এমন বছর বাংলাদেশের ক্রিকেটে আর আসেনি by সাইদুজ্জামান
২০১১ বিশ্বকাপ ডামাডোলের ঢোলে আরো জোর বাড়ি পড়েছিল তৎকালীন অধিনায়কের একটি মন্তব্যে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৫৮ রানের ভরাডুবির পর টিভি টক শো এবং পত্রিকার সাক্ষাৎকারে সাবেক ক্রিকেটাররা বিস্তর সমালোচনা করেছিলেন। যার জবাবে সাবেক ক্রিকেটারদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিন্দিত হয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। গতকাল পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯১ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর সেই তুল্যদণ্ড তুলে ধরা হলো মুশফিকুর রহিমের
সামনে। যিনি বিনীতভাবে মেনে নিয়েছেন, 'আমাদের যতটুকু উন্নতি করা দরকার ছিল, তা পারিনি।' এক বছরে তিনবার এক শ'র নিচে অল আউট হওয়া দলের অধিনায়কের আর কী বলার থাকতে পারে? ১৯৮৬ সালে ওয়ানডে অভিষেকের পর যে এমন দুঃসহ বছর আসেনি বাংলাদেশের ক্রিকেটে!
ক্রিকেটে একটা দিন খারাপ যেতেই পারে। বিশ্বচ্যাম্পিয়নের খেতাব গায়ে পাকিস্তানও ১৯৯৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অল আউট হয়েছিল মাত্র ৪৩ রানে। তবু বাংলাদেশের ৫৮ কাণ্ড নিয়ে তুমুল হৈচৈ হয়েছে। বিশ্বকাপ ম্যাচ বলে কথা! আর সমালোচকরা আরো নির্মম হয়ে উঠেছিলেন একই আসরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৮ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর। প্রায় ৯ মাস পর গতকাল আরেকবার একই ব্যর্থতার পর অধিনায়ককে মানতেই হলো উন্নতিটা প্রত্যাশার সমান্তরালে হয়নি।
১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চের ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারেননি সাকিব। তাঁর জন্মই যে সেদিন শ্রীলঙ্কার মোরাতুয়ায় বাংলাদেশের ওয়ানডে অভিষেকের ৩৫৯ দিন পর! এশিয়া কাপের সে ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। যে ম্যাচে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ অল আউট হয়েছিল ৯৪ রান করে। প্রায় ২৫ বছর পর সে দলের বিপক্ষেই কিনা ৯১ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ! না, তাই বলে বর্তমান দলকে আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকের চেয়ে নিম্নমানের বলে রায় দিয়ে দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। ধীরগতিতে হলেও মুশফিকুর রহিমের দল অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে শ্রেয়তর। এখন জেতার আশা বুকে নিয়েই দল মাঠে নামে। গ্যালারিতে বসে কিংবা টিভির দর্শক আরো বেশি আশাবাদী। ২০০৭ বিশ্বকাপে সুপার এইটে উত্তরণ কিংবা গত তিন বছরে ২৯টি জয় তো আর এমনি এমনি আসেনি।
জয়ের সংখ্যা বিবেচনায় ২০০৯ সালটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্বপ্নের বছর। সে বছর ১৯ ওয়ানডের ১৪টিতেই জয়ী বাংলাদেশ। অবশ্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি ছাড়া বাকিগুলোয় বাংলাদেশের শিকার জিম্বাবুয়ে এবং হৃত শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সে বছর একবারও এক শ'র নিচে গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জা পেতে হয়নি বাংলাদেশকে। ২০১০ সালে ২৭ ম্যাচের ৯টিতে জেতা বাংলাদেশ এক শ'র নিচে অল আউট হয়েছিল মাত্র একবার। বাংলাদেশ ক্রিকেটের 'অন্ধকার যুগ' হিসেবে খ্যাত ২০০৩ সালেও ২১ ম্যাচে মাত্র একবার, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭৬ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে ডারউইনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭৪ রানের আগে ওটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বনিম্ন ওয়ানডে ইনিংস। ৫৮ কাণ্ডের পর সেটিও এখন অতীত। পরের দুই বছর এমন বিব্রত হতে হয়নি বাংলাদেশ দলকে। কিন্তু ২০১১ সালে শেয়ারবাজারের মতো আকস্মিক পতন এ ধারায়। ৯ মাসের ব্যবধানে তিনবার এক শ'র নিচে শেষ বাংলাদেশের ওয়ানডে ইনিংস। তাও কিনা যে সময়কালে বাংলাদেশ দল পেয়েছে জেমি সিডন্স এবং স্টুয়ার্ট ল'র মতো সাবেক ব্যাটসম্যানকে। প্রথমজন অস্ট্রেলিয়ার মহাতারকা শেন ওয়ার্নের দেখা সেরা ৫০ ব্যাটসম্যানের একজন। যাঁর অধীনে ব্যাটিং শিখতেন রিকি পন্টিং-মাইকেল ক্লার্করা। এই সেদিন কুমার সাঙ্গাকারা-মাহেলা জয়বর্ধনেদের একই শিক্ষা দিয়ে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়েছেন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দেওয়া স্টুয়ার্ট ল। তবু এ ব্যাটিং দৈন্য কেন?
