মুল্লাপেরিয়ার বাঁধ নিয়ে কেরালা তামিলনাড়ুর দ্বন্দ্ব বাড়ছে-দিল্লির দিকে তাকিয়ে দুই রাজ্য

মুল্লাপেরিয়ার বাঁধ নিয়ে ভারতের কেরালা ও তামিলনাড়ু রাজ্যের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট রূপ ধারণ করছে। দুই রাজ্যই সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। মনমোহনের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার দিলি্লতে পেঁৗছান কেরালার মুখ্যমন্ত্রী ওম্মান চণ্ডী। এর আগেই এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চান তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। বিষয়টি সুরাহার জন্য গতকাল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা চেয়ে পিটিশন দায়ের


করেছে জয়ললিতা সরকার।মুল্লাপেরিয়ার বাঁধের অবস্থান কেরালায় হলেও ইজারা নিয়ে এটি পরিচালনা করে তামিলনাড়ু। ১১৬ বছরের পুরনো এ বাঁধের কাছে নতুন করে আরেকটি বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছে কেরালা। তাদের আশঙ্কা, বাঁধটি ভেঙে গেলে লাখ লাখ মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়বে। কয়েক মাস ধরে বাঁধসংলগ্ন এলাকায় বারবার মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় তাদের এই আশঙ্কা আরো জোরালো হয়। তবে তাদের এ দাবি মানতে নারাজ তামিলনাড়ু। তারা মনে করে, ১৯৭৯ সালে মেরামতের পর বাঁধটি এখনো মজবুত।
কেরালায় নতুন বাঁধের দাবিতে বেশ কিছু দিন থেকেই বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগই ছাত্র। তাদের আশঙ্কা, পেরিয়ার নদীর ওপর দেওয়া বাঁধটি ভেঙে গেলে পার্শ্ববর্তী পাঁচটি জেলার ৩০ লাখ মানুষ ভেসে যাবে। স্থানীয় লোকজনও কয়েক মাস ধরে দফায় দফায় নতুন বাঁধের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। একই দাবিতে দিলি্লতে গিয়ে অনশন ধর্মঘট করছেন স্থানীয় তিন আইন প্রণেতা।
মুখ্যমন্ত্রী ওম্মান চণ্ডী গতকাল দিলি্লর উদ্দেশে যাত্রার আগে বলেন, 'আমাদের দাবি একটাই, আমাদের জনগণের নিরাপত্তা।' রাজ্যের পানিসম্পদমন্ত্রী পি জে যোসেফ বলছেন, বাঁধ ধসে গেলে কল্পনাতীত ধ্বংসযজ্ঞ ঘটবে।
সম্প্রতি বাঁধসংলগ্ন এলাকায় দফায় দফায় ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর বিশেষজ্ঞরা জানান, ভূকম্পনের মাত্রা আরো বাড়লে বাঁধটি ধসে যেতে পারে। কেরালা নতুন একটি বাঁধ তৈরির দাবির পাশাপাশি বর্তমান বাঁধের পানির স্তর নামিয়ে আনার দাবি তুলেছে। পানির বর্তমান স্তর ১৩৬ ফুট। কেরালা তা কমিয়ে ১২০ ফুটে আনার প্রস্তাব দিয়েছে।
তবে তামিলনাড়ু মনে করে, বাঁধের প্রাচীরগুলো অনেক মজবুত এবং পানির স্তর বাড়ানো যেতে পারে। তারা পানির স্তর ১৪২ ফুটে উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছে। কেননা সেচের কাজে তাদের পানির চাহিদা বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এক বার্তায় গত মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উচিত নতুন বাঁধ নির্মাণে কেরালার প্রচার বন্ধে হস্তক্ষেপ করা। তিনি মনে করেন, বর্তমান বাঁধটি নিরাপদ।
বিরোধ মেটাতে শিগগিরই দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান প্রধানমন্ত্রী মনমোহন।
১৮৮৬ সালে মুল্লাপেরিয়ার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর অবস্থান কেরালায় হলেও তামিলনাড়ুর কৃষি জমিগুলোতে সেচ দেওয়ার জন্য রাজ্যের কাছে ৯৯৯ বছরের জন্য বাঁধটি ইজারা দেওয়া হয়। মাদ্রাজ রাজ্যের (বর্তমান তামিলনাড়ু) পক্ষে ব্রিটিশরাজ এবং কেরালার পক্ষে মহারাজা ত্রাভানকোর ইজারা চুক্তিতে সই করেন। সূত্র : বিবিসি, হিন্দুস্তান টাইমস।

No comments

Powered by Blogger.