ষের কথা-সমকালীন প্রসঙ্গ by বদরুদ্দীন উমর
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যে উত্তরোত্তর ঘটছে এ নিয়ে কোনো সংশয় কোথাও নেই, তবে বিতর্ক আছে। এই অবনতির জন্য সরকারি লোকজন দায়ী করে বিরোধী পক্ষকে এবং বিরোধী পক্ষ এর জন্য দায়ী করে সরকারকে। যারা সরকার ও বিরোধী পক্ষের এই মতামতের বাইরে থাকে তারা এর জন্য দায়ী করে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে। তাদের মতে, আসল ভাঙন ঘটছে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে। সরকার এই রাষ্ট্রযন্ত্রের ম্যানেজার হিসেবে এই প্রক্রিয়ার মধ্য থেকে কাজ করছে
বাংলাদেশে ইংরেজি নববর্ষের উৎসব প্রায় সর্বাংশেই টাকাপয়সাওয়ালা শহুরে লোকদের ব্যাপার। এর সঙ্গে যেমন গ্রামের লোকদের বিশেষ সম্পর্ক নেই, তেমনি সম্পর্ক নেই অর্থসম্পদহীন লোকদের। গ্রামাঞ্চলে নববর্ষ হিসেবে বাংলা নববর্ষই একভাবে পালিত হয়। কিন্তু নববর্ষের আগমনের থেকে পুরনো বছরের গমন চৈত্রসংক্রান্তিই পালিত হয় ঘটা করে। অনেক রকম পালা-পার্বণও জড়িত থাকে তার সঙ্গে। চৈত্রসংক্রান্তি শহরেও পালিত হয় পুরনো ধারার ব্যবসায়ীদের দ্বারা।
২০১১ সালের শেষে এবারও নববর্ষের উৎসব বাংলাদেশে ঘটা করে পালন করা হয়েছে। এ জন্য পাঁচতারা হোটেলগুলোসহ অন্য অনেক জায়গায় ৩১ ডিসেম্বর রাতে অনেক আমোদ-ফুর্তির ব্যবস্থা ছিল। এসব হোটেল এবং আমোদ-ফুর্তির জায়গায় নাচ-গান ও সুরাপানের মধ্য দিয়েই নতুন বছরের আগমন। এই যাওয়া-আসা সমাজের অন্য স্তরের লোকের জীবনে ও গ্রামাঞ্চলের সাধারণ লোকদের জীবন স্পর্শ করে না। শহরাঞ্চলে নববর্ষের উৎসব যেভাবে পালিত হয় সেটাতে সাধারণ লোকদের, বিশেষত বিত্তহীনদের ভূমিকা থাকে অবলোকনকারী হিসেবে। হোটেল বা অন্য অনেক বিত্তশালীর বাড়িতে যে উৎসব হয় তার বাইরে নববর্ষের জৌলুসপূর্ণ কিছু অনুষ্ঠান ও আলোকবাজি এই অবলোকনকারীদের দৃষ্টিগোচর হয়।
এসব উৎসব ভিন্ন ব্যাপার। কিন্তু পুরনো বছর নতুন বছরের কাছে কী 'উপহার' দিল সেটাই আসল দেখার বিষয়। দেশের সাধারণ লোকেরা বছরের যাওয়া-আসা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামায় না। কারণ, তাদের জীবনে যা আসে-যায় তার কোনো তারিখ নেই। উপরন্তু এমন ধারাবাহিকতা আছে যেখানে তারিখ নিয়ে মাথা ঘামানোর বা উৎসব করার কিছু নেই।
বাংলাদেশে ২০১১ সালের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, এ বছরে সমাজের মধ্যে, সমগ্র শাসন ব্যবস্থার মধ্যে, ভাঙন এবং বিশৃঙ্খলা, এমনকি নৈরাজ্য এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, যার পূর্ব দৃষ্টান্ত নেই। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যে উত্তরোত্তর ঘটছে এ নিয়ে কোনো সংশয় কোথাও নেই, তবে বিতর্ক আছে। এই অবনতির জন্য সরকারি লোকজন দায়ী করে বিরোধী পক্ষকে এবং বিরোধী পক্ষ এর জন্য দায়ী করে সরকারকে। যারা সরকার ও বিরোধী পক্ষের এই মতামতের বাইরে থাকে তারা এর জন্য দায়ী করে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে। তাদের মতে, আসল ভাঙন ঘটছে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে। সরকার এই রাষ্ট্রযন্ত্রের ম্যানেজার হিসেবে এই প্রক্রিয়ার মধ্য থেকে কাজ করছে।