কোচ জেমি সিডন্সের যত ঘাটতিই থাকুক, ব্যাটিং শেখানোয় তাঁর দক্ষতা প্রশ্নাতীত। মূল্যায়িত হওয়ার সময়টা এখনো পাননি স্টুয়ার্ট ল। তবে ড্রেসিংরুম থেকে তাঁর সামর্থ্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন এখনো ওঠেনি। কেউ কেউ তো এটুকু দেখাতেই ল'র গুণমুদ্ধ। তাহলে সমস্যাটা কি ব্যাটসম্যানদেরই? যাঁদের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, নিজের দুর্বলতা ঝালিয়ে নেওয়ার চেয়ে অনুশীলনের সময় পার করে দেওয়াই মূল লক্ষ্য। অপেক্ষাকৃত সহজ বোলারদের নেটে ব্যাটিং, বোলিং মেশিনে গতি কমিয়ে ব্যাটিংটা সহজ করে নেওয়ার প্রবণতা আছে কারো কারো। যা দেখেশুনে স্টুয়ার্ট ল মহাবিরক্ত বলেই নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর।
তবে প্রকাশ্য সমস্যাও আছে। এ বছরের তিনটি এক শ'র নিচের স্কোরই মিরপুর স্টেডিয়ামে। এ মাঠের কালো মাটির উইকেট নিয়ে খেলোয়াড় থেকে শুরু করে বোর্ড কর্মকর্তা মহলে ব্যাপক সংশয় আছে। তবে এ সিরিজে টোয়েন্টি টোয়েন্টি এবং প্রথম ওয়ানডের পর উইকেট প্রস্তুতিও চলে এসেছে আলোচনায়। কালো মাটি-টাটি সমস্যা না। আসল সমস্যা প্রস্তুতির সময়ে। ভাবা যায়, একটি করে টোয়েন্টি টোয়েন্টি এবং টেস্ট ম্যাচ আর দুটি ওয়ানডে হবে যে মাঠে, সেটি ব্যস্ত থাকে সিরিজ শুরুর দুই দিন আগেও! মেয়েদের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের শেষ ম্যাচটি মিরপুরে অনুষ্ঠিত হয় ২৬ নভেম্বর। অবশ্য মিরপুরের ক্রিকেট শুধু নভেম্বরেই উত্তাল থাকে না। বছরজুড়েই এখানে কত্ত কি ম্যাচ যে হয়! পুরস্কার বিতরণের জন্য কর্তাদের বাইরে যেতে সমস্যা। আবার মিরপুরে না হলে ভালো প্রচারও পাওয়া যায় না। তাই যেনতেন ম্যাচও আয়োজন করে মিরপুরকে নির্দ্বিধায় বিশ্বের ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক ভেন্যুর মর্যাদা দিয়ে দেওয়া যায়। এ ব্যস্ততার কারণে উইকেট এবং মাঠ প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় মেলে না। প্রত্যাশার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না বাংলাদেশ দলও।
স্কোর কার্ড
ক্রিকেটে একটা দিন খারাপ যেতেই পারে। বিশ্বচ্যাম্পিয়নের খেতাব গায়ে পাকিস্তানও ১৯৯৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অল আউট হয়েছিল মাত্র ৪৩ রানে। তবু বাংলাদেশের ৫৮ কাণ্ড নিয়ে তুমুল হৈচৈ হয়েছে। বিশ্বকাপ ম্যাচ বলে কথা! আর সমালোচকরা আরো নির্মম হয়ে উঠেছিলেন একই আসরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৮ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর। প্রায় ৯ মাস পর গতকাল আরেকবার একই ব্যর্থতার পর অধিনায়ককে মানতেই হলো উন্নতিটা প্রত্যাশার সমান্তরালে হয়নি।
১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চের ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারেননি সাকিব। তাঁর জন্মই যে সেদিন শ্রীলঙ্কার মোরাতুয়ায় বাংলাদেশের ওয়ানডে অভিষেকের ৩৫৯ দিন পর! এশিয়া কাপের সে ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। যে ম্যাচে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ অল আউট হয়েছিল ৯৪ রান করে। প্রায় ২৫ বছর পর সে দলের বিপক্ষেই কিনা ৯১ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ! না, তাই বলে বর্তমান দলকে আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকের চেয়ে নিম্নমানের বলে রায় দিয়ে দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। ধীরগতিতে হলেও মুশফিকুর রহিমের দল অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে শ্রেয়তর। এখন জেতার আশা বুকে নিয়েই দল মাঠে নামে। গ্যালারিতে বসে কিংবা টিভির দর্শক আরো বেশি আশাবাদী। ২০০৭ বিশ্বকাপে সুপার এইটে উত্তরণ কিংবা গত তিন বছরে ২৯টি জয় তো আর এমনি এমনি আসেনি।
