সম্ভাবনার বাংলাদেশ by ইফতেখার আহমেদ টিপু

বাংলাদেশ অমিত সম্ভাবনার দেশ। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। বাংলাদেশ ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এখন পশ্চিমাদেরও ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ সত্যটি তুলে ধরেছে মর্যাদাবান পশ্চিমা সংবাদপত্র গার্ডিয়ান।
আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদদের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি বলেছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতি পশ্চিমা দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে যাবে। ১৮ ডিসেম্বর গার্ডিয়ানে প্রকাশিত 'নিউ ওয়েভ ইকোনমিস গ্রোয়িং ফর গ্রোথ' প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, মিসর, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া, আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকোর অর্থনৈতিক শক্তি হু হু করে বাড়ছে। এ দেশগুলোর মধ্যে কোনোটি আয়তনে বড়, কোনোটি নবীন, আবার কোনোটিতে বেড়েই চলেছে জনসংখ্যা। দেশগুলোর অর্থনীতি এমন হারে বাড়ছে যে, তারা মন্দা ও খুঁড়িয়ে চলা পশ্চিমা দেশগুলোর হিংসার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এক সময় বৈশ্বিক অর্থনীতির ৮০ শতাংশ ছিল ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা ও জাপানের দখলে। বিশ্ব অর্থনীতির সে চেহারা বদলে যাচ্ছে। এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বেশ কটি দেশ পেছন থেকে উঠে আসছে সামনের কাতারে। ২০১৩ সালে প্রবৃদ্ধির হিসাবে এই দেশগুলোই শীর্ষ ২০-এর মধ্যে থাকবে।
২০১০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্বের নামকরা পত্রিকা ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে বাংলাদেশ নিয়ে একটি চমৎকার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। 'বাংলাদেশ মডেল' শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে লেখা হয়েছিল একসময় বিশ্ব বন্যা ও হরতালের দেশ হিসেবে যাকে জানত, সেই বাংলাদেশ পুরনো অতীতকে পেছনে ফেলে দৃপ্তপদে এগুচ্ছে এখন। বিশ্ব সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশকে নিয়ে যে নতুনভাবে ভাবছে, তা এখন বাস্তব সত্য। ১৯৭১-এর পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জেনেছে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে, অর্থাৎ যে দেশকে নিয়ে আশাবাদী হওয়া যায় না। কিন্তু সেই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী গণমাধ্যমের অন্যতম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল এখন বলছে, বাংলাদেশের গর্ব করার মতো কিছু অর্জনও রয়েছে।
২০১২ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশ ভ্রমণে এসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মুসলিম বিশ্বের জন্য নিযুক্ত মার্কিন বিজ্ঞানদূত রিটা কলওয়েল বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে অনেক এগিয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। রিটা বলেছিলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশে রয়েছে মেধার আধার। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশি মেধার উপস্থিতি লক্ষণীয়। তৃতীয় বিশ্বের সবচেয়ে সম্ভাবনার দেশ হিসেবে তিনি বাংলাদেশকে উল্লেখ করেন। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির জগতে বাংলাদেশ অন্যান্য মুসলিম দেশের আদর্শ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। বাংলাদেশের সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন একসময় জাপান ও কোরিয়া সম্পদহীন দেশ ছিল। বাংলাদেশও আগামী কয়েক বছরের মধ্যে জাপান ও কোরিয়ার পরই নিজের অবস্থান করে নিতে পারবে।
সম্প্রতি জার্মানিভিত্তিক ডয়েচে ব্যাংকের গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইতিবাচক দিকে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। তাদের মতে, বাংলাদেশের জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অনুপাত বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ১৯৯১ সাল থেকে গণতন্ত্রের পথে হাঁটার কৃতিত্বকে তুলে ধরে ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রপ্তানির ৬৭ শতাংশই তৈরি পোশাক। রপ্তানির ক্ষেত্রে শিল্পের ওপর নির্ভরশীলতা অর্থনীতির একটি দুর্বল দিক। গত পাঁচ বছর ধরে ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার সাফল্যের জন্য রিপোর্টে বাংলাদেশের প্রশংসা করা হয়েছে। খ্যাতনামা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডয়েচে ব্যাংক বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের গবেষণাপত্রে যে মূল্যায়ন করেছে তা নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে এ গবেষণাপত্রটি অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। অর্থনীতির ইতিবাচক পথে হাঁটার জন্য জ্বালানির সহজলভ্যতা, কৃষকদের ন্যায্যমূল্যপ্রাপ্তি, রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও মূল্যস্ফীতি কমানোর তাগিদ সৃষ্টি করেছে রিপোর্টটি। গণতন্ত্রের পথে হাঁটার পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যগুলো স্পষ্ট হচ্ছে। তাকে স্পষ্টতর করার জন্য গণতন্ত্রকে এগিয়ে যাওয়ার সোপান হিসেবে ভাবা আমাদের জাতীয় কর্তব্য বলে বিবেচিত হচ্ছে। আগামী দিনের সাফল্য ও ব্যর্থতাও যে এ ক্ষেত্রের সক্ষমতার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল, তা সহজেই অনুমেয়।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক নবরাজ
চেয়ারম্যান, ইফাদ গ্রুপ
chairman@ifadgroup.com

No comments

Powered by Blogger.