প্রচ্ছদ রচনা-রশীদ করীমের সঙ্গে শেষ দেখা শেষ কথা by হামিদ কায়সার
শেষবার আমার সঙ্গে ছিলেন কাজল রশীদ। লেখক একজন সংবাদকর্মী। অনেক দিন থেকেই ইচ্ছা ছিল রশীদ করীমের সঙ্গে দেখা করবেন, কথা বলবেন। এমনিতে তো কত তরুণকেই সঙ্গে করে নিয়ে গেছি অথবা বাসায় যাওয়ার পথ জানিয়েছি। কেউ ছুটে গেছেন সাক্ষাৎকার নিতে, কেউ স্রেফ নিজের শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে। তরুণদের খুব আগ্রহ ছিল, বিশেষ করে সাহিত্য সাময়িকীর দায়িত্বে যাঁরা আছেন, কী এক বিশেষ কারণে, মাঝেমধ্যেই রশীদ করীমকে নিয়ে কিছু
একটা করার তাগিদ বোধ করতেন। এটা আমি সব সময়ই দেখেছি, রশীদ করীমের সঙ্গে যখন আমার পরিচয় হলো ১৯৯৯ সালে, ধীরে ধীরে অন্তরঙ্গতা বাড়ল। অনেকেই তাঁকে নিয়ে কিছু লিখতে, তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে আমাকে স্মরণ করেছেন।
আমার সঙ্গে রশীদ করীমের পরিচয়টা হয়েছিল কলকাতার সংবাদ সাময়িকীর তৎকালীন সম্পাদক আবুল হাসনাতের সূত্রে। হাসনাত ভাই কলকাতার অরুণ সেনের পাঠানো একটি চিঠি এবং তাঁর সম্পাদিত বাংলাদেশের উপন্যাসের একটি কপি রশীদ করীমের হাতে পেঁৗছে দেওয়ার দায়িত্ব দিলেন আমাকে। বেশ আগ্রহের সঙ্গে নিয়েছিলাম দায়িত্বটি। কারণ খুব শৈশবেই নানাবাড়ির লাইব্রেরিতে রশীদ করীমের 'উত্তম পুরুষ' বইটি আবিষ্কারের সুযোগ হয়েছিল আমার। মীর মশাররফ হোসেনের 'বিষাদ সিন্ধু' এবং মোহাম্মদ নজিবর রহমানের 'আনোয়ারা', 'মনোয়ারা' বইগুলোর সঙ্গে ওটা পেয়ে মনে হয়েছিল, তিনি সে যুগেরই একজন মানুষ কি না। গোগ্রাসে 'উত্তম পুরুষ' পড়ে সেই কাঁচা বয়সেই অবশ্য বুঝতে পেরেছিলাম, কোথায় যেন নজিবর রহমানদের চেয়ে তিনি ব্যতিক্রম। বিশেষ করে চরিত্রের মানুষগুলোকে দেখার যে আধুনিক ভঙ্গি, সেটা আমাকে ভারি আকর্ষণ করেছিল।
তখন খুব কষ্ট হয়েছিল নায়কটার জন্য, বুকটা ভারি চিনচিন করে উঠেছিল ব্যথায়। বেচারা শাকের কেবল একের পর এক নারীর কাছে বিড়ম্বিতই হয়ে গেলেন_প্রথমে অভিজাত ও ধনীর দুলালী সেলিনা, পরে শেখরের বোন চন্দ্রা এবং সব শেষে ভাবি...কারো কাছ থেকে আর নিখাদ ভালোবাসা পাওয়া হলো না শাকেরের, উল্টো খেতে হলো দাগা...তাই বলে ভাবার কারণ নেই যে 'উত্তম পুরুষ' প্রেমের উপন্যাস। এটি ১৯৪৭-পূর্ব কলকাতাকেন্দ্রিক মুসলিম ও হিন্দু পরিবারের এক বিশ্বস্ত জীবনচিত্র। দেশবিভাগের ওপর বলা যায় একটি উল্লেখযোগ্য কর্মও।
ব্যক্তির আন্তঃসম্পর্কের ভেতর দিয়ে দেশ ও সময়ের বদলে যাওয়া গতিধারা ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়েছে উপন্যাসে। পরবর্তীকালে এ বৈশিষ্ট্যই আরো ব্যাপক ঔজ্জ্বল্যে স্ফীতি লাভ করেছে তাঁর উপন্যাসগুলোতে; যেমন_'আমার যত গ্লানি'র এরফান চৌধুরী চরিত্রটির অন্তর্জগৎ খুঁড়ে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে উচ্চবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত শ্রেণীর ভূমিকার স্বরূপটি ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন নিপুণভাবে। এখানে মুক্তিযুদ্ধই প্রথম কথা নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্যক্তি। একটি যুদ্ধ একজন ব্যক্তিকে কতটা প্রভাবিত করল, সামগ্রিক জীবনধারার প্রতি কী নিয়ামক ভূমিকা রাখল, তিনি তার গভীরে পেঁৗছানোর চেষ্টা করেছেন।
