রাজনৈতিক সদিচ্ছা না নির্বাচনী কৌশল?-খাদ্য নিরাপত্তা by ফারহাত জাহান
ভারতে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা বিল-২০১১ আমাদের চিন্তাকে প্রসারিত করে। আমরা কি তাকে কংগ্রেস সরকারের নির্বাচনী বৈতরণী পারের কৌশল বলে পাস কাটিয়ে যাব, না খাদ্য অধিকার প্রতিষ্ঠার দিকে এক অগ্রযাত্রা বলে বিবেচনা করব? অথবা আমরা কি এটাকে খাদ্য অধিকার আদায়ের পথে এক দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করব? সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে খাদ্য নিরাপত্তা বিল উপস্থাপিত হয়ে গেল। হয়ে গেল এর পক্ষে-বিপক্ষে সমালোচনা, পর্যালোচনা ও আলোচনা।
এ বিল পাসের মাধ্যমে ভারতকে প্রায় ২১ হাজার কোটি রুপির অতিরিক্ত ভর্তুকির দায়িত্ব বহন করতে হবে; যার মাধ্যমে গ্রামের ৭৫ শতাংশ ও শহরের ৫০ শতাংশ লোক খাদ্য নিরাপত্তার আওতায় চলে আসবে। ধারণা করা হচ্ছে, জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা এমন একটি কাঠামো, যার মাধ্যমে গ্রাম ও শহরাঞ্চলের দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী পরিবারগুলো প্রতি মাসে ২৫ কিলোগ্রাম গম বা চাল বা প্রয়োজনীয় দানা শস্য ১ থেকে ৩ রুপির মধ্যে কিনতে পারবে। এ বিলে কৃষিতে বিনিয়োগ, গবেষণা, উন্নয়ন, গুদামজাতকরণসহ ঢ়ঁনষরপ ফরংঃৎরনঁঃরড়হ ংুংঃবস-কেও বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
যদিও ভারত প্রযুক্তি ও শিল্পায়নে অনেক এগিয়েছে এবং বর্তমানে বিশ্বের ক্রমবর্ধমান বিকশিত অর্থনীতির দেশগুলোর অন্যতম একটি দেশ, তবুও বিশ্বের বিশালসংখ্যক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাস এখানে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতের আটটি রাজ্যের দরিদ্র মানুষের সংখ্যা সাব-সাহারান আফ্রিকার ২৬টি দেশের চেয়ে বেশি। ২০১১ সালের বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী শতকরা প্রায় ৫৫ ভাগ ভারতবাসী দরিদ্র এবং শতকরা ২৭.৫ ভাগ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। আর ২০১১ সালের গ্গ্নোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স অনুযায়ী তা ২২.৯ থেকে ২৩.৭-এর মধ্যে। পৃথিবীর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দরিদ্রের আবাসভূমি এ ভারত, যেখানে প্রতিবছর শতকরা ৭০ ভাগ শিশু অপুষ্টির শিকার এবং প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধাজনিত রোগে ভুগছে। ১২০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতের এ চিত্র আমাদের চিন্তিত হতে বাধ্য করে। এ রকম এক বাস্তবতায় জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা-২০১১ বিলের আগমন গুরুত্বের দাবি রাখে। এটিকে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী বিল বলা যায়। যদিও এর বিপরীতে বলা হচ্ছে, রাজ্য সরকারগুলো এটা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়বে। কেননা যথাযথ অর্থ তহবিল বরাদ্দ, খাদ্যশস্যের উৎস শনাক্ত ও বাস্তবায়নের মহাপরিকল্পনা ছাড়াই এ বিল সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। বিরোধী দলগুলো এটাকে কংগ্রেস সরকারের ২০১২ অ্যাসেমবি্ল নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিস্থিতি মোকাবেলার একটি রাজনৈতিক কৌশল বলে আখ্যা দিয়েছে। সমালোচকরা বলছে, রাজনীতি ও অর্থনীতি কোনোটাই বর্তমান সরকারের পক্ষে নয়। এমতাবস্থায় আসন্ন নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার জন্য এটাকে কৌশল হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ ভারতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। কেননা চলমান অর্থবছরে মুদ্রাস্টম্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, রাজস্ব আদায়ের নিম্নগতি এবং ভর্তুকির উচ্চ ব্যয় অর্থনীতিকে নতুন ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। যা সরকারের চলমান অর্থবছরে দেশজ উৎপাদনের (২০১১-১২) শতকরা ৪.৬ ভাগ বার্ষিক ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যমাত্রাকে একটি হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। তাই বিরোধীদের মতে, জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা বিল বর্তমানে একটি বাড়তি বোঝা।
