আগামী নির্বাচনেও রিটার্নিং কর্মকর্তা হচ্ছেন ডিসিরা by তানভীর সোহেল
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন বিগত কমিশনের সিদ্ধান্ত ছিল, নিজস্ব জনবল থেকে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করা হবে।
কিন্তু আট মাস আগে দায়িত্ব পাওয়া বর্তমান কমিশনের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হচ্ছে, দশম সংসদ নির্বাচনেও জেলা প্রশাসকেরা (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান। তিনি আরও জানান, আগামী নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবলের সংকট আছে। এ জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে কমিশনের বাইরের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে। অবশ্য এই ‘বাইরের কর্মকর্তা’ কারা, তা তিনি পরিষ্কার করেননি।
বাইরের কর্মকর্তা বলতে কি ডিসিদের কথা বলছেন—এ প্রশ্নের জবাবে জাবেদ আলী বলেন, ‘আমি সেটা বলছি না। আমি বলতে চাচ্ছি, আদারস কাউকে রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হবে।’
তবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, প্রতি জেলায় একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং প্রতিটি সংসদীয় আসনে একজন করে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের মতো জনবল ইসির আছে। বর্তমানে ৬৪ জন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রায় ৪০০ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ছাড়াও ১০ জন আঞ্চলিক কর্মকর্তা রয়েছেন ইসির।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা যখন দায়িত্বে ছিলেন তখন থেকেই কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের নির্বাচনের মূল দায়িত্বে রাখার কাজ শুরু করেন। তাঁদের কমিশন যখন দায়িত্ব ছেড়ে আসে, তখন যে লোকবল ছিল, তাতে অন্তত ৮০ ভাগ আসনে নিজস্ব কর্মকর্তা দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা সম্ভব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন, এই সরকারের আমলে যে নির্বাচন হয়েছে, তা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। নবম সংসদ নির্বাচনের পর এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সব উপনির্বাচন, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তারা। তাঁরা দায়িত্ব পালন করে প্রশংসাও কুড়িয়েছেন।
অবশ্য আগের সব কটি সংসদ নির্বাচনেই ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা আর ৩০০ আসনে ইউএনওরা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তবে, ১৯৯১ থেকে সর্বশেষ ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচন—সব কটি নির্বাচনই হয়েছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। আর বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী আগামী সংসদ নির্বাচনের সময় দলীয় সরকার বহাল থাকবে।
সম্প্রতি ডিসি পদে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। গত তিন মাসে ৩০টি জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি জেলায় নতুন নিয়োগের তোড়জোড় চলছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া ডিসিরা সবাই সরকারদলীয় সমর্থক হিসেবে পরিচিত। এঁরা আগামী নির্বাচনের সময়ও ওই সব জেলার দায়িত্বে থাকবেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, গত ২৬ নভেম্বর যে ১০ জন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে চারজন এর আগে মন্ত্রী, সংসদীয় উপনেতা ও প্রতিমন্ত্রীদের একান্ত সচিব ছিলেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর যে ২০ জন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়, তাঁদের মধ্যেও কয়েকজন এর আগে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একান্ত সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা ছিলেন। তারও কিছুদিন আগে ফেনী, গাজীপুর, খুলনাসহ কয়েকটি জেলায় যাঁদের ডিসি করা হয়, তাঁদের মধ্যেও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রীদের সাবেক একান্ত সচিব আছেন।
নির্বাচনবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব ‘পছন্দের’ ডিসি আগামী নির্বাচনের মূল দায়িত্বে থাকলে তাঁদের ওপর ইসির শতভাগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা কঠিন হবে। তাছাড়া, নির্বাচন সামনে রেখে ডিসি নিয়োগসহ প্রশাসন ঢেলে সাজানোর চেষ্টা চলছে বলে ইতিমধ্যে অভিযোগও উঠেছে।
এ অবস্থায় নিজস্ব জনবল বাদ দিয়ে ডিসিদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার ব্যাপারে ইসির বর্তমান অবস্থানের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে পরিমাণ লোকবল আছে তা নিয়ে যদি সব আসনে নির্বাচন করা সম্ভব না-ও হয়, সে ক্ষেত্রে কেবল জেলা প্রশাসক বা বাইরের অন্য কোনো কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করা যেতে পারে।
এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, নিজস্ব কর্মকর্তাদের দিয়ে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করার লক্ষ্য ঠিক করে ইসি অনেক আগেই প্রয়োজনীয় জনবল বাড়ানোর কাজ শুরু করেছিল। তিনি বলেন, নিজস্ব কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ করালে তাঁদের ওপর ইসির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। তাছাড়া বিগত কয়েক বছরে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা নির্বাচন পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান। তিনি আরও জানান, আগামী নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবলের সংকট আছে। এ জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে কমিশনের বাইরের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে। অবশ্য এই ‘বাইরের কর্মকর্তা’ কারা, তা তিনি পরিষ্কার করেননি।
বাইরের কর্মকর্তা বলতে কি ডিসিদের কথা বলছেন—এ প্রশ্নের জবাবে জাবেদ আলী বলেন, ‘আমি সেটা বলছি না। আমি বলতে চাচ্ছি, আদারস কাউকে রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হবে।’
তবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, প্রতি জেলায় একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং প্রতিটি সংসদীয় আসনে একজন করে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের মতো জনবল ইসির আছে। বর্তমানে ৬৪ জন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রায় ৪০০ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ছাড়াও ১০ জন আঞ্চলিক কর্মকর্তা রয়েছেন ইসির।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা যখন দায়িত্বে ছিলেন তখন থেকেই কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের নির্বাচনের মূল দায়িত্বে রাখার কাজ শুরু করেন। তাঁদের কমিশন যখন দায়িত্ব ছেড়ে আসে, তখন যে লোকবল ছিল, তাতে অন্তত ৮০ ভাগ আসনে নিজস্ব কর্মকর্তা দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা সম্ভব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন, এই সরকারের আমলে যে নির্বাচন হয়েছে, তা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। নবম সংসদ নির্বাচনের পর এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সব উপনির্বাচন, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তারা। তাঁরা দায়িত্ব পালন করে প্রশংসাও কুড়িয়েছেন।
অবশ্য আগের সব কটি সংসদ নির্বাচনেই ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা আর ৩০০ আসনে ইউএনওরা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তবে, ১৯৯১ থেকে সর্বশেষ ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচন—সব কটি নির্বাচনই হয়েছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। আর বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী আগামী সংসদ নির্বাচনের সময় দলীয় সরকার বহাল থাকবে।
সম্প্রতি ডিসি পদে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। গত তিন মাসে ৩০টি জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি জেলায় নতুন নিয়োগের তোড়জোড় চলছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া ডিসিরা সবাই সরকারদলীয় সমর্থক হিসেবে পরিচিত। এঁরা আগামী নির্বাচনের সময়ও ওই সব জেলার দায়িত্বে থাকবেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, গত ২৬ নভেম্বর যে ১০ জন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে চারজন এর আগে মন্ত্রী, সংসদীয় উপনেতা ও প্রতিমন্ত্রীদের একান্ত সচিব ছিলেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর যে ২০ জন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়, তাঁদের মধ্যেও কয়েকজন এর আগে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একান্ত সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা ছিলেন। তারও কিছুদিন আগে ফেনী, গাজীপুর, খুলনাসহ কয়েকটি জেলায় যাঁদের ডিসি করা হয়, তাঁদের মধ্যেও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রীদের সাবেক একান্ত সচিব আছেন।
নির্বাচনবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব ‘পছন্দের’ ডিসি আগামী নির্বাচনের মূল দায়িত্বে থাকলে তাঁদের ওপর ইসির শতভাগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা কঠিন হবে। তাছাড়া, নির্বাচন সামনে রেখে ডিসি নিয়োগসহ প্রশাসন ঢেলে সাজানোর চেষ্টা চলছে বলে ইতিমধ্যে অভিযোগও উঠেছে।
এ অবস্থায় নিজস্ব জনবল বাদ দিয়ে ডিসিদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার ব্যাপারে ইসির বর্তমান অবস্থানের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে পরিমাণ লোকবল আছে তা নিয়ে যদি সব আসনে নির্বাচন করা সম্ভব না-ও হয়, সে ক্ষেত্রে কেবল জেলা প্রশাসক বা বাইরের অন্য কোনো কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করা যেতে পারে।
এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, নিজস্ব কর্মকর্তাদের দিয়ে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করার লক্ষ্য ঠিক করে ইসি অনেক আগেই প্রয়োজনীয় জনবল বাড়ানোর কাজ শুরু করেছিল। তিনি বলেন, নিজস্ব কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ করালে তাঁদের ওপর ইসির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। তাছাড়া বিগত কয়েক বছরে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা নির্বাচন পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন করেছেন।
No comments