পবিত্র কোরআনের আলো-বদর যুদ্ধের পর কাফিরদের প্রতি সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা ও সতর্কবাণী

৬. ইন্নাল্লাযীনা কাফারূ ইউনফিক্বূনা আমওয়া-লাহুম লিইয়াসুদ্দূ আ'ন ছাবীলিল্লাহি; ফাছাইউনফিক্বূনাহা ছুম্মা তাকূনু আ'লাইহিম হাছ্রাতান ছুম্মা ইউগ্লাবূন; ওয়াল্লাযীনা কাফারূ ইলা জাহান্নামা ইউহ্শারূন। ৩৭. লিইয়ামীযাল্লা-হুল খাবীছা মিনাত ত্বায়্যিবি ওয়া ইয়াজ্ আ'লাল্ খাবীছা বা'দ্বাহূ আ'লা বা'দ্বিন ফাইয়ার্কুমাহূ জামীআ'ন ফাইয়াজ্আ'লাহূ ফী জাহান্নাম; উলায়িকা হুমুল্ খা-ছিরূন। ৩৮. কুল লিল্লাযীনা কাফারূ ইয়্যাঁনতাহূ ইউগ্ফারু লাহুম মা ক্বাদ ছালাফা; ওয়া ইঁয়্যাঊ'দূ


ফাক্বাদ মাদ্বাত্ ছুন্নাতুল্ আউওয়্যালীন। ৩৯. ওয়া ক্বা-তিলূহুম হাত্তা লা-তাকূনা ফিত্নাতুন ওয়া ইয়াকূনাদ ্দীনু কুল্লুহূ লিল্লাহি; ফাইনিনতাহাও ফাইন্নাল্লা-হা বিমা ইয়া'মালূনা বাছীর।
৪০. ওয়া ইন তাওয়াল্লাও ফা'লামূ আন্নাল্লা-হা মাওলা-কুম; নি'মাল মাওলা ওয়া নি'মান নাছীর। [সুরা : আল-আনফাল, আয়াত : ৩৬-৪০]

অনুবাদ : ৩৬. যারা অবাধ্যতার পথ অবলম্বন করেছে, তারা আল্লাহর পথে মানুষকে বাধা দেওয়ার জন্য নিজেদের অর্থসম্পদ ব্যয় করে। এর পরিণাম হবে এই, তারা অর্থ-সম্পদ ব্যয়-করতে থাকবে, অতঃপর সেটাই তাদের মনস্তাপের কারণ হয়ে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত তারা পরাভূত হবে। যারা অবাধ্যতার পথ অবলম্বন করেছে, তাদের জাহান্নামে একত্র করা হবে।
৩৭. সেটা এ কারণে যে আল্লাহ অপবিত্র লোকদের পবিত্র লোকদের থেকে পৃথক করে দেবেন এবং এক অপবিত্রকে অপর অপবিত্রের ওপর রেখে সবগুলোকে স্তূ্তপীকৃত করবেন। অতঃপর সেই স্তূপকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। এরাই হলো হতভাগ্য।
৩৮. (হে নবী!) যারা অবাধ্যতার পথ অবলম্বন করেছে, তাদের আপনি বলে দিন, তারা যদি এখনো নিবৃত্ত হয়, তবে অতীতে যা কিছু হয়েছে, তা ক্ষমা করে দেওয়া হবে। কিন্তু তারা যদি আবার সে পথেই যায়, তবে পূর্ববর্তী (অবাধ্য) লোকদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছিল, তা তো তাদের ভাগ্যেও রয়েছে।
৩৯. (হে মুসলিমরা!), তোমরা কাফিরদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকো, যে পর্যন্ত না ফিতনা দূরীভূত হয় এবং ধর্ম সম্পূর্ণ আল্লাহর পথে প্রতিষ্ঠিত হয়। যদি তারা নিবৃত্ত হয় তবে আল্লাহ তো তাদের কার্যকলাপ সম্যক দেখছেনই।
৪০. তারা যদি মুখ ফিরিয়েই রাখে। তবে তোমরা জেনে রেখো, আল্লাহ তোমাদের অভিভাবক। তিনি কত উত্তম অভিভাবক এবং উত্তম সাহায্যকারী।

ব্যাখ্যা : বদর যুদ্ধে মক্কার কোরাইশদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, তাদের অনেক সর্দার মারা গিয়েছিল। এরপর তারা মক্কায় ফিরে এসে আরো বড় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সে লক্ষ্যে তারা মোটা অঙ্কের চাঁদা সংগ্রহের কাজে নামে। অনেক কোরাইশ নেতা তাদের সম্পদের বড় অংশ যুদ্ধের তহবিলে দান করতে শুরু করে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই ৩৬ নম্বর আয়াতটি নাজিল হয়েছে।
এই আয়াতে মক্কার কাফিরদের পরাজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। অর্থাৎ মক্কা বিজয় যে ভবিতব্য এটা স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে।
৩৮ নম্বর আয়াতে বদরের যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মক্কার কাফিরদের প্রতি একটি সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ ঘোষণা ছাড়াও এটি ইসলামের একটি চিরন্তন মূলনীতি। এখানে বলে দেওয়া হয়েছে, কেউ যখন ইমান আনে তখন কুফরি অবস্থায় করা তার জীবনের যাবতীয় গুনাহ মাফ হয়ে যায়। আর মক্কার কাফিরদের বেলায় এই ঘোষণার বিশেষ তাৎপর্য এই যে, বদরের যুদ্ধে মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে কোরাইশ সম্প্রদায়ের মুসলিম ও কাফিরদের মধ্যে যে ক্ষোভ, হিংসা ও ফাটল সৃষ্টি হয়েছে, তা অতিক্রম করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব। আর তা হতে পারে একমাত্র তারা যদি কুফরের পথ ছেড়ে ইসলামের পথে আসে তবেই। যদি তারা আসে, তবে অতীতের সব কিছু ক্ষমা করে দেওয়া হবে। অন্যথায় তাদের পরিণতি তো পূর্ববর্তীদের মতোই হবে।
এ কথার দ্বারা বদরের যুদ্ধে নিহতদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে এবং সেই সঙ্গে পূর্ববর্তী অবাধ্য ক্ষতিগুলোর প্রতি যে শাস্তি নেমে এসেছিল, তাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
৩৯ নম্বর আয়াতের নির্দেশের মাধ্যমে এই ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে আল্লাহ জাজিরাতুল আরবকে ইসলামের কেন্দ্রভূমি বানিয়েছেন এবং এখানে স্থায়ীভাবে শুধু মুসলমানরাই বাস করবে।
সুরা তওবা ও সুরা বাকারায় আরো বিস্তারিত বিবরণ আছে। এখানে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, জাজিরাতুল আরবের কাফির ও মুশরিকদের দুটি পথের যে কোনো একটি অবলম্বন করতে হবে। অর্থাৎ তাদের হয় ইসলাম গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় এ দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। তবে আরবের বাইরে এ হুকুম প্রযোজ্য নয়।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.