প্রতিশ্রুতির বন্যায় ভাসছে কুমিল্লা by সাবি্বর নেওয়াজ ও মাসুক আলতাফ চৌধুরী

মস্যা আর সংকটের পাহাড় যত বড়, প্রতিশ্রুতির পাহাড় তার চেয়েও বড়। এমনই অবস্থা এখন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনী এলাকার। মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী আসনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরাও প্রতিশ্রুতি প্রদানে কেউ কারও চেয়ে পিছিয়ে নেই। গণসংযোগ, সমাবেশ, উঠান বৈঠক, এমনকি টেলিভিশন টক শোতেও প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের নানা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তারা।


কুমিল্লা মহানগরীর যানজট নিরসন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাস্তাঘাট উন্নয়ন, স্বাস্থ্য-শিক্ষার উন্নয়ন এমনকি নতুন সেবাধর্মী ও বিনোদনমূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রতিশ্রুতি ভোটারদের দেওয়া হচ্ছে। সমকালের তরফ থেকে কুসিক নির্বাচনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। আনারস প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাডভোকেট আফজল খান ভোটারদের মাঝে দিয়েছেন তার
মহাপরিকল্পনার বিবরণ। অন্যদিকে হাঁস প্রতীক নিয়ে মাঠে থাকা বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুও তুলে ধরছেন তার ওয়াদাগুলো। আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী চশমা প্রতীকের নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম ও জাহাজ প্রতীকের আনিসুর রহমান মিঠু তাদের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরার পাশাপাশি বেশি করে বলছেন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথা।
অ্যাডভোকেট আফজল খান : সরকারি দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী নগরবাসীর জন্য ৭ পাতা নগর
মহাপরিকল্পনা
পেশ করেছেন ভোটারদের কাছে। এটাকে তিনি বলছেন তার নির্বাচনী ইশতেহার। তার মতে, শুধু হাইরাইজ বিল্ডিং নির্মাণ করেই কুমিল্লাকে উন্নত করা যাবে না। তার সঙ্গে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ খাবার পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি ঘনবসতিপূর্ণ এ জেলার সিটি করপোরেশনকে আয়তনে বাড়ানোর কথা বলেছেন। তার মতে শাসনগাছা ও পদুয়ার বাজারে ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে হবে। রাস্তা মেরামত ও নির্মাণে পরিকল্পনা নিতে হবে। বিজয়ী হলে তিনি এসব কাজ করবেন। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নগরীর প্রধান সমস্যা। যৌথ প্রকল্প গ্রহণ ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এ ছাড়া তিনি স্কুল-কলেজ, সদর দক্ষিণে হাসপাতাল, ডিজিটাল লাইব্রেরি, তথ্য প্রযুক্তিকেন্দ্র গড়ে তোলার কথা বলেন। এ ছাড়া তিনি পার্ক, চিড়িয়াখানা, বন্ধ হয়ে যাওয়া এয়ারপোর্ট চালু, আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম নির্মাণ ও কবরস্থান এবং শ্মশানের আধুনিকায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
মনিরুল হক সাক্কু : কুমিল্লা পৌরসভার সদ্যবিদায়ী মেয়র হিসেবে মনিরুল হক সাক্কু উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন। আপনার সময়ে কি কি উন্নয়ন করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নগরীর প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ড্রেন পরিষ্কার করেছি। সৌন্দর্য বর্ধনে বাগান ও ফোয়ারা স্থাপন করা হয়েছে। নগর মাতৃসদন নির্মাণ করা হয়েছে। নিউমার্কেট আধুনিক করে বহুতল মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। দরিদ্রদের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে যা এখনও চলছে। নির্বাচিত হলে কি করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, নগরীর রাজগঞ্জে আধুনিক বহুতল বাজার নির্মাণ করব, শিশু পার্কের মডেল করা হয়েছিল তা অনুযায়ী আধুনিক শিশু পার্ক নির্মাণ করা হবে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে স্যুয়ারেজ পাইপলাইন বসানো হবে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় মসজিদ, ঈদগাহের আধুনিকায়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা হবে। খাবার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করব। তিনি আরও বলেন, সড়ক মেরামত ও উন্নয়ন এবং সড়কে বাতি জ্বালানো জরুরি হয়ে পড়েছে। এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেব। বস্তিবাসীদের উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে নাগরিক সুবিধা গ্রহণ করা হবে।
এয়ার আহমেদ সেলিম : তিনি কেন্দ্রীয় মসজিদ নির্মাণের কথা জোর দিয়ে বলেছেন। তার মতে মেয়র নির্বাচিত হলে তিনি প্রথমেই এ নগরকে মাদক, সন্ত্রাস ও চোরাচালানমুক্ত করবেন।
প্রচারের শেষ দিন আজ : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আর বাকি ৪৮ ঘণ্টা। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার আজ রাত ১২টায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। বহিরাগত সবাইকে আজ মধ্যরাতের মধ্যে কুমিল্লা নগরী ছেড়ে চলে যেতে হবে। বুধবার থেকে তাদের পাওয়া গেলে দ দেবেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ভোটার নন, স্থায়ী বাসিন্দা ও বসবাসকারী নন_ এমন লোকদের বহিরাগত বলা হচ্ছে। বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সীমানা এলাকায় বিজিবি পাহারায় থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.