তারপর যেমন 'প্রেম একটি লাল গোলাপ'-এর উমর, সুফি, রানুর কথাই ধরি। ওরা কি কেবল উপন্যাসের একেকটি চরিত্র? না, ওরা ব্যাপক অর্থে একটি সময়ের প্রতিনিধি। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে যে নতুন একটি এলিট শ্রেণীর অভ্যুদয় হলো, যাকে বলা হয় করপোরেট সমাজ, সেই সমাজের মানুষগুলোরই প্রতিনিধি উমর, সুফি, রানু_যাদের ভেতর দিয়ে ব্যক্তির ঈর্ষা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, যৌন তাড়না, নৈঃসঙ্গ্যবোধ ও দ্বন্দ্বক্ষুব্ধ মনকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে পেরেছেন। সে অর্থে রশীদ করীমের প্রতিটি উপন্যাসই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সমকালীনতা বা সমকালীন জীবনবোধকে প্রধান করে নয়; বরং সে সময়ের ব্যক্তিটিকে প্রধান করে, যে ব্যক্তি অতীতেও ছিলেন, বর্তমানে তো আছেনই, সুদূর ভবিষ্যতেও থাকবেন, তাঁকে উপজীব্য করেই সময়কে ধরেছেন। সংগতভাবেই তাঁর উপন্যাস চিরকালীন সম্পদ হয়ে উঠেছে।
যাকগে সেসব কথা। রশীদ করীমের উপন্যাসের শিল্পরূপ বা বৈশিষ্ট্য বিজ্ঞ সমালোচকরাই ভালো বিশ্লেষণ করতে পারবেন, আমি বরং যা বলছিলাম তাতেই ফিরে আসি। অরুণ সেনের চিঠি আর তাঁর পাঠানো বইটা পেঁৗছে দিতে ঠিক ঠিকই হাজির হলাম রশীদ করীমের বাসায়। কে বলবে এই দীর্ঘ, সুপুরুষ মানুষটি অসুস্থ? পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে ঘরবন্দি আছেন! প্রথম সাক্ষাতেই বেশ আপন করে নিলেন আমাকে। সেদিন চলে আসার সময় খুব ভয়ে ভয়েই তাঁর হাতে ধরিয়ে দিলাম আমার সদ্য প্রকাশিত প্রথম গল্পের বই 'কলকব্জার মানুষ'-এর একটি কপি। আমার নতুন পরিচয় পেয়ে তিনি আরেকটু আগ্রহী হয়ে উঠলেন বলে মনে হলো। তার পরই ঘটল সেই অবিশ্বাস্য ঘটনা, যেটি আমার জীবনে এখনো সেরা উপহার। কোন ঘোরের মধ্যেই তিনি সেই অসুস্থ অবস্থায় লিখে ফেললেন আমার ওপর তাঁর জীবনের শেষ লেখা, 'এক নতুন লেখকের কথা', যেটি তখন দৈনিক সংবাদের সাহিত্য সাময়িকীতেই প্রকাশিত হয়েছিল, পরে স্থান পেয়েছে তাঁর প্রবন্ধ সংগ্রহে।
অনেকেই ভাবতে পারেন, শেষ দেখার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে প্রথম দেখার কথা কেন? অবিচ্ছেদ্য যে! সেই থেকেই শুরু এক তরুণ লেখকের সঙ্গে এক প্রবীণ লেখকের সম্পর্কের নতুন যাত্রা। তারপর কতবার যে যাওয়া হয়েছে, বলা হয়েছে কত কথা! শিল্প-সাহিত্য, সাহিত্যজগতের মানুষ, ক্রিকেট খেলা, রবীন্দ্রসংগীত, প্রেম করে কি না, বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া হয় কি না...সেসব কথার ডালি সাজিয়ে বিভিন্ন সময় সাক্ষাৎকারও লেখা হয়েছে। কিন্তু শেষ দিকে বলতে চাইতেন না তত কথা। ক্লান্ত হয়ে পড়তেন। তো, শেষ দিন তাঁর মধ্যে এই ক্লান্তিভাবটা কমই দেখলাম।
স্বভাবসুলভ মৃদু হাসি দিয়ে আমাকে এবং কাজল রশীদকে স্বাগত জানালেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জেনে নিলেন কাজল রশীদের পরিচয়। কোথায় কাজ করে, কী করে, লেখে কি না ইত্যাদি। তারপর যখন কথাবার্তার প্রাথমিক ধাক্কাটা কেটে গেল, স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে উঠলেন খুব, ভারি প্রাণবন্ত মনে হলো তাঁকে এবং আমাদের দুজনকে অবাক করে দিয়ে তিনি হঠাৎ গান গাইতে লাগলেন। খুব গলা খুলে সে গান বারবারই গাইছিলেন হাততালি বাজিয়ে বাজিয়ে। তা গলার সুর যেমনই হোক, ভারি মজা করে গাইছিলেন, 'তুমি আছো রাঁচি, আমি করাচি/তবু যেন মনে হয় কত কাছাকাছি...গাইছিলেন আর জানাচ্ছিলেন, 'বুঝলে হে, সিনেমার গান। খুব সিনেমা দেখতাম তো।'
'কোন সিনেমার গান এটা?'