২০১১ সালের শেষে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে রিপোর্টে দেখা যায় গুপ্তহত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি। এটা আসলে এক মারাত্মক ও বিপজ্জনক ব্যাপার। বিশেষ করে এ কাজের সঙ্গে যদি সরকারি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী নামে পরিচিত সংস্থাগুলোর সম্পর্ক থাকে। বাংলাদেশে অপরাধের ক্রমাগত সংখ্যা বৃদ্ধির সব থেকে বাস্তব ও গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, অপরাধীর শাস্তির কোনো ব্যবস্থা না থাকা। শুধু তাই নয়, অপরাধীকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে সরকারি ও প্রভাবশালী নানা চক্র এখানে সংগঠিতভাবে নিযুক্ত থাকে। সরকারি বা পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা যে ব্রিটিশ বা পাকিস্তানি আমলের থেকে বাংলাদেশে বেশি এবং অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি লাভ করেছে, এ নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। যেসব তথ্য সংবাদপত্র প্রতিবেদন, এমনকি সরকারি সূত্র থেকেও জানা যায়, তার মধ্যেই এর স্বীকৃতি আছে। সরকারি হেফাজতে এভাবে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি, ক্রসফায়ারে নিয়মিত সরকারি হত্যাকাণ্ড দেশে ও বিদেশে বহুলভাবে সমালোচিত হওয়ার পর এখন তার সংখ্যা কিছুটা কমলেও যেভাবে গুপ্তহত্যা অর্থাৎ মানুষকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা ব্যাপকভাবে সর্বস্তরের মানুষ এক আতঙ্কের ব্যাপার হিসেবে দেখছে। কারণ, এভাবে মানুষকে হত্যা করলে তার কোনো হদিস বের করা এক কঠিন, প্রায় দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাছাড়া এভাবে ঘটনা ঘটতে থাকলে সাধারণভাবে নিরাপত্তা বলতে কারও কিছু থাকে না। শুধু তাই নয়, যখন স্পষ্ট বোঝা যায় যে, এ কাজ সরকারিভাবে হচ্ছে তখন বেসরকারি লোকজন নিজেদের অনেক রকম ব্যক্তিগত হিসাব মেটানোর জন্যও গুপ্তহত্যার আশ্রয় নিতে উৎসাহী হয়। ঠিক এটাই আজ বাংলাদেশে ঘটছে।
এই পরিস্থিতি যেখানে বিরাজ করছে সেখানে নতুন বছর যে পুরনো বছরের থেকে জনজীবনকে সমৃদ্ধ ও নিরাপদ করবে এমন আশা-ভরসার কোনো ভিত্তি নেই। বাস্তবত এই পরিস্থিতির মধ্যেই আমরা পুরনো বছরকে ফেলে নতুন বছরে প্রবেশ করেছি।
গুপ্তহত্যার বিষয়টি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির একটা দিক হিসেবে এখানে উল্লেখ করা হলো। বলা হলো এর মধ্যে বিপদ এবং আতঙ্কের কথা। সরকারিভাবে নতুন বছরের শুভ উদ্বোধন হিসেবে যেসব কথা বলা হচ্ছে ও কাজ করা হচ্ছে, তার মধ্যে বহুলভাবে প্রচারিত একটা বিষয় হলো, ১ জানুয়ারি নতুন বছরের উপহার হিসেবে স্কুলছাত্রদের হাতে নতুন বই পেঁৗছে দেওয়া! ছাত্রদের হাতে নতুন বছরে পাঠ্যপুস্তক পেঁৗছে দেওয়া বা তাদের কাছে এটা লভ্য হওয়া যে একটা বিশেষ ধুমধামের ব্যাপার হতে পারে এটা আগে কোনো দিন এভাবে ছিল না। ছাত্রদের কাছে নতুন ক্লাসের বই পেঁৗছে দেওয়ার প্রস্তুতি আগেকার দিনে যথাসময়ে শুরু করে তার কাজ বছর শেষের আগেই সম্পন্ন করা হতো। কাজেই ক্লাস শুরুর সময় বই