লোকসানের পাল্লাই ভারী

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড কোম্পানি আজ ৪০ বছরে পা দিচ্ছে। এতটা সময় পেরিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। পর্যাপ্ত জনবল, অবকাঠামো, আধুনিক উড়োজাহাজসহ সব সুবিধা থাকা সত্ত্বেও বিমান এখনও লোকসানি প্রতিষ্ঠান। মাঝে কয়েক বছর ব্যতিক্রম বাদ দিলে প্রতি বছর লোকসানের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে সরকারের জন্য বিশাল বোঝায় পরিণত হয়েছে এটি।


১৯৭২ সালে বাংলাদেশ বিমান করপোরেশন নামে যাত্রা শুরু করে সংস্থাটি। ১৯৭২ থেকে ১৯৯১ অর্থবছর পর্যন্ত বিমানের লোকসানের পরিমাণ ছিল ৭৯ কোটি ৭৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা। ১৯৯১-৯২ সালে ৩২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা লাভ করে। পরবর্তী চার অর্থবছর অর্থাৎ ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি লাভ করে ২৮০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১২৬ কোটি টাকা লোকসান দিলেও পরবর্তী দুই বছরে প্রায় ২৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা লাভ করে। ২০০০ সালে আবার ৯৩ কোটি ৬ লাখ টাকা লোকসান দেয়। পরবর্তী ৫ বছরেও লোকসানের ধারা অব্যাহত থাকে। এর মধ্যে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৪৫৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা লোকসান দেয়। এটি বিমানে লোকসানের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। ২০০৭ সালের ২৩ জুলাই বাংলাদেশ বিমান করপোরেশনকে 'পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি'তে রূপান্তর করা হয়। এ সময় বিমানের পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ছিল এক হাজার ১৮২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই আমলে যথাক্রমে ৫ কোটি ১৯ লাখ ও ১৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা লাভ করে বিমান। গত দুই অর্থবছরে বিমান আবার লোকসানের ধারায় ফিরে যায়। এ দুই অর্থবছরে বিমানের লোকসান হয় যথাক্রমে ৮০ কোটি ও ১৯১ কোটি টাকা। অব্যাহত লোকসানের কারণে গত বছর বিমান কর্তৃপক্ষ ব্যাংক থেকে ২০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেছে।
সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বিমান নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে উড়োজাহাজ লিজ নেওয়া, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আইনগত ঝামেলায় দুর্নীতিবাজ আইনজীবীকে নিয়োগ দেওয়া, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের তুলনায় বেশি অর্থে লিজ নেওয়া, পাইলটদের অন্যায়ভাবে শাস্তি দেওয়া, ক্রয় কমিটির মতামত উপেক্ষা করে বোয়িং থেকে বাড়তি বিমান ক্রয়সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
বিমান সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে কর্মকর্তাদের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে বিমান আকাশ থেকে মাটিতে নেমেছে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে বিমানের লোকসানের কারণ উদ্ঘাটন করতে একটি সাব-কমিটি গঠন করে। কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করলেও তা আলোর মুখ
দেখেনি।
অব্যাহত লোকসানের অঙ্ক কমাতে এ বছর কঠোর ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে বিমানের পরিচালনা পরিষদ এক সভায় ব্যয় সংকোচন নীতি কঠোরভাবে মেনে চলার সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য ওভারটাইম, পরিবহন খরচ, হোটেল ব্যয় হ্রাসসহ প্রয়োজনে লোকবল কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিমানের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ। লাভ-লোকসান ও তা থেকে উত্তরণ সম্পর্কে জানতে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

No comments

Powered by Blogger.