গ্যাস সংযোগ-অবৈধ লাইন ঠেকাবে কে?
গাজীপুরের জয়দেবপুর ও চন্দ্রা অঞ্চলে সহস্রাধিক অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে গ্যাস চুরির মহোৎসব চলছে বলে মঙ্গলবার সমকালে প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে। সরকারি নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তিতাস গ্যাস অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারের মধ্যকার আঁতাতের ভিত্তিতে দুই বছর ধরে এ বেআইনি কাজ চলছে।
এতে সরকার তার প্রাপ্য আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রেও এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সংযোগ পাওয়ার জন্য দরখাস্ত করে অপেক্ষায় আছেন, তারা নিয়মানুযায়ী গ্যাস প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আর যারা অবৈধ পথে ঠিকাদার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খুশি করতে পেরেছেন, তারাই গ্যাস সংযোগ পেয়েছেন। এ ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ দু'বছর ধরে চললেও কর্তৃপক্ষ কেন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, তা রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে। এই অবৈধ সংযোগের কাজটি কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান করছে সেটিও সমকালের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি পড়ে মনে হয়েছে, অবৈধ উপায়ে গ্যাস সংযোগ পাওয়ার বিষয়টি ওপেনসিক্রেট। এর সঙ্গে কোন কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত সেটিও তিতাস গ্যাস অফিসের অনেকেরই জানা। অথচ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে এতদিন এক ধরনের নীরবতা অবলম্বন করে চলেছে। তাহলে কি এর সঙ্গে উপরের কারও যোগাযোগ রয়েছে? তবে যিনি বা যারাই এর সঙ্গে জড়িত থাকুন না কেন, সরকারি সিদ্ধান্তকে অমান্য করেই গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তাই এর সঙ্গে জড়িতরা আইনের দৃষ্টিতে গর্হিত কাজই করেছেন। ঠিকাদার এবং তিতাস গ্যাস অফিসের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী এর সঙ্গে জড়িত তারা অবশ্যই দু'ধরনের অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী। তাদের প্রথম অপরাধটি হলো, সরকারি নির্দেশ অমান্য করা। দ্বিতীয় অপরাধটি হলো, ঘুষের বিনিময়ে গ্রাহকদের অবৈধ গ্যাস সংযোগ পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। তাই যারা অবৈধ সংযোগ নিয়েছেন তাদের চেয়ে অনেক বেশি দায়ী এই অবৈধ গ্যাস সংযোগ কাণ্ডে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসব অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ অবৈধ কাজটি করেছে, তাদের দায়ও কোনো অংশে কম নয়। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মোটা অঙ্কের জরিমানাসহ লাইসেন্স বাতিল করলে ভবিষ্যতে অন্যরা এ থেকে শিক্ষা নিতে পারবে। মনে রাখতে হবে, গ্যাস আমাদের অতি মূল্যবান জাতীয় সম্পদ। এ সম্পদ চুরি ও অপচয় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
No comments