নাশকতার ছকে জামায়াত শিবিরের টাকার ফাঁদ by রেজোয়ান বিশ্বাস
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় যেকোনো সময় হতে পারে- এই আশঙ্কা সামনে রেখে সারা দেশে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করেছে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। অর্থের ফাঁদ পেতে ধ্বংসাত্মক কাজে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষকে ব্যবহারের পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।
এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ে এই কৌশল পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ জামায়াত-শিবিরের টাকার ফাঁদে পা দিয়ে না বুঝেই নাশকতায় লিপ্ত হয়েছে। গত ২০ ডিসেম্বর সমমনা ইসলামী দলগুলোর ডাকা হরতালের সময় রাজধানীতে পুলিশের ভ্যানে হামলা চালানোর ঘটনায় যে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয় তাদের একজন জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও অন্যজন রিকশা গ্যারেজের শ্রমিক। পুলিশের সূত্র মতে, বিভিন্ন পেশার সাধারণ মানুষকে ভবিষ্যতেও নাশকতার কাজে লাগানোর বড় পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াত-শিবির চক্রের।
এদিকে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শীর্ষ নেতাদের বিচার বানচাল করতে যেকোনো সহিংস ঘটনার জন্ম দিতে তৈরি হয়ে আছে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। তাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মধ্যে পুলিশ, বিচারক, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিদের টার্গেট করে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের শীর্ষস্থানীয় ২০ নেতা। তাঁদের নির্দেশ পালন করছে সারা দেশের নেতা-কর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রে আরো জানা যায়, ব্যাপক ধরপাকড় ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে প্রতিকূল অবস্থার কারণে অর্থের বিনিময়ে নিম্ন আয়ের মানুষকে চোরাগোপ্তা হামলার কাজে লাগানো হচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের ৩৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে আরো অনেক তথ্য পেয়েছে ডিবি পুলিশ। এর পরই সরকারের সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মাঠে নেমেছে সম্ভাব্য নাশকতার পরিকল্পনাকারীদের অনুসন্ধানে।
ঢাকা মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাজ্জাদ আলম খান ও সেক্রেটারি গোলাম কিবরিয়াসহ গ্রেপ্তার হওয়া নেতারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিবিকে জানান, দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির জন্য সব রকম প্রস্তুতি তাঁদের রয়েছে। সারা দেশে হামলা চালাতে জেলা-উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা সক্রিয় রয়েছে। ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনের মেসেজের মাধ্যমে তারা তথ্য আদান-প্রদান করছে। বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র মজুদ আছে তাদের হাতে। দ্রুত হামলা চালানোর জন্য ঢাকার প্রতিটি এলাকার মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মোটরসাইকেল দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী শীর্ষ নেতাদের মুক্ত করতে না পারা পর্যন্ত পুলিশের ওপর আরো হামলা চালানো হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিচারক, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তি ও স্থাপনাও বাদ যাবে না। এরই মধ্যে হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি গ্রেপ্তার হলে তাঁর জায়গায় কে দায়িত্ব পালন করবেন, তা নির্ধারণ করে সাত স্তরের বিকল্প ঠিক করা হয়েছে।
এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের দেওয়া তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায় গত ২০ ডিসেম্বরের হরতালে। জানা গেছে, পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওই হরতালের দিন মিরপুর-১ নম্বরের ডেল্টা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে দারুস সালাম থানার একটি পুলিশ ভ্যানে কয়েকজন শিবিরকর্মী হামলা চালায়। এ সময় স্থানীয় লোকদের সহযোগিতায় দুই হামলাকারীকে আটক করে পুলিশ। আহমদ উল্লাহ নামে তাঁদের একজন কালের কণ্ঠকে জানান, কেন্দ্রের দেওয়া কর্মসূচি বাস্তবায়নে বৃহত্তর মিরপুরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তিনি আরো জানান, এসব কাজে নিম্ন আয়ের মানুষকে অর্থের বিনিময়ে ব্যবহার করারও নির্দেশনা রয়েছে। ওই দিন গ্রেপ্তার হওয়া দুজনের মধ্যে জাকির হোসেন নিজেকে একটি রিকশা গ্যারেজের কর্মী বলে দাবি করেন। তিনি জানান, পুলিশের গাড়িতে একটি ইট মারলে ৫০০ টাকা দেওয়ার কথা বলে তাঁকে হামলায় ব্যবহার করেন আহমদ উল্লাহ। হামলার আগের দিন তাঁর মতো বিভিন্ন পেশায় অল্প মজুরিতে নিয়োজিত শতাধিক ব্যক্তিকে নিয়ে টোলারবাগ স্টাফ কোয়ার্টার মাঠে এ ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
পুলিশের মিরপুর জোনের উপকমিশনার (ডিসি) ইমতিয়াজ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জাকিরের মতো আরো ৪৫ জনের সন্ধান মিলেছে, যাদের বেশির ভাগই দিনমজুর। ঢাকায় তারা ভাসমান। পুলিশের ওপর হামলা করলে কী পরিণতি হবে, এ বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই। তবে তাদের কাজে লাগিয়ে জামায়াত-শিবির আরো বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিয়েছে।'
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় জামায়াত-শিবির হামলার পরিকল্পনাবিষয়ক তথ্য আদান-প্রদানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করছে। সারা দেশে নাশকতার মহাপরিকল্পনা করছে সংগঠনটির শীর্ষস্থানীয় ২০ নেতা।
নানা কৌশল : গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ঢাকাসহ দেশের সব বড় জেলায় পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ নামে জামায়াত-শিবিরের চারটি সাংগঠনিক জোন গঠন করে নাশকতা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব জোনের প্রতিটি কার্যালয়ে থাকা ল্যাপটপে কোথায়, কখন, কিভাবে হামলা চালানো হবে- তার দিকনির্দেশনা তৈরি করে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের হামলার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে তাদের দীর্ঘদিনের প্রচলিত পোশাক ও অবয়ব বদলে ফেলে। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিতে সারা দেশে শতাধিক নিজস্ব গুপ্তচর বাহিনী তৈরি করেছে শিবির। এরা বিভিন্ন এলাকায় ফকির, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকানদারসহ নানা ছদ্মবেশ ধারণ করে গতিবিধি জেনে পুলিশের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালাবে। দ্রুত হামলা চালানোর জন্য কয়েক হাজার দামি মোটরসাইকেল কেনা হয়েছে। এ ছাড়া নিজস্ব সিএনজিচালিত ট্যাক্সি ও মাইক্রোবাসও রয়েছে তাদের। হামলার কাজে আর্থিক জোগান পেতে তাদের নিজস্ব মতাদর্শের ব্যাংক, দেশি-বিদেশি সংস্থা ও মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে তারা। মহিলাকর্মীরা বিভিন্ন বস্তির নিম্ন আয়ের নারীদের দলে সম্পৃক্ত করে তাদেরও নাশকতার নানা কাজে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ডিজিটাল নেটওয়ার্ক ও অস্ত্র : জামায়াত-শিবিরের হাতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ছোট-বড় অস্ত্র রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরকও মজুদ করেছে তারা। ডিজিটাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করছে তারা। তাদের প্রতিটি কার্যালয়ে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের নির্দেশ ই-মেইলের মাধ্যমে দিয়ে থাকে। এ কাজে ফেসবুকও ব্যবহার করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি, সেক্রেটারিসহ যে ৩৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাঁদের মধ্যে শিবিরের মহানগর পশ্চিমের ১২টি থানার সভাপতি ও সেক্রেটারিও রয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে ২০১৩ সালে শিবিরের কার্যক্রমের পরিকল্পনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে মাঠ পর্যায়ের নেতাদের বায়োডাটা, সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় বায়তুল মাল (সংগঠন পরিচালনার চাঁদা) দাতাদের নাম ও ঠিকানা, ইন্টানেটের মাধ্যমে গড়ে তোলা শিবিরের ডিজিটাল নেটওয়ার্কসহ নানা কৌশলের বিষয়ে তথ্য জানা গেছে। উদ্ধার করা নথিতে শিবিরের বার্ষিক পরিকল্পনা, সংগঠনে অর্থদাতাদের নাম-ঠিকানা, শুভাকাঙ্ক্ষীদের নামের তালিকা, সারা দেশে বিভিন্ন ইউনিটের নেতাদের নাম-পরিচয়সহ সব কিছুই রয়েছে।
