নতুন ভোরে নতুন প্রত্যাশা
জনকণ্ঠ: নতুন বছরে ক্রিকেট ফুটবল হকি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কি? পাইলট: আমি আশা করব বিদায়ী বছরের শেষ দিকে যে সাফল্য পেয়েছি নতুন বছরেও তা অব্যাহত থাকুক। ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলুক আমাদের জাতীয় দল। আমিনুল: গেল বছর যে পরিকল্পনা করা হয়েছে ফুটবল নিয়ে তা বাস্তবায়ন হোক।
এক কথায় আলোর মুখ দেখুক। ধারাবাহিক সাফল্য ফিরে আসুক ফুটবলে। কামাল: ঘরোয়া হকি বিদায়ই বছরের মতো নতুন বছরেও ধারাবাহিকভাবে মাঠে থাকুক এ প্রত্যাশা আমার। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুনাম ধরে রাখুক বাংলাদেশের হকি। জনকণ্ঠ: বাংলাদেশ ক্রিকেট/ফুটবল/হকির জন্য ২০১২ সাল কেমন ছিল? পাইলট: এক্ষেত্রে তো অনেক কিছুই বিশ্লেষণের ব্যাপার আছে। তারপরও আমি বলব, টেস্ট ক্রিকেটে তো শুধু দু’টি ম্যাচই আমরা খেলেছি। ওয়ানডেও যে খুব বেশি খেলেছি তা বলব না। খেলাগুলোর ফলাফল বিবেচনা করে সর্বোপরি আমি বলব, ভাল সময়ই পার করেছি আমরা। ওয়ানডেতে আমাদের অসাধারণ পারফরম্যান্স ছিল। কারণ আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সিরিজ হারিয়েছি এবং এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলেছি। টি- টোয়েন্টির পারফরম্যান্স ভালই ছিল, আরও ভাল করতে হবে।টেস্ট ম্যাচ মাত্র দুটিই খেলেছি। ভাল-খারাপ দু’টির সংমিশ্রণেই এর ফল হয়েছে। আমি একে মন্দের ভালই বলব। কারণ আমরা অনেক দিন টেস্ট ক্রিকেটের বাইরে ছিলাম। তারপরও দুটি ম্যাচেই আমাদের শুরুটা হয়েছিল সুন্দর কিন্তু আমরা ভালভাবে শেষ করতে পারিনি। সব মিলিয়ে আমি বলব, ২০১২ সালটা আমাদের জন্য ভালই কাটল।
আমিনুল: ২০১২ সালের কথা বললে আমি বলবাÑসব কিছু মিলিয়ে আমাদের নতুন কমিটি আসার পরে তাদের যে চিন্তাচেতনা বা প্লানিং আমরা দেখেছি তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। যদিও আমাদের ২০২২ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলার স্বপ্নের কথা শোনানো হচ্ছে। এটি আসলে আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। তারপরও এই সময়ে ন্যূনতম কাজটুকু করে আমরা যদি বিশ্বকাপ না হোক এশিয়া কাপ পর্যন্ত পৌঁছতে পারি তাতেও এর সার্থকতা আসবে। সব মিলিয়ে এ বছর ফুটবল নিয়ে নতুন কমিটির যে প্লানিং এবং পাশাপাশি জাতীয় দল নিয়ে যে পরিকল্পনা তা আমার কাছে খুবই আশাব্যঞ্জক বলে মনে হয়েছে। এর ধারাবাহিকতা যদি থাকে তবে অবশ্যই আমার মনে হয় ভবিষ্যতে আমরা ফুটবলটাকে ভাল অবস্থানে দেখতে পাব।
কামাল: এ বছর আমাদের ঘরোয়া হকিটা যেভাবে মাঠে ছিল, আমার মনে হয় বিগত কয়েক বছরে তা হয়নি। প্রথমত প্রিমিয়ার লীগ, প্রথম বিভাগ ও দ্বিতীয় বিভাগ লীগ হয়েছে। সেই সঙ্গে যুব হকি, স্কুল হকি এবং মহিলা হকিও হয়েছে, বাংলাদেশ টিমও দেশে ও দেশের বাইরে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছে। সব মিলিয়ে আমি বলব, হকি মাঠে থাকার যে দাবি আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে সব সময়ই থাকে সেই জিনিসটি ভালভাবেই পূরণ হয়েছে। বিগত বছরগুলোর চেয়ে এ বছর হকিটা যেভাবে চলেছে, এভাবে চলতে থাকলে হকির আবারও সুসময় ফিরে আসবে বলে আমি মনে করি।
জনকণ্ঠ: আপনার দৃষ্টিতে এই সময়ে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কোনটি?
পাইলট: আমার মনে হয় ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিরিজ হারানোটাই বড় প্রাপ্তি। এর আগেও আমরা ওদের সিরিজ হারিয়েছিলাম, নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইট ওয়াশ করেছিলাম। কিন্তু ঐ দলগুলোর তুলনায় এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনেক শক্তিশালী ছিল। ওদের দলে অনেক তারকা থাকার পাশাপাশি ওরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে এসেছিল। সেই দলের বিপক্ষে সিরিজ জয় অবশ্যই বড় প্রাপ্তি। পাশাপাশি এ বছর বিশেষ করে শেষ সিরিজে আমরা কিছু ব্যক্তিগত নৈপুণ্য দেখেছি। প্রাপ্তির খাতায় আমি এগুলোকেও রাখব।
আমিনুল: বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখেছি জাতীয় দল কোন টুর্নামেন্টে অংশ নেয়ার আগে তাদের নিয়ে তেমন কোন পরিকল্পনা হয় না। প্লেয়াররা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ পায় না। এ বছর মনে হয়েছে নতুন কমিটি এ ব্যাপারে মানসিকভাবে তৈরি রয়েছে। এটাই সবচেয়ে ভাল দিক। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছেÑএই পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা দরকার।
কামাল: সারা বছর হকিটা প্রোপার ওয়েতেই মার্চে ছিল। এমন নয় যে নামেমাত্র খেলা হয়েছে। এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
জনকণ্ঠ: কোন্ দিকটা আরও ভাল হতে পারত?
