বীর আর্টেমিসিয়া

লা হয়, নারীরা অবলা, দুর্বল। কিন্তু ইতিহাস তা বলে না। কালে কালে পৃথিবীতে এমন কিছু নারী আবির্ভূত হয়েছিলেন, যারা সভ্যতা বিকাশে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। প্রয়োজনের তাগিদে রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান করেছেন, হাতে তুলে নিয়েছেন অস্ত্র। বীরদর্পে যুদ্ধ করে মাতৃভূমির মর্যাদা রেখেছেন সমুজ্জ্বল। দেশের জন্য তাদের সেই বিরল ভূমিকার কথা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে স্বর্ণাক্ষরে। এমনই এক বীর নারীর নাম প্রথম আর্টেমিসিয়া। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে তিনি


ছিলেন প্রাচীন পারস্যের পাশে খাড়া দেশ বলে খ্যাত ক্যারিয়ার রানী। স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনিই দেশটির হাল ধরেন। কিন্তু নারী বলে আশপাশের দেশগুলোর শাসকরা অনেকটা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। ভেবেছিলেন_ যাক বাবা, ক্যারিয়ার শাসককে যা বলা যাবে, বিনা বাক্য ব্যয়ে তা-ই তারা শুনবে। মজার ব্যাপার হলো, আর্টেমিসিয়ার স্বামী যখন দেশটির শাসক ছিলেন, তখন তিনি অত্যন্ত শক্তিশালী একটি সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। ফলে কোনো শত্রুই ক্যারিয়ার সঙ্গে পেরে ওঠেনি। দেশটি নিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর শাসকরা তেমন নাকও গলাননি।
স্বামীর মতোই রানী ছিলেন যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী। অসংখ্য যুদ্ধে স্বামীর সহযোদ্ধা হয়ে লড়ে গেছেন শত্রুর বিরুদ্ধে। সব ধরনের অস্ত্র চালনায় তার মতো দক্ষ সেনানী সেই আমলে প্রাচীন পারস্যের আশপাশের কোনো দেশেই ছিলেন না। পারস্যের শাসক তখন সম্রাট জাক্সিজ। তিনি রানীর কাছে বার্তা পাঠালেন, গ্রিক দখল করতে তাকে সবকিছু দিয়ে সাহায্য করতে। রানী প্রস্তাব পাওয়ার পর পারিষদবর্গের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে জাক্সিজের পক্ষ হয়ে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। গ্রিকরা অসংখ্য নৌযান নিয়ে শাঁ শাঁ করে ছুটে আসছে সমুদ্রের ঢেউ ভেঙে। রানীও নৌযান ছাড়লেন পাঁচটা। রণতরী ভর্তি অস্ত্র আর গোলাবারুদ। সৈন্যরাও সব সুঠামদেহের অধিকারী। ওই যুদ্ধে পারস্যের পক্ষ হয়ে যে কয়েকটি দেশ অংশগ্রহণ করে, তার মধ্যে নারী যোদ্ধা বলতে আর্টেমিসিয়াই। শুরু হলো যুদ্ধ। রানীর নেতৃত্বে একের পর এক কূটকৌশলে পরাস্ত হলো গ্রিক সেনাবাহিনী। জয় হলো পারস্য বাহিনীর। 'সালামিস যুদ্ধ' নামে খ্যাত সেই যুদ্ধে জয় লাভের পর সম্রাট জাক্সিজ আর্টেমিসিয়ার বীরত্বের প্রশংসা করে বলতে বাধ্য হন, পুরুষদের পাশাপাশি অকুতোভয় নারীর বীরত্বের কারণে আমরা জয়লাভ করতে সক্ষম হয়েছি। জয়তু নারী।
ঋতা আলম

No comments

Powered by Blogger.