জয়ের সংখ্যা বিবেচনায় ২০০৯ সালটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্বপ্নের বছর। সে বছর ১৯ ওয়ানডের ১৪টিতেই জয়ী বাংলাদেশ। অবশ্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি ছাড়া বাকিগুলোয় বাংলাদেশের শিকার জিম্বাবুয়ে এবং হৃত শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সে বছর একবারও এক শ'র নিচে গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জা পেতে হয়নি বাংলাদেশকে। ২০১০ সালে ২৭ ম্যাচের ৯টিতে জেতা বাংলাদেশ এক শ'র নিচে অল আউট হয়েছিল মাত্র একবার। বাংলাদেশ ক্রিকেটের 'অন্ধকার যুগ' হিসেবে খ্যাত ২০০৩ সালেও ২১ ম্যাচে মাত্র একবার, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭৬ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে ডারউইনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭৪ রানের আগে ওটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বনিম্ন ওয়ানডে ইনিংস। ৫৮ কাণ্ডের পর সেটিও এখন অতীত। পরের দুই বছর এমন বিব্রত হতে হয়নি বাংলাদেশ দলকে। কিন্তু ২০১১ সালে শেয়ারবাজারের মতো আকস্মিক পতন এ ধারায়। ৯ মাসের ব্যবধানে তিনবার এক শ'র নিচে শেষ বাংলাদেশের ওয়ানডে ইনিংস। তাও কিনা যে সময়কালে বাংলাদেশ দল পেয়েছে জেমি সিডন্স এবং স্টুয়ার্ট ল'র মতো সাবেক ব্যাটসম্যানকে। প্রথমজন অস্ট্রেলিয়ার মহাতারকা শেন ওয়ার্নের দেখা সেরা ৫০ ব্যাটসম্যানের একজন। যাঁর অধীনে ব্যাটিং শিখতেন রিকি পন্টিং-মাইকেল ক্লার্করা। এই সেদিন কুমার সাঙ্গাকারা-মাহেলা জয়বর্ধনেদের একই শিক্ষা দিয়ে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়েছেন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দেওয়া স্টুয়ার্ট ল। তবু এ ব্যাটিং দৈন্য কেন?
কোচ জেমি সিডন্সের যত ঘাটতিই থাকুক, ব্যাটিং শেখানোয় তাঁর দক্ষতা প্রশ্নাতীত। মূল্যায়িত হওয়ার সময়টা এখনো পাননি স্টুয়ার্ট ল। তবে ড্রেসিংরুম থেকে তাঁর সামর্থ্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন এখনো ওঠেনি। কেউ কেউ তো এটুকু দেখাতেই ল'র গুণমুদ্ধ। তাহলে সমস্যাটা কি ব্যাটসম্যানদেরই? যাঁদের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, নিজের দুর্বলতা ঝালিয়ে নেওয়ার চেয়ে অনুশীলনের সময় পার করে দেওয়াই মূল লক্ষ্য। অপেক্ষাকৃত সহজ বোলারদের নেটে ব্যাটিং, বোলিং মেশিনে গতি কমিয়ে ব্যাটিংটা সহজ করে নেওয়ার প্রবণতা আছে কারো কারো। যা দেখেশুনে স্টুয়ার্ট ল মহাবিরক্ত বলেই নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর।
তবে প্রকাশ্য সমস্যাও আছে। এ বছরের তিনটি এক শ'র নিচের স্কোরই মিরপুর স্টেডিয়ামে। এ মাঠের কালো মাটির উইকেট নিয়ে খেলোয়াড় থেকে শুরু করে বোর্ড কর্মকর্তা মহলে ব্যাপক সংশয় আছে। তবে এ সিরিজে টোয়েন্টি টোয়েন্টি এবং প্রথম ওয়ানডের পর উইকেট প্রস্তুতিও চলে এসেছে আলোচনায়। কালো মাটি-টাটি সমস্যা না। আসল সমস্যা প্রস্তুতির সময়ে। ভাবা যায়, একটি করে টোয়েন্টি টোয়েন্টি এবং টেস্ট ম্যাচ আর দুটি ওয়ানডে হবে যে মাঠে, সেটি ব্যস্ত থাকে সিরিজ শুরুর দুই দিন আগেও! মেয়েদের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের শেষ ম্যাচটি মিরপুরে অনুষ্ঠিত হয় ২৬ নভেম্বর। অবশ্য মিরপুরের ক্রিকেট শুধু নভেম্বরেই উত্তাল থাকে না। বছরজুড়েই এখানে কত্ত কি ম্যাচ যে হয়! পুরস্কার বিতরণের জন্য কর্তাদের বাইরে যেতে সমস্যা। আবার মিরপুরে না হলে ভালো প্রচারও পাওয়া যায় না। তাই যেনতেন ম্যাচও আয়োজন করে মিরপুরকে নির্দ্বিধায় বিশ্বের ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক ভেন্যুর মর্যাদা দিয়ে দেওয়া যায়। এ ব্যস্ততার কারণে উইকেট এবং মাঠ প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় মেলে না। প্রত্যাশার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না বাংলাদেশ দলও।
স্কোর কার্ড
No comments