উন্মাতাল থার্টি ফার্স্ট নাইট by লায়েকুজ্জামান ও আহমেদ জামাল
জিরো আওয়ার, তখনও পাঁচ সেকেন্ড বাকি। হাতে হাতে পানপাত্র পৌঁছে গেছে। যেন এক শ’ পাঁচ ডিগ্রি জ্বরে কাঁপছে পুরো হলরুম, গাছতলা ও পুলপাড়। অপেক্ষায় শ’দুয়েক তরুণ-তরুণীসহ আধা বয়সী, বয়সী নর-নারী। হঠাৎ থেমে গেল ডেক সেটের গান।
মাইক বেজে উঠলো। লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলম্যান, ঘোষিত হলো জিরো আওয়ারের শুভ সংবাদ, ওয়েলকাম ২০১৩। বেজে উঠলো ডেক সেট। পুরো ভলিউমে গান, ‘আই লাভ ইউ টু...’। সঙ্গে সঙ্গে জ্বলে উঠতে থাকে আতশ বাতি, চত্বরের আকাশ ঘিরে গেল লাল-নীল আতশের সুগন্ধি ধোঁয়ায়। তারা বাজি পুড়িয়ে নববর্ষ বরণের আনন্দে মেতে ওঠে। এলাকা জুড়ে তখন বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস।
উন্মাতাল থার্টিফার্স্ট নাইট নাচ গান, হৈ-হুল্লোড়, চিৎকার চেঁচামেচি, আনন্দ প্রকাশের সকল মাধ্যম সক্রিয় করে নেয় আগতরা। হেলেদুলে পড়তে শুরু করে গোটা চত্বর। নাচ, গান, পান, সুরা ওঠে তারুণ্যের উচ্ছলতার সীমানা ছাড়ানো যত কর্ম কি নেই সেখানে? থার্টি ফার্স্ট নাইটে এমন এক রমরমা দৃশ্যের দেখা মিললো রাজধানীর অভিজাত এলাকার একটি অভিজাত ক্লাবে। রাজধানীর গুলশান এলাকায় ইউরোপের একটি দেশের নামের সঙ্গে পরিচিত ওই ক্লাবে বরাবরই প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। থার্টি ফার্স্ট নাইটের আনন্দ উদযাপনে খ্যাতি আছে ক্লাবটির। থার্টি ফার্স্ট নাইটে নির্মল বিনোদন পেতে চান, নিজেকে উজাড় করে মাতোয়ারা হতে চান- এমন অনেকেই আসেন, আসার চেষ্টা করেন ওই ক্লাবটিতে। এ বছরও এমন রসিকদের ভিড় জমেছিল এখানে। প্রবেশ মূল্য মাত্র তিন হাজার টাকা হলেও কোন ভাবেই অতিক্রম করেনি ক্লাবের তিন শ’ অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা। প্রতি বছর এ সংখ্যার ভেতরই সীমিত থাকেন তারা। এখানে দেশীদের অংশগ্রহণ একেবারেই কম, অনুমতি মিলে না। টিকিট পাওয়া যায় না। তারপরও ছিলেন ইউরোপ কানেকশনের বাংলাদেশের কয়েক জোড়া।
রজনী গভীর হওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলাতে থাকে ক্লাব চত্বরের দৃশ্য, সাবাড় হতে থাকে বোতলের পর বোতল, সঙ্গে নানা পদের ইউরোপীয় খাবার। আধো আলো আধো আঁধারের মাঝে কখনও কখনও কাঠের আগুন জ্বালিয়ে সে আগুন ঘিরে পানপাত্র হাতে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। পুরো এলাকা জুড়ে নাচ চলছে কোথাও মৃদু কোথাও উদ্দাম নৃত্য। নৃত্যের তালে তালে চুম্বন, বুকে বুক মিলিয়ে ভালবাসার প্রকাশ। কেউ প্রকাশ্যে, কেউ একটু আঁধারে আড়ালে, পুল পাড়ে, গাছের তলে। সাদা মানুষ আছেন, আফ্রিকার দীর্ঘাঙ্গী সুঠামদেহী রমণীরা আছেন। সাদা মানুষ সাদা রমণীরা নাচছেন, সাদা মানুষদের সঙ্গে মানিয়ে নাচছেন কালো রমণীরা। প্রায় ঘণ্টাখানেক পুরো ক্লাব নেচে গেয়ে মাতিয়ে রাখেন নাইজেরিয়ান দুই ষোড়শী। তাদের নাচের সঙ্গী ছিলেন ইউরোপের পাঁচ/সাত জন সাদা তরুণ সহ মাঝবয়সী। কালো গায়ের রঙের হরিণ চাহনির ভুবনমোহিনী হাসির দুই ষোড়শীর দিকে চোখ ছিল অনেকের। স্বল্প বসনা, ভরা যৌবনে ঢল ঢল দুই তরুণীকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত নাচের প্রতিযোগিতা ছিল কিছুটা, ওদের সঙ্গে নাচতে, হাতের খানিকটা সংস্পর্শ পেতে তাদের ঘিরে পাত্র হাতে ঘুরেছেন অনেকে, হাই হ্যালোও করেছেন। বাংলাদেশের দু’জোড়া যুবক-যুবতীকে দেখা গেল হলরুমের ঠিক মাঝখানে মেতেছেন আনন্দে, খুব সহসাই ফুরিয়ে যাচ্ছে সুরা, আবার পুরো করে আনছেন, কখনও নিজেরাই গাইছেন, কখনও তালবেতাল নাচছেন ডেক সেটের গানের সঙ্গে পা মিলিয়ে, পুরো শরীর দুলিয়ে, ঢলে ঢলে পড়ছেন একে অন্যের ওপর। চুমায় চুমায় ভরে দিচ্ছেন একজন আরেকজনকে। পুরো বেসামাল। লম্বা সুঠাম দেহের সমবয়সী এক তরুণের সঙ্গী স্বল্প বসনার এক সুদর্শনা। ইউরোপের একই দেশে ঠিকানা হলেও সেখানে থাকতে পরিচয় হয়নি, হাই-হ্যালোও হয়নি। পরিচয় প্রেম ভালবাসা মন দেয়া নেয়া ঘর বাঁধার পাকাপাকি সিদ্ধান্ত হয়েছে বাংলাদেশে এসে একই কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে। রাতজুড়ে নাচেগানে, পানে ভরপুর ছিল ওই দুই তরুণী। তাদের উথালপাথাল নৃত্য ছাড়িয়ে গিয়েছিল আনন্দ বিনোদনের সকল সীমানা।
কম যাননি বয়সী, মাঝবয়সীরাও। নির্জন রাতের নীরবতা খোঁজার মতো চুপিসারে পাত্র হাতে সঙ্গীকে জড়িয়ে ধরে ভরে দিয়েছেন চুমায় চুমায়। ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে দীর্ঘায়িত করেছেন হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসার চুম্বন। আলোআঁধারির সন্ধিক্ষণে হলরুমের ইটের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়ানো নারীকে ঘিরে দেখা গেছে পুরুষ সঙ্গীর বন্য সব আচরণ। কেউ হেসেছেন, কেউ পাশ দিয়ে চলে গেছেন, কেউ কেউ দেখেও না দেখার ভান করেছেন। পানে পানে বেসামাল পুরুষের অশ্লীল হাতটি দেখা গেছে কোন কোন রমণীর বেঠিক জায়গায় নড়াচড়া করছে, তবে খুব বেশি বেঠিক মনে করেন নি রমণীটিও। পুরো রাত, বোতলের পর বোতল সাবাড় হলো পানীয়, বেসামাল হলেন অনেকে। তবুও মনভরা, প্রাণ জুড়ানো আনন্দ ফুর্তিতেই পালিত হলো থার্টি ফার্স্ট।
উদ্দাম নাচে কেঁপে ওঠে হোটেল রিজেন্সি
শ’ শ’ তরুণ-তরুণীর উদ্দাম নাচে কেঁপে ওঠে হোটেল রিজেন্সি। শুধু নাচ নয়- সঙ্গে বিয়ার, হুইস্কিসহ নানা রঙের পানীয়। ছিল উচ্চ শব্দের মিউজিক। তাতে হারিয়ে যায় তরুণ-তরুণীরা। র্যাব পুলিশের কড়া পাহারা বাইরে। তার ভেতর চলে পাশ্চাত্য ধাঁচের নাচ আর গান। ছিল তরুণ-তরুণীদের ভালবাসা প্রকাশের আরও অনেক অনেক কিছু। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে সোমবার রাতে রাজধানীর খিলক্ষেতের এ অভিজাত হোটেলে সমবেত হয় শ’ শ’ তরুণ-তরুণী। তবে কড়া পানীয় আর হাইভোল্টেজ মিউজিকের মূর্ছনায় রাত ১২টার আগেই বেসামাল হয়ে যায় তারা। পরস্পর বাহু বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ঢলে পড়ে হোটেল কক্ষের এখানে ওখানে। আলো-আঁধারিতে চলে তাদের প্রেম ভালবাসার নানা রকম খেলা। উষ্ণ আলিঙ্গন, খুনসুটি, চুমোচুমি, হাতের স্পর্শ, নানা আকুতি আরও কত কি। কানায় কানায় পূর্ণ হল। কিন্তু কেউ কারও প্রতি নজর দেয়ার সময় নেই। যে যার মতো ব্যস্ত। পৌষের তীব্র শীতের রাত। ঘনকুয়াশায় আচ্ছন্ন চারদিক। কিন্তু রিজেন্সি হোটেলের আনন্দে মাতোয়ারা তরুণ-তরুণীরা ঘর্মাক্ত। হোটেল কক্ষে ঢুকেই শ’ শ’ তরুণী বাইরের পোশাক খুলে ফেলে। দেহে জড়িয়ে নেয় পাশ্চত্য সমাজের আঁটোসাটো স্বল্প বসন। নাচের তালে তালে খসে পড়ে তার বেশির ভাগ অংশ। এতে আরও আবেদনময়ী করে তোলে তাকে। তবে নাচের উত্তাপে অনেক তরুণও খুলে ফেলে ব্লেজার, স্যুয়েটার, গেঞ্জির মতো যাবতীয় গরম পোশাক। ১৪ তলায় নাচের শব্দ ভেসে আসে নিচ তলায়। সব মিলিয়ে এক অন্য রকম পরিবেশ তৈরি হয় হোটেল রিজেন্সির ১৪ নম্বর ফ্লোরে। লেমন ও জামিল নামে দুই তরুণ-তরুণী রিজেন্সি হোটেলের এ অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা। নববর্ষের অনুষ্ঠানের জন্য হোটেলর ১৪ নম্বর ফ্লোর ভাড়া নেয় তারা। দাওয়াত দেয় শহরের পেশাদার ডিজে বয় ও গার্লদের। প্রবেশ মূল্য ১০০০ টাকা করে ১২০০ টিকিট ছাড়ে তারা। কিন্তু ছাত্রলীগ নেতা সোহেলসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নেতাদের দোহাই দিয়ে সন্ধ্যা রাতেই কয়েক শ’ তরুণ-তরুণী বিনা টিকিটে ঢুকে পড়ে। এতে রাত ১১টার মধ্যেই হল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। অতিরিক্ত লোকের চাপে হোটেলের দু’টি লিফ্ট বার বার বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে হোটেল কর্র্তপক্ষ রাত ১২টার পর লিফ্ট দু’টি বন্ধ করে দেয়। তার পরও পায়ে হেঁটে ১৪ তলায় ওঠে উৎসাহী তরুণ-তরুণীরা। তবে রাত ১২টার পর ১৪ নম্বর ফ্লোর তরুণ-তরুণীদের গায়ে গায়ে ঠাসা হয়ে পড়ে। এ সময় কর্তৃপক্ষ হোটেলের মূল প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়। এতে টিকিটধারী অনেকেই ব্যর্থ মনোরথে ফিরে গেছে। তবে যতই ভিড় হোক আনন্দে মাতোয়ারা তরুণ-তরুণীদের কিঞ্চিৎ নজর ছিল না সেদিকে। দফায় দফায় রঙিন পানীয় পান আর সঙ্গীকে আনন্দ দেয়ার নানা কসরতে সময় কেটেছে তাদের। মদের নেশা আর নৃত্যের তালে তালে কেউ ঢলে পড়েছে সোফায়, কেউ লাল কার্পেটে। ঝিকিমিকি আলো সহায়ক ছিল তাদের। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভালবাসার এ উন্মাদনাও বাড়ে দ্রুতগতিতে। রাত ২টার পর বাহুলগ্না বান্ধবীকে নিয়ে কোন কোন তরুণকে ‘রিজার্ভ’ কক্ষে চলে যেতে দেখা যায়। কেউ চলে যায় অন্য কোন আবাসিক হোটেলে বা বাসাবাড়িতে। এ ফ্লোরের দুটি কক্ষ ধূমপান মুক্ত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু মধ্যরাতের পর পুরো ফ্লোর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এদিকে তরুণ-তরুণীদের এই আনন্দ উৎসবকে পুঁজি করে আয়োজকদের অন্য একটি গ্রুপ এখানে গলাকাটা ব্যবসা করে। এক গ্লাস সাদা পানির দাম নেয় ১০০ টাকা। মদ বিয়ার হুইস্কিসহ রঙিন পানির দাম ছিল আকাশছোঁয়া। এজন্য নেশা না জমতে পকেট খালি যায় অনেকের। তাই মধ্যরাতে টাকার জন্য কেউ কেউ ছুটে যান বাসাবাড়িতে। থার্টি ফার্স্ট নাইটের মাতাল করা এই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রবেশ ছিল সমপূর্ণ নিষিদ্ধ। এজন্য সন্ধ্যা থেকেই কড়া চেকিং বসানো হয় গেটে। ক্যামেরা জাতীয় কোন কিছু যেন ভেতরে না যায় এজন্য ব্লেজার, স্যুয়েটার খুলে জনে জনে পরীক্ষা করা হয়। উদ্দেশ্য এ রাতের সব নজর কাড়া দৃশ্য গোপন রাখা ।
রজনী গভীর হওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলাতে থাকে ক্লাব চত্বরের দৃশ্য, সাবাড় হতে থাকে বোতলের পর বোতল, সঙ্গে নানা পদের ইউরোপীয় খাবার। আধো আলো আধো আঁধারের মাঝে কখনও কখনও কাঠের আগুন জ্বালিয়ে সে আগুন ঘিরে পানপাত্র হাতে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। পুরো এলাকা জুড়ে নাচ চলছে কোথাও মৃদু কোথাও উদ্দাম নৃত্য। নৃত্যের তালে তালে চুম্বন, বুকে বুক মিলিয়ে ভালবাসার প্রকাশ। কেউ প্রকাশ্যে, কেউ একটু আঁধারে আড়ালে, পুল পাড়ে, গাছের তলে। সাদা মানুষ আছেন, আফ্রিকার দীর্ঘাঙ্গী সুঠামদেহী রমণীরা আছেন। সাদা মানুষ সাদা রমণীরা নাচছেন, সাদা মানুষদের সঙ্গে মানিয়ে নাচছেন কালো রমণীরা। প্রায় ঘণ্টাখানেক পুরো ক্লাব নেচে গেয়ে মাতিয়ে রাখেন নাইজেরিয়ান দুই ষোড়শী। তাদের নাচের সঙ্গী ছিলেন ইউরোপের পাঁচ/সাত জন সাদা তরুণ সহ মাঝবয়সী। কালো গায়ের রঙের হরিণ চাহনির ভুবনমোহিনী হাসির দুই ষোড়শীর দিকে চোখ ছিল অনেকের। স্বল্প বসনা, ভরা যৌবনে ঢল ঢল দুই তরুণীকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত নাচের প্রতিযোগিতা ছিল কিছুটা, ওদের সঙ্গে নাচতে, হাতের খানিকটা সংস্পর্শ পেতে তাদের ঘিরে পাত্র হাতে ঘুরেছেন অনেকে, হাই হ্যালোও করেছেন। বাংলাদেশের দু’জোড়া যুবক-যুবতীকে দেখা গেল হলরুমের ঠিক মাঝখানে মেতেছেন আনন্দে, খুব সহসাই ফুরিয়ে যাচ্ছে সুরা, আবার পুরো করে আনছেন, কখনও নিজেরাই গাইছেন, কখনও তালবেতাল নাচছেন ডেক সেটের গানের সঙ্গে পা মিলিয়ে, পুরো শরীর দুলিয়ে, ঢলে ঢলে পড়ছেন একে অন্যের ওপর। চুমায় চুমায় ভরে দিচ্ছেন একজন আরেকজনকে। পুরো বেসামাল। লম্বা সুঠাম দেহের সমবয়সী এক তরুণের সঙ্গী স্বল্প বসনার এক সুদর্শনা। ইউরোপের একই দেশে ঠিকানা হলেও সেখানে থাকতে পরিচয় হয়নি, হাই-হ্যালোও হয়নি। পরিচয় প্রেম ভালবাসা মন দেয়া নেয়া ঘর বাঁধার পাকাপাকি সিদ্ধান্ত হয়েছে বাংলাদেশে এসে একই কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে। রাতজুড়ে নাচেগানে, পানে ভরপুর ছিল ওই দুই তরুণী। তাদের উথালপাথাল নৃত্য ছাড়িয়ে গিয়েছিল আনন্দ বিনোদনের সকল সীমানা।
কম যাননি বয়সী, মাঝবয়সীরাও। নির্জন রাতের নীরবতা খোঁজার মতো চুপিসারে পাত্র হাতে সঙ্গীকে জড়িয়ে ধরে ভরে দিয়েছেন চুমায় চুমায়। ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে দীর্ঘায়িত করেছেন হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসার চুম্বন। আলোআঁধারির সন্ধিক্ষণে হলরুমের ইটের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়ানো নারীকে ঘিরে দেখা গেছে পুরুষ সঙ্গীর বন্য সব আচরণ। কেউ হেসেছেন, কেউ পাশ দিয়ে চলে গেছেন, কেউ কেউ দেখেও না দেখার ভান করেছেন। পানে পানে বেসামাল পুরুষের অশ্লীল হাতটি দেখা গেছে কোন কোন রমণীর বেঠিক জায়গায় নড়াচড়া করছে, তবে খুব বেশি বেঠিক মনে করেন নি রমণীটিও। পুরো রাত, বোতলের পর বোতল সাবাড় হলো পানীয়, বেসামাল হলেন অনেকে। তবুও মনভরা, প্রাণ জুড়ানো আনন্দ ফুর্তিতেই পালিত হলো থার্টি ফার্স্ট।
উদ্দাম নাচে কেঁপে ওঠে হোটেল রিজেন্সি
শ’ শ’ তরুণ-তরুণীর উদ্দাম নাচে কেঁপে ওঠে হোটেল রিজেন্সি। শুধু নাচ নয়- সঙ্গে বিয়ার, হুইস্কিসহ নানা রঙের পানীয়। ছিল উচ্চ শব্দের মিউজিক। তাতে হারিয়ে যায় তরুণ-তরুণীরা। র্যাব পুলিশের কড়া পাহারা বাইরে। তার ভেতর চলে পাশ্চাত্য ধাঁচের নাচ আর গান। ছিল তরুণ-তরুণীদের ভালবাসা প্রকাশের আরও অনেক অনেক কিছু। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে সোমবার রাতে রাজধানীর খিলক্ষেতের এ অভিজাত হোটেলে সমবেত হয় শ’ শ’ তরুণ-তরুণী। তবে কড়া পানীয় আর হাইভোল্টেজ মিউজিকের মূর্ছনায় রাত ১২টার আগেই বেসামাল হয়ে যায় তারা। পরস্পর বাহু বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ঢলে পড়ে হোটেল কক্ষের এখানে ওখানে। আলো-আঁধারিতে চলে তাদের প্রেম ভালবাসার নানা রকম খেলা। উষ্ণ আলিঙ্গন, খুনসুটি, চুমোচুমি, হাতের স্পর্শ, নানা আকুতি আরও কত কি। কানায় কানায় পূর্ণ হল। কিন্তু কেউ কারও প্রতি নজর দেয়ার সময় নেই। যে যার মতো ব্যস্ত। পৌষের তীব্র শীতের রাত। ঘনকুয়াশায় আচ্ছন্ন চারদিক। কিন্তু রিজেন্সি হোটেলের আনন্দে মাতোয়ারা তরুণ-তরুণীরা ঘর্মাক্ত। হোটেল কক্ষে ঢুকেই শ’ শ’ তরুণী বাইরের পোশাক খুলে ফেলে। দেহে জড়িয়ে নেয় পাশ্চত্য সমাজের আঁটোসাটো স্বল্প বসন। নাচের তালে তালে খসে পড়ে তার বেশির ভাগ অংশ। এতে আরও আবেদনময়ী করে তোলে তাকে। তবে নাচের উত্তাপে অনেক তরুণও খুলে ফেলে ব্লেজার, স্যুয়েটার, গেঞ্জির মতো যাবতীয় গরম