জামায়াত-শিবিরের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে। তাদের ভাষায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সম্ভাব্য যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।
র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জামায়াত-শিবিরের হামলার ব্যাপারে আগাম তথ্য রয়েছে। সে অনুযায়ী র্যাব সদস্যরা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।'
এদিকে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শীর্ষ নেতাদের বিচার বানচাল করতে যেকোনো সহিংস ঘটনার জন্ম দিতে তৈরি হয়ে আছে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। তাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মধ্যে পুলিশ, বিচারক, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিদের টার্গেট করে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের শীর্ষস্থানীয় ২০ নেতা। তাঁদের নির্দেশ পালন করছে সারা দেশের নেতা-কর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রে আরো জানা যায়, ব্যাপক ধরপাকড় ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে প্রতিকূল অবস্থার কারণে অর্থের বিনিময়ে নিম্ন আয়ের মানুষকে চোরাগোপ্তা হামলার কাজে লাগানো হচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের ৩৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে আরো অনেক তথ্য পেয়েছে ডিবি পুলিশ। এর পরই সরকারের সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মাঠে নেমেছে সম্ভাব্য নাশকতার পরিকল্পনাকারীদের অনুসন্ধানে।
ঢাকা মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাজ্জাদ আলম খান ও সেক্রেটারি গোলাম কিবরিয়াসহ গ্রেপ্তার হওয়া নেতারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিবিকে জানান, দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির জন্য সব রকম প্রস্তুতি তাঁদের রয়েছে। সারা দেশে হামলা চালাতে জেলা-উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা সক্রিয় রয়েছে। ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনের মেসেজের মাধ্যমে তারা তথ্য আদান-প্রদান করছে। বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র মজুদ আছে তাদের হাতে। দ্রুত হামলা চালানোর জন্য ঢাকার প্রতিটি এলাকার মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মোটরসাইকেল দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী শীর্ষ নেতাদের মুক্ত করতে না পারা পর্যন্ত পুলিশের ওপর আরো হামলা চালানো হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিচারক, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তি ও স্থাপনাও বাদ যাবে না। এরই মধ্যে হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি গ্রেপ্তার হলে তাঁর জায়গায় কে দায়িত্ব পালন করবেন, তা নির্ধারণ করে সাত স্তরের বিকল্প ঠিক করা হয়েছে।
এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের দেওয়া তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায় গত ২০ ডিসেম্বরের হরতালে। জানা গেছে, পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওই হরতালের দিন মিরপুর-১ নম্বরের ডেল্টা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে দারুস সালাম থানার একটি পুলিশ ভ্যানে কয়েকজন শিবিরকর্মী হামলা চালায়। এ সময় স্থানীয় লোকদের সহযোগিতায় দুই হামলাকারীকে আটক করে পুলিশ। আহমদ উল্লাহ নামে তাঁদের একজন কালের কণ্ঠকে জানান, কেন্দ্রের দেওয়া কর্মসূচি বাস্তবায়নে বৃহত্তর মিরপুরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তিনি আরো জানান, এসব কাজে নিম্ন আয়ের মানুষকে অর্থের বিনিময়ে ব্যবহার করারও নির্দেশনা রয়েছে। ওই দিন গ্রেপ্তার হওয়া দুজনের মধ্যে জাকির হোসেন নিজেকে একটি রিকশা গ্যারেজের কর্মী বলে দাবি করেন। তিনি জানান, পুলিশের গাড়িতে একটি ইট মারলে ৫০০ টাকা দেওয়ার কথা বলে তাঁকে হামলায় ব্যবহার করেন আহমদ উল্লাহ। হামলার আগের দিন তাঁর মতো বিভিন্ন পেশায় অল্প মজুরিতে নিয়োজিত শতাধিক ব্যক্তিকে নিয়ে টোলারবাগ স্টাফ কোয়ার্টার মাঠে এ ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
