শান্তিচুক্তির অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছেঃ দীপংকর তালুকদার
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার শান্তিচুক্তি বিষয়ে বিরোধী দলের ভূমিকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছেন, ‘১৪ এপ্রিল ১৯৯৮, দীর্ঘদিনের উত্তর আয়ারল্যান্ডের সাংঘর্ষিক সমস্যাটি সমাধানের পর পুরো ব্রিটেনের সংবাদপত্রে যে ছবি প্রকাশ পেয়েছিল, তাতে একপাশে ছিলেন টনি ব্লেয়ার, আরেক পাশে ছিলেন বিরোধী দলের নেতা উইলিয়াম হেগ। আর মাঝখানে ছিলেন বিদ্রোহীদের নেতা জেরি এডামস।
তাদের হাসোজ্জ্বল চেহারার বিপরীতে আমাদের দেশে ২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের সময় কি আমরা এরকম একটি দৃশ্য দেখতে পেয়েছি?’ তিনি বলেন, ‘বরং আমাদের বিরোধী দলের চূড়ান্ত বিরোধিতার মুখে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সুতরাং এই যে অবস্থাটা, এটা ১৪ বছরেও আমরা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারি নি।’
সম্প্রতি রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ১৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বিশেষ সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলবেন- শান্তিচুক্তির বাস্তবায়নে ধীরগতি রয়েছে। এই প্রসঙ্গে আমি বলতে চাই, চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর এবং এ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হয় ১৯৯৯ সালের ২৫ মে। এর পর ২০০১ সালে জুলাই মাসে আমরা ক্ষমতা তত্ত্বাবধায়কের হাতে দেই। কিন্তু, এরপর বিএনপি-জামায়াতের ৫ বছর আর তত্ত্বাবধায়কের ২ বছর মিলিয়ে ৭ বছরে শান্তিচুক্তি নিয়ে আর কোনো কাজ হয় নি। কার্যক্রম একচুলও অগ্রসর হয় নি।’
তিনি এ বিষয়ে ২টি উদাহরণ উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি ২টি উদাহরণ দেই। আঞ্চলিক পরিষদের প্রবিধানমালা চুক্তি স্বাক্ষরের পর পরই হওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু মাত্র গত বছর আমরা এই বিধিমালা ঠিক করেছি। পরিষদ সদস্যদের বেতনভাতা চুক্তি স্বাক্ষরের পর পরই নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। কিন্তু গত বছরই তা আমরা স্থির করতে পেরেছি। এই যে ধীরগতি, এটার খুব ভেতরে না গিয়েও আমি বলবো- এটা আমাদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক বিচার-বিশ্লেষণ করলেই অনেক কিছুর উত্তর পাওয়া যাবে।’
পার্বত্য শান্তিচুক্তির সঙ্গে উত্তর আয়ারল্যান্ডের শান্তিচুক্তির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমার সঙ্গে কিছুদিন আগে উত্তর আয়ারল্যান্ডের বাসিন্দা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূত উইলিয়াম হান্নার দেখা হলে আমি তার কাছে জানতে চেয়েছি, আপনাদের শান্তিচুক্তির কী অবস্থা? চুক্তি বাস্তবায়নের অবস্থা বা অগ্রগতি কী?’
