আর কত রূপা বৈষম্যের শিকার হবে? by অনুপম

র্ণবৈষম্যের শিকার হয়ে রূপা রানী সরকার নামে এক গৃহবধূর জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে। সমকালে ২৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী রূপা রানী সরকার একজন দন্ত চিকিৎসক। তিনি ভালোবেসে বিয়ে করেন সাগর চন্দ্রকে। রূপা নমঃশূদ্র ও সাগর কায়স্থ বর্ণের হওয়ায় পরিবার এ বিয়ে মেনে নিতে পারেনি। বিয়ের পর রূপা শ্বশুর ও শাশুড়ির কাছ থেকে স্বাভাবিক ব্যবহার পেতেন না, এমনকি তার রান্না করা খাবার পর্যন্ত তারা খেতেন না। তাই রূপা স্বামীকে নিয়ে আলাদা


সংসার করতে চেয়েছিলেন। এরপরই ক্ষুব্ধ শাশুড়ি ভাড়াটে লোক দিয়ে রূপাকে খুন করান। এ হলো এক রূপার বর্ণবৈষম্যের শিকার হওয়ার কাহিনী। এরূপ কত রূপা সমাজের আনাচে-কানাচে বর্ণবৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, তার খবর হয়তো পত্রিকার পাতায় উঠে আসে না।
জাত ভাগের মর্মই হলো, এক জাত অন্য জাতের চেয়ে হয় উঁচু, না হয় নিচু। এই উঁচু-নিচু চেতনা অবৈজ্ঞানিক এবং সর্বনাশা চেতনা। এ চেতনায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকার ফলে শ্রমকারী নিম্নবর্ণের মানুষ সবাই যে উচ্চবর্গের অশ্রমজীবী শোষকের দ্বারা শোষিত হচ্ছে, তুচ্ছ-নিচু বলে ঘৃণিত ও অবহেলিত হচ্ছে, তা উপলব্ধি করতে পারে না।
সমাজ থেকে অসাম্য দূর করতে হলে, সমাজ থেকে বর্ণপ্রথা বিদায় করতে হলে, বিশ্বের দলিত, পতিত মানবকুলকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। অবিদ্যার আঁধার থেকে মুক্ত করতে হবে। মানুষকে উদার ও মানবপ্রেমের শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। মানুষের মনের শক্তিকে জাগ্রত করে তুলতে হবে। তাহলেই মানুষ হিসেবে আমরা হবো সার্থক। সমাজ হবে শোষণমুক্ত। আর কোনো রূপাকে বর্ণবাদের জাঁতাকলে জীবন দিতে হবে না। আর যদি তা করতে ব্যর্থ হই, তবে সমাজের এ দায় এড়িয়ে যাওয়ার কোনো পথ আমাদের নেই।
হ প্রভাষক, সিএসই ডিসিপ্লিন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.