না থাকার মতো অবস্থা আগেকার দিনে ছিল না। এই অবস্থা বাংলাদেশে এখন এমন এক সাধারণ ব্যাপার যাতে সময়মতো শিক্ষা বছরের শুরুতে বই পাওয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে এক উৎসবের ব্যাপার! যা নিয়ে সরকারি মহল অনেক মাতামাতি করতে পারে! জাহির করতে পারে নিজের কৃতিত্ব! কিন্তু দেশে দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলার এমনই অবস্থা যে, এই বহুল প্রচারিত পুস্তক বিতরণ উৎসবের মধ্যেও ঝামেলার ও দুর্নীতির খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, কেউ যদি ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যবই দেওয়ার সময় তাদের থেকে টাকাপয়সা নেয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু একই সঙ্গে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে, পাবনা শহরের কিছু স্কুলে পাঠ্যপুস্তক দেওয়ার জন্য ৫০-৬০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে ছাত্রদের কাছ থেকে (ডেইলি স্টার, ২.১.২০১২)! এটাই হলো বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা। এখানে সবকিছুর ওপরই দুর্নীতি থাবা বিস্তার করে আছে। কাজেই দুর্নীতি, গুপ্তহত্যাসহ আরও অনেক নেতিবাচক বিষয় নিয়ে ২০১১ সাল বাংলাদেশকে ঠেলে দিয়েছে ২০১২ সালে। এসব কথা যে দেশের একটা নেতিবাচক ভাবমূর্তি আঁকার জন্য বলা হচ্ছে তা নয়। এটা বলা হচ্ছে এ কারণে যে, যেভাবে ইংরেজি নববর্ষকে মহাউৎসবের সঙ্গে আবাহন করা হচ্ছে তার মধ্যে জনগণের জন্য আশা-ভরসার কিছু নেই। দুনিয়ার অন্যান্য দেশে কী হচ্ছে তার সঙ্গে এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশে যা হচ্ছে তার কোনো গাঁটছড়া বাঁধা সম্পর্ক নেই। আমাদের দেশের বাস্তব পরিস্থিতির দিকে আমাদেরই তাকাতে হবে। নতুন বছরের আগমন নিয়ে হৈহল্লা কমে এলে বা তা শেষ হলে এ ব্যাপারে মানুষের দৃষ্টি অনেক স্বচ্ছ হবে। তখন মানুষ স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করবে যে, পুরনো বছর ও নতুন বছরের মধ্যে যে ধারাবাহিকতা আছে তার হিসাব নিয়েই আমাদের ভবিষ্যতের কর্তব্য নির্ধারণ করতে হবে।
২.১.২০১২
২০১১ সালের শেষে এবারও নববর্ষের উৎসব বাংলাদেশে ঘটা করে পালন করা হয়েছে। এ জন্য পাঁচতারা হোটেলগুলোসহ অন্য অনেক জায়গায় ৩১ ডিসেম্বর রাতে অনেক আমোদ-ফুর্তির ব্যবস্থা ছিল। এসব হোটেল এবং আমোদ-ফুর্তির জায়গায় নাচ-গান ও সুরাপানের মধ্য দিয়েই নতুন বছরের আগমন। এই যাওয়া-আসা সমাজের অন্য স্তরের লোকের জীবনে ও গ্রামাঞ্চলের সাধারণ লোকদের জীবন স্পর্শ করে না। শহরাঞ্চলে নববর্ষের উৎসব যেভাবে পালিত হয় সেটাতে সাধারণ লোকদের, বিশেষত বিত্তহীনদের ভূমিকা থাকে অবলোকনকারী হিসেবে। হোটেল বা অন্য অনেক বিত্তশালীর বাড়িতে যে উৎসব হয় তার বাইরে নববর্ষের জৌলুসপূর্ণ কিছু অনুষ্ঠান ও আলোকবাজি এই অবলোকনকারীদের দৃষ্টিগোচর হয়।
এসব উৎসব ভিন্ন ব্যাপার। কিন্তু পুরনো বছর নতুন বছরের কাছে কী 'উপহার' দিল সেটাই আসল দেখার বিষয়। দেশের সাধারণ লোকেরা বছরের যাওয়া-আসা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামায় না। কারণ, তাদের জীবনে যা আসে-যায় তার কোনো তারিখ নেই। উপরন্তু এমন ধারাবাহিকতা আছে যেখানে তারিখ নিয়ে মাথা ঘামানোর বা উৎসব করার কিছু নেই।
