ক্লাইমেটগেট by শেখ রোকন
দুনিয়া জানে, দক্ষিণ আফ্রিকার সৈকত শহর ডারবান এখন নানা ধরনের মানুষের পদভারে মুখরিত। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে এর সুনাম থাকলেও তাদের কেউ সেখানে যে পর্যটক হিসেবে যাননি, তাও জানা কথা। বস্তুত জলবায়ু পরিবর্তন এখন কেবল বিজ্ঞানীদের বিষয় নয়। আইপিসিসির চতুর্থ প্রতিবেদনের পরই এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে চক্ষু-কর্ণের বিবাদ ভঞ্জন হয়েছে। এর পেছনে মানবজাতির 'অবদান', মানুষ ও প্রকৃতির ওপর এর বহুমাত্রিক বিরূপ প্রভাব,
তা মোকাবেলায় করণীয়_ সবই কমবেশি সবাই জানে। কনফারেন্সে কনফারেন্সে এখন কেবল লড়াইয়ের পালা। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী উন্নত বিশ্ব বিপন্ন ও অনুন্নত দেশগুলোকে 'ক্ষতিপূরণ' দেওয়া নিয়ে, গ্রিনহাউস গ্যাস উদ্গিরণ নিয়ন্ত্রণের দায় নিয়ে, তহবিল গঠন, বণ্টন ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে, কিয়োটো প্রটোকলের ভবিষ্যৎ নিয়ে। গত তিন বছর ধরে_ কোপেনহেগেন, কানকুন হয়ে সেই লড়াই এখন ডারবানে।
অন্যদিকে চলছে অন্য লড়াই। মূলধারার বাইরে থাকা একদল বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের পুরোটাই গালগল্প, উন্নত বিশ্বের ভাঁওতা। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। জাতিসংঘ, আইপিসিসি_ সব যুক্তরাষ্ট্রের হাতের পুতুল। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত মূলধারার মিছিলে তাদের কণ্ঠস্বর স্বভাবতই চাপা পড়ে যায়। কিন্তু তারা বোধহয় নাছোড়বান্দা। এ নিয়ে বইপত্রও লিখে ফেলছেন। এমন একটি বই 'ক্লাইমেট অব করাপশন : পলিটিকস অ্যান্ড পাওয়ার বিহাইন্ড দ্য গ্গ্নোবাল ওয়ার্মিং হোক্স' (দুর্নীতির জলবায়ু :বৈশ্বিক উষ্ণতা শোরগোলের পেছনের রাজনীতি ও রাঘববোয়াল)। লেখক ইউনিভার্সিটি অব হাউসটনের অধ্যাপক ল্যারি বেল।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে যারা তৎপর, তারা এসব সমালোচনায় কান দিতেই রাজি নন। তবে কেউ কেউ আছেন, তারা জবাব দিতে চান। দিতে গিয়েই বইও লিখে ফেলেছেন। এদের একজন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান-ইতিহাসবিদ নাওমি ওরেসকেস। তিনি লিখেছেন 'মার্চেন্টস অব ডাউট' (সন্দেহের সওদাগর)। তিনি বলছেন, স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের সস্তা কৌশল থেকেই এমন প্রশ্ন তোলা।
জলবায়ু পরিবর্তনে অবিশ্বাসকারীরা যদিও তাদের সপক্ষে বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত দিতে পারছেন না, বিভিন্ন গবেষণা সমীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু তুলতে পেরেছেন। তাদের প্রায় সবাই আইপিসিসির চতুর্থ প্রতিবেদনে হিমালয় অঞ্চলের হিমবাহ গলে যাওয়ার সময়সীমা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সেখানে বলা হয়েছিল, ২০৩৫ সাল নাগাদ হিমালয়ের বরফ ব্যাপকমাত্রায় গলবে। পরে অবশ্য আইপিসিসির বিজ্ঞানীরা বলেছেন, শূন্যের অবস্থান ভুলের কারণে '২৩৫০' সাল ২০৩৫ হয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনে অবিশ্বাসকারীদের জন্য সবচেয় বড় প্রমাণ ছিল ২০০৯ সালে কোপেনহেগেন সম্মেলনের আগে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাংলিয়ার ক্লাইমেট রিসার্চ ইউনিট (সিআরইউ) থেকে ফাঁস হওয়া কয়েক হাজার ই-মেইল। হ্যাকারদের একটি দল ওই প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে ঢুকে বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের 'ব্যক্তিগত' যেসব ই-মেইল সরিয়ে ফেলে, সেখানকার নথিপত্রে দেখা যাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা আসলে একটি 'বৈজ্ঞানিক ষড়যন্ত্র'। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত উপাত্ত যে বিকৃত করা হচ্ছে এবং বিরুদ্ধ মত দাবিয়ে রাখা হচ্ছে, ওই ই-মেইলগুলো তার প্রমাণ। সিআরইউ স্বীকার করে, ই-মেইলগুলো তাদের সার্ভার থেকে নেওয়া হলেও উদ্ধৃতিগুলো বিচ্ছিন্নভাবে এবং প্রেক্ষিত ছাড়া ব্যবহার করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এসব ই-মেইলে নিছক ব্যক্তিগত ধারণা বিনিময় করেছেন মাত্র।
ই-মেইল ফাঁসের ওই কাণ্ড পরে যে 'ক্লাইমেটগেট' নামে প্রচার পায়, তার পেছনে রয়েছেন ব্রিটিশ লেখক ও কলামিস্ট জেমস ডেলিনপোল। পরে তিনি এ নিয়ে একটি বইও লেখেন- 'ওয়াটারমেলোনস : দ্য গ্রিন মুভমেন্টস ট্রু কালার' (পরিবেশবাদী আন্দোলনের তরমুজ প্রবণতা)।
বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত যাই হোক, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার বৈশ্বিক আয়োজনে যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের লেনদেন হবে, তাতে ক্লাইমেটগেট ঘটার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইতিমধ্যেই বলেছে যে, তারা বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তহবিল ব্যবস্থাপনার দিকে নজর রাখবে।
skrokon@gmail.com
অন্যদিকে চলছে অন্য লড়াই। মূলধারার বাইরে থাকা একদল বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের পুরোটাই গালগল্প, উন্নত বিশ্বের ভাঁওতা। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। জাতিসংঘ, আইপিসিসি_ সব যুক্তরাষ্ট্রের হাতের পুতুল। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত মূলধারার মিছিলে তাদের কণ্ঠস্বর স্বভাবতই চাপা পড়ে যায়। কিন্তু তারা বোধহয় নাছোড়বান্দা। এ নিয়ে বইপত্রও লিখে ফেলছেন। এমন একটি বই 'ক্লাইমেট অব করাপশন : পলিটিকস অ্যান্ড পাওয়ার বিহাইন্ড দ্য গ্গ্নোবাল ওয়ার্মিং হোক্স' (দুর্নীতির জলবায়ু :বৈশ্বিক উষ্ণতা শোরগোলের পেছনের রাজনীতি ও রাঘববোয়াল)। লেখক ইউনিভার্সিটি অব হাউসটনের অধ্যাপক ল্যারি বেল।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে যারা তৎপর, তারা এসব সমালোচনায় কান দিতেই রাজি নন। তবে কেউ কেউ আছেন, তারা জবাব দিতে চান। দিতে গিয়েই বইও লিখে ফেলেছেন। এদের একজন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান-ইতিহাসবিদ নাওমি ওরেসকেস। তিনি লিখেছেন 'মার্চেন্টস অব ডাউট' (সন্দেহের সওদাগর)। তিনি বলছেন, স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের সস্তা কৌশল থেকেই এমন প্রশ্ন তোলা।
জলবায়ু পরিবর্তনে অবিশ্বাসকারীরা যদিও তাদের সপক্ষে বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত দিতে পারছেন না, বিভিন্ন গবেষণা সমীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু তুলতে পেরেছেন। তাদের প্রায় সবাই আইপিসিসির চতুর্থ প্রতিবেদনে হিমালয় অঞ্চলের হিমবাহ গলে যাওয়ার সময়সীমা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সেখানে বলা হয়েছিল, ২০৩৫ সাল নাগাদ হিমালয়ের বরফ ব্যাপকমাত্রায় গলবে। পরে অবশ্য আইপিসিসির বিজ্ঞানীরা বলেছেন, শূন্যের অবস্থান ভুলের কারণে '২৩৫০' সাল ২০৩৫ হয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনে অবিশ্বাসকারীদের জন্য সবচেয় বড় প্রমাণ ছিল ২০০৯ সালে কোপেনহেগেন সম্মেলনের আগে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাংলিয়ার ক্লাইমেট রিসার্চ ইউনিট (সিআরইউ) থেকে ফাঁস হওয়া কয়েক হাজার ই-মেইল। হ্যাকারদের একটি দল ওই প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে ঢুকে বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের 'ব্যক্তিগত' যেসব ই-মেইল সরিয়ে ফেলে, সেখানকার নথিপত্রে দেখা যাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা আসলে একটি 'বৈজ্ঞানিক ষড়যন্ত্র'। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত উপাত্ত যে বিকৃত করা হচ্ছে এবং বিরুদ্ধ মত দাবিয়ে রাখা হচ্ছে, ওই ই-মেইলগুলো তার প্রমাণ। সিআরইউ স্বীকার করে, ই-মেইলগুলো তাদের সার্ভার থেকে নেওয়া হলেও উদ্ধৃতিগুলো বিচ্ছিন্নভাবে এবং প্রেক্ষিত ছাড়া ব্যবহার করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এসব ই-মেইলে নিছক ব্যক্তিগত ধারণা বিনিময় করেছেন মাত্র।
ই-মেইল ফাঁসের ওই কাণ্ড পরে যে 'ক্লাইমেটগেট' নামে প্রচার পায়, তার পেছনে রয়েছেন ব্রিটিশ লেখক ও কলামিস্ট জেমস ডেলিনপোল। পরে তিনি এ নিয়ে একটি বইও লেখেন- 'ওয়াটারমেলোনস : দ্য গ্রিন মুভমেন্টস ট্রু কালার' (পরিবেশবাদী আন্দোলনের তরমুজ প্রবণতা)।
বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত যাই হোক, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার বৈশ্বিক আয়োজনে যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের লেনদেন হবে, তাতে ক্লাইমেটগেট ঘটার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইতিমধ্যেই বলেছে যে, তারা বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তহবিল ব্যবস্থাপনার দিকে নজর রাখবে।
skrokon@gmail.com
No comments