পুলিশের মিরপুর জোনের উপকমিশনার (ডিসি) ইমতিয়াজ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জাকিরের মতো আরো ৪৫ জনের সন্ধান মিলেছে, যাদের বেশির ভাগই দিনমজুর। ঢাকায় তারা ভাসমান। পুলিশের ওপর হামলা করলে কী পরিণতি হবে, এ বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই। তবে তাদের কাজে লাগিয়ে জামায়াত-শিবির আরো বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিয়েছে।'
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় জামায়াত-শিবির হামলার পরিকল্পনাবিষয়ক তথ্য আদান-প্রদানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করছে। সারা দেশে নাশকতার মহাপরিকল্পনা করছে সংগঠনটির শীর্ষস্থানীয় ২০ নেতা।
নানা কৌশল : গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ঢাকাসহ দেশের সব বড় জেলায় পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ নামে জামায়াত-শিবিরের চারটি সাংগঠনিক জোন গঠন করে নাশকতা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব জোনের প্রতিটি কার্যালয়ে থাকা ল্যাপটপে কোথায়, কখন, কিভাবে হামলা চালানো হবে- তার দিকনির্দেশনা তৈরি করে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের হামলার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে তাদের দীর্ঘদিনের প্রচলিত পোশাক ও অবয়ব বদলে ফেলে। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিতে সারা দেশে শতাধিক নিজস্ব গুপ্তচর বাহিনী তৈরি করেছে শিবির। এরা বিভিন্ন এলাকায় ফকির, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকানদারসহ নানা ছদ্মবেশ ধারণ করে গতিবিধি জেনে পুলিশের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালাবে। দ্রুত হামলা চালানোর জন্য কয়েক হাজার দামি মোটরসাইকেল কেনা হয়েছে। এ ছাড়া নিজস্ব সিএনজিচালিত ট্যাক্সি ও মাইক্রোবাসও রয়েছে তাদের। হামলার কাজে আর্থিক জোগান পেতে তাদের নিজস্ব মতাদর্শের ব্যাংক, দেশি-বিদেশি সংস্থা ও মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে তারা। মহিলাকর্মীরা বিভিন্ন বস্তির নিম্ন আয়ের নারীদের দলে সম্পৃক্ত করে তাদেরও নাশকতার নানা কাজে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ডিজিটাল নেটওয়ার্ক ও অস্ত্র : জামায়াত-শিবিরের হাতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ছোট-বড় অস্ত্র রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরকও মজুদ করেছে তারা। ডিজিটাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করছে তারা। তাদের প্রতিটি কার্যালয়ে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের নির্দেশ ই-মেইলের মাধ্যমে দিয়ে থাকে। এ কাজে ফেসবুকও ব্যবহার করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি, সেক্রেটারিসহ যে ৩৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাঁদের মধ্যে শিবিরের মহানগর পশ্চিমের ১২টি থানার সভাপতি ও সেক্রেটারিও রয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে ২০১৩ সালে শিবিরের কার্যক্রমের পরিকল্পনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে মাঠ পর্যায়ের নেতাদের বায়োডাটা, সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় বায়তুল মাল (সংগঠন পরিচালনার চাঁদা) দাতাদের নাম ও ঠিকানা, ইন্টানেটের মাধ্যমে গড়ে তোলা শিবিরের ডিজিটাল নেটওয়ার্কসহ নানা কৌশলের বিষয়ে তথ্য জানা গেছে। উদ্ধার করা নথিতে শিবিরের বার্ষিক পরিকল্পনা, সংগঠনে অর্থদাতাদের নাম-ঠিকানা, শুভাকাঙ্ক্ষীদের নামের তালিকা, সারা দেশে বিভিন্ন ইউনিটের নেতাদের নাম-পরিচয়সহ সব কিছুই রয়েছে।
জামায়াত-শিবিরের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে। তাদের ভাষায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সম্ভাব্য যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।
র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জামায়াত-শিবিরের হামলার ব্যাপারে আগাম তথ্য রয়েছে। সে অনুযায়ী র্যাব সদস্যরা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।'
No comments