হুবহু-বিএনপির চেয়ারপারসন অর্থের বিনিময়ে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়েছেন

সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান। কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী) আসনে দুইবার (১৯৯১, ১৯৯৬ সালে) বিএনপি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির সরাসরি যুদ্ধাপরাধের পক্ষ গ্রহণ, সরকারের উন্নয়নবহির্ভূত কর্মকাণ্ড ও রাজনৈতিক নানামুখী পরিস্থিতি নিয়ে ঠোঁটকাটা জবাবে কথা বলেছেন আমাদের সঙ্গে_যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসংক্রান্ত একটি জাতীয় দাবির বিপক্ষে বিএনপির অবস্থানকে কিভাবে নিরূপণ করবেন?


আমার তো মনে হয় না বিএনপি দলীয়ভাবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া রোডমার্চে গিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে যে অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছিলেন সেটা তাঁর ব্যক্তিগত। বিএনপি যদি রাজনৈতিকভাবেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে অবস্থান নিত তাহলে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করত। প্রয়োজনে নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকে সেখানে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিত। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্নজন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন। তাঁরা জামায়াতে ইসলামী থেকে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ায় এসব বক্তব্য দিচ্ছেন। এটা দলের বক্তব্য নয়। দলগতভাবে বিএনপি এ সিদ্ধান্তও নেয়নি যে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে। তবে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব বক্তব্য দিয়ে দলকে বিভ্রান্ত করছেন, নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাঁরা সরাসরি জামায়াতের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এ কাজ করছেন। সরকারের উচিত এসব ব্যক্তি কিভাবে সরকারের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন তা খতিয়ে দেখা। খালেদা জিয়া দলের ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আমি জেলে গেছে। আমি তাঁকে প্রশ্ন করছি, আপনি প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ২০০৬ সালে কেন এমন অবস্থা হলো? কেন আপনি সরকার ও দলকে সংঘাতের দিকে নিয়ে গেলেন? কেন ওয়ান-ইলেভেনের মতো ঘটনা ঘটল? নেতারা কেন জেলহাজতে গেলেন? গত ১০ বছরে দল কেন এগোয়নি? ২০০১ সালে যে দল বিপুলসংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করেছে, সেই দল ২০০৬ সালে কেন বিপর্যস্ত হলো? তিনি কেন এমন এক তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেছিলেন, যারা কোনো নির্বাচন করতে পারল না? ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভরাডুবির কারণ কী? কেন তিনি বাড়িঘর হারালেন? কার কথায় বাড়ি নিয়ে আদালতে গেলেন তিনি? সেই বাড়িটি ছিল জিয়ার স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি। কার কথায় তিনি যুদ্ধাপরাধের পক্ষে না বিপক্ষে সেই অবস্থান পরিষ্কার করছেন না? তিনি যুদ্ধাপরাধীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজের ও ছেলেদের জীবনকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলেছেন।

জাতীয় উন্নয়নবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মহাজোট সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিকে কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
আমি আমার দলের কথা জানি। অন্য দলের কথা বলতে পারব না। সরকার কী করছে সেটা জনগণ বিচার করবে। আমার ধারণা ছিল, জনগণ হয়তো সরকারের পক্ষে নয়। কিন্তু ঢাকা সিটি করপোরেশন দুই ভাগ করার পরও জনগণ যেভাবে নীরব থেকে গেল, তাতে মনে হয় বিশাল একটা অংশ এখনো সরকারের সঙ্গে রয়েছে। ডিসিসি ভাগ ও পরপর একই মাসে দুইবার তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরও জনগণ যখন রাস্তায় নেমে আসেনি, তাহলে আমি ধরে নিতে পারি জনগণের বৃহৎ একটি অংশ সরকারের সঙ্গে আছে। আমি-আপনি হয়তো অসন্তুষ্ট; কিন্তু জনগণের একটি বৃহৎ অংশ দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের সঙ্গে নেই। আমরা তাদের টানতে পারিনি। এমনকি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পরও কেউ মাঠে নামেনি।

বিরোধী দল হিসেবে বিএনপিও তো তেমন কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না?
বিএনপি জনগণের ভাষা বুঝতে পারছে না। তারা এক দিন রোডমার্চ করে পরের দিন ঘুমিয়ে থাকে। তারা চট্টগ্রাম রোডমার্চ করতে যাচ্ছে। আর একটু এগিয়ে লন্ডন গেলেও পারে। তাহলে আমরা বেঁচে যাই। এ দেশে তাদের আর না এলেই হবে।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের ভবিষ্যৎ কী?
দুই বছর পর আবার নির্বাচন হবে। আমরা যদি ভালো কাজ করতে না পারি তাহলে জনগণ আমাদের ভোট দেবে কেন? সারা ঢাকা শহর আওয়ামী লীগের নেতারা পোস্টার দিয়ে সয়লাব করে ফেলেছেন। এ অবস্থা দেখে মনে হয়, আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশে কোনো রাজনৈতিক দল নেই। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সম্পূর্ণ আন্ডারগ্রাউন্ডে। এটি সরকারের সফলতা।

সম্প্রতি পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ও লাঠিপেটা করে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পণ্ড করে দিয়েছে। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচিও করেছে সংগঠনটি। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
যেকোনো জাতির কিংবা দেশের কিছু লোক থাকেন, যাঁদের বলা হয় হার্ডকোর। তাঁরা সঠিক জিনিসটি বলার চেষ্টা করেন। আমাদের দেশে এ কমিটি দেশের স্বার্থটা দেখেন। তবে তেল-গ্যাস উত্তোলনের অক্ষমতা রয়েছে আমাদের। এর জন্য যে ধরনের অর্থনৈতিক ও কারিগরি সক্ষমতা দরকার, সেটা আমাদের নেই। গত ৪০ বছরে কোনো সরকারই এই সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করেনি। ফলে দেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। আমরা উত্তোলন করতে পারছি না বলেই লিজ দেওয়া হচ্ছে। আমরা ধান, চাল, আলু, কাপড় বিক্রি করতে পারি, তেল-গ্যাস বিক্রি করতে পারব না কেন? ওনারা যে কথাটা বলার চেষ্টা করছেন_এসব বিক্রি করবেন না। তাহলে এসব গ্যাস দিয়ে আমরা কী কবর? তবে সরকারের সুবিধাবাদী কিছু লোক তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির ওপর হামলা চালিয়েছে। এটা সরকার বলে দেয়নি।
সাক্ষাৎকার গ্রহণে : সফেদ সিরাজ

No comments

Powered by Blogger.