বাংলাদেশে ২০১১ সালের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, এ বছরে সমাজের মধ্যে, সমগ্র শাসন ব্যবস্থার মধ্যে, ভাঙন এবং বিশৃঙ্খলা, এমনকি নৈরাজ্য এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, যার পূর্ব দৃষ্টান্ত নেই। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যে উত্তরোত্তর ঘটছে এ নিয়ে কোনো সংশয় কোথাও নেই, তবে বিতর্ক আছে। এই অবনতির জন্য সরকারি লোকজন দায়ী করে বিরোধী পক্ষকে এবং বিরোধী পক্ষ এর জন্য দায়ী করে সরকারকে। যারা সরকার ও বিরোধী পক্ষের এই মতামতের বাইরে থাকে তারা এর জন্য দায়ী করে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে। তাদের মতে, আসল ভাঙন ঘটছে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে। সরকার এই রাষ্ট্রযন্ত্রের ম্যানেজার হিসেবে এই প্রক্রিয়ার মধ্য থেকে কাজ করছে।
২০১১ সালের শেষে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে রিপোর্টে দেখা যায় গুপ্তহত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি। এটা আসলে এক মারাত্মক ও বিপজ্জনক ব্যাপার। বিশেষ করে এ কাজের সঙ্গে যদি সরকারি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী নামে পরিচিত সংস্থাগুলোর সম্পর্ক থাকে। বাংলাদেশে অপরাধের ক্রমাগত সংখ্যা বৃদ্ধির সব থেকে বাস্তব ও গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, অপরাধীর শাস্তির কোনো ব্যবস্থা না থাকা। শুধু তাই নয়, অপরাধীকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে সরকারি ও প্রভাবশালী নানা চক্র এখানে সংগঠিতভাবে নিযুক্ত থাকে। সরকারি বা পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা যে ব্রিটিশ বা পাকিস্তানি আমলের থেকে বাংলাদেশে বেশি এবং অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি লাভ করেছে, এ নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। যেসব তথ্য সংবাদপত্র প্রতিবেদন, এমনকি সরকারি সূত্র থেকেও জানা যায়, তার মধ্যেই এর স্বীকৃতি আছে। সরকারি হেফাজতে এভাবে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি, ক্রসফায়ারে নিয়মিত সরকারি হত্যাকাণ্ড দেশে ও বিদেশে বহুলভাবে সমালোচিত হওয়ার পর এখন তার সংখ্যা কিছুটা কমলেও যেভাবে গুপ্তহত্যা অর্থাৎ মানুষকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা ব্যাপকভাবে সর্বস্তরের মানুষ এক আতঙ্কের ব্যাপার হিসেবে দেখছে। কারণ, এভাবে মানুষকে হত্যা করলে তার কোনো হদিস বের করা এক কঠিন, প্রায় দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাছাড়া এভাবে ঘটনা ঘটতে থাকলে সাধারণভাবে নিরাপত্তা বলতে কারও কিছু থাকে না। শুধু তাই নয়, যখন স্পষ্ট বোঝা যায় যে, এ কাজ সরকারিভাবে হচ্ছে তখন বেসরকারি লোকজন নিজেদের অনেক রকম ব্যক্তিগত হিসাব মেটানোর জন্যও গুপ্তহত্যার আশ্রয় নিতে উৎসাহী হয়। ঠিক এটাই আজ বাংলাদেশে ঘটছে।