অনেক চেষ্টা করেও নাম মনে করতে পারলেন না।
'হিরোইন। এটা তো রশীদ ভাই আপনার মনে থাকার কথা?'
হাসলেন। খুব রোমান্টিক সেই হাসি। তারপর আবারও গাইতে শুরু করলেন, 'তুমি আছো রাঁচি, আমি করাচি/তবু যেন মনে হয় কত কাছাকাছি।'
'বললেন না তো হিরোইনের নামটা?'
রসিকতার সুরে এবার উত্তর দিলেন, 'হিরোইন কি একজন ছিল? কজনের নাম বলব_হবে কোনো মধুবালা, গীতাবালা...' তারপর অসহায় আত্মসমর্পণের ভঙ্গি, 'মনে করতে পারছি না। বাদ দাও।' উল্টো জানতে চাইলেন, 'তুমি সিনেমা দেখো?'
'দেখি। খুব দেখি।'
'দেখবে। ভালো সিনেমা অবশ্যই দেখবে।'
তারপর কাজলের দিকে তাকিয়ে জেরার ভঙ্গিতে জানতে চাইলেন, 'তুমি আমার লেখা পড়েছ?'
কাজল বলল, 'পড়েছি।'
'কোনটা?'
'উত্তম পুরুষ', 'আমার যত গ্লানি।' আরো কী কী বলল কাজল, এত দিন পর আর কিছু মনে পড়ছে না। কাজল রশীদও ছোট ছোট করে অনেক কথাই জেনে নিলেন রশীদ করীমের, তাঁর ফেলে আসা শৈশব, কলকাতার জীবন, প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা। এই প্রেসিডেন্সি কলেজের কথা উঠতেই তিনি হঠাৎ একটু উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। এবার আমাকে জেরার পালা, 'অ্যাই, তুমি যেন কাকে নিয়ে এসেছিলে আমার কাছে, প্রেসিডেন্সিতে পড়ত? ডাক্তার...?' আমি উত্তর দিলাম, 'ডা. সৈয়দ আনওয়ারুল হাফিজ।'
তিনি অভিমানভরা কণ্ঠে জানতে চাইলেন, 'সে আর আসে না কেন?'
কী উত্তর দেব।
রশীদ করীম বারবার বলতে লাগলেন, 'তাকে আসতে বোলো। আসতে বোলো তাকে। কি, বলবে তো?'
বললাম, 'বলব।'
'কবে আসতে বলবে?' একেবারে পাকা কথা নিতে চান আমার কাছ থেকে। 'সে তো একটা বইও লিখেছে। কী নাম বলো তো? তিন বিঘা জমি। দুই বিঘা নয়? আচ্ছা, বইও দিতে বোলো। আমি পড়ব। পড়ে দেখব।'
তারপর যেন নিজের ভেতর আবার আনমনা হয়ে যাওয়া। সেই গভীর-ভেতর থেকেই হাততালি বাজিয়ে বাজিয়ে আবার গেয়ে উঠলেন, 'তোমার সঙ্গে আমার এই জনমের মতো আড়ি। আমি কথা বলব নাকো তুমি বলবে কথা ভারি।'
তাঁর এবারের গান শুনে চমকে উঠতে হলো। মনে হলো, যা যা গান আজ তিনি গাইলেন, নিছক অকারণে গাইছেন না। নিশ্চয়ই একটা কারণ আছে, ভিন্ন কোনো তাৎপর্য আছে। তিনি সম্ভবত মনের কথা পাড়বেন। আমার কাছে আগেও মনে হয়েছে, বিছানায় টানা ১৭ বছর শুয়ে থাকতে থাকতে তিনি এক বিশুদ্ধ অন্তর্লোকের সন্ধান পেয়েছিলেন। বোধ হয় ঈশ্বর তাঁকে একেবারে নির্মল, শিশুর মতো নিষ্পাপ করে নিয়ে গেছেন। এ কথা বলার অর্থ হলো, তাঁর গানের ইঙ্গিতগুলো আমি বেশ টের পাচ্ছিলাম। সেদিন কাজলকে কিছু বলিনি, আজও বলতে চাই না। থাক না একটু রহস্যময়তা। রশীদ করীম বলতেন খুব কথাটা, 'সব সময় কিছু আড়াল রাখবে। সব বলে দেবে না। একটু রহস্য রাখা ভালো।'
