বিশেষ রচনা-প্রাবন্ধিক রশীদ করীম by মারুফ রায়হান

থাশিল্পী রশীদ করীমের প্রবন্ধগুচ্ছ তাঁর উপন্যাসের মতোই স্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল। মোট তিনটি প্রবন্ধের বই রেখে গেছেন তিনি আমাদের জন্য। এসব প্রবন্ধ ধারণ করেছে একজন কৃতী লেখকের চিন্তাচর্চার পরিচয়। তাঁর ব্যক্তিজীবন এবং লেখার পেছনের কথা জানার জন্যও এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর প্রথম প্রবন্ধগ্রন্থ 'আর এক দৃষ্টিকোণ' বেরোয় ১৯৮৯ সালে। বলা চলে এর বেশির ভাগ রচনাই আশির দশকে রচিত; যদিও প্রথম প্রবন্ধ লেখেন তিনি '৫৮তে, ঢাকা


বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সেমিনারে পঠিত 'সাহিত্যে সেন্টিমেন্টালিজম'-এর জবাবে। বিষয়টি বেশ অন্য রকম। দেখা যাচ্ছে, সমালোচনার সমালোচনা করা, কিংবা বিশ্লেষণের ব্যবচ্ছেদ বা নতুন ভাষ্য উপস্থাপনের অভিপ্রায়েই তাঁর প্রবন্ধ প্রয়াসের সূচনা। এই বৈশিষ্ট্য পরে তাঁকে ত্যাগ করেনি, বরং তিনি প্রবন্ধে ক্রমশ হয়ে উঠেছেন সরস সমালোচনামুখর। পরিমিত কথনে ব্যক্ত করেছেন গভীর উপলব্ধি। 'আর এক দৃষ্টিকোণ' গ্রন্থে প্রকাশিত দৃষ্টিকোণ ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনায় প্রবেশের আগে বলে নেওয়া যাক যে কেবল কথাসাহিত্যের বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করেননি তিনি, বলেছেন কবিতা নিয়েও, আর স্মৃতিচারণা করেছেন তিন কালজয়ী সাহিত্যিক আবু সয়ীদ আইয়ুব, সৈয়দ মুজতবা আলী ও সমরেশ বসুর। শেষোক্তজনের সঙ্গে তাঁর ছিল দারুণ সখ্য। প্রথম দুজনের বন্ধুত্ব তো সর্বজনবিদিত।
গ্রন্থের কথাসাহিত্য পর্বে লেখকের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যেসব কথাসাহিত্যিকের উপন্যাস বা গল্প নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তাঁরা হলেন আবু রুশদ (লেখকের অগ্রজ), শওকত ওসমান, আবু ইসহাক, আহসান হাবীব, শহীদুল্লা কায়সার, হাসান আজিজুল হক, শওকত আলী, মাহমুদুল হক, হুমায়ূন আহমেদ ও আহমদ ছফা। এঁদের প্রধানত একটি করে উপন্যাস বা গল্প নিয়ে তিনি বিশদ আলোচনা করেছেন। বলাই বাহুল্য, এই সব আলোচনা বই সমালোচনার পরিধি ছাড়িয়ে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। রশীদ করীম স্বদেশ ও স্বকালের পটভূমিতে রেখে রচনাকর্মগুলো বুঝে উঠতে চেয়েছেন এবং