এই পরিস্থিতি যেখানে বিরাজ করছে সেখানে নতুন বছর যে পুরনো বছরের থেকে জনজীবনকে সমৃদ্ধ ও নিরাপদ করবে এমন আশা-ভরসার কোনো ভিত্তি নেই। বাস্তবত এই পরিস্থিতির মধ্যেই আমরা পুরনো বছরকে ফেলে নতুন বছরে প্রবেশ করেছি।
গুপ্তহত্যার বিষয়টি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির একটা দিক হিসেবে এখানে উল্লেখ করা হলো। বলা হলো এর মধ্যে বিপদ এবং আতঙ্কের কথা। সরকারিভাবে নতুন বছরের শুভ উদ্বোধন হিসেবে যেসব কথা বলা হচ্ছে ও কাজ করা হচ্ছে, তার মধ্যে বহুলভাবে প্রচারিত একটা বিষয় হলো, ১ জানুয়ারি নতুন বছরের উপহার হিসেবে স্কুলছাত্রদের হাতে নতুন বই পেঁৗছে দেওয়া! ছাত্রদের হাতে নতুন বছরে পাঠ্যপুস্তক পেঁৗছে দেওয়া বা তাদের কাছে এটা লভ্য হওয়া যে একটা বিশেষ ধুমধামের ব্যাপার হতে পারে এটা আগে কোনো দিন এভাবে ছিল না। ছাত্রদের কাছে নতুন ক্লাসের বই পেঁৗছে দেওয়ার প্রস্তুতি আগেকার দিনে যথাসময়ে শুরু করে তার কাজ বছর শেষের আগেই সম্পন্ন করা হতো। কাজেই ক্লাস শুরুর সময় বই না থাকার মতো অবস্থা আগেকার দিনে ছিল না। এই অবস্থা বাংলাদেশে এখন এমন এক সাধারণ ব্যাপার যাতে সময়মতো শিক্ষা বছরের শুরুতে বই পাওয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে এক উৎসবের ব্যাপার! যা নিয়ে সরকারি মহল অনেক মাতামাতি করতে পারে! জাহির করতে পারে নিজের কৃতিত্ব! কিন্তু দেশে দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলার এমনই অবস্থা যে, এই বহুল প্রচারিত পুস্তক বিতরণ উৎসবের মধ্যেও ঝামেলার ও দুর্নীতির খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, কেউ যদি ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যবই দেওয়ার সময় তাদের থেকে টাকাপয়সা নেয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু একই সঙ্গে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে, পাবনা শহরের কিছু স্কুলে পাঠ্যপুস্তক দেওয়ার জন্য ৫০-৬০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে ছাত্রদের কাছ থেকে (ডেইলি স্টার, ২.১.২০১২)! এটাই হলো বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা। এখানে সবকিছুর ওপরই দুর্নীতি থাবা বিস্তার করে আছে। কাজেই দুর্নীতি, গুপ্তহত্যাসহ আরও অনেক নেতিবাচক বিষয় নিয়ে ২০১১ সাল বাংলাদেশকে ঠেলে দিয়েছে ২০১২ সালে। এসব কথা যে দেশের একটা নেতিবাচক ভাবমূর্তি আঁকার জন্য বলা হচ্ছে তা নয়। এটা বলা হচ্ছে এ কারণে যে, যেভাবে ইংরেজি নববর্ষকে মহাউৎসবের সঙ্গে আবাহন করা হচ্ছে তার মধ্যে জনগণের জন্য আশা-ভরসার কিছু নেই। দুনিয়ার অন্যান্য দেশে কী হচ্ছে তার সঙ্গে এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশে যা হচ্ছে তার কোনো গাঁটছড়া বাঁধা সম্পর্ক নেই। আমাদের দেশের বাস্তব পরিস্থিতির দিকে আমাদেরই তাকাতে হবে। নতুন বছরের আগমন নিয়ে হৈহল্লা কমে এলে বা তা শেষ হলে এ ব্যাপারে মানুষের দৃষ্টি অনেক স্বচ্ছ হবে। তখন মানুষ স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করবে যে, পুরনো বছর ও নতুন বছরের মধ্যে যে ধারাবাহিকতা আছে তার হিসাব নিয়েই আমাদের ভবিষ্যতের কর্তব্য নির্ধারণ করতে হবে।
২.১.২০১২
No comments