অন্যদিকে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা বিলের সমর্থনে বলা হচ্ছে, যেখানে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দরিদ্রের বসবাস ভারতে, সেখানে এ ধরনের একটি উদ্যোগ ক্ষুধামুক্ত ভারত গড়ার মাইলফলক উন্মোচন করবে। তবে প্রয়োজন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিস্তৃতির সঙ্গে সমবণ্টনের মিলন ঘটানো। ভারতের বাস্তবতায় এটা ঘটেনি। তাই বিশ্বের অন্যতম একটি বিকাশমান অর্থনীতির দেশ হওয়া সত্ত্বেও তা একই সঙ্গে বিস্তৃত দরিদ্র জনসংখ্যার দেশও বটে। গ্গ্নোবাল হাঙ্গার রিপোর্ট অনুযায়ী তা আফ্রিকার মোজাম্বিক, মাদাগাস্কার ও সিয়েরালিওনকে ছাড়িয়ে যায়। তাই চলমান মন্দা অর্থনীতির দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রের দায়িত্ব এড়ানো যাবে না; বপড়হড়সরপ মৎড়ঃিয বা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ন্যায্য হিস্যা থেকে গ্রামীণ ও প্রান্তিক মানুষকে ভারতে বঞ্চিত করা যাবে না। প্রয়োজন রয়েছে সরকারি হস্তক্ষেপের, নতুন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের। শুধু ভর্তুকি প্রদানের জনপ্রিয় খাদ্য নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরেও কিছু প্রায়োগিক অধিকারভিত্তিক কর্মসূচির উদ্যোগ নিতে হবে, যার জন্য প্রয়োজন শিক্ষার অধিকার ও কর্মসংস্থানের অধিকার নিশ্চিত করা। যা প্রকারান্তরে, মানবাধিকার, উন্নয়ন ও খাদ্য অধিকারকে সংরক্ষণ করবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফিরে তাকালে আমরা দেখি, যদিও আমরা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কিছু অগ্রগতি সাধন করছি তবুও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও দারিদ্র্য বিদ্যমান। কেননা ১৬ কোটি লোকের মধ্যে ৬ কোটি আজও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। বাংলাদেশের ঞযব ঘধঃরড়হধষ ঝঃৎধঃবমু ভড়ৎ অপপবষবৎধঃবফ চড়াবৎঃু জবফঁপঃরড়হ (ঘঝঅচজ) ওও (২০০৯-২০১১), ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-২০১৫) খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে। জাতীয় খাদ্যনীতি (২০০৬) ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনকে গুরুত্ব দিয়েছে। ২০১১-১২ বার্ষিক অর্থবছরেও খাদ্য নিরাপত্তাকে গুরুত্বর্পূণ ইস্যু হিসেবে দেখা হয়েছে এবং বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার (এডিপি) আওতায় কৃষি, গ্রাম উন্নয়ন ও পানিসম্পদ খাতে ৮৫১১.২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা মোট এডিপির ১৮.৫ শতাংশ; ২০১০-১১ অর্থবছরে যা ছিল ২১.২ শতাংশ অর্থাৎ বর্তমান অর্থবছরে তা ২.৭ শতাংশ কমেছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি খাতে বরাদ্দ হলো ২০,৮৯৩.৫২ কোটি টাকা। কিন্তু ৬ কোটি মানুষের দারিদ্র্য বিবেচনায় তা সামান্য মাত্র। যদিও খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে, তবু আজও সে খাদ্য আমদানিকারক নিম্ন আয়ের একটি দেশ। বাংলাদেশের বাস্তবতায় আমরা দেখি ক্রমবর্ধমানভাবে কৃষিজমি কমছে, বাড়ছে শহরমুখিনতা, বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বাংলাদেশের রফতানি আয় কমেছে, জনশক্তি রফতানিও সংকটের মুখে; যার ফলে ৎবসরঃঃধহপব-এর মাধ্যমে আয়ও সংকুচিত, বেড়েছে দ্রব্যমূল্য, যা খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। যদিও বাংলাদেশ সরকারের তা মোকাবেলা করার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বিস্তৃত করার সদিচ্ছা রয়েছে। কিন্তু যেখানে শতকরা ৪০ ভাগ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে, সেখানে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি যথেষ্ট, নাকি কোনো যুগান্তকারী পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে? ভারতে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা বিল-২০১১ আমাদের চিন্তাকে প্রসারিত করে। আমরা কি তাকে কংগ্রেস সরকারের নির্বাচনী বৈতরণী পারের কৌশল বলে পাস কাটিয়ে যাব, না খাদ্য অধিকার প্রতিষ্ঠার দিকে এক অগ্রযাত্রা বলে বিবেচনা করব? অথবা আমরা কি এটাকে খাদ্য অধিকার আদায়ের পথে এক দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করব?
