ভারত যেখানে ফুটবলের ব্রাজিল by সামীউর রহমান
দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই শুরু হচ্ছে আজ। বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের সব কটি দেশ অংশ নিচ্ছে এবারেরআসরে।বরাবরেরমতোঅন্যতমফেভারিটেরট্যাগলাগিয়েদিলি্লগেছেবাংলাদেশ।টুর্নামেন্টশুরুরদিনউপমহাদেশের ফুটবলের অবস্থা এবং আগের আসরগুলো নিয়ে লিখেছেন সামীউর রহমানলাতিন ফুটবলের ছন্দশৈলী নেই, ইউরোপের গতিশীলতাও এখানে অনুপস্থিত। আফ্রিকান ফুটবলের বন্য শক্তির প্রদর্শনীও খুঁজে পাওয়া যাবে না, দেখা যাবে না বড়
দলকেও চমকে দেওয়ার 'এশিয়ান' দুঃসাহস। এখানে ভালো করলেও বড় কোনো ক্লাব ডেকে নেবে না চুক্তির জন্য। এখানে নেই বিপুল অথর্ পুরস্কারও।
তার পরও বছর দুই পর পর দক্ষিণ এশিয়ায় একটা আঞ্চলিক ফুটবল টুর্নামেন্ট হয়। খাবার হিসেবে ডালকে যেমন বলা হয় 'গরিবের মাংস', তেমনি সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের দৈন্য ঢাকতে আদর করে একটি ছেলেভোলানো নাম দেওয়া হয়েছে, 'দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ'।
অতীতের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আর পারস্পরিক অবিশ্বাস, সামরিক দ্বৈরথের ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতি এবং জনসংখ্যার আধিক্যসহ নানা কারণেই দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে গড়ে ওঠেনি ফুটবলের অবকাঠামো। যদিও এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে পুরনো ক্লাব ভারতবর্ষেই। আধুনিক সময়ে খেলা হিসেবে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার পারদটা চড়ায়, ফুটবলে খানিকটা ভাটার টান। এই অঞ্চলের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি কিংবা আয়তনে বড় দেশ, তকমাটা যা-ই হোক সেটা ভারতের গায়ে। যেখানে ক্রিকেটের স্থান ধর্মের পাশাপাশি। তার পরও কিন্তু ফুটবলের দর্শক মরে যায়নি। ইস্ট বেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচে এখনো দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায় কলকাতা, ম্যাচের ফলের প্রভাব পড়ে ইলিশ চিংড়ির বাজারে। যদিও ডেম্পো, চার্চিল ব্রাদার্স, সালগাঁওকারের আগমনে সর্বভারতীয় আই লিগে সবুজ-মেরুন কিংবা লাল-হলুদরা অনেকটাই কোণঠাসা। বাংলাদেশেও আবাহনী-মোহামেডানের উন্মাদনা যেন বিগত যৌবনা সুন্দরীর স্মৃতি রোমন্থন। পাতানো ম্যাচ কেলেঙ্কারি, মানহীন আফ্রিকান ফুটবলারদের ছড়াছড়িতে এ পাললিক ব-দ্বীপের ফুটবলও হারিয়েছে জৌলুস। তার পরেও ফিফার সর্বশেষ র্যাংকিং অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ান অর্থনৈতিক জোটভুক্ত আট দেশের মধ্যে বাংলাদেশই সবার ওপরে। কিন্তু আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় প্রতিবেশী ভারতের কাছে বেশির ভাগ সময়েই মাথা নত করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা, সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনসহ নানা মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে গঠিত হয়েছিল দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা 'সার্ক'। আঞ্চলিক জোট প্রতিষ্ঠার প্রায় এক যুগ পরে সদস্য দেশগুলোর ফুটবল সংস্থাগুলোকে নিয়ে গঠিত হয় দক্ষিণ এশীয় ফুটবল ফেডারেশন। তার আগে থেকেই অবশ্য সদস্য দেশগুলোর মধ্যে 'সার্ক গোল্ড কাপ' নামে একটি আঞ্চলিক ফুটবল প্রতিযোগিতার শুরু হয়েছিল। ১৯৯৩ ও ১৯৯৫ সালের সার্ক গোল্ড কাপ ১১৯৭ থেকে বদলে যায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। শুরু থেকেই এ টুর্নামেন্টটি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের একটি মাপকাঠিতে পরিণত হয়েছে। দুই বছর অন্তর আয়োজিত এ টুর্নামেন্টের সফলতম দল ভারত, বিগত ৯ আসরের পাঁচবারই শিরোপা জিতেছে তারা। এ ছাড়া একবার করে শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা।
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতায় জোটভুক্ত দেশগুলোর ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণে নানাবিধ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আসর সাফ গেমসের (বর্তমানে এসএ গেমস) পথচলা শুরু হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। কাঠমান্ডু গেমসের পাঁচটি ডিসিপ্লিনের একটি ছিল ফুটবল। সাফ গেমস ফুটবলের বাইরে আলাদা একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট প্রথম আলোর মুখ দেখে ১৯৯৩ সালে। পাকিস্তানের লাহোরে শুরু হয় সার্ক গোল্ড কাপের পথচলা। প্রথম আসরে অংশ নিয়েছিল মাত্র চারটি দল_স্বাগতিক পাকিস্তানের পাশাপাশি ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল। লিগভিত্তিক এ টুর্নামেন্টে ৩ খেলায় ২ জয় ও ১টি ড্র থেকে ৭ পয়েন্ট সংগ্রহ করে শিরোপা জিতে নেয় ভারত। দুই বছর পর শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে বসে সার্ক গোল্ড কাপের দ্বিতীয় আসর, এবার অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা ৪ থেকে বেড়ে হয় ৬। সার্কের সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ৭ হলেও মালদ্বীপ শেষ মুহূর্তে নাম প্রত্যাহার করে নেয়। সেবারই প্রথম সার্ক ফুটবলে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ। এ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ১-০ গোলে হারলেও পরের ম্যাচে পাকিস্তানকে ২-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নক আউট পর্বে পা রেখেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেমিফাইনালে ভারতের সঙ্গে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে গোলশূন্য ড্রর পর পেনাল্টি শুট-আউটে ৪-২ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয় বাংলাদেশকে। ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের 'সাডেন ডেথে' শরথ ওয়েলেগের গোলে শিরোপা ঘরে তোলে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা।
কাঠমান্ডুতে তৃতীয় আসরে এসে সার্ক গোল্ড কাপ হয়ে যায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। ৬ দলের এ টুর্নামেন্টে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। মালদ্বীপের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্রর পর ভারতের কাছে ৩-০ গোলের হারে গ্রুপ পর্ব থেকেই বাংলাদেশ দলকে ধরতে হয় বাড়ির পথ। ফাইনালে মালদ্বীপকে ৫-১ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সেরা দলের খেতাব জয় করে ভারত। ১৯৯৯ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের পরের আসর বসে ভারতের গোয়ায়। এ টুর্নামেন্ট দিয়েই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সমীহ করার মতো দলে পরিণত হয়। গ্রুপ পর্বে ভারতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করলেও পাকিস্তানকে ৪-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। এরপর সেমিফাইনালে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি। কিন্তু শেষ হাসিটা থেকে যায় স্বাগতিকদের ঠোঁটেই। ব্রুনো কোটিনহো ও বাইচুং ভুটিয়ার গোলে বাংলাদেশকে ২-০ গোলে হারিয়ে তৃতীয়বারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করে শিরোপা ধরে রাখে ভারত।
১৯৯৯-এর পর চার বছরের বিরতিতে ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ গড়ায় ঢাকায়, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে আলোকিত অধ্যায়টা রচিত হয়েছিল এ আসরেই। বি গ্রুপে মালদ্বীপ ও নেপালকে ১-০ এবং ভুটানকে ৩-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে সাডেন ডেথে ভারতকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে মালদ্বীপের মুখোমুখি হয় স্বাগতিকরা। সাফ ফুটবলে ভারতের বিপক্ষে সেটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র জয়। ফাইনালে মালদ্বীপের সঙ্গে ম্যাচটি নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে শেষ হয় ১-১ সমতায়। টাইব্রেকারে মালদ্বীপকে ৫-৩ গোলে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপার স্বাদ পায় বাংলাদেশ।
শিরোপাজয়ী দল হিসেবেই ২০০৫ সালের সাফ ফুটবল খেলতে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে পা রেখেছিল বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে ভারতের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেও গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে এ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। স্বাগতিক পাকিস্তানকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে আবারও ভারতের মুখোমুখি হয় শিরোপাধারীরা, কিন্তু ভারতের কাছে ফাইনালে ২-০ গোলের হারে শেষ পর্যন্ত শিরোপা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে যৌথ আয়োজক ছিল মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা। সেই আসরে যেন পুনরাবৃত্তি হয় ১৯৯৭ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। দুর্বল ভুটান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে ড্র ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল বাংলাদেশ। দুই বছর পর পর আয়োজনের কথা থাকলেও ২০০৫-এর পরের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ হয় ২০০৮ সালে। সেই ঘাটতি পুষিয়ে নিতেই ২০০৯ সালে আবারও আয়োজন করা হয় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, দ্বিতীয়বারের মতো স্বাগতিক হয় বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে ভুটান ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই সেমিফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতীয় অনূর্ধ্ব ২৩ দলের কাছে ১-০ গোলের হার ফাইনালে দর্শক বানিয়ে দেয় স্বাগতিকদের। ফাইনালে গোলশূন্য সমতার পর টাইব্রেকারে মালদ্বীপকে ৩-১ গোলে হারিয়ে পঞ্চমবারের মতো 'দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ' জয় করে ভারত, বজায় রাখে তাদের নিরঙ্কুশ শ্রেষ্ঠত্ব।
রোল অব অনার
