মহাজোট সরকার : ভাল-মন্দের ৪ বছর-কমেছে ক্রসফায়ার জঙ্গিবাদ বেড়েছে গুম খুন অপহরণ by এস এম আজাদ
মহাজোট সরকারের শুরু থেকেই সমস্যা কমবেশি
ছিল। তবে চতুর্থ বছরটি ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য সবচেয়ে খারাপ
সময়। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর
নিখোঁজ ঘটনা, শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যাকাণ্ড, সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা
খালাফ হত্যা, রামুর সহিংসতা, শিশু পরাগ অপহরণ, বিশ্বজিৎ খুন এবং শীর্ষ
সন্ত্রাসী বিকাশের চাঞ্চল্যকর মুক্তির ঘটনা- সবই ঘটেছে ২০১২ সালে।
অপরাধ
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ,
রাজনৈতিক সহিংসতা, সোনা চুরি, পুলিশের ওপর হামলা ও নাটকীয় অপহরণ-গুমের
ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। কমেছে বিচারবহির্ভূত হত্যা, জঙ্গিবাদ, ডাকাতি।
হত্যা, গুম ও র্যাবের নির্যাতন, অপহরণ, জাল টাকার বিস্তার, শীর্ষ
সন্ত্রাসীদের কারামুক্তির মতো ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে।এ চার বছরে ১৬ হাজার হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। গুম হয়েছে অন্তত ১৫৬ জন। রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছে পৌনে ৮০০ মানুষ। হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই ঘটেছে পারিবারিক বিরোধের কারণে। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রশাসনে দলীয়করণ, রাজনৈতিক সংঘাতপূর্ণ মনোভাব এবং অসচেতনতার কারণে নতুন অপরাধ বাড়ছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জনসংখ্যা ও সময় বিশ্লেষণে অপরাধের পরিসংখ্যান কোনোভাবেই অস্বাভাবিক নয়। মূলত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'পুলিশের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নৈতিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সব সময় পালন করা হয়। সার্বিক পরিস্থিতির কারণে কিছু ক্ষেত্রে সাফল্য আসে না।'
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেয় তানজিম আহমেদ সোহেল তাজকে। সোহেল তাজের নাটকীয় পদত্যাগের পর দায়িত্ব দেওয়া হয় অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুকে। এরপর সদ্য বিদায়ী বছরে সাহারা খাতুনকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয় ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র খারাপ থেকে খারাপ হচ্ছে।
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড : শুধু গত বছর নয়, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি খুনের ঘটনা বর্তমান সরকারের চার বছরে সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ড। গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও তাঁর স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে নৃশংসভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার রহস্য গত ১১ মাসেও উদ্ঘাটন করতে পারেনি সরকার। সাংবাদিকরা অব্যাহতভাবে মহাসমাবেশ, গণ-অনশনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনা ও সন্দেহের তীরে বিদ্ধ হন এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান। তাঁর পক্ষ নিয়ে সাংবাদিকদের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার কারণে জাতীয় চারটি গণমাধ্যম সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয় এটিএন বাংলার ১২ সাংবাদিককে। অন্যদিকে হত্যা মামলার প্রথম তদন্ত সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আদালতে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করলে র্যাবকে তদন্তভার দেওয়া হয়। কিন্তু এতেও কাজ হয়নি।
তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামি ধরা পড়বে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর দায়িত্ব গ্রহণের পর ৯ অক্টোবরের মধ্যে আসামি গ্রেপ্তারের ঘোষণা দিলে সাগর-রুনির বাসার দারোয়ান পলাশ, পারিবারিক বন্ধু তানভীর এবং ডাক্তার নিতাই হত্যা মামলার পাঁচ আসামিকে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তারও দেখানো হয়। আরেক দারোয়ান হুমায়ুন কবীর ওরফে এনামুলকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ফল শূন্য। সব মিলিয়ে বর্তমান সরকারের চার বছরে অন্তত ১৬ জন সাংবাদিক খুন হন। এর মধ্যে ফরহাদ খাঁ ও তাঁর স্ত্রী হত্যার বিষয়টিও ছিল আলোচিত।
ইলিয়াস নিখোঁজ : গত বছরের ১৭ এপ্রিল রাতে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালক আনসার আলী রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। বিএনপি ও পরিবারের দাবি, ইলিয়াস আলীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছেন। ইলিয়াস আলীকে ফেরত দেওয়ার দাবিতে হরতাল কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। আদালতে রিট ও তাহসিনা রুশদীর লুনা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বছর শেষ হয়েছে, তবে খোঁজ মেলেনি ইলিয়াস আলীর।
শোবার ঘরে খুন : গত বছর সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ একের পর এক বাসা-বাড়ির শোবার ঘরে হত্যাকাণ্ড ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হিসাবে এমন হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা শতাধিক। গত ২২ আগস্ট নিজের শোবার ঘরে খুন হন মহাখালী জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নারায়ণ চন্দ্র ওরফে নিতাই। ৩১ জুলাই দক্ষিণখানে সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা নাছির উদ্দিনকে স্ত্রীসহ, ২৯ জুলাই গুলশানে ব্যবসায়ী ফজলুল হক, ২৩ সেপ্টেম্বর হাজারীবাগে আইনজীবী দম্পতির মেয়ে তাসনিমা রহমান করবী এবং ১৪ অক্টোবর রূপনগরে বাসায় গলা কেটে হত্যা করা হয় গৃহবধূ মনিরা বেগমকে। বেশির ভাগ ঘটনায় প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি।
পরাগ অপহরণ : গত ১১ নভেম্বর সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা পশ্চিম পাড়ার বাসার সামনে থেকে শিশু পরাগকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তিন দিন পর গভীর রাতে কেরানীগঞ্জের আঁটিবাজার এলাকা থেকে অচেতন অবস্থায় পরাগকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে পরাগকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে র্যাব জানায়। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বিষয়টি এড়িয়ে যান। ঘটনায় অভিযুক্ত আমির ও জুয়েল মোল্লাসহ কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও মুক্তিপণের ব্যাপারটি ধামাচাপা পড়ে।
বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড : গত ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচির দিন পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগকর্মীরা নির্বিচারে কুপিয়ে হত্যা করে বিশ্বজিৎকে। আলোচিত এ হত্যার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলেন, 'হামলাকারীরা ছাত্রলীগের কেউ না'। কিন্তু এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া সাতজন নিজেদের ছাত্রলীগ কর্মী বলে দাবি করেছে। গত ২৩ ডিসেম্বর রফিকুল ইসলাম শাকিল, মাহফুজুর রহমান নাহিদ ও রাশেদুজ্জামান শাওন নামের তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়।
রামুর সহিংসতা : গত ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধবিহার ও বসতিতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ ওঠে, পুলিশ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বসতি ও মন্দিরে হামলা ঠেকাতে এগিয়ে যায়নি। এলাকার রাজনৈতিক নেতাদের মদদে রোহিঙ্গারা এ হামলায় উসকানি দেয়।
খালাফ হত্যা : গত বছরের ৫ মার্চ মধ্যরাতে গুলশানের কূটনীতিকপাড়ায় গুলিবিদ্ধ হন সৌদি আরব দূতাবাসের কর্মকর্তা খালাফ বিন মোহাম্মদ সালেম আলী। ওই দিনই ভোরে হাসপাতালে খালাফ মারা যান। এ ঘটনায় সৌদি সরকারের উৎকণ্ঠায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কিছুটা চাপ বাড়ে।
পুলিশের ওপর হামলা : গত বছরের আরেকটি আলোচিত বিষয় ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবিরের কর্মসূচি থেকে পুলিশের ওপর কয়েকটি হামলা। এসব হামলায় পুলিশের অস্ত্র লুট, গাড়ি পোড়ানো ও আইনমন্ত্রীর গাড়ির বহর আক্রান্ত হয়। এতে পাঁচ শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েক শ জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী।
আমিনুল হত্যা : গত বছরের ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের (বিসিডাব্লিউএস) শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম আশুলিয়া থেকে অপহৃত হওয়ার পরের দিন টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে সরকারের একটি নিরাপত্তা সংস্থার কিছু সদস্য জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে। দেশে-বিদেশে এ হত্যার ঘটনা ব্যাপক আলোচিত হয়। তবে রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি।
বিকাশের মুক্তি : ১৪ ডিসেম্বর গাজীপুরের কাশিমপুর-২ কারাগার থেকে গোপনে মুক্তি পায় শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ কুমার বিশ্বাস। রেওয়াজ আছে, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিনে মুক্তির আগে কারা কর্তৃপক্ষ পুলিশ ও গোয়েন্দাদের খবর জানায়। তবে বিকাশের ক্ষেত্রে এমনটি না ঘটায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। গত জোট সরকারের ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় প্রকাশ-বিকাশের নাম ছিল।
