সরকার তরুণদের আইটি দক্ষ মানবসম্পদ করতে চায়

রকার দেশের তরুণ প্রজন্মকে তথ্যপ্রযুক্তির (আইটি) বিভিন্ন শাখায় দক্ষ করে প্রযুক্তিভিত্তিক মানবসম্পদে পরিণত করতে চায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনসহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে চায়। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন


কেন্দ্রে পঞ্চম ই-এশিয়া আন্তর্জাতিক সম্মেলন-২০১১ উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং ভারতের সেন্টার ফর সায়েন্স ও ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ যৌথভাবে তিন দিনের এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। ইউএনডিপির অর্থায়নে পরিচালিত এক্সসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম এতে সহায়তা দিচ্ছে।
বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আন্তর্জাতিক আইসিটি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয়, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব শেখ ওয়াহিদুজ্জামান, ভারতের ন্যাশনাল ই-গভর্নেন্স অ্যান্ড আইসিটি ডিপার্টমেন্টের প্রেসিডেন্ট অজয় সনি ও ভারতের সেন্টার ফর সায়েন্সের প্রধান এন কে নারায়ণন বক্তব্য রাখেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার 'রূপকল্প'র কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকার মানবসম্পদ উন্নয়ন, উন্নয়ন কাজে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো, জনসেবা ও বাণিজ্যে তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগ_ এ চারটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে দেশের অবস্থান উজ্জ্বল করতে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ে সরকার নিরলস কাজ করছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বিনামূল্যের পাঠ্যবই 'ই-বুক' আকারে ইন্টারনেটে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১ হাজার ৬০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এবং প্রায় তিন হাজার আইটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আরও ২০ হাজার প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা করা হবে। শিক্ষার্থীরা চাইলে এখন ঘরে বসেই বই কম্পিউটারে পড়তে পারবে। বই ডাউনলোডও করতে পারবে। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ই-তথ্যকেন্দ্র চালু হয়েছে। এ কেন্দ্রগুলো থেকে ৪০ লাখ মানুষ তথ্যসেবা নিচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমেই জাতির জনকের সোনার বাংলাদেশ তৈরি হবে। এজন্য দেশের তরুণ সমাজসহ সবাইকে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কল্যাণমুখী, শান্তিপূর্ণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রসর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এগিয়ে আসার জন্য দলমত নির্বিশেষে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। পরে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন উদ্বোধন এবং একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্থাপিত বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, 'তথ্যপ্রযুক্তিতে এশিয়ার উদাহরণ হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। তথ্যপ্রযুক্তি আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। তিন বছর আগেও বাংলাদেশকে এ খাতে কোনো দেশই চিনত না। আগামীতে অন্যান্য ক্ষেত্রেও এগিয়ে যাবে। এ খাতে বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ কোনো অর্থেই অসম্ভব নয় বরং এটা হবে বাস্তব অর্জন। '
তিন দিনের এ সম্মেলনে তথ্যপ্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে ৩০টি সেমিনার ও কর্মশালা হবে। সম্মেলনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের আইসিটি পণ্য ও সেবা নিয়ে প্রদর্শনী, সেমিনার ও মেলার আয়োজনও রয়েছে। শনিবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সম্মেলনের পাশাপাশি চলবে তথ্যপ্রযুক্তি মেলা। মেলার প্রবেশমূল্য ১০ টাকা ধরা হলেও শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারবে।
গতকাল উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর পরবর্তী সেশনে পাঁচটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। 'ভবিষ্যতের ক্লাসরুম' শীর্ষক সেমিনারে ইন্টেল দক্ষিণ এশিয়ার ডিরেক্টর (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) আশুতোষ চাধা, বাংলাদেশের ব্র্যাক এডুকেশন প্রোগ্রামের পরিচালক ড. শফিকুল ইসলাম, মালয়েশিয়ার ওপেন ইউনিভার্সিটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মনসুর ফাদজিল, ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্যারল ডি রুই, কোরিয়ার ড. জ্যাং সাং হুং, শ্রীলংকার ডেবোরা উইবার্ন এবং সিঙ্গাপুরের ফেলিশিয়া ব্রাউন বক্তব্য দেন। এরপর 'ডিজিটাল যুগে দূরশিক্ষণে অনলাইন' শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভারতের আইজিএনওইউর ভাইস চ্যান্সেলর ভিএনআর পিল্লাই, বিবিসি ওয়ার্ল্ড ট্রাস্টের বাংলাদেশ প্রধান চালোর্ট ইমবার্টসহ মালয়েশিয়া এবং ভারতের দু'জন বক্তা অংশ নেন। আজ সকাল ১১টা এবং বিকেল ৩টায় ৫টি করে ১০টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা অংশ নেবেন। এছাড়া বিজয়ী ২০টি ডিজিটাল উদ্যোগকে পুরস্কৃত করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.