তার পরও বছর দুই পর পর দক্ষিণ এশিয়ায় একটা আঞ্চলিক ফুটবল টুর্নামেন্ট হয়। খাবার হিসেবে ডালকে যেমন বলা হয় 'গরিবের মাংস', তেমনি সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের দৈন্য ঢাকতে আদর করে একটি ছেলেভোলানো নাম দেওয়া হয়েছে, 'দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ'।
অতীতের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আর পারস্পরিক অবিশ্বাস, সামরিক দ্বৈরথের ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতি এবং জনসংখ্যার আধিক্যসহ নানা কারণেই দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে গড়ে ওঠেনি ফুটবলের অবকাঠামো। যদিও এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে পুরনো ক্লাব ভারতবর্ষেই। আধুনিক সময়ে খেলা হিসেবে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার পারদটা চড়ায়, ফুটবলে খানিকটা ভাটার টান। এই অঞ্চলের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি কিংবা আয়তনে বড় দেশ, তকমাটা যা-ই হোক সেটা ভারতের গায়ে। যেখানে ক্রিকেটের স্থান ধর্মের পাশাপাশি। তার পরও কিন্তু ফুটবলের দর্শক মরে যায়নি। ইস্ট বেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচে এখনো দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায় কলকাতা, ম্যাচের ফলের প্রভাব পড়ে ইলিশ চিংড়ির বাজারে। যদিও ডেম্পো, চার্চিল ব্রাদার্স, সালগাঁওকারের আগমনে সর্বভারতীয় আই লিগে সবুজ-মেরুন কিংবা লাল-হলুদরা অনেকটাই কোণঠাসা। বাংলাদেশেও আবাহনী-মোহামেডানের উন্মাদনা যেন বিগত যৌবনা সুন্দরীর স্মৃতি রোমন্থন। পাতানো ম্যাচ কেলেঙ্কারি, মানহীন আফ্রিকান ফুটবলারদের ছড়াছড়িতে এ পাললিক ব-দ্বীপের ফুটবলও হারিয়েছে জৌলুস। তার পরেও ফিফার সর্বশেষ র্যাংকিং অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ান অর্থনৈতিক জোটভুক্ত আট দেশের মধ্যে বাংলাদেশই সবার ওপরে। কিন্তু আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় প্রতিবেশী ভারতের কাছে বেশির ভাগ সময়েই মাথা নত করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা, সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনসহ নানা মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে গঠিত হয়েছিল দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা 'সার্ক'। আঞ্চলিক জোট প্রতিষ্ঠার প্রায় এক যুগ পরে সদস্য দেশগুলোর ফুটবল সংস্থাগুলোকে নিয়ে গঠিত হয় দক্ষিণ এশীয় ফুটবল ফেডারেশন। তার আগে থেকেই অবশ্য সদস্য দেশগুলোর মধ্যে 'সার্ক গোল্ড কাপ' নামে একটি আঞ্চলিক ফুটবল প্রতিযোগিতার শুরু হয়েছিল। ১৯৯৩ ও ১৯৯৫ সালের সার্ক গোল্ড কাপ ১১৯৭ থেকে বদলে যায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। শুরু থেকেই এ টুর্নামেন্টটি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের একটি মাপকাঠিতে পরিণত হয়েছে। দুই বছর অন্তর আয়োজিত এ টুর্নামেন্টের সফলতম দল ভারত, বিগত ৯ আসরের পাঁচবারই শিরোপা জিতেছে তারা। এ ছাড়া একবার করে শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা।
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতায় জোটভুক্ত দেশগুলোর ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণে নানাবিধ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আসর সাফ গেমসের (বর্তমানে এসএ গেমস) পথচলা শুরু হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। কাঠমান্ডু গেমসের পাঁচটি ডিসিপ্লিনের একটি ছিল ফুটবল। সাফ গেমস ফুটবলের বাইরে আলাদা একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট প্রথম আলোর মুখ দেখে ১৯৯৩ সালে। পাকিস্তানের লাহোরে শুরু হয় সার্ক গোল্ড কাপের পথচলা। প্রথম আসরে অংশ নিয়েছিল মাত্র চারটি দল_স্বাগতিক পাকিস্তানের পাশাপাশি ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল। লিগভিত্তিক এ টুর্নামেন্টে ৩ খেলায় ২ জয় ও ১টি ড্র থেকে ৭ পয়েন্ট সংগ্রহ করে শিরোপা জিতে নেয় ভারত। দুই বছর পর শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে বসে সার্ক গোল্ড কাপের দ্বিতীয় আসর, এবার অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা ৪ থেকে বেড়ে হয় ৬। সার্কের সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ৭ হলেও মালদ্বীপ শেষ মুহূর্তে নাম প্রত্যাহার করে নেয়। সেবারই প্রথম সার্ক ফুটবলে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ। এ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ১-০ গোলে হারলেও পরের ম্যাচে পাকিস্তানকে ২-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নক আউট পর্বে পা রেখেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেমিফাইনালে ভারতের সঙ্গে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে গোলশূন্য ড্রর পর পেনাল্টি শুট-আউটে ৪-২ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয় বাংলাদেশকে। ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের 'সাডেন ডেথে' শরথ ওয়েলেগের গোলে শিরোপা ