স্কুলে ভর্তিবাণিজ্য নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছভাবে মেধা যাচাইয়ের লক্ষ্যে ভর্তির ক্ষেত্রে চলমান এই অবৈধ বাণিজ্য বন্ধে সত্বর পদক্ষেপ গ্রহণ করা বে-এটাই সবার প্রত্যাশা
ঢাকার নামী-দামী স্কুলগুলোতে আবার শুরু হয়েছে সেই পুরনো নাটকের পুনর্মঞ্চায়ন। আবার সেই ভর্তিবাণিজ্য। স্কুলগুলোতে বর্ষ শুরুর একটি বড় কর্মসূচী হলো নতুন ক্লাসে শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যবস্থা।
বিষয়টিকে কেন্দ্র করে মহাউত্তেজনা আর নানা রকম প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলেÑ বিশেষ করে, এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ভর্তিযুদ্ধ মোকাবিলার পাশাপাশি সিট দখলের প্রচেষ্টাও কম দেখা যায় না। ভর্তির মৌসুম এলেই প্রতিবছর এই খেলা এতটাই জমে ওঠে এবং তা এতটাই দৃশ্যমান হয়ে যায় যে, এখন আর কেউ তেমন রাখ-ঢাক করেন না। উপর্যুপরি ঘটতে ঘটতে যেন মানুষের গা-সহা হয়ে গেছে। এ কাজে এক শ্রেণীর অভিভাবকের আগ্রহ ও সক্রিয়তা যেমন তীব্র, তেমনি স্কুল পরিচালনা কমিটির কিছু কর্তা ব্যক্তি, কমিশনভোগী তদ্বিরবাজ, এমনকি উর্র্ধতন কিছু সরকারী কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার বিষয়েও অভিযোগ পাওয়া যায় বিভিন্ন সময়ে।সহযোগী একটি দৈনিক স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে এমনি পন্থা অবলম্বনের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রোববার। রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য ও বিষয়গুলো সবই পুরনো; অর্থাৎ একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। কায়দা-কৌশলও প্রায় একই রকম। দৃশ্যপটও চিরাচরিত। ঢাকা শহরের নামী-দামী স্কুলগুলোতে ভর্তির লোভনীয় সুযোগের অজুহাতে যা চলে, তাকে ভর্তিবাণিজ্য বললেও কম বলা হয়। তা না হলে ঢাকার কিছু নামী স্কুলে স্রেফ প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য ৪/৫ লাখ টাকা নেয়া হবে কেন? এভাবে অনৈতিক পন্থায় টাকা নিয়ে যাদেরকে নামী স্কুলে ভর্তির সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে, তারা বা তাদের অভিভাবকেরা কেন সোজা ভর্তি প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে সাহস পায় না? টাকা নিয়ে যেসব ভদ্রজন এই ভর্তির সুযোগ করে দেন, তারা কি একবার ভাবেন যে, তারা বিদ্যালয়ের মতো পবিত্র প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত আছেন? সূচনাতে নিজেরাই দুর্নীতির কলঙ্ক গায়ে মেখে তারা কিভাবে জাতির ভবিষ্যতÑ আগামী দিনের নাগরিকদের যোগ্য মানুষ করে গড়ে তোলার ভিত্তি মজবুত করে দেবেন?
বর্তমান সরকার, বিশেষ করে শিক্ষামন্ত্রী দুর্নীতির ব্যাপারে আপোসহীন। সেই আপোসহীনতার নীতি ভর্তি-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দ্রুত প্রতিফলিত হওয়া জরুরী। অনেক হোমরা-চোমরা নাকি প্রভাব খাটিয়ে এই বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন। আর সেই সুযোগে কিছু অসাধু শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষা বিভাগীয় কর্তাও এ কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে এসেছেন। এই নানামুখী শক্তির মেলবন্ধনে ভর্তি ক্ষেত্রে যে অনৈতিক বাণিজ্য চলছে, তা সুখকর নয়। ভর্তিকেন্দ্রিক যে যত অপরাধই করুক না কেন, সব দোষ গিয়ে পড়বে ‘নন্দঘোষ’-এর ওপর অর্থাৎ মানুষ সরকারেরই সমালোচনা করবে। বড় রাঘববোয়ালদের দুর্নীতির ক্ষেত্রে যে সরকার ছাড় দিচ্ছে না, তার পক্ষে ভর্তিবাণিজ্যের অনৈতিক খেলা বন্ধ করা আদৌ কঠিন হবে না বলেই মানুষ বিশ্বাস করে। তাই নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছভাবে মেধা যাচাইয়ের লক্ষ্যে ভর্তির ক্ষেত্রে চলমান এই অবৈধ বাণিজ্য বন্ধে সত্বর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবেÑএটাই সবার প্রত্যাশা।
No comments