জাতীয় পার্টির দুই অংশ এক হলেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না - আনোয়ার হোসেন মঞ্জু
স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, দুই অংশ এক হলেও জাতীয় পার্টি এককভাবে কখনও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। অন্যের ক্ষমতায় যাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারবে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় পার্টি (জেপি)’র ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সমালোচনা করে বলেন, তিনি একেক সময় একেক কথা বলেন। কখনও বলেন একশ’ বছর জেল দিলেও আর মহাজোটে যাবো না। আবার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের দাবি করে মামলা প্রত্যাহারের তদবির করেন, মহাজোটকে সুসংহত করার ঘোষণা দেন। এ ধরনের দ্বিমুখী রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। মামলা প্রত্যাহার করলে এক জোট, না করলে আরেক জোট- এ রাজনীতি আমরা করি না। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের নায়ক-খলনায়ক কারা দেশের মানুষ তা জানে। এসব নায়ক-খলনায়কদের খুঁজে বের করতে হবে। মানুষের লুটের টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, জেপি সবসময় সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারার পক্ষে আছে এবং থাকবে। ২৬ বছর টিকে আছি, এটিই জেপি’র সাংগঠনিক শক্তি। প্রমাণ হয়েছে আমরা সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির পক্ষে ছিলাম। ভবিষ্যতেও থাকবো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সম্পর্কে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, আমি সেদিন সংসদে বলেছিলাম- সময়ের প্রয়োজনে, অভিজ্ঞতার আলোকে সংবিধানে কোন সংশোধন-বিয়োজনের দরকার হলে এর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। এ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার জন্য আমরাও আন্দোলন করেছি। কিন্তু কি বিচিত্র! যিনি (বিচারপতি হাবিবুর রহমান) এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন তিনিই আজ বলছেন ‘কোন সভ্য সমাজে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা থাকতে পারে না।’ তিনি অত্যন্ত মেধাবী, জ্ঞানী-গুণী ও সম্মানিত মানুষ। তিনি যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান পদ গ্রহণ না করে এ কথা বলতেন তাহলে তার বক্তব্য অনেক বেশি গুরুত্ব পেতো। জেপি চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৭২ সালে আমরা সংবিধান পাওয়ার পর দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত হয়েছিল। ’৮৬ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে অন্তত জোড়াতালি মার্কা একটি গণতাaন্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করতে আমরা সক্ষম হয়েছিলাম। অনেকেই বলেন, ’৯৬ সালের নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি সংবিধানের পক্ষে অবস্থান না নিলে দেশে আরেকটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হতো। ’৯৬-এর নির্বাচনে সরকার গঠন করার মতো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোন দলই পায়নি। অনেক প্রলোভন ও লোভ দেখানো হয়েছিল, অনেক সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। তৎকালীন জাতীয় পার্টির কেউ কেউ সে প্রলোভন ও লোভের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু মরহুম মিজানুর রহমান চৌধুরীসহ আমরা সেদিন আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছিলাম। যেন দেশে সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত থাকে। তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্র রক্ষার কথা বলি। গণতন্ত্র অর্জনে রক্ত দান করার কথাও বলি। কিন্তু যেসব পদক্ষেপ নিলে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে, সঠিক সময়ে এসব সঠিক পদক্ষেপ নিতে আমরা অনেকেই পারি না। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, পাকিস্তান আমলে আন্দোলনের সময় আমরা ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতাম। ৪০ বছরে এখন এখানে হয়তো ৭-৮ হাজার ব্যক্তি হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কেউ কেউ নাকি ১০ হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য আমরাও করি। সঠিক পথে ব্যবসা করলে কিভাবে কত টাকা লাভ করা যায় তা আমাদেরও অজানা নয়। সভায় জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, অন্ধকার দূর করে দেশকে আলোকিত করবো, সাংবিধানিক ধারাকে শক্তিশালী করবো- এটিই হোক আমাদের নতুন বছরের শপথ। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- অতিরিক্ত মহাসচিব সাদেক সিদ্দিকী, মিসেস আমেনা বারী, লে. ক. (অব.) আবদুল লতিফ মল্লিক, আবু সাঈদ খান, এজাজ আহমেদ মুক্তা, শেখ জয়নাল আবেদীন, নাজমুন নাহার বেবী ও মীর হারুনুর রশীদ প্রমুখ।
No comments