পোশাক। ১৪ তলায় নাচের শব্দ ভেসে আসে নিচ তলায়। সব মিলিয়ে এক অন্য রকম পরিবেশ তৈরি হয় হোটেল রিজেন্সির ১৪ নম্বর ফ্লোরে। লেমন ও জামিল নামে দুই তরুণ-তরুণী রিজেন্সি হোটেলের এ অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা। নববর্ষের অনুষ্ঠানের জন্য হোটেলর ১৪ নম্বর ফ্লোর ভাড়া নেয় তারা। দাওয়াত দেয় শহরের পেশাদার ডিজে বয় ও গার্লদের। প্রবেশ মূল্য ১০০০ টাকা করে ১২০০ টিকিট ছাড়ে তারা। কিন্তু ছাত্রলীগ নেতা সোহেলসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নেতাদের দোহাই দিয়ে সন্ধ্যা রাতেই কয়েক শ’ তরুণ-তরুণী বিনা টিকিটে ঢুকে পড়ে। এতে রাত ১১টার মধ্যেই হল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। অতিরিক্ত লোকের চাপে হোটেলের দু’টি লিফ্ট বার বার বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে হোটেল কর্র্তপক্ষ রাত ১২টার পর লিফ্ট দু’টি বন্ধ করে দেয়। তার পরও পায়ে হেঁটে ১৪ তলায় ওঠে উৎসাহী তরুণ-তরুণীরা। তবে রাত ১২টার পর ১৪ নম্বর ফ্লোর তরুণ-তরুণীদের গায়ে গায়ে ঠাসা হয়ে পড়ে। এ সময় কর্তৃপক্ষ হোটেলের মূল প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়। এতে টিকিটধারী অনেকেই ব্যর্থ মনোরথে ফিরে গেছে। তবে যতই ভিড় হোক আনন্দে মাতোয়ারা তরুণ-তরুণীদের কিঞ্চিৎ নজর ছিল না সেদিকে। দফায় দফায় রঙিন পানীয় পান আর সঙ্গীকে আনন্দ দেয়ার নানা কসরতে সময় কেটেছে তাদের। মদের নেশা আর নৃত্যের তালে তালে কেউ ঢলে পড়েছে সোফায়, কেউ লাল কার্পেটে। ঝিকিমিকি আলো সহায়ক ছিল তাদের। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভালবাসার এ উন্মাদনাও বাড়ে দ্রুতগতিতে। রাত ২টার পর বাহুলগ্না বান্ধবীকে নিয়ে কোন কোন তরুণকে ‘রিজার্ভ’ কক্ষে চলে যেতে দেখা যায়। কেউ চলে যায় অন্য কোন আবাসিক হোটেলে বা বাসাবাড়িতে। এ ফ্লোরের দুটি কক্ষ ধূমপান মুক্ত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু মধ্যরাতের পর পুরো ফ্লোর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এদিকে তরুণ-তরুণীদের এই আনন্দ উৎসবকে পুঁজি করে আয়োজকদের অন্য একটি গ্রুপ এখানে গলাকাটা ব্যবসা করে। এক গ্লাস সাদা পানির দাম নেয় ১০০ টাকা। মদ বিয়ার হুইস্কিসহ রঙিন পানির দাম ছিল আকাশছোঁয়া। এজন্য নেশা না জমতে পকেট খালি যায় অনেকের। তাই মধ্যরাতে টাকার জন্য কেউ কেউ ছুটে যান বাসাবাড়িতে। থার্টি ফার্স্ট নাইটের মাতাল করা এই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রবেশ ছিল সমপূর্ণ নিষিদ্ধ। এজন্য সন্ধ্যা থেকেই কড়া চেকিং বসানো হয় গেটে। ক্যামেরা জাতীয় কোন কিছু যেন ভেতরে না যায় এজন্য ব্লেজার, স্যুয়েটার খুলে জনে জনে পরীক্ষা করা হয়। উদ্দেশ্য এ রাতের সব নজর কাড়া দৃশ্য গোপন রাখা ।
No comments