ফারহাত জাহান :গবেষক
farhat718@yahoo.com
যদিও ভারত প্রযুক্তি ও শিল্পায়নে অনেক এগিয়েছে এবং বর্তমানে বিশ্বের ক্রমবর্ধমান বিকশিত অর্থনীতির দেশগুলোর অন্যতম একটি দেশ, তবুও বিশ্বের বিশালসংখ্যক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাস এখানে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতের আটটি রাজ্যের দরিদ্র মানুষের সংখ্যা সাব-সাহারান আফ্রিকার ২৬টি দেশের চেয়ে বেশি। ২০১১ সালের বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী শতকরা প্রায় ৫৫ ভাগ ভারতবাসী দরিদ্র এবং শতকরা ২৭.৫ ভাগ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। আর ২০১১ সালের গ্গ্নোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স অনুযায়ী তা ২২.৯ থেকে ২৩.৭-এর মধ্যে। পৃথিবীর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দরিদ্রের আবাসভূমি এ ভারত, যেখানে প্রতিবছর শতকরা ৭০ ভাগ শিশু অপুষ্টির শিকার এবং প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধাজনিত রোগে ভুগছে। ১২০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতের এ চিত্র আমাদের চিন্তিত হতে বাধ্য করে। এ রকম এক বাস্তবতায় জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা-২০১১ বিলের আগমন গুরুত্বের দাবি রাখে। এটিকে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী বিল বলা যায়। যদিও এর বিপরীতে বলা হচ্ছে, রাজ্য সরকারগুলো এটা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়বে। কেননা যথাযথ অর্থ তহবিল বরাদ্দ, খাদ্যশস্যের উৎস শনাক্ত ও বাস্তবায়নের মহাপরিকল্পনা ছাড়াই এ বিল সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। বিরোধী দলগুলো এটাকে কংগ্রেস সরকারের ২০১২ অ্যাসেমবি্ল নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিস্থিতি মোকাবেলার একটি রাজনৈতিক কৌশল বলে আখ্যা দিয়েছে। সমালোচকরা বলছে, রাজনীতি ও অর্থনীতি কোনোটাই বর্তমান সরকারের পক্ষে নয়। এমতাবস্থায় আসন্ন নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার জন্য এটাকে কৌশল হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ ভারতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। কেননা চলমান অর্থবছরে মুদ্রাস্টম্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, রাজস্ব আদায়ের নিম্নগতি এবং ভর্তুকির উচ্চ ব্যয় অর্থনীতিকে নতুন ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। যা সরকারের চলমান অর্থবছরে দেশজ উৎপাদনের (২০১১-১২) শতকরা ৪.৬ ভাগ বার্ষিক ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যমাত্রাকে একটি হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। তাই বিরোধীদের মতে, জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা বিল বর্তমানে একটি বাড়তি বোঝা।
অন্যদিকে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা বিলের সমর্থনে বলা হচ্ছে, যেখানে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দরিদ্রের বসবাস ভারতে, সেখানে এ ধরনের একটি উদ্যোগ ক্ষুধামুক্ত ভারত গড়ার মাইলফলক উন্মোচন করবে। তবে প্রয়োজন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিস্তৃতির সঙ্গে সমবণ্টনের মিলন ঘটানো। ভারতের বাস্তবতায় এটা ঘটেনি। তাই বিশ্বের অন্যতম একটি বিকাশমান অর্থনীতির দেশ হওয়া সত্ত্বেও তা একই সঙ্গে বিস্তৃত দরিদ্র জনসংখ্যার দেশও বটে। গ্গ্নোবাল হাঙ্গার রিপোর্ট অনুযায়ী তা আফ্রিকার মোজাম্বিক, মাদাগাস্কার ও সিয়েরালিওনকে ছাড়িয়ে যায়। তাই