কখনো কখনো বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে সেসবের তুলনা খুঁজেছেন। তিনি লেখকের ভাষা, ভঙ্গি, প্রবণতা নিয়েই কেবল প্রশ্ন উত্থাপন করেননি, চরিত্রগুলোর আচরণ ও পরিণতি নিয়েও অভিমত উপস্থাপন করেছেন। গল্প বা উপন্যাসকে যদি বৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে বলা চলে, তিনি শেকড়কে যেমন স্পর্শ করতে চেয়েছেন, তেমনি পাতার রূপ-রস-গন্ধ, এমনকি তার ভেতরকাঠামোকেও ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন।
লক্ষণীয় হলো, ডিটেইলে অনুসন্ধিৎসু তাঁর মন, স্বচ্ছ তাঁর দৃষ্টি। বলার কথা বলে ফেলেন অকপটে, কথার মারপ্যাঁচে যান না, ব্যক্তি-কথাসাহিত্যিকের মুখের দিকে তাকান না। ভঙ্গিটা ঘরোয়া, যেন সামনের শ্রোতাকে উদ্দেশে করে বলছেন, সমালোচনার প্রচলিত ভাব-ভাষার এতটুকু পরোয়া তিনি করেন না। একেবারে স্বকীয় ভঙ্গিতে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেন, যার দেহে মিশে থাকে রসময়তা, প্রসন্নতা; ভেতরে বয়ে চলে যুক্তির জল। একেকটা প্রবন্ধ আয়তনেও নাতিদীর্ঘ। যদিও কবিতাস্বভাবে তাতে পূর্ণ থাকে যথাসম্ভব বহুকৌণিক বিশ্লেষণ। তিনি জানেন, মত একটা মতলব হয়ে ওঠে প্রায়শ, তাই নিজের ব্যক্তিস্বার্থহীন সদুদ্দেশ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে ভোলেন না। লেখকের উদ্দেশে অমোঘ প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া যেন তাঁর একটি দরকারি কাজ। মনের জিজ্ঞাসা তিনি মনে রাখেন না, সরাসরি লেখকের কাছে তোলেন; যেমন_'সূর্য দীঘল বাড়ি'র স্রষ্টা আবু ইসহাকের কাছে তুলেছেন দুটি প্রশ্ন : 'জয়গুন ছাড়া আর কারো মধ্যেই তিনি 'ভালো'র ছিটেফোঁটাও দেখতে পেলেন না কেন? শুভ ও অশুভর লড়াই? অশুভর পালাটা বড্ড বেশি ভারী হয়ে যায় নাকি?'
প্রশ্ন তোলায় রশীদ করীমের যেমন আনন্দ, তেমনি দ্বিমত বা সহমত প্রকাশেও নেই তাঁর সামান্যতম দ্বিধা। আবু সয়ীদ আইয়ুবের অনুরাগী তিনি। তাঁর রবীন্দ্রচর্চাকে পরমাশ্চর্য সাহিত্যজ্ঞান করেন। তার পরও বলেন, 'অবশ্য তাঁর (আইয়ুব) কিছু কিছু মন্তব্যে যে জিনিসটা পরিষ্কার হয়েই ছিল, সেখানে কিছুটা কুহেলিকা তৈরি করে দেয়।' আর সে জন্যই রশীদ করীম রবীন্দ্রনাথের দুটি গীতিনাট্য 'শ্যামা' ও 'চণ্ডালিকা' নিয়ে পৃথক প্রবন্ধ লিখেছেন। কিন্তু এগুলোও কি কম কুহেলিকা জাগায়?