বেড়েছে হত্যা, ধর্ষণ : বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চার বছরে দেশে ১৬ হাজারেরও বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ১১ জন খুন হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যানও বলছে, হত্যাকাণ্ডের পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার। এর মধ্যে গত বছর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রায় চার হাজার। অধিকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১২ সালে ৯ শতাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ২০১১ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭১১ জন। ২০১০ সালে ৫৫৬ জন ধর্ষণের শিকার হয়। তবে পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে, গত বছরই প্রায় তিন হাজার ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দেশে। প্রথম আট মাসের সংখ্যা দুই হাজার ৩৯০। পুলিশের হিসাবে, নারী নির্যাতন ও এসিডদগ্ধ হওয়ার ঘটনাও বেড়েছে গত বছর।
আলোচনায় গুপ্তহত্যা : গত চার বছরে সারা দেশে প্রায় দেড় হাজার অপহরণের ঘটনা ঘটে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে গুম হয়েছে ১৫৬ জন। গুম হওয়ার পর ২৮ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে নদীতে, ডোবায়, জঙ্গলে ও ঝোপের মধ্যে। অধিকারের হিসাবে, গত বছর (নভেম্বর পর্যন্ত) গুমের ঘটনা ঘটে ২৪টি। ২০১১ সালে ঘটেছিল ৩০টি।
২০১০ সালের ২৫ জুন বিএনপির ওয়ার্ড কাউন্সিলর চৌধুরী আলম নিখোঁজ হন। গত দুই বছরে একইভাবে নিখোঁজ হন রাজধানীর ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি নূর মোহাম্মদ, তাঁর জামাতা আবদুল মান্নান ও বন্ধু ইকবাল, ছাত্রদল নেতা শামীম হাসান সোহেল, ইসমাইল হোসেন ওরফে আল-আমিন, মাসুম হোসেন, যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জ এলাকা থেকে জুয়েল, রাজীব ও মিজান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আল-মোকাদ্দেস ও ওয়ালিউল্লাহ, সিলেট জেলা ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আহমদ দিনার, বরিশালের উজিরপুরের বিএনপি নেতা হুমায়ুন খান, চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানা বিএনপির সভাপতি ও করলডেঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, রাজধানীর ছাত্র ইউনিয়ন নেতা শামিম, পল্লবীর যুবলীগ নেতা ও ঝুট ব্যবসায়ী করিম হাওলাদার এবং চার বন্ধু পল্লবী এলাকার আবুল কালাম শেখ, আবুল বাশার শেখ, মিরপুরের আবদুর রহিম ও যাত্রাবাড়ীর ইস্রাফিল।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হ্রাস : মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, চলতি বছর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমেছে। তবে গত চার বছরে বিনা বিচারে মারা গেছে ৪৫০ জন। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ১৫৪, ২০১০ সালে ১২৭, ২০১১ সালে ৮৪ জন এবং চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৬৭ জন। চলতি বছর ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেছে ৫১টি। এ ছাড়া গত চার বছরে জঙ্গি ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন নির্মূলে অনেক সফলতা পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অনেক জঙ্গি গ্রেপ্তারের পর দুর্বল হয়ে পড়ে তাদের নেটওয়ার্ক।
চার বছরে আলোচিত অপরাধ : গত চার বছরে দেশজুড়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলো হলো ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের পিস্তলের গুলিতে যুবলীগ নেতা ইব্রাহিম নিহত, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নুর বাবুকে পুলিশের সামনেই পিটিয়ে হত্যা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সহিংস ঘটনায় মেধাবী ছাত্র আবু বকর হত্যা, নরসিংদীর জনপ্রিয় পৌর মেয়র লোকমান হত্যা, যশোরের জিকরগাছা বিএনপির সভাপতি নাজমুল ইসলাম হত্যা এবং আমিনবাজারে পুলিশের মদদে ছয় ছাত্রকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যাকাণ্ড। এ ছাড়া ২০১০ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুরে র্যাবের গুলিতে নিরীহ কলেজছাত্র লিমন হোসেন আহত ও পঙ্গু হয়। ঘটনাটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের 'দৃষ্টান্ত' হিসেবে দেশে-বিদেশে প্রচার পায়। ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদেরকে ধরে নিয়ে খিলগাঁও থানায় আটক রেখে নির্যাতন করে পুলিশ।
No comments