উদীচী সম্মেলনে বোমা হামলার একযুগ by সুপা সাদিয়া
উদীচীর সবাই যেন আমার পরিবার, পরম আত্মার আত্মীয়। উদীচীর বেশ কয়েকটি জাতীয় সম্মেলনে গিয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দ নিয়ে ফিরেছি। ১৯৯৯ সালেও যোগ দিয়েছিলাম উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনে যশোরে।
আমরা ৭ জন একটি মাইক্রোবাসে করে যাচ্ছি বরিশাল থেকে যশোর, সারা পথ গান-বাজনা, খাওয়া-দাওয়া। দেশের সব জেলা শাখা থেকে উদীচী কর্মীদের জমায়েত। সকালে উদীচী টাউন হলে 'আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে'_ এ স্লোগান নিয়ে একঝাঁক প্রগতিশীল মানুষ সেদিন জেগে উঠেছিল এক সকাল আনবে বলে। নিয়মমাফিক আনন্দ শোভাযাত্রা নাচে-গানে পরিপূর্ণ। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক আয়োজন। একে সাংস্কৃতিক আয়োজন না বলে উৎসব বলা যেতে পারে। ৬ মার্চ অনুষ্ঠানের সমাপনী দিন বরিশাল কর্মীরা রাত ১০টার পর মাইক্রোবাস নিয়ে বরিশালের পথে, পরের দিন সকালে বরিশালে আসবেন আলো হাতে আঁধারে, যার বিচরণ ওয়াহিদুল হক। ভোর ৫টার দিকে বরিশাল, বাসায় ঢুকে ঘুম :গত রাতে উদীচীর সম্মেলনে বোমা হামলা, আমরা যেখানে বসেছি, আড্ডায় মেতেছি ঠিক সেই পাশে একটি, আরেকটি অন্য পাশে। কোন বেদনাবিধুর ভালোবাসায় হারালাম ১০ জনকে আর আমাদের আত্মার আত্মীয়রা আহত হয়েছে শত শত, যাদের অনেকে আজ পঙ্গু। শুনেছি শোকের আয়ু নাকি ৩ দিন কিন্তু আমরা তো বয়ে চলেছি দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, একযুগ।
বোমা হামলায় নিহত বাবুল সূত্রধরের বাবা-মা এখন প্রতিদিন অশ্রুজলে সিক্ত হন, নিহত নূর ইসলামের স্ত্রী ও তার ছেলেমেয়ে দিনযাপন করছেন সরকারের আবাসন প্রকল্প আশ্রয়ণে, সুকান্ত দাস এক পা হারিয়েও মনোবল না হারিয়ে যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছেন, এখন তার প্রয়োজন হাতের চিকিৎসার, দু'পা হারানো নাহিদ আর গানপাগল সমির কুমার সরকার নিয়মিত জীবনের সঙ্গে জয়-পরাজয়ের খেলা খেলছেন। বোমা হামলার দিন দু'পায়ে ঘুঙুর বেঁধে বাউলশিল্পী হরেন্দ্রনাথ অধিকারী মুগ্ধ করছিলেন দর্শকশ্রোতা, তার সেই ঘুঙুর বাঁধা দুটি পা-ই সেদিন হারাতে হয়েছে তাকে। পেট-পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত সেকেন্দার আলী, বাউল লিয়াকত আলীম, হারুন অর রশীদ, মুক্তিযোদ্ধা ফটো সাংবাদিক এসএম শফির ছেলে মনোয়ার হোসেন মনু আবার একত্র হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে। শেখ হাসিনা নিহত ও আহত অসচ্ছল পরিবারকে ১৪ লাখ টাকা দেন। সেদিনও সবার আহ্বান ছিল প্রায় একযুগ হতে শুরু করল বিচার পেলাম না।
উদীচী ন্যায়বিচারের দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পুনর্তদন্তের দাবি করলে বর্ধিত তদন্তের দায়িত্ব ন্যস্ত হয় সিআইডির ওপর। সর্বশেষে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এলে উদীচী মামলার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট রিট করেন। ভোর হয়নি আজ হলো না, কাল হবে কি-না তাও জানা নেই, পরশু ভোর ঠিক আসবেই_ সেই আশাবাদ তুমি ছেড় না। তাই আমরা যারা উদীচী কর্মী, যারা বোমা হামলায় হারিয়েছি স্বজন, তারা কেবল এ আশা নিয়ে আছি ন্যায়বিচার পাবই, আজ-কাল না হোক পরশু ঠিক উদীচীতে জ্বলজ্বল
করবে শুকতারা।
বোমা হামলায় নিহত বাবুল সূত্রধরের বাবা-মা এখন প্রতিদিন অশ্রুজলে সিক্ত হন, নিহত নূর ইসলামের স্ত্রী ও তার ছেলেমেয়ে দিনযাপন করছেন সরকারের আবাসন প্রকল্প আশ্রয়ণে, সুকান্ত দাস এক পা হারিয়েও মনোবল না হারিয়ে যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছেন, এখন তার প্রয়োজন হাতের চিকিৎসার, দু'পা হারানো নাহিদ আর গানপাগল সমির কুমার সরকার নিয়মিত জীবনের সঙ্গে জয়-পরাজয়ের খেলা খেলছেন। বোমা হামলার দিন দু'পায়ে ঘুঙুর বেঁধে বাউলশিল্পী হরেন্দ্রনাথ অধিকারী মুগ্ধ করছিলেন দর্শকশ্রোতা, তার সেই ঘুঙুর বাঁধা দুটি পা-ই সেদিন হারাতে হয়েছে তাকে। পেট-পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত সেকেন্দার আলী, বাউল লিয়াকত আলীম, হারুন অর রশীদ, মুক্তিযোদ্ধা ফটো সাংবাদিক এসএম শফির ছেলে মনোয়ার হোসেন মনু আবার একত্র হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে। শেখ হাসিনা নিহত ও আহত অসচ্ছল পরিবারকে ১৪ লাখ টাকা দেন। সেদিনও সবার আহ্বান ছিল প্রায় একযুগ হতে শুরু করল বিচার পেলাম না।
উদীচী ন্যায়বিচারের দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পুনর্তদন্তের দাবি করলে বর্ধিত তদন্তের দায়িত্ব ন্যস্ত হয় সিআইডির ওপর। সর্বশেষে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এলে উদীচী মামলার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট রিট করেন। ভোর হয়নি আজ হলো না, কাল হবে কি-না তাও জানা নেই, পরশু ভোর ঠিক আসবেই_ সেই আশাবাদ তুমি ছেড় না। তাই আমরা যারা উদীচী কর্মী, যারা বোমা হামলায় হারিয়েছি স্বজন, তারা কেবল এ আশা নিয়ে আছি ন্যায়বিচার পাবই, আজ-কাল না হোক পরশু ঠিক উদীচীতে জ্বলজ্বল
করবে শুকতারা।
No comments