হ্যাঁ, এই রহস্যময়তা তাঁর লেখারও একটি প্রধান অনুষঙ্গ। ছোটগল্প লিখেছেন খুব কম, কিন্তু সেখানেও তিনি স্বতন্ত্র ও উজ্জ্বল। সেখানে তাঁর এই রহস্যময়তার দিকটা বেশ চোখে পড়ে। উপন্যাসেও আছে এই প্রবণতা। একটু হেঁয়ালি, কিছুটা ইঙ্গিতময়তার ভেতর দিয়ে এগোয় তাঁর লেখা। পাঠককে অনিবার্যভাবে সে খেলায় জড়িয়ে পড়তে হয়। লেখকের সঙ্গে পাঠক এগোয় বটে, সব সময় যে সে রহস্যের উন্মোচন সে করতে পারে, এমন কথা বলা যাবে না। আর সেটাই রশীদ করীমের অন্যতম এক শিল্পবৈশিষ্ট্য। তিনি চিন্তার খোরাক উসকে দেন। পাঠক নিজের মতো ভেবে নিক না ব্যাপারটা। এটা তাঁর প্রথম উপন্যাস 'উত্তম পুরুষ' থেকে শুরু করে শেষ উপন্যাস 'লাঞ্চ বঙ্'-এ সমানভাবে লক্ষ করা যাবে। এমনিতে তিনি উপন্যাস লিখেছেন মোটে ১২টি। 'উত্তম পুরুষ', 'প্রসন্ন পাষাণ', 'আমার যত গ্লানি', 'প্রেম একটি লাল গোলাপ', 'সাধারণ লোকের কাহিনী', 'একালের রূপকথা', 'শ্যামা', 'বড়ই নিঃসঙ্গ', 'মায়ের কাছে যাচ্ছি', 'চিনি না' ও 'পদতলে রক্ত'।
'উত্তম পুরুষ'-এর কথাই ধরা যাক। বিত্তবান পরিবারের মেয়ে সেলিনা আমাদের উত্তম পুরুষ নায়ক শাকেরের সঙ্গে যে কাণ্ডকীর্তি করল, তার কি এককথায় সরল কোনো ব্যাখ্যা করা যাবে? সেলিনা কি আদৌ ওর প্রেমে পড়েছিল? সেটা যেমন একবাক্যে হ্যাঁ-না বলা যাবে না, তেমনি সেলিনা নায়ককে রাতের অন্ধকারে ঘরে ডেকে এনে কেন নিজের পরিবারের কাছে লম্পট সাজাল, সেটা প্রেমের না অপ্রেমের, তা নিয়েও শেষ পর্যন্ত একটা ধন্দে থাকতে হয়। তাই বলে রশীদ করীমের উপন্যাসকে কোনো অর্থেই দুর্বোধ্য বলা চলবে না। তাঁর গদ্য যেমন নির্মেদ, তেমনি রসযুক্ত। ভঙ্গিটা খুব সহজ-সরল। আমি দেখছি, আবারও তাঁর উপন্যাসের শিল্পবৈশিষ্ট্য খুঁজতে বসে গেছি।
তো, আমাদের এই আড্ডার পর্যায়েই চা-নাশতা এসে গেল। কোনো দিন তাঁর বাসা থেকে না খেয়ে আসা হয়নি। আর সে পরিবেশনাটার মধ্যেও পাওয়া যাবে আভিজাত্যের একটা ব্যাপার। আর আমার বেলায় অনিবার্যভাবেই উপস্থিত থাকবে ডালপুরি। সেদিনও ছিল। ট্রেতে খাবারগুলো যখন আমাদের গল্প বলার সুযোগে শেষযাত্রার আগের ওমটুকু নিচ্ছিল, তখনই তিনি তাড়া দিয়ে উঠলেন, 'এই, তোমরা খাচ্ছ না কেন? খাও।' আমার দিকে তাকিয়ে আরো একটু বাড়তি তাগিদ, 'খাও। তোমার ডালপুরি।'
'আপনি খাবেন না?' জানি তো পুরিটা কার বেশি প্রিয়।
'উহু!' আমার খাওয়া নিষেধ।' খুব দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন তিনি। এখন মনে পড়ছে না, এই দৃঢ়তাটুকু তিনি সেদিন সুরক্ষা করতে পেরেছিলেন কি না! খেতে খেতেই এলোমেলো কিছু কথা, খাপছাড়া গোছের, তারপর হঠাৎ করেই বললেন, 'বুঝলে, খুব ক্লান্ত লাগছে।' আমরা দুজনই ব্যস্ত ভঙ্গিতে উঠলাম। তিনি যেন উঠে আসতে চাইলেন আমাদের সঙ্গে। তারপর আবার হেলান দিয়ে বসে হাতটা উঁচিয়ে শুভাশিস জানালেন, 'আচ্ছা। ভালো থেকো।'
