স্বপ্নভ্রম... by সুভাষ সাহা
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ কি সত্যিই জানতেন না যে, নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর তার বা জেনারেল মইনের পক্ষে বাংলাদেশে থেকে স্বচ্ছন্দ জীবনযাপন কঠিন! তাদের পরিচালিত তত্ত্ব্বাবধায়ক সরকার যেভাবে নির্দিষ্ট রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন সেক্টরের রথী-মহারথীদের জনসমক্ষে অর্থলিপ্সু ও ক্ষমতালিপ্সু হিসেবে চিত্রায়িত করতে চেয়েছে, ক্ষমতার দণ্ড অন্যদের হাতে চলে যাওয়ার পর
নিদারুণ যন্ত্রণা যাদের কুরে কুরে খেয়েছে সেই বিশিষ্টজনরা সুযোগ পেলে ফখরুদ্দীন-মইনদের একহাত নেবে না_ তা কী করে ভাবতে পারেন তারা! উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ফখরুদ্দীন ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টির কাছে দেশে একজন স্বাভাবিক নাগরিকের মতো জীবনযাপন করার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন। তার ইচ্ছা স্বাভাবিক হলেও বাস্তবসম্মত কিনা সে প্রশ্ন সঙ্গত। একটি সেনাসমর্থিত অনির্বাচিত সরকারের দণ্ড যিনি স্বীয় হাতে তুলে নিতে পারেন এবং যার পশ্চিমা শক্তিশালী দোসর রয়েছে বলে সবাই মনে করেন, তার পক্ষে আর যাই হোক বোকা সাজাটা কেমন! তিনি যে দেশটির জন্মসূত্রে নাগরিক সে দেশে কোনো কিছুই যে নিয়মমাফিক চলে না, তা তিনি ভালোই বোঝেন। আইন মান্য করে চলাও এ দেশের এলিট, এমনকি আমজনতারও কম্ম নয়। সবাই এখানে অন্যকে যে কোনো প্রকারে হোক অতিক্রম করে যেতে চায়। একরাতে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন এ দেশেই রিকশার ওপর ঠ্যাং দুলিয়ে সিগারেটে সুখটান দিতে দিতে অনেকেরই দেখতে মানা নেই।
আর আমরা নিয়ম মানি না বলেই নির্বাচিত না হয়েও এ দেশে ক্ষমতার দণ্ড হাতে নিতে পারেন কেউ। তাই রাজা-উজির মারাই শুধু নয়, প্রকৃত রাজা-উজির হয়ে বসার স্বপ্ন এ দেশেই দেখা সম্ভব নির্বাচন না করেও।
এ জন্যই সব সম্ভবের দেশ বলা হয় আমাদের সোনার বাংলাকে। কেউ এই প্রবণতাকে বলেন রসাতলে যাওয়ার সদর দরজা, আবার কেউ শখ করে এটাকে চিহ্নিত করেন জাতীয় বৈশিষ্ট্য হিসেবে। এক বিশিষ্ট ব্যক্তি তো এটাকে জাতির ঊর্ধ্বর্মুখী আকাঙ্ক্ষা হিসেবে চিহ্নিত করে আমাদের নুইয়ে পড়া মাথাটা খাড়া করে দিয়েছেন।
ক্ষমতা ছাড়ার পর সব সম্ভবের এই দেশে ফখরুদ্দীন সাহেব কেন স্বাভাবিক জীবন যাচ্ঞা করেন, তাও আবার ভিনদেশির কাছে_ বুঝনেওয়ালারা ঠিকই ধরতে পারেন এর প্রকৃত উদ্দেশ্য। দেশে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করে প্রকারান্তরে বিদেশে ভালো ও নিরাপদ জীবনই কি প্রার্থনা করেননি এই মান্যবর!
এতদিন পর এসব তথ্য কেন একের পর এক ফাঁস করা হচ্ছে_ সেটাও অনেকের কাছে বিরাট জিজ্ঞাসা চিহ্ন হয়ে রয়েছে। বাংলাদেশে যখন ধীরে ধীরে একটি রাজনৈতিক সংকট ঘনিয়ে আসছে তখন এসব তথ্যের একটা ভিন্ন ধরনের ব্যঞ্জনা আছে বৈকি। এখন তো দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের শাসন চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক চললে রাজনৈতিক দলের শাসন অব্যাহত থাকার কথা। তবে সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটলে কী যে ঘটবে তা নিশ্চিত করে কি কেউ বলতে পারেন!
No comments