কবিতার আলোচনায় রশীদ করীমকে অনবদ্য মনে হয়। কাব্যালোচনাও যে কবিতার মতো জাদু জাগায়, তার অন্তত একটি উদাহরণ দেওয়ার লোভ সংবরণ করতে চাই না। উদ্ধৃতিটি রচনার দিক দিয়ে যেমন চমৎকার, ব্যঞ্জনার দিক দিয়েও তেমনি তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের প্রথম আধুনিক কবি আবুল হোসেনের 'ডি. এইচ. রেলওয়ে' কবিতাটি সম্পর্কে তিনি বলছেন, "সমস্ত ছন্দকে ছত্রখান খানখান নানা খানা করে দিয়েছেন কবি। লাইনের শেষে মর্জিমতো মিল বসেছে, উঠে গেছে। যে প্রতিভা সব নিয়মকে লঙ্ঘন করেও নিজের জন্য এক আলাদা নিয়ম তৈরি করে নেয়, এখানে সেই প্রতিভাকেই দেখতে পাচ্ছি। সেই অত্যাশ্চর্য নিয়মের যাদুতে কবিতাটির প্রতিটি শব্দের সঙ্গে পরবর্তী শব্দের মিল কানে সিমফনির মতো বাজতে থাকে। অনুপ্রাস, যমক, আর লাইনের ভেতরের মিল যে সবল প্রচণ্ড শ্বাসরুদ্ধকর গতিবেগ তৈরি করেছে, তা 'ডি. এইচ. রেলওয়ে'র গাড়ির চাকায় নেই। কিন্তু চারদিকের নিসর্গ; গাড়ি থামিয়ে ইঞ্জিন ড্রাইভারের লাইনের বরফ আর পাথর সাফ করা; চড়াইয়ের 'আরোহী' এবং উতরাইয়ের 'অবরোহী', রেলগাড়ির মেঘচেরা, ছিটকানো মন্থর অগ্রগতি শিল্পীমানসে সেই তুফানই তুলেছে। অদূরের কাঞ্চনজঙ্ঘাকে কানচন ঝনঝন জংঘা বলে বিশাল পর্বতশৃঙ্গকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন ঠিক তেমনি অবলীলায়, যেভাবে তিনি চীনেমাটির পবনকে খান খান করে দিয়েছেন।"
রশীদ করীম রাজনীতিবিষয়ক রচনাগুচ্ছকে ঠাঁই দিলেন 'অতীত হয় নূতন পুনরায়' নামের পৃথক গ্রন্থে। সেখানে সাহিত্যের সমান্তরালে সংগীত এবং বিচিত্র বিষয় নিয়ে লেখা গদ্যও জায়গা পেল। তবে সাহিত্য-সংস্কৃতিবিষয়ক লেখালেখিই বইটির প্রধান সম্পদ। একটি সেমিনারের জন্য 'উপন্যাসে স্ত্রী-পুরুষের সম্পর্ক' শিরোনামে প্রবন্ধ রচনা করতে গিয়ে তিনি বেশ কিছু উপন্যাস পাঠ করেন, যেগুলো সম্পর্কে তাঁর বিজ্ঞজনোচিত রসজ্ঞ অভিমত ব্যক্ত করেছেন 'আর এক দৃষ্টিকোণ'-এর বিভিন্ন প্রবন্ধে। অথচ 'উপন্যাসে স্ত্রী-পুরুষের সম্পর্ক' প্রবন্ধটি পরিসর পেল এ বইয়ে। এটি বেশ বড় লেখা। মধ্য-আশিতে রচিত এই প্রবন্ধে লেখক উপন্যাসের অন্ধিসন্ধিতে আলো ফেলে নারী-পুরুষের সরল ও জটিল সম্পর্কের স্বরূপসন্ধান করেছেন। মজা করতেও ছাড়েননি তিনি, বলছেন : বছরের পর বছর ভুখা-পেটে থাকলেই যে মেয়েদের যৌবন উথলে ওঠে, এই খবরটি শুধু আমাদের উপন্যাসেই পাওয়া যায়।