আমার সঙ্গে রশীদ করীমের পরিচয়টা হয়েছিল কলকাতার সংবাদ সাময়িকীর তৎকালীন সম্পাদক আবুল হাসনাতের সূত্রে। হাসনাত ভাই কলকাতার অরুণ সেনের পাঠানো একটি চিঠি এবং তাঁর সম্পাদিত বাংলাদেশের উপন্যাসের একটি কপি রশীদ করীমের হাতে পেঁৗছে দেওয়ার দায়িত্ব দিলেন আমাকে। বেশ আগ্রহের সঙ্গে নিয়েছিলাম দায়িত্বটি। কারণ খুব শৈশবেই নানাবাড়ির লাইব্রেরিতে রশীদ করীমের 'উত্তম পুরুষ' বইটি আবিষ্কারের সুযোগ হয়েছিল আমার। মীর মশাররফ হোসেনের 'বিষাদ সিন্ধু' এবং মোহাম্মদ নজিবর রহমানের 'আনোয়ারা', 'মনোয়ারা' বইগুলোর সঙ্গে ওটা পেয়ে মনে হয়েছিল, তিনি সে যুগেরই একজন মানুষ কি না। গোগ্রাসে 'উত্তম পুরুষ' পড়ে সেই কাঁচা বয়সেই অবশ্য বুঝতে পেরেছিলাম, কোথায় যেন নজিবর রহমানদের চেয়ে তিনি ব্যতিক্রম। বিশেষ করে চরিত্রের মানুষগুলোকে দেখার যে আধুনিক ভঙ্গি, সেটা আমাকে ভারি আকর্ষণ করেছিল।
তখন খুব কষ্ট হয়েছিল নায়কটার জন্য, বুকটা ভারি চিনচিন করে উঠেছিল ব্যথায়। বেচারা শাকের কেবল একের পর এক নারীর কাছে বিড়ম্বিতই হয়ে গেলেন_প্রথমে অভিজাত ও ধনীর দুলালী সেলিনা, পরে শেখরের বোন চন্দ্রা এবং সব শেষে ভাবি...কারো কাছ থেকে আর নিখাদ ভালোবাসা পাওয়া হলো না শাকেরের, উল্টো খেতে হলো দাগা...তাই বলে ভাবার কারণ নেই যে 'উত্তম পুরুষ' প্রেমের উপন্যাস। এটি ১৯৪৭-পূর্ব কলকাতাকেন্দ্রিক মুসলিম ও হিন্দু পরিবারের এক বিশ্বস্ত জীবনচিত্র। দেশবিভাগের ওপর বলা যায় একটি উল্লেখযোগ্য কর্মও।
ব্যক্তির আন্তঃসম্পর্কের ভেতর দিয়ে দেশ ও সময়ের বদলে যাওয়া গতিধারা ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়েছে উপন্যাসে। পরবর্তীকালে এ বৈশিষ্ট্যই আরো ব্যাপক ঔজ্জ্বল্যে স্ফীতি লাভ করেছে তাঁর উপন্যাসগুলোতে; যেমন_'আমার যত গ্লানি'র এরফান চৌধুরী চরিত্রটির অন্তর্জগৎ খুঁড়ে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে উচ্চবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত শ্রেণীর ভূমিকার স্বরূপটি ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন নিপুণভাবে। এখানে মুক্তিযুদ্ধই প্রথম কথা নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্যক্তি। একটি যুদ্ধ একজন ব্যক্তিকে কতটা প্রভাবিত করল, সামগ্রিক জীবনধারার প্রতি কী নিয়ামক ভূমিকা রাখল, তিনি তার গভীরে পেঁৗছানোর চেষ্টা করেছেন।
তারপর যেমন 'প্রেম একটি লাল গোলাপ'-এর উমর, সুফি, রানুর কথাই ধরি। ওরা কি কেবল উপন্যাসের একেকটি চরিত্র? না, ওরা ব্যাপক অর্থে একটি সময়ের প্রতিনিধি। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে যে নতুন একটি এলিট শ্রেণীর অভ্যুদয় হলো, যাকে বলা হয় করপোরেট সমাজ, সেই সমাজের মানুষগুলোরই প্রতিনিধি উমর, সুফি, রানু_যাদের ভেতর দিয়ে ব্যক্তির ঈর্ষা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, যৌন তাড়না, নৈঃসঙ্গ্যবোধ ও দ্বন্দ্বক্ষুব্ধ মনকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে পেরেছেন। সে অর্থে রশীদ করীমের প্রতিটি উপন্যাসই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সমকালীনতা বা সমকালীন জীবনবোধকে প্রধান করে নয়; বরং সে সময়ের ব্যক্তিটিকে প্রধান করে, যে ব্যক্তি অতীতেও ছিলেন, বর্তমানে তো আছেনই, সুদূর ভবিষ্যতেও থাকবেন, তাঁকে উপজীব্য করেই সময়কে ধরেছেন। সংগতভাবেই তাঁর উপন্যাস চিরকালীন সম্পদ হয়ে উঠেছে।
