মুশফিকই বুঝতে পারছেন না অনেক কিছু by মাসুদ পারভেজ

কটা ব্যাপারে এক এবং অদ্বিতীয় বাংলাদেশ!মুশফিকুর রহিমের কাছে অন্তত তাই মনে হচ্ছে। হতে পারে যে পাকিস্তান সিরিজে এখন পর্যন্ত তাঁর নিজ দলের গতিবিধি নিয়ে বিরক্তি থেকেই বললেন, 'লক্ষ করলে দেখবেন এটা বোধহয় শুধু আমাদের দলের পক্ষেই সম্ভব। আমরা একদিন আড়াই শ করলে আরেক দিন ৮০ বা ৯০ রানে অল আউট হয়ে যাই। অন্যান্য দলও খারাপ করে, তবে দেখা যায় তারা অন্তত ১৫০-৬০ করে।


'কাল পাকিস্তানের পঞ্চম উইকেট পড়ে যাওয়ার পর তাঁর এটাও মনে হয়েছে যে প্রথম ওয়ানডেতে ১৫০ রান করতে পারলেও ম্যাচটা অন্য রকম হতে পারত। তাই বলে ৯১ রানে অল আউট হওয়ার পর কিছুতেই এ ভাবনা আসেনি, 'এত অল্প রান করে জিতলে তো সেটা অষ্টম আশ্চর্যই হতো।' অথচ চলতি বছরই এক শ'র নিচে অল আউট হওয়ার এটা তৃতীয় ঘটনা এবং সেটা নিজেদের মাটিতেই। বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আছে ৫৮ ও ৭৮ রানে শেষ হওয়ার লজ্জাজনক ঘটনা। তখন সাবেক ক্রিকেটারদের সমালোচনার জবাবে ফলা হয়ে উঠেছিল তখনকার অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের মুখও। হারানো দিন আর নতুন দিনের একটা তুলনা উঠে এসেছিল তাঁর কথায়। আরেকবার এক শ'র নিচে অল আউট হওয়ার ঘটনায় কালকের সংবাদ সম্মেলনে সে প্রসঙ্গও উঠে এল।
শুনে মুশফিক যে জবাব দিলেন তাতে একজন বানরের তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে ওঠার গল্পের যোগসূত্রও খুঁজে পেলেন। বাংলাদেশ অধিনায়কের মুখ থেকেই শুনুন, 'আমরা যে খুব বড় কোনো উন্নতি করে ফেলতে পারিনি, এ পারফরম্যান্স তারই প্রমাণ। সেটা ওয়ানডে হোক কিংবা টেস্ট ক্রিকেটে। আমরা হয়তো এক পা এগোচ্ছি তো আবার পাঁচ পা পিছিয়ে যাচ্ছি।' এগোনোর কারণও দেখেন না যদি এভাবেই চলতে থাকে, 'আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আপনি যদি ধারাবাহিকভাবে পারফরম না করেন তাহলে জেতা তো দূরের কথা, প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়ে তুলতে পারবেন না। যেটা আমরা করতে পারছি না। ব্যাটসম্যানরা মাঝখানে গিয়ে নিজেদের প্রয়োগ করতে পারছে না।'
ব্যাটসম্যানদের নিজেদের মেলে ধরতে না পারার পেছনে বিচিত্র কিছু কারণও দেখছেন অধিনায়ক। এর মধ্যে একটা এমন যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন দলের ভিন্ন ভিন্ন বোলারদের সামলাতে গিয়েই হিমশিম খাচ্ছেন ব্যাটসম্যানরা! 'গত দুই-তিনটা সিরিজে টপ অর্ডার ধারাবাহিকভাবে পারফরম করছে না। কারণ হতে পারে যে একেকটা দলের একেক রকম বোলার থাকে এবং তাদের বিপক্ষে খাপ খাইয়ে খেলার ব্যাপারটাতে বোধহয় আমাদের ব্যাটসম্যানরা এখনো মানিয়ে নিতে পারছে না।' কিছুদিন আগে ক্যারিবীয় বোলারদের খেলার পর এখন পাকিস্তানিরা দুর্বোধ্য হয়ে উঠছেন তাই।
সেই সঙ্গে ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাসের অভাবকেও ব্যর্থতার অন্যতম অনুঘটক বলে মানছেন মুশফিক, 'টপ অর্ডার রানে না থাকলে আত্মবিশ্বাস এমনিতেই কম থাকে। সেদিক থেকে আমার মনে হয় সবাই একটু চাপে আছে। সবাই ফ্রি হয়ে খেলতে পারছে না। তার ওপর দ্রুত দুই-তিনটা উইকেট পড়ে গেলে চাপ আরো বেড়ে যায়। বিশেষ করে টপ অর্ডারের আরো দায়িত্ব নিয়ে খেলা দরকার।' অবস্থাদৃষ্টে টপ অর্ডারই এখন বাংলাদেশের 'প্রবলেম নাম্বার ওয়ান' হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে হচ্ছে, 'যেকোনো দলের সবচেয়ে ধারাবাহিক পারফরমার আর মূল খেলোয়াড়ই ওপেনিং আর ওয়ান ডাউনে খেলে। আমাদের ওই জায়গাগুলোতে অনেক দিন থেকেই কেউ ধারাবাহিকভাবে পারফরম করতে পারছে না। এটা অবশ্যই অনেক বড় সমস্যা।' সেই সঙ্গে বুকে বলের অভাবও বোধহয় ধরতে পারছেন মুশফিক। না হলে কেন বলবেন, 'আমরা ব্যাটসম্যানরা যদি আরেকটু সাহস নিয়ে ও নিবেদিত হয়ে খেলি, তাহলে আশা করি পারফরম্যান্স অনেক ভালো হবে।' ম্যাচসেরা হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা শহীদ আফ্রিদিও তো এ ধরনের উইকেটে ব্যাট হাতে সফল হওয়ার একটা শর্তই দেখেছেন। আর সেটা 'হিম্মত' নিয়ে খেলা!
তবে উইকেট নিয়ে দুটো কথা আছে মুশফিকেরও। কাল যেমন এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, 'প্রশ্ন তো আমারও যে উইকেটে কোনো সমস্যা আছে কি না। যদি সমস্যা জানতাম তাহলে সমাধানটা বের করে আমরা ওইভাবে ব্যাটিং করতাম। আসলে বোঝা যাচ্ছে না।' সেই সঙ্গে তাঁকে এও বলতে শোনা গেছে, 'সত্যি কথা বলতে কি, হোম অ্যাডভান্টেজ কাকে বলে গত দুটো সিরিজে আমি নিজেই বুঝিনি। হোমে খেলবেন মানে হচ্ছে আপনি নিজের পরিচিত মাঠ ও উইকেটে খেলবেন। আপনি ব্যাটিং করতে গেলে জানবেন যে এখানে এত রান হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যাবে। আপনি যদি উইকেটে গিয়ে না-ই জানেন যে ১৫০ করলে হবে কি না, নাকি ২৪০ করতে হবে, তাহলে তো অ্যাপ্রোচটা ঠিক হবে না।'
নিজের মাঠে খেলে এখনো হোম অ্যাডভান্টেজ ব্যাপারটা বুঝে উঠতে না পারার ক্ষেত্রেও কি বাংলাদেশ এক ও অদ্বিতীয় নয়!

No comments

Powered by Blogger.