ঝুঁকিপূর্ণ মেঘনা সেতু-সময়ের কাজ সময়ে করা চাই

বাংলাদেশ প্রায় অভিন্ন সড়ক নেটওয়ার্কে বাঁধা পড়েছে। সড়কপথে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে নদ-নদীতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা এখন অতীতের বিষয়। বড় বাধা কেবল পদ্মায়। এক সময়ের প্রমত্তা এ নদীতে স্রোতধারা এখন ক্ষীয়মাণ। সেতু নির্মাণের উদ্যোগ চলছে কয়েক বছর ধরে। কিন্তু এখনও যেন স্বপ্ন, যা কবে পূরণ হবে জানা নেই। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মেঘনা নদী ফেরি ছাড়াই অতিক্রম করার স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল ১৯৯০ সালে। জাপান


সরকারের অর্থায়নে নির্মিত এ সেতুটিকে তখন যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আরও নির্মিত হয় ভৈরব ও দাউদকান্দিতে সেতু। চীনের সহায়তায় মিলেছে বুড়িগঙ্গার ওপর নির্মিত একাধিক সেতু। তবে মহাকালের ব্যবধান ঘোচানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে যমুনায় নির্মিত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু সেতু। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ আরও অনেক জনপদের সড়কপথে যোগাযোগ এর ফলে সহজ হয়ে পড়েছে। কিন্তু সহজ-সরল পথও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করলে ক্রমে অলঙ্ঘনীয় হয়ে উঠতে থাকে। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বোধকরি তা বিস্মৃত হয়ে পড়ে। আর এ কারণেই যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতুতে দেখা দেওয়া ফাটল সময়মতো মেরামত করা হয় না। মেঘনা সেতুও একই কারণে হয়ে পড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ। বৃহস্পতিবার সমকালে 'মেঘনা সেতুতে যান চলাচলে ঝুঁকি বাড়ছে' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেতুটি কোনো কারণে অনুপযোগী বা বিধ্বস্ত হয়ে পড়লে বন্দরনগরীর সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। সেতুর কয়েকটি পিলারের তলদেশে ভূমিক্ষয় ধরা পড়েছে। সেতুর বিয়ারিং ও এক্সপানসন জয়েন্টগুলো পুরনো হয়ে গেছে। তাছাড়া ডিজাইনের অতিরিক্ত মালবাহী যান নিয়মিত চলার কারণেও সেতুটির ক্ষতি হচ্ছে। স্পষ্টতই সময়ের কাজ সময়ে করা হয়নি। ছোট ছোট সংস্কার-মেরামত কাজ করলেই এক সময়ে চলত। কিন্তু এখন মূল সেতুটিই ঝুঁকির মুখে। একশ' বছরের আয়ুষ্কালের ওয়ারেন্টি নিয়ে যাত্রা শুরু করা সেতুটি দুই দশকেই নড়বড়ে! এর দায় কে নেবে? বাংলাদেশের সড়কপথে যানবাহনের চাপ ক্রমশ বাড়ছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়তে থাকায় ভারী যানবাহন চলছে প্রচুর। অনেক সড়কপথে ভারী যানবাহন অত্যধিক চলাচলের কারণে নিয়মিত ক্ষতি হচ্ছে এবং তা সময়মতো পূরণের পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। অনেক সেতুতেও দেখা দিচ্ছে একই সমস্যা। অপরিণামদর্শিতা সাধারণত বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে আনে। বাংলাদেশের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং বিশেষ করে সড়ক বিভাগ এ বিষয়টি কবে উপলব্ধি করবে? ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কপথে মেঘনা সেতুর অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্য আনা-নেওয়ার কাজে এ সেতুর ওপর অনেক নির্ভরতা। এতে যানবাহন চলাচল একদিনের জন্যও বন্ধ হলে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া অনুভূত হবে নানা ক্ষেত্রে। রেলপথে তা সামাল দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। সেতুটি বন্ধ হলে একটি বিকল্প হচ্ছে ফের ফেরি সার্ভিসের যুগে ফিরে যাওয়া। তার পরিণতি কি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখেছে? আমরা কেবল একটি কষ্ট-কল্পনা করতে পারি :মেঘনার দুই তীরেই ফেরিতে ওঠার জন্য কয়েক কিলোমিটারজুড়ে যানবাহনের সারি। এটা হবে এগিয়ে চলার পরিবর্তে পেছনে ফিরে যাওয়া, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অতএব, সংশ্লিষ্টদের কাছে একটাই দাবি, সেতুটি দ্রুত মেরামত করা হোক। আর এ কাজে যেন কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ না ওঠে।
 

No comments

Powered by Blogger.