কারণ হিসেবে বললাম, ‘আমাদের চুক্তির জন্য আমরা পেয়েছি ইউনেস্কো পুরষ্কার আর আপনারা পেয়েছেন নোবেল পুরষ্কার। তখন তিনি স্বীকার করলেন-শান্তিচুক্তির অনেককিছুই সেখানে অবাস্তবায়িত আছে। তবে তিনি এটাও বললেন-শান্তিচুক্তির কারণে সেখানকার মানুষের মধ্যে উদ্যম, উদ্যোগ, সাহস এবং ইতিবাচক চিন্তার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। এটাকেই তিনি একটা উল্লেখযোগ্য দিক হিবেবে উল্লেখ করলেন।’
তিনি বলেন, ‘একইভাবে আমাদের এখানেও চুক্তি স্বাক্ষরের পর আঞ্চলিক পরিষদ গঠন, জেলা পরিষদ গঠন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, ভারত প্রত্যাগত ১২ হাজার ২শ ২২ পরিবারকে নিজ নিজ ভূমিতে পুনর্বাসন, ১ হাজার ৯শ ২৬ জন জনসংহতি সদস্যকে পুনর্বাসন করা, তাদের সকল মামলা নিষ্পত্তি করা এবং প্রত্যাহার করা, যারা চাকরিতে ছিলেন, তাদের চাকরিতে পুনর্বহল করা, চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ, জনসংহতির সদস্যদের চাকরি এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চাকরিতে কোটা সবকিছুতেই তাদের অগ্রাধিকার দিয়েছি।’
প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘পিপি রফিক (রাঙামাটির পাবলিক প্রসিকিউটর) আমাকে নিশ্চিত করেছেন, সব মামলা প্রত্যাহার করা শেষ হয়েছে। অনেকে ভারত থেকেই যে পরীক্ষা দিয়ে এসেছেন, সেটাকে আমরা সেটার মান বহাল রেখেই তাদের উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করেছি।’
ভূমি বিরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল যে সমস্যা, সেটা হলো ভূমি সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে আমরা ভূমি কমিশন গঠন করেছি। দীর্ঘদিন এই কমিশনের কোনো কার্যক্রম ছিল না। আমরা ক্ষমতায় আসার পর আবার এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’
পার্বত্য কমিশনের সফর প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খুশি হয়েছি, পার্বত্য কমিশন এখানে সফরে এসেছে। কমিশনের কো-চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলেছেন-২/৩ দিনের সফরে এখানে তারা অস্বাভাবিক কিছু দেখেন নি। আমরা মনে করি, অস্বাভাবিক কিছু যে দেখেন নি, এটাই সরকারের সাফল্য। এটার সঙ্গে আরেকটা বিষয় তারা বলেছেন- শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণেই এখানে সাংঘর্ষিক অবস্থা চলছে। তবে আমরা এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি।’
দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে কিছু দ্বন্দ্ব থাকতে পারে। কিছু অসন্তোষ থাকতে পারে। কিন্তু সাংঘর্ষিক অবস্থা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে হয়েছে, এটার সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করি।’
পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংঘাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে। মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে- এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা এর নিন্দা জানাই। এ রকম ঘটনা ঘটা উচিত নয়। তারপরও বলবো-এ ঘটনাগুলো শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কিংবা বাস্তবায়ন না হওয়ার সঙ্গে জড়িত নয় বলেই আমরা মনে করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, এখানে চাঁদাবাজির এলাকা বিস্তৃত করার জন্য অবৈধ অস্ত্রধারীরা এই সংঘাত চালাচ্ছে। সুতরাং পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন বা অন্যান্য কমিশন যারা এখানে মানবাধিকারের কথা বলে, যারা এখানে গণতন্ত্রের কথা বলে, তাদের কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা-এখনো পর্যন্ত আপনাদের মুখে যে অবৈধ অস্ত্র আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের জনজীবনে হুমকি সৃষ্টি করছে, জনজীবনে প্রাণহানি ঘটাচ্ছে, এ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আপনারা কোনো কিছু বলছেন না কেনো?’
পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের প্রক্রিয়া চালাচ্ছি। আমরা এটাকে আরও বেশি জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি এবং নিঃসন্দেহে এটা আরও বেশি জোরদার করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘চুক্তির অবাস্তবায়িত যেসব অংশ রয়েছে, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে-ভূমি সমস্যা। ভূমি সমস্যা সমাধান করতে পারলে আমরা মনে করি, চুক্তির একটি বড় উল্লেখযোগ্য দিক আমরা সমাধান করতে পারবো এবং আমরা চেষ্টা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য সমস্যাগুলোও সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। এর কিছু ভূমি সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন- উপজাতীয় শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের আমরা নিজের জায়গায় পাঠাতে পারছি না ভূমি সমস্যার কারণে। ভূমি সমস্যাটাই মূল সমস্যা। ভূমি সমস্যা ছাড়া চুক্তির অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে।’
ভূমি কমিশন আইন নিয়ে আঞ্চলিক পরিষদের প্রস্তাবনা তাদের (পাহাড়ে বসরত জনগোষ্ঠী) সঙ্গে, ভূমি ও আইন মন্ত্রণালয়সহ সবার সঙ্গে আলোচনা করেই খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সেটার ওপরই কাজ চলছে। কাজ চলছে বলবো না। কাজ প্রায় শেষ।’
পাহাড়ে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সব সময় ঘুমানোর সময় দরজা জানালা খোলা রেখে নাম ডেকে ঘুমাবো। আমার ঘর আমি পাহারা দেবো না। আর পুলিশকে বলবো- পুলিশ আমার ঘরবাড়ি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই যুক্তির সঙ্গে আমরা একমত নই। ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধে সচেতনতা দরকার। মিলিটারি বা পুলিশ বা সরকার দিয়ে কি ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধ করা যায়?’