পাইলট: ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামোর উন্নতির কথাই বলব। সবচেয়ে বেশি বলব স্কুল ক্রিকেটের কথা। কারণ স্কুলের বাচ্চারা কাদামাটির মতো। এদেরকে যেভাবে তৈরি করা হবে ওরা সেভাবেই তৈরি হবে। পরিকল্পনামাফিক বড় পরিসরে স্কুল ক্রিকেট আয়োজন করে আমরা যদি স্কুলে স্কুলে ক্রিকেট ছড়িয়ে দিতে পারি তবে দেখা যাবে স্কুল পর্যায়েই বাচ্চারা অনেক বেসিক জিনিস শিখে ফেলবে। যেটা পরবর্তীতে তাদের বড় ক্রিকেটার হতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে।
আমিনুল: ফুটবল নিয়ে আমাদের দেশের মানুষের যে স্বপ্ন বা চাওয়া, আমরা যারা দায়িত্বে রয়েছি তারা যদি অনুধাবণ করি তবে আমি বলব আমাদের উন্নয়ন কর্মকা-ে আরো তৎপর হওয়া দরকার। এই কর্মতৎপরতা অবশ্যই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে দশ বছর পর আমরা ফুটবলকে কোথায় দেখতে চাই সেটা। দশ বছর পর চিন্তা করব আমরা কি পেলাম আর কি পেলাম না। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ব্যর্থ হলেই আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। আমার মনে হয় আমাদের কর্মকর্তাদের এক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। হতাশ না হয়ে নতুন উদ্দীপনায় কাজ করতে হবে। আমরা হারতে হারতেই জিততে শিখব। লক্ষ্য রাখতে হবে, ফুটবল উন্নয়নের জন্য আমাদের যে ভাল কর্মকা-গুলো রয়েছে তার ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে।
কামাল: লীগটা যে সময় হয়েছে সে সময় না হয়ে সেটা যদি অলিম্পিকের পরে হতো তবে লীগে আমরা আরও বিশ্বমানের প্লেয়ারদের পেতাম। এই দিকটায় ফেডারেশনের আরেকটু সচেতন হওয়া উচিত। কারণ আমাদের হকির জনপ্রিয়তা কিন্তু অনেক অংশেই কমে গেছে। লীগকে আকর্ষণীয় করতে উঁচুমানের প্লেয়ারদের পাওয়াটা খুবই জরুরী। আর ঘরোয়া হকির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক হকি আয়োজন করতে পারলে সেটা হকির জন্য খুবই অনুঘটক হবে।
জনকণ্ঠ : বছরের শুরুতে যে স্বপ্নের কথা বলেছিলেন সেই স্বপ্ন কি পূরণ হলো?
পাইলট : আসলে ঘরোয়া ক্রিকেটে উন্নতিটাই আমার বড় চাওয়া ছিল। সেক্ষেত্রে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের কথা বললে বলবÑ যেন কোন পরিবর্তন সেখানে আসেনি। তবে বিপিএল আয়োজন ছিল প্রশংসনীয়। এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে মাঠের ক্রিকেটে পরিবর্তন আসবে একথা আমি বলব না তবে এর মাধ্যমে ক্রিকেট বোর্ড এবং প্লেয়াররা আর্থিকভাবে লাভবান হবে। বিশেষ করে ক্রিকেটারদের কথা বললে বলব, জাতীয় দলের প্লেয়াররা ছাড়া অন্য ক্রিকেটাররা সেভাবে বড় অঙ্কের টাকা পায় না। কিন্তু বিপিএলের মাধ্যমে তা হচ্ছে। তবে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের মান উন্নয়নে অবশ্যই আমাদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে।
আমিনুল: আসলে সন্তুষ্টির তো কোন শেষ নেই। সামাজিক বিষটা হচ্ছে, আমরা কি চাই আর কতদূর আগাতে পারলাম। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর কথা চিন্তা করলে দেখবেন ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ কিন্তু অনেক এগিয়ে গেছে।
আমরা কিন্তু সেই তুলনায় পিছিয়ে পড়েছি। কেন আমরা পিছিয়ে পড়লাম, সেই জায়গাটায় আমাদের কাজ করা উচিত। আর আমাদের বাস্তবসম্মত চিন্তা করা উচিত। আমরা যেখানে সাফ ফুটবলেই ঠিকভাবে চ্যাম্পিয়ন হতে পারি না সেখানে ২০২২ সালে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখাটা অবাস্তব বলে মনে হয় আমার কাছে।
কামাল: হ্যাঁ, আমার সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। তবে আমার একটা জিনিস দাবি থাকবে, জাতীয় দলের হকি প্লেয়ারদের যেন ফেডারেশন বেতন কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসেন বা তাদের কোন চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। এটা হলে হকি প্লেয়ারদের মধ্যে না পাওয়ার ব্যথা তা কিছুটা হলেও দূর হবে।
No comments