যাকগে সেসব কথা। রশীদ করীমের উপন্যাসের শিল্পরূপ বা বৈশিষ্ট্য বিজ্ঞ সমালোচকরাই ভালো বিশ্লেষণ করতে পারবেন, আমি বরং যা বলছিলাম তাতেই ফিরে আসি। অরুণ সেনের চিঠি আর তাঁর পাঠানো বইটা পেঁৗছে দিতে ঠিক ঠিকই হাজির হলাম রশীদ করীমের বাসায়। কে বলবে এই দীর্ঘ, সুপুরুষ মানুষটি অসুস্থ? পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে ঘরবন্দি আছেন! প্রথম সাক্ষাতেই বেশ আপন করে নিলেন আমাকে। সেদিন চলে আসার সময় খুব ভয়ে ভয়েই তাঁর হাতে ধরিয়ে দিলাম আমার সদ্য প্রকাশিত প্রথম গল্পের বই 'কলকব্জার মানুষ'-এর একটি কপি। আমার নতুন পরিচয় পেয়ে তিনি আরেকটু আগ্রহী হয়ে উঠলেন বলে মনে হলো। তার পরই ঘটল সেই অবিশ্বাস্য ঘটনা, যেটি আমার জীবনে এখনো সেরা উপহার। কোন ঘোরের মধ্যেই তিনি সেই অসুস্থ অবস্থায় লিখে ফেললেন আমার ওপর তাঁর জীবনের শেষ লেখা, 'এক নতুন লেখকের কথা', যেটি তখন দৈনিক সংবাদের সাহিত্য সাময়িকীতেই প্রকাশিত হয়েছিল, পরে স্থান পেয়েছে তাঁর প্রবন্ধ সংগ্রহে।
অনেকেই ভাবতে পারেন, শেষ দেখার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে প্রথম দেখার কথা কেন? অবিচ্ছেদ্য যে! সেই থেকেই শুরু এক তরুণ লেখকের সঙ্গে এক প্রবীণ লেখকের সম্পর্কের নতুন যাত্রা। তারপর কতবার যে যাওয়া হয়েছে, বলা হয়েছে কত কথা! শিল্প-সাহিত্য, সাহিত্যজগতের মানুষ, ক্রিকেট খেলা, রবীন্দ্রসংগীত, প্রেম করে কি না, বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া হয় কি না...সেসব কথার ডালি সাজিয়ে বিভিন্ন সময় সাক্ষাৎকারও লেখা হয়েছে। কিন্তু শেষ দিকে বলতে চাইতেন না তত কথা। ক্লান্ত হয়ে পড়তেন। তো, শেষ দিন তাঁর মধ্যে এই ক্লান্তিভাবটা কমই দেখলাম।
স্বভাবসুলভ মৃদু হাসি দিয়ে আমাকে এবং কাজল রশীদকে স্বাগত জানালেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জেনে নিলেন কাজল রশীদের পরিচয়। কোথায় কাজ করে, কী করে, লেখে কি না ইত্যাদি। তারপর যখন কথাবার্তার প্রাথমিক ধাক্কাটা কেটে গেল, স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে উঠলেন খুব, ভারি প্রাণবন্ত মনে হলো তাঁকে এবং আমাদের দুজনকে অবাক করে দিয়ে তিনি হঠাৎ গান গাইতে লাগলেন। খুব গলা খুলে সে গান বারবারই গাইছিলেন হাততালি বাজিয়ে বাজিয়ে। তা গলার সুর যেমনই হোক, ভারি মজা করে গাইছিলেন, 'তুমি আছো রাঁচি, আমি করাচি/তবু যেন মনে হয় কত কাছাকাছি...গাইছিলেন আর জানাচ্ছিলেন, 'বুঝলে হে, সিনেমার গান। খুব সিনেমা দেখতাম তো।'
'কোন সিনেমার গান এটা?'