‘পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে নিজেদের কাজ শেষ করেছে। এখন বাকি দায়িত্ব সরকারের’ সন্তু লারমার এমন মন্তব্যের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ওনার (সন্তু লারমা) ব্যক্তিগত মন্তব্য।’
তিনি বলেন, ‘নেতৃত্বের আসল গুণ হলো, নিজে সব যন্ত্রণা-কষ্ট সহ্য করে নিয়ে আশার আলো জ্বালানো। কিন্তু হতাশগ্রস্ত মানুষ কাউকে আলো দেখাতে পারে না। হতাশা নিয়ে আমরা কোথাও এগুতেও পারি না। শান্তিচুক্তি এটা কারোর একার নয়। আমরা শান্তিচুক্তির সকল পক্ষের শক্তি। এটা আমাদের সন্তান। সুতরাং শান্তিচুক্তির গতি প্রত্যাশিত হচ্ছে না বলে আমাদের কষ্ট-জ্বালা কম নয়। কিন্তু, আমরা হতাশগ্রস্ত নই।’
তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টে একটা রিট মামলা চলছে।’
জেএসএস (জনসংহতি সমিতি) নেতাদের সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। গণতন্ত্রের একটি শিক্ষা হচ্ছে- খবঃ ঁং ধমৎবব ঃড় ফরংধমৎবব (মতের দ্বিমত থাকা)। গণতন্ত্রে সমালোচনা হবে, গণতন্ত্রে একমত-দুইমত হতেই পারে। আমরা খুব শক্তভাবে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। সহ্যশক্তি থাকতে হয়। কারা কি বলছে, না বলছে- এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। সমালোচনা করার অধিকার সবাইকে দিতে হবে।’
চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন প্রসঙ্গে দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘এই চুক্তির জন্য আমি জননেত্রী শেখ হাসিনা, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, সন্তু লারমা সবাইকে ধন্যবাদ দেই। আর যেদিন আমাদের নেত্রী এই চুক্তির জন্য ইউনেস্কো শান্তি পুরষ্কার পেয়েছেন, সেইদিন এটা আর আওয়ামী লীগ, জেএসএস বা বাংলাদেশের সম্পত্তি নয়, এই চুক্তির মালিক সারাবিশ্বের শান্তিকামী মানুষ। সুতরাং এই চুক্তি করার কৃতিত্ব একা কারো নয়, শান্তির জন্য যারা কাজ করেছেন, তাদের সম্মিলিত।’
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কোনো বিশেষ অভিযানের পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় চেষ্টা করি, স্বাভাবিক আইনে সবকিছুর নিরসন করতে। জাতির জনকের হত্যার বিচারও আমরা স্বাভাবিক আইনে সম্পন্ন করেছি। সেখানেও রায় কার্যকরে আমরা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করি নি। সুতরাং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য দেশের প্রচলিত আইনই যথেষ্ট। শুধু এটাকে আরেকটু বেশি জোরদার করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আর আরও বেশি জোরদার করতে গেলে আমরা আহ্বান রাখবো সকল রাজনৈতিক দল যেন এই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সর্বোতভাবে সহযোগিতা ও সমর্থন করেন। অবৈধ অস্ত্রধারী যে দলের বা যেই হোক না কেনো, তাকে আইনের মাধ্যমে বিচার করা এখন প্রত্যেক নাগরিকের চাওয়া। সুতরাং আমি মনে করি, এই ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকলের অকুণ্ঠ সমর্থন থাকা দরকার।’
