মৃত্যুর পরও ত্যাগ! by কামাল লোহানী
ত্যাগ-তিতিক্ষা, লড়াই-সংগ্রাম করে সারাটি জীবন তো দিয়েই গেছেন, সেই সঙ্গে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের ত্যাগের মহিমায় ঢেকে রেখে গেছেন আজীবন বিপ্লবী সর্বস্বত্যাগী শিক্ষক কমরেড আবদুস শহীদ। তিনি চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে, কিন্তু ত্যাগ তাঁকে ছাড়তে পারেনি। মৃত্যুর পরও যে সেই মানুষটিকে ত্যাগ করতে হবে এ তো আমাদের জানা ছিল না। শত কান্না, আবেদন-নিবেদন, কত না ভাবে সংশ্লিষ্টদের বোঝাবার চেষ্টা, সবই বৃথা হয়ে গেল। মাথা গোঁজার সামান্য ঠাঁই
উঠিয়েছিলেন তারই স্ত্রীর কঠিন প্রত্যয়-অধ্যবসায়ে, আজ উন্নতির নামে তাকেও বিসর্জন দিতে হচ্ছে রাজউক আর হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সেনাদের কাছে। উন্নতি কে না চায়! কিন্তু উন্নতি যদি কৌশলে অবনতি নয় একেবারে মানুষকে ডুবিয়ে ছাড়ে, তাকে কি উন্নয়ন বলা যায়? ওই যে হাতিরঝিল প্রকল্পের যে রাস্তাটা যাচ্ছিল সহজ-সরলভাবে তা সেভাবেই গেলে আবদুস শহীদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের মাথার ওপর ঠাঁইটুকু বেঘোরে কি উচ্ছন্নে যেত? গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান এককালের প্রগতিশীল ছাত্রনেতা। তিনি তো ব্যক্তিগতভাবেও জানতেন শহীদ ভাইকে। বর্তমানে ক্ষমতাধরদের অনেকেই তাঁকে চিনতেন এবং জানতেন। অনেক কাকুতি-মিনতির পর অনুগ্রহ করে প্রতিমন্ত্রী মহোদয় কষ্ট করে আবদুস শহীদের বাড়িতে গিয়ে অবস্থা দেখে হাত ধরে বলে এসেছিলেন, 'ভাবী এ বাড়ি ভাঙা হবে না...।' মাননীয় মন্ত্রী আপনার দেওয়া কথাও থাকবে না, এটা ভাবিনি। হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সেনা কর্তৃপক্ষ ইতিপূর্বে বলেছিল, ৭০ লাখ টাকা দেবে। আর ফ্ল্যাট না পাওয়া পর্যন্ত যে বাড়িতে ওরা থাকবে, তার ভাড়া প্রতি মাসে দেওয়া হবে। একজন মন্ত্রী যিনি বাড়িতে দাঁড়িয়ে কথা দিয়েছিলেন 'বাড়ি ভাঙা হবে না'_ কোথায় গেল সে কথা?
লাল পতাকা হাতে প্রচলিত সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ বানাতে সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলেন কমরেড আবদুস শহীদ। একদিন তার বাড়িতেই ন্যাকড়ার মতো লাল কাপড় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল এ বাড়ি ভেঙে ফেলার জন্য। ওরা আদালতের দ্বারস্থ হয়ে যেমন আছেন তেমনি থাকার একটা ব্যবস্থা করেছিলেন ধড়ে পানি পাওয়ার জন্য। সেই আদালতকেও তো সমীহ করেনি কেউই। সেনা কর্মকর্তারা সবসময়ই মানবিকতার দিকটা বস্তুতই স্বীকার করেছেন। বাড়িতে গেছেন, বাড়ির অবস্থান দেখেছেন। কথা দিয়েছেন। কিন্তু কথামতো হচ্ছে না তো কিছুই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই ছোট্ট ব্যাপারটা নিয়ে আপনাকে বিরক্ত করা কি ঠিক? আপনার বাবা আমাদের বঙ্গবন্ধুও কিন্তু শহীদ ভাইদের খুব ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। একসঙ্গে জেলও খেটেছেন। লেখক আবদুস শহীদের 'কারা স্মৃতি' বাংলা সাহিত্যে অনন্য। আপনি তো বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী ছিলেন, জানতে নিশ্চয়ই পারেন। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে 'কারা স্মৃতি' বিক্রি করে দিন গুজরান করতেন শহীদ ভাই। এমনও শুনেছি, দিনান্তে যা পেয়েছেন তাই নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে কোনো বন্ধুর অসুস্থতার অথবা অভাবের কথা শুনে ঝুলিতে যা থাকত তাই উজাড় করে খালি হাতে বাড়ি ফিরতেন। এহেন শহীদ ভাই এত হেনস্তা হচ্ছেন কেন মৃত্যুর পরও। উন্নয়নের স্বার্থে তার বাড়িঘরও চলে যাবে, যাক না। সবার যা হয়েছে তাই হবে। কিন্তু সবাই আর লেখক-সাংবাদিক আজীবন বিপ্লবী-ত্যাগী মহান পুরুষ আবদুস শহীদ নন। একজন আবদুস শহীদই পরিবার নিয়ে বাস করতেন ওইখানে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনিও হয়তো চেনেন, দেখেছেন কখনও ইউনিভার্সিটিতে কিংবা বইমেলায়। নিজের বই বিক্রি করেই দিনাতিপাত করতেন। বইটি বিক্রিও হতো কম না। কারণ অমন তথ্যবহুল কারাজীবন কাহিনী আর নেই। হৃদয়গ্রাহী, আপনার মন্ত্রীদের মধ্যে তো অনেকেই সরাসরি চিনতেন-জানতেন এমনকি একত্রে রাজনীতিও করেছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চেধুরী এবং আরও অনেকেই। রাজনৈতিক বিরোধ সত্ত্বেও শহীদ ভাই সবার সব দলের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ছিলেন। আজ তারই পরিবারের বাসস্থানের জন্য হাপিত্যেশ করতে হচ্ছে ভাবী, ছেলে-মেয়েদের।
আপনি তো এমন সব ক্ষেত্রে যে মহানুভবতা অতীতে দেখিয়েছেন, তাদের কথা ভেবে শহীদ ভাইয়ের মতো নির্লোভ-ত্যাগী মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করা একজনের পরিবারের বাঁচবার অধিকারটুকু যেন কেউ কেড়ে না নেয়, সেটা যদি আপনি দেখেন। শেষ আশ্রয় হিসেবে আপনার কাছে এই নিবেদন জানালাম। যদি গৃহীত না হয় তবে ধরে নেব কমরেড আবদুস শহীদরা নিগৃহীত হতেই এসেছিলেন। না, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এমন কথা আপনার ব্যাপারে ভাবতে চাই না।
কামাল লোহানী : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
লাল পতাকা হাতে প্রচলিত সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ বানাতে সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলেন কমরেড আবদুস শহীদ। একদিন তার বাড়িতেই ন্যাকড়ার মতো লাল কাপড় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল এ বাড়ি ভেঙে ফেলার জন্য। ওরা আদালতের দ্বারস্থ হয়ে যেমন আছেন তেমনি থাকার একটা ব্যবস্থা করেছিলেন ধড়ে পানি পাওয়ার জন্য। সেই আদালতকেও তো সমীহ করেনি কেউই। সেনা কর্মকর্তারা সবসময়ই মানবিকতার দিকটা বস্তুতই স্বীকার করেছেন। বাড়িতে গেছেন, বাড়ির অবস্থান দেখেছেন। কথা দিয়েছেন। কিন্তু কথামতো হচ্ছে না তো কিছুই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই ছোট্ট ব্যাপারটা নিয়ে আপনাকে বিরক্ত করা কি ঠিক? আপনার বাবা আমাদের বঙ্গবন্ধুও কিন্তু শহীদ ভাইদের খুব ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। একসঙ্গে জেলও খেটেছেন। লেখক আবদুস শহীদের 'কারা স্মৃতি' বাংলা সাহিত্যে অনন্য। আপনি তো বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী ছিলেন, জানতে নিশ্চয়ই পারেন। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে 'কারা স্মৃতি' বিক্রি করে দিন গুজরান করতেন শহীদ ভাই। এমনও শুনেছি, দিনান্তে যা পেয়েছেন তাই নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে কোনো বন্ধুর অসুস্থতার অথবা অভাবের কথা শুনে ঝুলিতে যা থাকত তাই উজাড় করে খালি হাতে বাড়ি ফিরতেন। এহেন শহীদ ভাই এত হেনস্তা হচ্ছেন কেন মৃত্যুর পরও। উন্নয়নের স্বার্থে তার বাড়িঘরও চলে যাবে, যাক না। সবার যা হয়েছে তাই হবে। কিন্তু সবাই আর লেখক-সাংবাদিক আজীবন বিপ্লবী-ত্যাগী মহান পুরুষ আবদুস শহীদ নন। একজন আবদুস শহীদই পরিবার নিয়ে বাস করতেন ওইখানে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনিও হয়তো চেনেন, দেখেছেন কখনও ইউনিভার্সিটিতে কিংবা বইমেলায়। নিজের বই বিক্রি করেই দিনাতিপাত করতেন। বইটি বিক্রিও হতো কম না। কারণ অমন তথ্যবহুল কারাজীবন কাহিনী আর নেই। হৃদয়গ্রাহী, আপনার মন্ত্রীদের মধ্যে তো অনেকেই সরাসরি চিনতেন-জানতেন এমনকি একত্রে রাজনীতিও করেছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চেধুরী এবং আরও অনেকেই। রাজনৈতিক বিরোধ সত্ত্বেও শহীদ ভাই সবার সব দলের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ছিলেন। আজ তারই পরিবারের বাসস্থানের জন্য হাপিত্যেশ করতে হচ্ছে ভাবী, ছেলে-মেয়েদের।
আপনি তো এমন সব ক্ষেত্রে যে মহানুভবতা অতীতে দেখিয়েছেন, তাদের কথা ভেবে শহীদ ভাইয়ের মতো নির্লোভ-ত্যাগী মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করা একজনের পরিবারের বাঁচবার অধিকারটুকু যেন কেউ কেড়ে না নেয়, সেটা যদি আপনি দেখেন। শেষ আশ্রয় হিসেবে আপনার কাছে এই নিবেদন জানালাম। যদি গৃহীত না হয় তবে ধরে নেব কমরেড আবদুস শহীদরা নিগৃহীত হতেই এসেছিলেন। না, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এমন কথা আপনার ব্যাপারে ভাবতে চাই না।
কামাল লোহানী : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
No comments