'বাংলা একাডেমীর একটি সভা' থেকে ফিরেও তিনি প্রতিক্রিয়া জানাতে লিখেছেন প্রবন্ধ। দেখা যাচ্ছে, প্রকাশিত রচনাই কেবল নয়, মঞ্চে কথিত সাহিত্যিক অভিমতকেও তিনি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন এবং খোলাখুলি তাঁর ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি নিয়ে (এমনকি তঁাঁর পল্লীচিন্তা নিয়েও) এই গ্রন্থেও আছে একাধিক প্রবন্ধ। এমনকি শিল্প-সাহিত্য নিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত নিজস্ব মত প্রকাশের সময়ও বারবার ফিরে গেছেন রবীন্দ্রনাথের কাছে। এই ফিরে যাওয়া নিয়ে মজা করতেও কুণ্ঠিত নন তিনি। ব্র্যাকেটসহ এই বাক্যটি লক্ষ করুন : 'আবার রবীন্দ্রনাথের ভাষার কাছেই ফিরে যাই (স্যার, আপনি কি নাছোড়বান্দা?)'। রশীদ করীমের যেকোনো লেখায় পাওয়া যাবে এমন সপ্রাণ ভঙ্গিমা। খটখটে গম্ভীর কিংবা ভাবে গদগদ_প্রচলিত গদ্যরচনার এ দুই চল থেকে শতহাত দূরে তাঁর কণ্ঠস্বর বেজে ওঠে নিজস্ব ব্যক্তিত্বে, ছন্দে, স্বচ্ছন্দে। বলতে প্রলুব্ধ হচ্ছি, মান্য সাহিত্য নিয়ে এমন খোশমেজাজি আড্ডার আঙ্গিকে আর কোনো সমালোচক বা ভাষ্যকার আলাপ করেননি ('লেখেননি' শব্দটা বদলে দেওয়া যাক)। তাঁর শৈল্পিক বিবেচনা ও পরিশীলিত মূল্যায়ন পাঠকের শিল্পবোধকে নাড়া দিয়ে যায়, নবমূল্যায়নের ক্ষেত্র তৈরিতে সহায়তা করে।
মনের গহনে তোমার মুরতিখানি, ভেঙে ভেঙে যায় মুছে যায় বাবে বারে...কাননবালার গাওয়া গান। কাননবালার কালে যত নায়িকা ছিলেন, তাঁদের রশীদ করীম একেকটি আলাদা ফুল হিসেবে বিবেচনা করেছেন, আর পুরো কাননটির মর্যাদা দিয়েছেন কাননবালাকে। এই কাননবালার মৃত্যুসংবাদ পড়ে তিনি যে রচনাটি লিখলেন, তার শিরোনাম থেকেই চয়ন করলেন গ্রন্থের নাম। বাংলা চলচ্চিত্র ছাড়াও পাশ্চাত্যের চলচ্চিত্রব্যক্তিত্ব বিষয়বস্তু হয়েছে তাঁর আগের বইয়ের রচনার। এ বইয়ের বেশির ভাগ লেখা সংবাদপত্রের কলাম-ক্ষুধা নিবৃত্তির নিমিত্তে রচিত হলেও আধুনিক সংস্কৃতিমান মনের এবং একই সঙ্গে সাহিত্যরসিকের চিত্ত-ক্ষুধা মেটানোর কাজটিও করে গেছে। তাঁর আগের দুটি বইয়ের প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য_সাহিত্যের বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন এবং সাহিত্যাঙ্গনের নানা মুনীর নানা মতের ভিন্নমত উপস্থাপন, বর্তমান গ্রন্থেও উপস্থিত। রবীন্দ্রসৃষ্টি সম্পর্কে আলোকপাত আছে অবধারিতভাবে, বলেছেন, রবীন্দ্রচিন্তা অলক্ষ্যেই আমাদের চিরসঙ্গী হয়ে থাকে; আরো আছে ক্রিকেট ও টেনিস তারকাদের কথা। এমনকি হঠাৎ দেখা সুন্দরী মেয়েদের কথাও আছে নানা জরুরি কথার আড়ালে, সবিস্তারে। 'রাগ-অনুরাগ' রচনাটিতে দেখছি বর্তমান লেখকের উছিলায় কিছু হাস্যোজ্জ্বল কথা লিখেছেন : "...একটি ব্যাংকে দেখা এক যুবতীর যে-বর্ণনাটি আমি দিয়েছি, সেইটুকু পাঠ করে মারুফ রায়হান খুবই আকৃষ্ট হয়েছেন বলে মনে হলো। তাঁর ঠিকানাটি জানা থাকলে তিনি সম্ভবত তক্ষুণি সেখানে দৌড় দিতেন। কিন্তু মারুফ হয়তো জানেন না, ঠিকানা জানা থাকলে তাঁর আগে, আমি নিজেই সেই মহিলার দ্বারে প্রার্র্থী হিসেবে উপস্থিত হতাম_সমস্ত লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে।"
সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে খল সময়ের মুখোশ সরিয়ে তিনি বারবার দেখে নিয়েছেন সত্যের চেহারা। আত্মপর রাজনীতিকে তিনি আক্রমণ করেছেন একেবারে স্বকীয় ভঙ্গিতে। অপ্রীতিকর কথা বলার জন্য অরুচিকর শব্দ প্রয়োগ করেননি। এক পোয়া চালের জন্য এক ব্যক্তি ছুরিকাঘাতে নিহত ও অন্য ১০ জন আহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে লিখতে গিয়ে তিনি বলছেন : 'এদিকে প্রস্তাব উঠেছে এমপি আর মন্ত্রীদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হোক। এত দিন তো জানতাম এমপিত্ব আর মন্ত্রিত্ব দেশসেবার জন্য। এখন দেখছি, দেশের অবস্থা যা-ই হোক, তাদের অবস্থা ভালো হওয়া চাই।' আমাদের সমাজের বহু আগের বাস্তবতার কথিত চিত্রের কি এতটুকু পরিবর্তন হয়েছে?
রশীদ করীমের তিনখানি প্রবন্ধগ্রন্থের অনেক রচনায় পাঠক পাবেন আত্মজীবনীর স্বাদ, সাহিত্যভুবনের বাইরেও একজন ব্যক্তির গভীর ভাবনা ও বিবিধ বোধের পরিচয়। সাহিত্যপ্রকাশ ২০০৩ সালে প্রকাশ করে তাঁর প্রবন্ধসমগ্র। এর অগ্রন্থিত অংশের গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে অকপটে জীবনকথা উপস্থাপন। আজ থেকে অর্ধশতাব্দীকাল আগে যখন তাঁর প্রথম উপন্যাস 'উত্তম পুরুষ' বেরোয় তখন তাতে 'বলাবাহুল্য এই উপন্যাসের সব ক'টি পাত্র-পাত্রী সম্পূর্ণ কাল্পনিক'_এই বাক্যটি উৎকীর্ণ করেছিলেন। অথচ 'উত্তম পুরুষ' নামের প্রবন্ধে তিনি নিঃসংকোচে জানাচ্ছেন যে উপন্যাসটি বহুলাংশে আত্মজৈবনিক।
শুধু নিজের জীবন নয়, বরেণ্য কথাশিল্পী সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জীবনের খণ্ডাংশকেও তিনি চিত্রিত করেছেন মোহনীয়ভাবে। 'সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সঙ্গে একটি দিন' পড়লে তাঁর অন্তরঙ্গ পরিচয় মেলে। তাঁকে রশীদ করীম পর্যবেক্ষণ করেছেন একই সঙ্গে একজন ঔপন্যাসিক এবং বন্ধুস্থানীয় অনুজের দৃষ্টিতে। ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণামূলক যে কয়টি লেখা লিখেছেন, সেগুলোর ভেতর সবচেয়ে সেরা ও উষ্ণতায় সঞ্জীবিত রচনা বোধ করি এটি। স্ববৈশিষ্ট্য অনুযায়ী লেখক এই লেখায়ও কালজয়ী কথাশিল্পীর সৃষ্টিকর্মের সংক্ষিপ্ত অথচ তাৎপর্যপূর্ণ মূল্যায়ন করেছেন।
উপসংহারে বলব, রশীদ করীমের প্রবন্ধ আমাদের মননশীল রচনাধারায় একেবারে নতুন একটি স্বাদ এনে দিয়েছে। প্রবন্ধও যে এত স্বাদু, সুখপাঠ্য, হাস্যোজ্জ্বল, বাহুল্যবর্জিত ও ব্যক্তিত্বস্পৃষ্ট হতে পারে, তার উদাহরণ যেন আমরা প্রথম পেলাম।

No comments

Powered by Blogger.