সেবা খাতে দুর্নীতি কমেছে ১৩টি সেবা খাতে ২০১০ সালে যেখানে দুর্নীতির পরিমাণ ছিল ৮৪ দশমিক ২ ভাগ; সেখানে চলতি বছর দুর্নীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৫৫ দশমিক ৮ ভাগে
গত দু’বছরে ১৩টি সেবা খাতে দুর্নীতি কমেছে প্রায় ৩০ ভাগ। গবেষণা প্রতিষ্ঠান টিআইবির এক গবেষণা প্রতিবেদনে কথাটি বলা হয়েছে। দেশে সুনির্দিষ্ট ১৩টি সেবা খাতে ২০১০ সালে যেখানে দুর্নীতির পরিমাণ ছিল ৮৪ দশমিক ২ ভাগ; সেখানে চলতি বছর দুর্নীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৫৫ দশমিক ৮ ভাগে।
গত দু’বছরের ব্যবধানে এসব খাতে দুর্নীতি কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ ভাগ। তবে সেবা খাতে দুর্নীতি কমলেও স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র পরিলক্ষিত হয়। স্বাস্থ্য খাতে ২০১০ সালে দুর্নীতির পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ২ ভাগ; ২০১২ সালে এ খাতে দুর্নীতি বেড়ে দাঁড়িয়েেেছ ৪০ দশমিক ২ ভাগে। সুতরাং চলতি বছরের শেষদিকে এসে পেছনে ফিরে তাকিয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছিÑ সেবা খাতে দুর্নীতি একদিকে যেমন কমেছে। অন্যদিকে তা বেড়েছে। টিআইবির জরিপে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত দেশে অভিবাসন খাতে দুর্নীতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ৭৭ ভাগ। এর পরেই রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্নীতি; এ খাতে দুর্নীতির পরিমাণ ৭৫ দশমিক ৮ ভাগ। টিআইবির রিপোর্টে ১৩টি সেবা খাতে দুর্নীতি কমেছে বলে উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশ নানা সমস্যা জর্জরিত দেশÑযেখানে দুর্নীতি সর্বক্ষেত্রে আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। গত প্রায় দু’দশক ধরে আমরা টিআইবির বার্ষিক প্রতিবেদনে সবচেয়ে দুর্নীতিপরায়ণ দেশগুলোর তালিকায় প্রথম সারিরু। এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের জন্য সুখকর নয়। অথচ বাংলাদেশ একটি দুর্নীতিমুক্ত আদর্শ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে একদিন বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়াবেÑএই লক্ষ্যে মানুষ স্বাধীনতাযুদ্ধে জীবনদান করেছিলেন।স্বাধীনতার পর কিছু সুবিধাবাদী দুর্নীতিপরায়ণ মানুষ এদেশে রাষ্ট্রীয় নানাক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার শুরু করে। এরা সে সময় সরকারী ও বেসরকারী নানা গুরুত্বপূর্ণ খাতে তাদের অপতৎপরতা শুরু করেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বহুবার এসব সুবিধাবাদী দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে সবাইকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন।
১৯৭৫ সালে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হওয়ার পর এসব দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি আরও শক্তিশালী হয়। এ সময় থেকে তারা সারাদেশে রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রাধান্য বিস্তার করে। এদের কারণেই সরকারের কিছু জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ সাফল্য অর্জন করতে পারছে না।
বাংলাদেশে গত দু’বছর স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ৭ শতাংশ বেড়েছেÑবিষয়টি মোটেই উপেক্ষা করার নয়। বর্তমান সরকার সারাদেশে চিকিৎসাকে মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিরা বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে মফস্বলে বেশিরভাগ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই। সরকার চিকিৎসকদের গ্রামে বাধ্যতামূলক নিয়োগের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু অনেক চিকিৎসক গ্রামে থাকতে চান না। এসব বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। চিকিৎসকদের স্বেচ্ছাচার ও দুর্নীতি বন্ধ করা দরকার। সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালের যাবতীয় অব্যবস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত দরকার। স্বাস্থ্যসেবা খাতকে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত করা না হলে একটি আধুনিক স্বাস্থ্যসচেতন জাতি কখনই গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।
No comments