বাসাবাড়িতে আর গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে না by সবুজ ইউনুস

বাসিক খাতে আর কখনও পাইপলাইনে গ্যাস সংযোগ দেবে না সরকার। তবে শিল্প ও বাণিজ্য খাতে আগামী মার্চ মাস থেকে ফের গ্যাস সংযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রে এ খবর জানা গেছে।দু'বছরের বেশি সময় ধরে গ্যাসের সব ধরনের সংযোগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় দেশে ব্যাপকভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকট চলছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে তেমন


কাজ না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নাজুক হওয়ার কারণে বর্তমান সরকার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে সারাদেশে সব ধরনের নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ করে। এমনকি বিদ্যুতের নতুন সংযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত বছরের প্রথম দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া শুরু হয়। তবে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শিল্প ও বাণিজ্য খাতে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হবে। কারণ শিল্প-কলকারখানা ও বাণিজ্যিক খাতে নতুন সংযোগ না দেওয়ায় ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। তবে আবাসিক খাত অর্থাৎ বাসাবাড়িতে আর কখনোই পাইপলাইনে গ্যাসের
সংযোগ দেওয়া হবে না। নতুন বাসাবাড়িতে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারে উৎসাহিত করা হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে পাইপলাইনের মাধ্যমে আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয় না। কারণ এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়। অতি মূল্যবান গ্যাস সম্পদ সরকার শিল্প ও বাণিজ্য খাতে ব্যবহার করতে চায়।
পেট্রোবাংলার হিসাবমতে, বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন হয় ২০৪ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে আবাসিক সংযোগে দৈনিক ব্যবহার হয় ২৪ কোটি ৪৮ লাখ ঘনফুট। অর্থাৎ মোট উৎপাদিত গ্যাসের ১২ শতাংশ ব্যবহার হয় বাসাবাড়িতে। যদিও বর্তমানে আবাসিক সংযোগেই গ্যাসের চাহিদা সাড়ে ২৭ কোটি ঘনফুট। একইভাবে মোট উৎপাদিত গ্যাসের ১৭ শতাংশ শিল্পে এবং মাত্র এক শতাংশ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়। এখনও শিল্পে প্রায় ৯ কোটি এবং বাণিজ্যে এক কোটি ঘনফুট গ্যাস ঘাটতি রয়েছে। আবেদন অনুযায়ী শিল্প ও বাণিজ্যে নতুন সংযোগ দিতে গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে হবে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, নতুন গ্যাস সংযোগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠলেও প্রথমে সবাই এ সুযোগ পাচ্ছেন না। প্রথম পর্যায়ে দেওয়া হবে অগ্রাধিকারভিত্তিতে। সরকারের করা দুটি তালিকার শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিকরাই প্রথমে সংযোগ পাবেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম সমকালকে বলেন, ১০০টি সংযোগের জন্য যে দুটি তালিকা করা হয়েছে তাদের সংযোগ দেওয়া হলে তাতে সর্বোচ্চ ৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস লাগতে পারে। গ্যাসের উৎপাদন যে হারে বাড়ছে তাতে আগামী মার্চ নাগাদ এ দুই তালিকা ধরে সংযোগ দেওয়া যাবে। দৈনিক উৎপাদন ২২০ কোটি ঘনফুটে পেঁৗছানোর পর নতুন সংযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই সংযোগ দেওয়া হবে। এরই মধ্যে ৩৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বেড়েছে। এ ছাড়া এই জানুয়ারিতেই ফেঞ্চুগঞ্জ-৪ নম্বর কূপ থেকে সাড়ে তিন থেকে চার কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে আসবে। ফেব্রুয়ারিতে মুচাইয়ে কমপ্রেসার বসানো হলে সিলেট অঞ্চল থেকে আরও গ্যাস নেওয়া যাবে বলে তিনি জানান।
বর্তমানে শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের জন্য দেশের পাঁচটি বিতরণ সংস্থায় প্রায় হাজারখানেক আবেদন ঝুলে আছে। এ ছাড়া আবাসিক সংযোগের জন্য বিপুলসংখ্যক আবেদন জমা আছে। গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় বাড়ি অথবা ফ্ল্যাট নির্মাণ করেও ২০ হাজার ফ্ল্যাট বা বাড়িতে সংশ্লিষ্ট মালিকরা উঠতে পারছেন না। রিহ্যাবের হিসাবে, শুধু ঢাকায় আবাসন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ১৬ হাজার ফ্ল্যাট মালিকদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ বলেছিল, গ্যাস ও এলপিজির সরবরাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হবে। বাস্তবে আবাসিকসহ সব ধরনের নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকলেও এলপিজিকে এখনও সহজলভ্য এবং ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা যায়নি। আবাসিক সংযোগ পেতে ইচ্ছুক গ্রাহকরা বলছেন, বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা না করে আবাসিকে নতুন সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হয়নি।
এ বছরের শেষ নাগাদ গ্যাসের চাহিদা আরও ৫০ কোটি ঘনফুট বাড়বে। তবে পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা অনুযায়ী, নানামুখী পদক্ষেপের ফলে এ বছর ১৭৮ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়বে। ২০১৫ সালে এটা ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ঘনফুটে উন্নীত হবে। তখন দেশে গ্যাসের চাহিদা অনুযায়ী উদ্বৃত্ত থাকবে বলে সরকার আশা করছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে এখন পর্যন্ত দৈনিক ৬৯ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে। এর মধ্যে সরবরাহ বেড়েছে ৩৫ কোটি ঘনফুট। মুচাই, আশুগঞ্জ ও এলেঙ্গায় কমপ্রেসার স্থাপনের পাশাপাশি প্রক্রিয়াধীন সঞ্চালন লাইনগুলো বসলে বাকি ৩৪ কোটি ঘনফুট গ্যাসও ব্যবহার করা যাবে।

No comments

Powered by Blogger.