চলমান মন্দা অর্থনীতির দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রের দায়িত্ব এড়ানো যাবে না; বপড়হড়সরপ মৎড়ঃিয বা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ন্যায্য হিস্যা থেকে গ্রামীণ ও প্রান্তিক মানুষকে ভারতে বঞ্চিত করা যাবে না। প্রয়োজন রয়েছে সরকারি হস্তক্ষেপের, নতুন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের। শুধু ভর্তুকি প্রদানের জনপ্রিয় খাদ্য নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরেও কিছু প্রায়োগিক অধিকারভিত্তিক কর্মসূচির উদ্যোগ নিতে হবে, যার জন্য প্রয়োজন শিক্ষার অধিকার ও কর্মসংস্থানের অধিকার নিশ্চিত করা। যা প্রকারান্তরে, মানবাধিকার, উন্নয়ন ও খাদ্য অধিকারকে সংরক্ষণ করবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফিরে তাকালে আমরা দেখি, যদিও আমরা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কিছু অগ্রগতি সাধন করছি তবুও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও দারিদ্র্য বিদ্যমান। কেননা ১৬ কোটি লোকের মধ্যে ৬ কোটি আজও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। বাংলাদেশের ঞযব ঘধঃরড়হধষ ঝঃৎধঃবমু ভড়ৎ অপপবষবৎধঃবফ চড়াবৎঃু জবফঁপঃরড়হ (ঘঝঅচজ) ওও (২০০৯-২০১১), ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-২০১৫) খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে। জাতীয় খাদ্যনীতি (২০০৬) ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনকে গুরুত্ব দিয়েছে। ২০১১-১২ বার্ষিক অর্থবছরেও খাদ্য নিরাপত্তাকে গুরুত্বর্পূণ ইস্যু হিসেবে দেখা হয়েছে এবং বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার (এডিপি) আওতায় কৃষি, গ্রাম উন্নয়ন ও পানিসম্পদ খাতে ৮৫১১.২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা মোট এডিপির ১৮.৫ শতাংশ; ২০১০-১১ অর্থবছরে যা ছিল ২১.২ শতাংশ অর্থাৎ বর্তমান অর্থবছরে তা ২.৭ শতাংশ কমেছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি খাতে বরাদ্দ হলো ২০,৮৯৩.৫২ কোটি টাকা। কিন্তু ৬ কোটি মানুষের দারিদ্র্য বিবেচনায় তা সামান্য মাত্র। যদিও খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে, তবু আজও সে খাদ্য আমদানিকারক নিম্ন আয়ের একটি দেশ। বাংলাদেশের বাস্তবতায় আমরা দেখি ক্রমবর্ধমানভাবে কৃষিজমি কমছে, বাড়ছে শহরমুখিনতা, বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বাংলাদেশের রফতানি আয় কমেছে, জনশক্তি রফতানিও সংকটের মুখে; যার ফলে ৎবসরঃঃধহপব-এর মাধ্যমে আয়ও সংকুচিত, বেড়েছে দ্রব্যমূল্য, যা খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। যদিও বাংলাদেশ সরকারের তা মোকাবেলা করার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বিস্তৃত করার সদিচ্ছা রয়েছে। কিন্তু যেখানে শতকরা ৪০ ভাগ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে, সেখানে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি যথেষ্ট, নাকি কোনো যুগান্তকারী পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে? ভারতে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা বিল-২০১১ আমাদের চিন্তাকে প্রসারিত করে। আমরা কি তাকে কংগ্রেস সরকারের নির্বাচনী বৈতরণী পারের কৌশল বলে পাস কাটিয়ে যাব, না খাদ্য অধিকার প্রতিষ্ঠার দিকে এক অগ্রযাত্রা বলে বিবেচনা করব? অথবা আমরা কি এটাকে খাদ্য অধিকার আদায়ের পথে এক দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করব?
ফারহাত জাহান :গবেষক
farhat718@yahoo.com
No comments