প্রস্তাবিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে তিনি পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নদীর এপাড়ে আমরা করতে চেয়েছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নদীর ওইপাড়ে করতে চান। ওনি অনেক দূরদর্শী। তার একটা যুক্তি হচ্ছে, ভবিষ্যতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং এলাকার উন্নয়নের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। সুতরাং আমরা ওই পাড়ে কয়েকটি এলাকা চিহ্নিত করে দিয়েছি। এখন ওগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।’
মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের কার্যক্রম প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মেডিক্যাল কলেজের ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। তাই, আমরা কাছাকাছি কোথাও দেখছি। স্থান নির্ধারণ করে মানচিত্রও করা হয়েছে। এখন বোধ হয় স্থানটি দেখার জন্য লোক আসবে। রাঙামাটি সদর হাসপাতালের করোনারি ইউনিটে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করার একটি প্রস্তাবনাও আছে। করোনারি ইউনিটে মেশিনারিজ না পাওয়ায় চালু হতে দেরি হচ্ছে। যদি মেশিনারিজ পাওয়া যায়, তাহলে সেখানে সেটাই থাকবে। আর যদি পাওয়া না যায়, তবে মেডিক্যাল কলেজের প্রস্তাবটি বিবেচনা করা হবে।’
সংবিধানে ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি যেটা মনে করি, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘আদিবাসী’ নেই। এখন আদিবাসী আছে কি নেই, এই সিদ্ধান্তের ফলে ‘আদিবাসী’ নিয়ে গবেষণা তো বন্ধ হবে না। ভবিষ্যতে যদি তথ্য-প্রমাণ দিয়ে এটা স্থাপিত করা যায়, এরা ‘আদিবাসী’, তখন সংবিধানে ‘আদিবাসী’ শব্দটি স্থাপন করা যেতেই পারে। এটা তো কোরান শরীফ বা গীতা নয়। আমাদের জাতিসত্ত্বার স্বীকৃতি দিতে হবে। এটার জন্য দীর্ঘদিন পর্যন্ত লড়াই ছিল। তো সংবিধানে প্রথমবারের মতো জাতিসত্ত্বার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সুতরাং ‘জাতিসত্ত্বার স্বীকৃতি দেওয়া হয় নি’, ‘আদিবাসী স্বীকৃতি নাই’, ‘লড়াই সংগ্রাম করতে হবে’-আমার মনে হয় না, এইসব বক্তব্য যুক্তিতে টেকে!’
চুক্তি বাস্তবায়নে ধীরগতি প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘৭ বছর ২০০১ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি। শান্তিচুক্তির প্রত্যেকটা জায়গায় স্থবিরতা ছিল। সুতরাং এই স্থবিরতা কাটাতে আমাদের সময় লেগেছে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেও ২/১টি বিভাগ হস্তান্তরিত হয়েছে, জরুরি অবস্থার সময়ও ১টি বিভাগ হস্তান্তর হয়েছে। আমাদের সময়ে এখনো হয় নি, এটা নিয়ে আমাদের কষ্ট বা মনোবেদনা নেই তা নয়; তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই খাগড়াছড়িতে যুব উন্নয়ন, টিটিসি এবং স্থানীয় পর্যটন হস্তান্তর করতে পারবো। আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা এগুলোর হস্তান্তর করবো।’
ইউপিডিএফের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সন্তু লারমার দাবি প্রসঙ্গে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যাকে বলছি, এর সব কর্মকা- নিষিদ্ধ করতে হবে আবার যে ব্যক্তি বলছেন, একই কাজ যদি সেই আমি-ই করি, তা হলে আমার ওপর কেনো নিষেধাজ্ঞা আসবে না?’
পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে কি শুধু ইউপিডিএফই সন্ত্রাসী কর্মকা- করছে? সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মানুষ অপহরণ, খুন শুধু কি ইউপিডিএফ করছে? অন্য কেউ করছে না? আগে আমাকে নুন খাওয়া বন্ধ করতে হবে। তারপরে আমি বলবো যে, ভাই! নুন খাবেন না। আমি নিজে নুন খাবো, অন্যকে খেতে মানা করবো, এটা নীতি না।’
পার্বত্য এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা প্রায়ই দেখেন, প্রায় প্রতিদিনই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং আটক করা হচ্ছে, এটা স্বাভাবিক আইনেই করা হচ্ছে এবং এটা চলমান প্রক্রিয়া। তবে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে এখানে পার্থক্য হলো-এটা একটি স্পর্শকাতর এলাকা। সুতরাং আমরা একটু সতর্কতার সঙ্গে এগুতে চাই। কিন্তু, আমরা এই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে থেমে নেই।’
সম্প্রতি রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ১৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বিশেষ সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলবেন- শান্তিচুক্তির বাস্তবায়নে ধীরগতি রয়েছে। এই প্রসঙ্গে আমি বলতে চাই, চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর এবং এ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হয় ১৯৯৯ সালের ২৫ মে। এর পর ২০০১ সালে জুলাই মাসে আমরা ক্ষমতা তত্ত্বাবধায়কের হাতে দেই। কিন্তু, এরপর বিএনপি-জামায়াতের ৫ বছর আর তত্ত্বাবধায়কের ২ বছর মিলিয়ে ৭ বছরে শান্তিচুক্তি নিয়ে আর কোনো কাজ হয় নি। কার্যক্রম একচুলও অগ্রসর হয় নি।’
তিনি এ বিষয়ে ২টি উদাহরণ উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি ২টি উদাহরণ দেই। আঞ্চলিক পরিষদের প্রবিধানমালা চুক্তি স্বাক্ষরের পর পরই হওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু মাত্র গত বছর আমরা এই বিধিমালা ঠিক করেছি। পরিষদ সদস্যদের বেতনভাতা চুক্তি স্বাক্ষরের পর পরই নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। কিন্তু গত বছরই তা আমরা স্থির করতে পেরেছি। এই যে ধীরগতি, এটার খুব ভেতরে না গিয়েও আমি বলবো- এটা আমাদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক বিচার-বিশ্লেষণ করলেই অনেক কিছুর উত্তর পাওয়া যাবে।’
পার্বত্য শান্তিচুক্তির সঙ্গে উত্তর আয়ারল্যান্ডের শান্তিচুক্তির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমার সঙ্গে কিছুদিন আগে উত্তর আয়ারল্যান্ডের বাসিন্দা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূত উইলিয়াম হান্নার দেখা হলে আমি তার কাছে জানতে চেয়েছি, আপনাদের শান্তিচুক্তির কী অবস্থা? চুক্তি বাস্তবায়নের অবস্থা বা অগ্রগতি কী?’
কারণ হিসেবে বললাম, ‘আমাদের চুক্তির জন্য আমরা পেয়েছি ইউনেস্কো পুরষ্কার আর আপনারা পেয়েছেন নোবেল পুরষ্কার। তখন তিনি স্বীকার করলেন-শান্তিচুক্তির অনেককিছুই সেখানে অবাস্তবায়িত আছে। তবে তিনি এটাও বললেন-শান্তিচুক্তির কারণে সেখানকার মানুষের মধ্যে উদ্যম, উদ্যোগ, সাহস এবং ইতিবাচক চিন্তার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। এটাকেই তিনি একটা উল্লেখযোগ্য দিক হিবেবে উল্লেখ করলেন।’
তিনি বলেন, ‘একইভাবে আমাদের এখানেও চুক্তি স্বাক্ষরের পর আঞ্চলিক পরিষদ গঠন, জেলা পরিষদ গঠন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, ভারত প্রত্যাগত ১২ হাজার ২শ ২২ পরিবারকে নিজ নিজ ভূমিতে পুনর্বাসন, ১ হাজার ৯শ ২৬ জন জনসংহতি সদস্যকে পুনর্বাসন করা, তাদের সকল মামলা নিষ্পত্তি করা এবং প্রত্যাহার করা, যারা চাকরিতে ছিলেন, তাদের চাকরিতে পুনর্বহল করা, চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ, জনসংহতির সদস্যদের চাকরি এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চাকরিতে কোটা সবকিছুতেই তাদের অগ্রাধিকার দিয়েছি।’
প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘পিপি রফিক (রাঙামাটির পাবলিক প্রসিকিউটর) আমাকে নিশ্চিত করেছেন, সব মামলা প্রত্যাহার করা শেষ হয়েছে। অনেকে ভারত থেকেই যে পরীক্ষা দিয়ে এসেছেন, সেটাকে আমরা সেটার মান বহাল রেখেই তাদের উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করেছি।’
