এ ই দি নে-জানালাটা খুলে দাও

দাসপ্রথার কথা শুনলে অধিকাংশের মনে ভেসে ওঠে প্রাচীন ও মধ্যযুগে বাজারে মানুষ কেনাবেচার কথা। দাসপ্রথা তখন ছিল আইনসিদ্ধ। এখন আমরা কোরবানির হাটে গিয়ে যেমন দেখেশুনে বলিষ্ঠ গরু কিনি, তখন এভাবেই টিপেটুপে দেখে দাস কেনা হতো। সেসব 'অমানবিক' দিন গত হয়েছে; কিন্তু দাসপ্রথা সত্যিকার অর্থে বিলুপ্ত হয়নি। নানা খোলসে অব্যাহত আছে। আবার কোথাও কোথাও পুরনো রূপেই চলছে। সত্যিকার অর্র্থে সভ্যতার শুরু থেকে আজ


পর্যন্ত দাসপ্রথায় শুধু রূপের পরিবর্তন ঘটে চলেছে। কেউ কেউ বরং বলতে পারেন, এখন দাসের সংখ্যা ইতিহাসের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। অথচ পৃথিবীর সব দেশে দাসপ্রথা আইনবিরোধী। ১৯৯৯ সালেও পৃথিবীজুড়ে ২৭ মিলিয়ন ফোর্সড লেবার বা বাঁধাশ্রমিক ছিল। বিনিময়ে তারা যেসব 'সুযোগ-সুবিধা' পেত, মালিকরা তাদের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করত, তা মধ্যযুগীয় দাসপ্রথার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। জাতিসংঘ দাসপ্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রামে অঙ্গীকারবদ্ধ। জাতিসংঘের হিসাবমতে প্রতি বছর এক মিলিয়নের অধিক শিশু সস্তা শ্রম ও যৌন হয়রানির উদ্দেশ্যে পাচার হয়। এ ধরনের দাসপ্রথা বৈশ্বিক সমস্যা আকারে হাজির হয়েছে এবং ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটসের ৪ নম্বর ধারার পরিপন্থী। এতে বর্ণিত আছে, কাউকেই দাসবৃত্তিতে বাধ্য করা যাবে না, দাসবৃত্তি ও দাস ব্যবসা যে রূপেই থাকুক না কেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত হবে। জাতিসংঘ সাধারণ সভার আয়োজনে প্রতি বছর ২ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবস হিসেবে পালিত হয়। ১৯৮৬ সালে প্রথম এই দিবস পালিত হয়। জাতিসংঘ ২০০৪ সালকে আন্তর্জাতিক দাসপ্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও এর বিলোপ বর্ষ হিসেবে উদযাপন করে। গত বছর আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবস উপলক্ষে এক বার্তায় জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছিলেন, উনিশ শতকে ট্রান্স আটলান্টিক দাস ব্যবসার বিলোপ ঘটলেও বিশ্বজুড়ে দাসপ্রথার বিলোপ এখনও ঘটেনি। বরং এটি অন্য রূপে বিদ্যমান, এখন দাসপ্রথা টিকে আছে ভূমিদাস, ঋণদাস, জোরপূর্বক শ্রম, নারী ও শিশু পাচার, গৃহস্থালি দাসবৃত্তি, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি, যৌন দাসত্ব, জোরপূর্বক বিয়ে ও স্ত্রী বিক্রি, শিশুশ্রম, শিশু দাসত্ব প্রভৃতি রূপে। রোমান স্টোয়িক দার্শনিক ও রাজনীতিবিদ সেনেকা বলেছিলেন, কাউকে পুরোপুরি দাস করা যায় না। শরীর প্রভুর, মন তার নিজের। আর রোমান কবি হোরাস বলেছিলেন : সত্যিকার অর্থে কে স্বাধীন, জ্ঞানী মানুষ ছাড়া? জ্ঞানী মানুষ নিজের প্রভু বলেই স্বাধীন। আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবসকে তাৎপর্যপূর্ণ করতে আসুন_ আমরা দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। আগে মনের দাসত্ব জয় করি, তাহলে দৈহিক দাসত্বের শৃঙ্খল আপনাআপনি ভেঙে পড়বে।
নাজমুস সাকীব হিমেল

No comments

Powered by Blogger.