অনেক চেষ্টা করেও নাম মনে করতে পারলেন না।
'হিরোইন। এটা তো রশীদ ভাই আপনার মনে থাকার কথা?'
হাসলেন। খুব রোমান্টিক সেই হাসি। তারপর আবারও গাইতে শুরু করলেন, 'তুমি আছো রাঁচি, আমি করাচি/তবু যেন মনে হয় কত কাছাকাছি।'
'বললেন না তো হিরোইনের নামটা?'
রসিকতার সুরে এবার উত্তর দিলেন, 'হিরোইন কি একজন ছিল? কজনের নাম বলব_হবে কোনো মধুবালা, গীতাবালা...' তারপর অসহায় আত্মসমর্পণের ভঙ্গি, 'মনে করতে পারছি না। বাদ দাও।' উল্টো জানতে চাইলেন, 'তুমি সিনেমা দেখো?'
'দেখি। খুব দেখি।'
'দেখবে। ভালো সিনেমা অবশ্যই দেখবে।'
তারপর কাজলের দিকে তাকিয়ে জেরার ভঙ্গিতে জানতে চাইলেন, 'তুমি আমার লেখা পড়েছ?'
কাজল বলল, 'পড়েছি।'
'কোনটা?'
'উত্তম পুরুষ', 'আমার যত গ্লানি।' আরো কী কী বলল কাজল, এত দিন পর আর কিছু মনে পড়ছে না। কাজল রশীদও ছোট ছোট করে অনেক কথাই জেনে নিলেন রশীদ করীমের, তাঁর ফেলে আসা শৈশব, কলকাতার জীবন, প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা। এই প্রেসিডেন্সি কলেজের কথা উঠতেই তিনি হঠাৎ একটু উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। এবার আমাকে জেরার পালা, 'অ্যাই, তুমি যেন কাকে নিয়ে এসেছিলে আমার কাছে, প্রেসিডেন্সিতে পড়ত? ডাক্তার...?' আমি উত্তর দিলাম, 'ডা. সৈয়দ আনওয়ারুল হাফিজ।'
তিনি অভিমানভরা কণ্ঠে জানতে চাইলেন, 'সে আর আসে না কেন?'
কী উত্তর দেব।
রশীদ করীম বারবার বলতে লাগলেন, 'তাকে আসতে বোলো। আসতে বোলো তাকে। কি, বলবে তো?'
বললাম, 'বলব।'
'কবে আসতে বলবে?' একেবারে পাকা কথা নিতে চান আমার কাছ থেকে। 'সে তো একটা বইও লিখেছে। কী নাম বলো তো? তিন বিঘা জমি। দুই বিঘা নয়? আচ্ছা, বইও দিতে বোলো। আমি পড়ব। পড়ে দেখব।'
তারপর যেন নিজের ভেতর আবার আনমনা হয়ে যাওয়া। সেই গভীর-ভেতর থেকেই হাততালি বাজিয়ে বাজিয়ে আবার গেয়ে উঠলেন, 'তোমার সঙ্গে আমার এই জনমের মতো আড়ি। আমি কথা বলব নাকো তুমি বলবে কথা ভারি।'
তাঁর এবারের গান শুনে চমকে উঠতে হলো। মনে হলো, যা যা গান আজ তিনি গাইলেন, নিছক অকারণে গাইছেন না। নিশ্চয়ই একটা কারণ আছে, ভিন্ন কোনো তাৎপর্য আছে। তিনি সম্ভবত মনের কথা পাড়বেন। আমার কাছে আগেও মনে হয়েছে, বিছানায় টানা ১৭ বছর শুয়ে থাকতে থাকতে তিনি এক বিশুদ্ধ অন্তর্লোকের সন্ধান পেয়েছিলেন। বোধ হয় ঈশ্বর তাঁকে একেবারে নির্মল, শিশুর মতো নিষ্পাপ করে নিয়ে গেছেন। এ কথা বলার অর্থ হলো, তাঁর গানের ইঙ্গিতগুলো আমি বেশ টের পাচ্ছিলাম। সেদিন কাজলকে কিছু বলিনি, আজও বলতে চাই না। থাক না একটু রহস্যময়তা। রশীদ করীম বলতেন খুব কথাটা, 'সব সময় কিছু আড়াল রাখবে। সব বলে দেবে না। একটু রহস্য রাখা ভালো।'