ভূমি বিরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল যে সমস্যা, সেটা হলো ভূমি সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে আমরা ভূমি কমিশন গঠন করেছি। দীর্ঘদিন এই কমিশনের কোনো কার্যক্রম ছিল না। আমরা ক্ষমতায় আসার পর আবার এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’
পার্বত্য কমিশনের সফর প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খুশি হয়েছি, পার্বত্য কমিশন এখানে সফরে এসেছে। কমিশনের কো-চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলেছেন-২/৩ দিনের সফরে এখানে তারা অস্বাভাবিক কিছু দেখেন নি। আমরা মনে করি, অস্বাভাবিক কিছু যে দেখেন নি, এটাই সরকারের সাফল্য। এটার সঙ্গে আরেকটা বিষয় তারা বলেছেন- শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণেই এখানে সাংঘর্ষিক অবস্থা চলছে। তবে আমরা এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি।’
দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে কিছু দ্বন্দ্ব থাকতে পারে। কিছু অসন্তোষ থাকতে পারে। কিন্তু সাংঘর্ষিক অবস্থা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে হয়েছে, এটার সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করি।’
পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংঘাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে। মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে- এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা এর নিন্দা জানাই। এ রকম ঘটনা ঘটা উচিত নয়। তারপরও বলবো-এ ঘটনাগুলো শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কিংবা বাস্তবায়ন না হওয়ার সঙ্গে জড়িত নয় বলেই আমরা মনে করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, এখানে চাঁদাবাজির এলাকা বিস্তৃত করার জন্য অবৈধ অস্ত্রধারীরা এই সংঘাত চালাচ্ছে। সুতরাং পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন বা অন্যান্য কমিশন যারা এখানে মানবাধিকারের কথা বলে, যারা এখানে গণতন্ত্রের কথা বলে, তাদের কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা-এখনো পর্যন্ত আপনাদের মুখে যে অবৈধ অস্ত্র আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের জনজীবনে হুমকি সৃষ্টি করছে, জনজীবনে প্রাণহানি ঘটাচ্ছে, এ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আপনারা কোনো কিছু বলছেন না কেনো?’
পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের প্রক্রিয়া চালাচ্ছি। আমরা এটাকে আরও বেশি জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি এবং নিঃসন্দেহে এটা আরও বেশি জোরদার করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘চুক্তির অবাস্তবায়িত যেসব অংশ রয়েছে, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে-ভূমি সমস্যা। ভূমি সমস্যা সমাধান করতে পারলে আমরা মনে করি, চুক্তির একটি বড় উল্লেখযোগ্য দিক আমরা সমাধান করতে পারবো এবং আমরা চেষ্টা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য সমস্যাগুলোও সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। এর কিছু ভূমি সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন- উপজাতীয় শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের আমরা নিজের জায়গায় পাঠাতে পারছি না ভূমি সমস্যার কারণে। ভূমি সমস্যাটাই মূল সমস্যা। ভূমি সমস্যা ছাড়া চুক্তির অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে।’
ভূমি কমিশন আইন নিয়ে আঞ্চলিক পরিষদের প্রস্তাবনা তাদের (পাহাড়ে বসরত জনগোষ্ঠী) সঙ্গে, ভূমি ও আইন মন্ত্রণালয়সহ সবার সঙ্গে আলোচনা করেই খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সেটার ওপরই কাজ চলছে। কাজ চলছে বলবো না। কাজ প্রায় শেষ।’
পাহাড়ে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সব সময় ঘুমানোর সময় দরজা জানালা খোলা রেখে নাম ডেকে ঘুমাবো। আমার ঘর আমি পাহারা দেবো না। আর পুলিশকে বলবো- পুলিশ আমার ঘরবাড়ি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই যুক্তির সঙ্গে আমরা একমত নই। ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধে সচেতনতা দরকার। মিলিটারি বা পুলিশ বা সরকার দিয়ে কি ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধ করা যায়?’
