জাতীয় পুষ্টি কার্যক্রম-সচেতনতা বৃদ্ধিই যথেষ্ট নয়
অনুন্নত অর্থনীতি ও শিক্ষার স্বল্পতার কারণে বাংলাদেশে পুষ্টি পরিস্থিতি বরাবরই নাজুক। পুষ্টির সঙ্গে পর্যাপ্ত খাদ্যের জোগান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশের সীমিত আয়ের অনেক পরিবারই প্রয়োজনীয় ও মানসম্মত পুষ্টিকর খাবার জোগাড় করতে পারে।
এর আবশ্যিক ফল হিসেবে একটি অপুষ্ট ও রোগাক্রান্ত প্রজন্ম সকলের চোখের সামনেই বেড়ে উঠছে। ফলে নাগরিকদের পুষ্টিকর খাবারের কথা যদি বলা হয়, তবে সর্বাগ্রে ক্রয়ক্ষমতা, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মূল্য ও এর সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। আর্থসামাজিক বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে পুষ্টি সমস্যার সমাধান প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সমস্যার একটি দিক, এর পাশাপাশি আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক আছে। যেমন শিক্ষা। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, পুষ্টি সম্পর্কে যথাযথ ধারণা থাকলে আমাদের সীমিত সম্পদ কাজে লাগিয়েও পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব। বিশেষত, নবজাতক শিশুর পুষ্টির ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন শুধু সচেতনতা থেকেই সম্ভব। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, জন্ম থেকে ৬ মাস পর্যন্ত একটি শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান মায়ের দুধে থাকে। ফলে জন্মের পর থেকে মায়ের দুধ খাওয়ালেই একটি শিশু ৬ মাস বয়স পর্যন্ত যথাযথ পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করে বেড়ে উঠতে পারে। কিন্তু ৫৭ শতাংশ শিশু এখন পর্যন্ত মায়ের দুধ পাচ্ছে না। এর কারণ অসচেতনতা ও অশিক্ষা মূলত, তবে অনেক ক্ষেত্রেই গর্ভবতী মায়ের অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ ও অযত্নের ফলে শিশু জন্মদান-পরবর্তী রোগভোগ, মায়ের অপুষ্টির কারণে মাতৃদুগ্ধের কমতিও এক্ষেত্রে বিশেষভাবে দায়ী। সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে মায়ের দিকে যেমন দৃষ্টি পড়বে, তেমনি মাতৃদুগ্ধেই শিশু পরিপুষ্ট হয়ে উঠতে পারবে। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বেশকিছু উদ্যোগ চলছে। ১৪টি এনজিওর মাধ্যমে ১৭২টি উপজেলায় ন্যাশনাল নিউট্রিশন প্রোগ্রাম চালু আছে। ৪২ হাজার কমিউনিটি নিউট্রিশন সেন্টারে কাজ করেন প্রায় ৪৬ হাজার কর্মী। পুষ্টি বিষয়ে সচেতন করার দায়িত্ব এ কর্মীদের। তারা বেশ কয়েক বছর ধরে কাজও করছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সাফল্য অনেক কম। বস্তুত শুধু সচেতনতা কার্যক্রমই এক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। ৬ মাস পর্যন্ত শিশুর পুষ্টি মায়ের দুধ থেকে হতে পারে, এরপর শিশুর পুষ্টি নির্ভর করবে পরিবারের খাদ্য ক্রয়ের ক্ষমতার ওপর। ফলে শুধু সচেতনতা কার্যক্রম দিয়ে পুষ্টি সমস্যার সমাধান করতে চাইলে সাফল্য আসবে না। বিষয়টিকে আর্থসামাজিক অন্য বাস্তবতাগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে। সম্প্রতি এক তথ্য থেকে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে আগামীতে পুষ্টি কার্যক্রম আলাদাভাবে পরিচালনা না করে অন্য ৩১টি কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বিত কার্যক্রম হিসেবে পরিচালিত হবে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এতে পুষ্টি ও পুষ্টি সম্পর্কিত বিষয়গুলো কম গুরুত্ব পাবে। অন্যপক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার সঙ্গে পুষ্টিকে যুক্ত করলে ভালো ফল মিলবে বলে মনে করছেন সমন্বিত কার্যক্রমের পক্ষের কর্মকর্তারা। পুষ্টি কার্যক্রমের সফলতা দরকার। আর এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুসারে এবং অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কর্মসূচি ও কর্মপরিকল্পনা নির্ধারিত হওয়া উচিত। বিদ্যমান কাঠামোতে পুষ্টি কার্যক্রমের সফলতা সম্ভব কি-না তা যথাযথভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি বিপুল লোকবলের দক্ষতার অপচয়ের কথাও সরকারের বিবেচনায় আসা দরকার। তবে নতুন হোক কিংবা পুরনো যে পদ্ধতিতেই পুষ্টি কার্যক্রম পরিচালনা করা হোক এর সফলতার জন্য আর্থসামাজিক অন্য নিয়ামকগুলো গুরুত্ব পেলেই সেটি কার্যক্রমের সফলতা আনতে পারে। ফলে শুধু স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেই নয়, বাজার, খাদ্য ও বিপণন সম্পর্কিত অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বিত কর্মসূচি আসা উচিত।
No comments