দায়িত্বগ্রহণ অনুষ্ঠানে মেয়র আইভী-শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছি এই নগর ভবন সবার

বগঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলেছেন, 'আমি শান্তির বার্তা নিয়ে নগরভবনে এসেছি।' গতকাল বৃহস্পতিবার দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে, পথে পথে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে আইভী নগর ভবনে পেঁৗছান। দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে রাখা বক্তৃতায় আইভী নগরবাসীর কল্যাণে সর্বাত্মক কাজ করার ঘোষণা দেন।


আইভী তাঁর বক্তব্যে বলেন, 'নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে বিজয় হয়েছে জনতার। জয় হয়েছে গণমানুষের। আমরা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি চাই না। লক্ষ জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আজ আমি শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছি নগর ভবনে। আমি জনগণের প্রার্থী ছিলাম। নির্বাচিত হয়ে এখন জনগণের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখব।'
গতকাল সকাল ১১টায় ডা. সেলিনা হায়াত আইভী শহরের পশ্চিম দেওভোগ এলাকার নিজ বাসা থেকে বের হয়ে পায়ে হেঁটে শহরের চাষাঢ়া মোড় হয়ে ১২টা ২০ মিনিটে নগর ভবনে পেঁৗছান। এ সময় রাস্তার দুই পাশে হাজার হাজার মানুষ বাদ্য বাজিয়ে, ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে আইভীকে অভিনন্দন জানান।
গত বুধবার সংসদে সিটি করপোরেশনসংক্রান্ত স্থানীয় সরকার আইন সংশোধন বিল পাস হয়। এর ফলে ঢাকা নগরীর মেয়র বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার সুদীর্ঘ মেয়রযুগের কার্যত অবসান ঘটে।
দায়িত্ব গ্রহণের অনুষ্ঠানে রাখা বক্তব্যে এই আইন সংশোধন নিয়েও কথা বলেন আইভী। তিনি বলেন, 'ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকার চলে যাওয়ার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না। যেমন সঠিক ছিল না গত ২৭ জুন নগর ভবন থেকে আমার চলে যাওয়া। কারণ আমরা লাখো জনতার ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হওয়ায় যেখানে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, সেখানে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসক নিয়োগ গ্রহণযোগ্যে নয়। যারা রাতের অন্ধকারে ক্ষমতা দখল করতে চায়, তারাই এ ধরনের প্রক্রিয়া চালায়।'
নির্বাচনে নিজ দল আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন না পাওয়ার বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন নবনির্বাচিত মেয়ার। আইভী বলেন, 'সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর আমার দল আমার কোন অযোগ্যতার কারণে আমাকে নির্বাচনে মেয়র পদে সমর্থন দেয়নি, তা আমি আজও জানতে পারিনি। নির্বাচনে আমি জনতার প্রার্থী ছিলাম। গত ২৭ জুন যখন দায়িত্ব বুঝিয়ে দেই, সেদিন আমি বলেছিলাম, এই নগর ভবনে জনতার রায় নিয়ে আমি আবার ফিরে আসব। নিজের প্রতি আমার বিশ্বাস ছিল যে, দায়িত্ব পালনে আমি জনস্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করিনি। আজ দায়িত্ব নেওয়ার দিন আমি সকলের জন্য শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছি। নগর ভবন ধর্ম-বর্ণ-দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে কোনো দলবাজি, টেন্ডারবাজি চলবে না। সবাইকে চলতে হবে আইন-কানুন মেনে।'
বক্তব্যের একপর্যায়ে 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' স্লোগান তুলে আইভী বলেন, এই স্লোগানটি সার্বজনীন হওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে নারায়গঞ্জের মেয়র বলেন, 'নেত্রী, আপনি আমার কোনো কথায় বিভ্রান্ত হবেন না। আমি আওয়ামী লীগে ছিলাম, আছি, থাকব।' নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ায় তিনি সরকার, নির্বাচন কমিশন, নারায়ণগঞ্জ প্রশাসন ও গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, 'গণমাধ্যম না থাকলে ভোট কারচুপির আশঙ্কা ছিল। এই সিটি করপোরেশন নির্বাচন নারায়ণগঞ্জে ইতিহাস হয়ে থাকবে।'
নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে কাজ করার অঙ্গীকার করে তাতে সাবেক সংসদ সদস্য ও পরাজিত মেয়র প্রার্থী শামীম ওসমান এবং অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের সহযোগিতাও চেয়েছেন আইভী। মেয়র পদে দাঁড়িয়েও শেষ মুহূর্তে দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো তৈমূর আলম খন্দকারকে উদ্দেশ করে আইভী বলেন, 'আমি পৌরসভায় যখন মেয়র ছিলাম, আপনি আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন, আমি আশা করব এখন আমাকে আগের মতো সহযোগিতা করবেন। নির্বাচনে আপনার দেওয়া ইশতেহার বাস্তবায়নে আমাকে সহায়তা করুন।'
শামীম ওসমানকে উদ্দেশ করে আইভী বলেন, 'আপনি শুনুন নারায়ণগঞ্জবাসী কী চায়। আমরা ও নারায়ণগঞ্জবাসী খুন-সন্ত্রাস চাই না। সুতরাং সবকিছু ছেড়ে আসুন একসঙ্গে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে কাজ করি।'
আইভী আরো বলেন, 'নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন হবে নির্দলীয়। দল-মত নির্বিশেষে সকল মতভেদের ঊধর্ে্ব উঠে আমরা কাজ করব। কারণ আমি আইভী জনতার মেয়র। জনতা যে প্রত্যাশা নিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছে, তা বাস্তবায়ন করতে আমি পিছপা হব না।' সবশেষে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনারা যে দলেরই হোন না কেন, দল-মতের ঊধর্ে্ব এসে উন্নয়নের জন্য কাজ করুন।'
আইভীর বক্তব্যের পর আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন প্রশাসক মো. শাহ কামাল।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনউল্লাহ নূরী, কাউন্সিলর নূর হোসেন, শাহজালাল বাদল, মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, মনির হোসেন, অসিত বরণ বিশ্বাস, আফজাল হোসেন, ইসরাত জাহান স্মৃতি, শারমীন হাবিব বিনি্ন প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন ঠিকাদার আবু সুফিয়ান, মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সরকার আলম, শ্রমীকদল নেতা মামুন, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সুশীল সমাজের লোকজন, জেলা যুবলীগ সভাপতি আবদুল কাদিরসহ প্রমুখ।
গত ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিজ দলের শামীম ওসমানকে এক লাখের বেশি ভোটে হারিয়ে বিজয়ী হন শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আইভী। গত ২৭ নভেম্বর তাঁকে শপথ পড়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

No comments

Powered by Blogger.