‘পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে নিজেদের কাজ শেষ করেছে। এখন বাকি দায়িত্ব সরকারের’ সন্তু লারমার এমন মন্তব্যের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ওনার (সন্তু লারমা) ব্যক্তিগত মন্তব্য।’
তিনি বলেন, ‘নেতৃত্বের আসল গুণ হলো, নিজে সব যন্ত্রণা-কষ্ট সহ্য করে নিয়ে আশার আলো জ্বালানো। কিন্তু হতাশগ্রস্ত মানুষ কাউকে আলো দেখাতে পারে না। হতাশা নিয়ে আমরা কোথাও এগুতেও পারি না। শান্তিচুক্তি এটা কারোর একার নয়। আমরা শান্তিচুক্তির সকল পক্ষের শক্তি। এটা আমাদের সন্তান। সুতরাং শান্তিচুক্তির গতি প্রত্যাশিত হচ্ছে না বলে আমাদের কষ্ট-জ্বালা কম নয়। কিন্তু, আমরা হতাশগ্রস্ত নই।’
তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টে একটা রিট মামলা চলছে।’
জেএসএস (জনসংহতি সমিতি) নেতাদের সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। গণতন্ত্রের একটি শিক্ষা হচ্ছে- খবঃ ঁং ধমৎবব ঃড় ফরংধমৎবব (মতের দ্বিমত থাকা)। গণতন্ত্রে সমালোচনা হবে, গণতন্ত্রে একমত-দুইমত হতেই পারে। আমরা খুব শক্তভাবে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। সহ্যশক্তি থাকতে হয়। কারা কি বলছে, না বলছে- এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। সমালোচনা করার অধিকার সবাইকে দিতে হবে।’
চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন প্রসঙ্গে দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘এই চুক্তির জন্য আমি জননেত্রী শেখ হাসিনা, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, সন্তু লারমা সবাইকে ধন্যবাদ দেই। আর যেদিন আমাদের নেত্রী এই চুক্তির জন্য ইউনেস্কো শান্তি পুরষ্কার পেয়েছেন, সেইদিন এটা আর আওয়ামী লীগ, জেএসএস বা বাংলাদেশের সম্পত্তি নয়, এই চুক্তির মালিক সারাবিশ্বের শান্তিকামী মানুষ। সুতরাং এই চুক্তি করার কৃতিত্ব একা কারো নয়, শান্তির জন্য যারা কাজ করেছেন, তাদের সম্মিলিত।’
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কোনো বিশেষ অভিযানের পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় চেষ্টা করি, স্বাভাবিক আইনে সবকিছুর নিরসন করতে। জাতির জনকের হত্যার বিচারও আমরা স্বাভাবিক আইনে সম্পন্ন করেছি। সেখানেও রায় কার্যকরে আমরা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করি নি। সুতরাং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য দেশের প্রচলিত আইনই যথেষ্ট। শুধু এটাকে আরেকটু বেশি জোরদার করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আর আরও বেশি জোরদার করতে গেলে আমরা আহ্বান রাখবো সকল রাজনৈতিক দল যেন এই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সর্বোতভাবে সহযোগিতা ও সমর্থন করেন। অবৈধ অস্ত্রধারী যে দলের বা যেই হোক না কেনো, তাকে আইনের মাধ্যমে বিচার করা এখন প্রত্যেক নাগরিকের চাওয়া। সুতরাং আমি মনে করি, এই ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকলের অকুণ্ঠ সমর্থন থাকা দরকার।’
প্রস্তাবিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে তিনি পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নদীর এপাড়ে আমরা করতে চেয়েছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নদীর ওইপাড়ে করতে চান। ওনি অনেক দূরদর্শী। তার একটা যুক্তি হচ্ছে, ভবিষ্যতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং এলাকার উন্নয়নের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। সুতরাং আমরা ওই পাড়ে কয়েকটি এলাকা চিহ্নিত করে দিয়েছি। এখন ওগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।’
মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের কার্যক্রম প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মেডিক্যাল কলেজের ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। তাই, আমরা কাছাকাছি কোথাও দেখছি। স্থান নির্ধারণ করে মানচিত্রও করা হয়েছে। এখন বোধ হয় স্থানটি দেখার জন্য লোক আসবে। রাঙামাটি সদর হাসপাতালের করোনারি ইউনিটে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করার একটি প্রস্তাবনাও আছে। করোনারি ইউনিটে মেশিনারিজ না পাওয়ায় চালু হতে দেরি হচ্ছে। যদি মেশিনারিজ পাওয়া যায়, তাহলে সেখানে সেটাই থাকবে। আর যদি পাওয়া না যায়, তবে মেডিক্যাল কলেজের প্রস্তাবটি বিবেচনা করা হবে।’
সংবিধানে ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি যেটা মনে করি, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘আদিবাসী’ নেই। এখন আদিবাসী আছে কি নেই, এই সিদ্ধান্তের ফলে ‘আদিবাসী’ নিয়ে গবেষণা তো বন্ধ হবে না। ভবিষ্যতে যদি তথ্য-প্রমাণ দিয়ে এটা স্থাপিত করা যায়, এরা ‘আদিবাসী’, তখন সংবিধানে ‘আদিবাসী’ শব্দটি স্থাপন করা যেতেই পারে। এটা তো কোরান শরীফ বা গীতা নয়। আমাদের জাতিসত্ত্বার স্বীকৃতি দিতে হবে। এটার জন্য দীর্ঘদিন পর্যন্ত লড়াই ছিল। তো সংবিধানে প্রথমবারের মতো জাতিসত্ত্বার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সুতরাং ‘জাতিসত্ত্বার স্বীকৃতি দেওয়া হয় নি’, ‘আদিবাসী স্বীকৃতি নাই’, ‘লড়াই সংগ্রাম করতে হবে’-আমার মনে হয় না, এইসব বক্তব্য যুক্তিতে টেকে!’
চুক্তি বাস্তবায়নে ধীরগতি প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘৭ বছর ২০০১ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি। শান্তিচুক্তির প্রত্যেকটা জায়গায় স্থবিরতা ছিল। সুতরাং এই স্থবিরতা কাটাতে আমাদের সময় লেগেছে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেও ২/১টি বিভাগ হস্তান্তরিত হয়েছে, জরুরি অবস্থার সময়ও ১টি বিভাগ হস্তান্তর হয়েছে। আমাদের সময়ে এখনো হয় নি, এটা নিয়ে আমাদের কষ্ট বা মনোবেদনা নেই তা নয়; তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই খাগড়াছড়িতে যুব উন্নয়ন, টিটিসি এবং স্থানীয় পর্যটন হস্তান্তর করতে পারবো। আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা এগুলোর হস্তান্তর করবো।’
ইউপিডিএফের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সন্তু লারমার দাবি প্রসঙ্গে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যাকে বলছি, এর সব কর্মকা- নিষিদ্ধ করতে হবে আবার যে ব্যক্তি বলছেন, একই কাজ যদি সেই আমি-ই করি, তা হলে আমার ওপর কেনো নিষেধাজ্ঞা আসবে না?’
পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে কি শুধু ইউপিডিএফই সন্ত্রাসী কর্মকা- করছে? সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মানুষ অপহরণ, খুন শুধু কি ইউপিডিএফ করছে? অন্য কেউ করছে না? আগে আমাকে নুন খাওয়া বন্ধ করতে হবে। তারপরে আমি বলবো যে, ভাই! নুন খাবেন না। আমি নিজে নুন খাবো, অন্যকে খেতে মানা করবো, এটা নীতি না।’
পার্বত্য এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা প্রায়ই দেখেন, প্রায় প্রতিদিনই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং আটক করা হচ্ছে, এটা স্বাভাবিক আইনেই করা হচ্ছে এবং এটা চলমান প্রক্রিয়া। তবে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে এখানে পার্থক্য হলো-এটা একটি স্পর্শকাতর এলাকা। সুতরাং আমরা একটু সতর্কতার সঙ্গে এগুতে চাই। কিন্তু, আমরা এই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে থেমে নেই।’
No comments