দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ হতে পারে পণ্যমূল্যের লাগাম by আবদুল কাইয়ুম
আমাদের দেশে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি আজ আর কোনো 'বিশেষ সংবাদ' নয়। এ পর্যন্ত আমাদের দেশে কোনো পণ্যের দাম বেড়েছে তো আর কমেনি। উন্নত দেশগুলোতে পণ্যসামগ্রীর দাম বাড়ার সমান্তরালে জনসাধারণের আয়ও বৃদ্ধি পায়। অথচ আমাদের দেশে আয় বাড়ে যদি এক পয়সা তো পণ্যের দাম বাড়ে তিন পয়সা। নিরুপায় মানুষগুলো ধর্মঘট করে, বেতন বৃদ্ধির জন্য আন্দোলনে নামে। এতে কলকারখানা, যানবাহন, অফিস-আদালত এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত বন্ধ হয়।
শেষ পর্যন্ত বেতনও বাড়ে। তবে আসল সমস্যার সমাধান সম্ভব হয় না। আয় কিছুটা বাড়তে না বাড়তেই পণ্যমূল্য এত বেশি উঁচুতে পেঁৗছায় যে, সাধারণ মানুষ তার নাগাল পায় না। ফলে বাঁধাধরা আয়ের অতৃপ্ত মানুষগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অল্প জিনিস কেনে। অর্থাৎ নিজেরাই নিজেদের রেশনে কাটছাঁট করে অদ্ভুত এক আত্মনিপীড়নের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। এই যে গগনচুম্বী পণ্যমূল্য বৃদ্ধি_ এর একটি কারণ নিশ্চয়ই চাহিদার তুলনায় জোগানের অপ্রতুলতা। সীমাবদ্ধ জিনিসের জন্য অগণিত ক্রেতার ভিড় এবং পরিণামে তীব্র প্রতিযোগিতা। বাঁধাধরা আয়ের মানুষ এ প্রতিযোগিতায় হটে যায়, জেতে মুষ্টিমেয় বিত্তবান। অসাধু ব্যবসায়ীও পণ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এবং বাড়তি দামে বাজারে ছাড়ে। এতে তাদের পকেট ফুলে-ফেঁপে ওঠে বটে, জনসাধারণের পকেট কাটা যায়।
অর্থশাস্ত্রে বলা হয়_ যেখানে বিনিয়োগ নেই, সেখানে উৎপাদনও নেই। বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন সঞ্চয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস ওঠা সিংহভাগ মানুষ যেখানে দু'বেলা দু'মুঠো খেতেই পায় না, সেখানে তারা সঞ্চয় করবে কোত্থেকে?
পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পেছনে দুর্নীতি সবচেয়ে বড় কারণ। দুর্নীতি এ দেশের কোথায় নেই? রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিজের স্বার্থে ব্যবহার, ঘুষ বা কমিশনের বিনিময়ে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্যমূল্য বাড়ানো, বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে বরাদ্দ অর্থ আত্মসাৎ, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও খাতে ঘুষ লেনদেন, খাদ্য ও অন্যান্য উপকরণে ভেজাল, সরকারি কাজে দালালদের দৌরাত্ম্যসহ সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে এ দেশে। দুর্নীতির ফলে আমাদের সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের আয় আরও কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার ফলে তাদের ক্রয়ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে। একটি জরিপের ফল অনুযায়ী বাংলাদেশের ৯টি খাতে ২৫টি সেবা নিতে দেশের প্রায় ৭৪ শতাংশ লোক ঘুষ প্রদানে বাধ্য হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতে, বাংলাদেশে অবৈধ আয়ের পরিমাণই মোট জাতীয় আয়ের শতকরা ৩০-৩৪ ভাগ যা ১০ শতাংশ লোকের হাতে কুক্ষিগত।
দেশে সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও যে বিরাট বৈষম্য বিরাজ করছে সেটাও পণ্যমূল্য বৃদ্ধিজনিত সংকটে 'অবদান' রাখছে। অনেক অভিজ্ঞ ও মেধাবী শিক্ষক ২০-২৫ বছর ধরে চাকরি করার পরও পদোন্নতি না পাওয়ায় সমপদমর্যাদার একজন সরকারি কর্মচারীর সঙ্গে জীবনযাপনে সঙ্গতি খুঁজে পান না। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বাজারমূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে সুষম বেতন কাঠামো এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা আশু প্রয়োজন। উলেল্গখ্য, ভারতে এই বৈষম্য নেই বললেই চলে।
এমন হাজারো কারণ রয়েছে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে। তবে সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। দুর্নীতি কমালেই পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হতে পারে।
হ প্রভাষক, রৌমারী ডিগ্রি কলেজ, কুড়িগ্রাম
অর্থশাস্ত্রে বলা হয়_ যেখানে বিনিয়োগ নেই, সেখানে উৎপাদনও নেই। বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন সঞ্চয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস ওঠা সিংহভাগ মানুষ যেখানে দু'বেলা দু'মুঠো খেতেই পায় না, সেখানে তারা সঞ্চয় করবে কোত্থেকে?
পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পেছনে দুর্নীতি সবচেয়ে বড় কারণ। দুর্নীতি এ দেশের কোথায় নেই? রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিজের স্বার্থে ব্যবহার, ঘুষ বা কমিশনের বিনিময়ে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্যমূল্য বাড়ানো, বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে বরাদ্দ অর্থ আত্মসাৎ, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও খাতে ঘুষ লেনদেন, খাদ্য ও অন্যান্য উপকরণে ভেজাল, সরকারি কাজে দালালদের দৌরাত্ম্যসহ সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে এ দেশে। দুর্নীতির ফলে আমাদের সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের আয় আরও কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার ফলে তাদের ক্রয়ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে। একটি জরিপের ফল অনুযায়ী বাংলাদেশের ৯টি খাতে ২৫টি সেবা নিতে দেশের প্রায় ৭৪ শতাংশ লোক ঘুষ প্রদানে বাধ্য হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতে, বাংলাদেশে অবৈধ আয়ের পরিমাণই মোট জাতীয় আয়ের শতকরা ৩০-৩৪ ভাগ যা ১০ শতাংশ লোকের হাতে কুক্ষিগত।
দেশে সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও যে বিরাট বৈষম্য বিরাজ করছে সেটাও পণ্যমূল্য বৃদ্ধিজনিত সংকটে 'অবদান' রাখছে। অনেক অভিজ্ঞ ও মেধাবী শিক্ষক ২০-২৫ বছর ধরে চাকরি করার পরও পদোন্নতি না পাওয়ায় সমপদমর্যাদার একজন সরকারি কর্মচারীর সঙ্গে জীবনযাপনে সঙ্গতি খুঁজে পান না। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বাজারমূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে সুষম বেতন কাঠামো এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা আশু প্রয়োজন। উলেল্গখ্য, ভারতে এই বৈষম্য নেই বললেই চলে।
এমন হাজারো কারণ রয়েছে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে। তবে সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। দুর্নীতি কমালেই পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হতে পারে।
হ প্রভাষক, রৌমারী ডিগ্রি কলেজ, কুড়িগ্রাম
No comments