হ্যাঁ, এই রহস্যময়তা তাঁর লেখারও একটি প্রধান অনুষঙ্গ। ছোটগল্প লিখেছেন খুব কম, কিন্তু সেখানেও তিনি স্বতন্ত্র ও উজ্জ্বল। সেখানে তাঁর এই রহস্যময়তার দিকটা বেশ চোখে পড়ে। উপন্যাসেও আছে এই প্রবণতা। একটু হেঁয়ালি, কিছুটা ইঙ্গিতময়তার ভেতর দিয়ে এগোয় তাঁর লেখা। পাঠককে অনিবার্যভাবে সে খেলায় জড়িয়ে পড়তে হয়। লেখকের সঙ্গে পাঠক এগোয় বটে, সব সময় যে সে রহস্যের উন্মোচন সে করতে পারে, এমন কথা বলা যাবে না। আর সেটাই রশীদ করীমের অন্যতম এক শিল্পবৈশিষ্ট্য। তিনি চিন্তার খোরাক উসকে দেন। পাঠক নিজের মতো ভেবে নিক না ব্যাপারটা। এটা তাঁর প্রথম উপন্যাস 'উত্তম পুরুষ' থেকে শুরু করে শেষ উপন্যাস 'লাঞ্চ বঙ্'-এ সমানভাবে লক্ষ করা যাবে। এমনিতে তিনি উপন্যাস লিখেছেন মোটে ১২টি। 'উত্তম পুরুষ', 'প্রসন্ন পাষাণ', 'আমার যত গ্লানি', 'প্রেম একটি লাল গোলাপ', 'সাধারণ লোকের কাহিনী', 'একালের রূপকথা', 'শ্যামা', 'বড়ই নিঃসঙ্গ', 'মায়ের কাছে যাচ্ছি', 'চিনি না' ও 'পদতলে রক্ত'।
'উত্তম পুরুষ'-এর কথাই ধরা যাক। বিত্তবান পরিবারের মেয়ে সেলিনা আমাদের উত্তম পুরুষ নায়ক শাকেরের সঙ্গে যে কাণ্ডকীর্তি করল, তার কি এককথায় সরল কোনো ব্যাখ্যা করা যাবে? সেলিনা কি আদৌ ওর প্রেমে পড়েছিল? সেটা যেমন একবাক্যে হ্যাঁ-না বলা যাবে না, তেমনি সেলিনা নায়ককে রাতের অন্ধকারে ঘরে ডেকে এনে কেন নিজের পরিবারের কাছে লম্পট সাজাল, সেটা প্রেমের না অপ্রেমের, তা নিয়েও শেষ পর্যন্ত একটা ধন্দে থাকতে হয়। তাই বলে রশীদ করীমের উপন্যাসকে কোনো অর্থেই দুর্বোধ্য বলা চলবে না। তাঁর গদ্য যেমন নির্মেদ, তেমনি রসযুক্ত। ভঙ্গিটা খুব সহজ-সরল। আমি দেখছি, আবারও তাঁর উপন্যাসের শিল্পবৈশিষ্ট্য খুঁজতে বসে গেছি।
তো, আমাদের এই আড্ডার পর্যায়েই চা-নাশতা এসে গেল। কোনো দিন তাঁর বাসা থেকে না খেয়ে আসা হয়নি। আর সে পরিবেশনাটার মধ্যেও পাওয়া যাবে আভিজাত্যের একটা ব্যাপার। আর আমার বেলায় অনিবার্যভাবেই উপস্থিত থাকবে ডালপুরি। সেদিনও ছিল। ট্রেতে খাবারগুলো যখন আমাদের গল্প বলার সুযোগে শেষযাত্রার আগের ওমটুকু নিচ্ছিল, তখনই তিনি তাড়া দিয়ে উঠলেন, 'এই, তোমরা খাচ্ছ না কেন? খাও।' আমার দিকে তাকিয়ে আরো একটু বাড়তি তাগিদ, 'খাও। তোমার ডালপুরি।'
'আপনি খাবেন না?' জানি তো পুরিটা কার বেশি প্রিয়।
'উহু!' আমার খাওয়া নিষেধ।' খুব দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন তিনি। এখন মনে পড়ছে না, এই দৃঢ়তাটুকু তিনি সেদিন সুরক্ষা করতে পেরেছিলেন কি না! খেতে খেতেই এলোমেলো কিছু কথা, খাপছাড়া গোছের, তারপর হঠাৎ করেই বললেন, 'বুঝলে, খুব ক্লান্ত লাগছে।' আমরা দুজনই ব্যস্ত ভঙ্গিতে উঠলাম। তিনি যেন উঠে আসতে চাইলেন আমাদের সঙ্গে। তারপর আবার হেলান দিয়ে বসে হাতটা উঁচিয়ে শুভাশিস জানালেন, 'আচ্ছা। ভালো থেকো।'
No comments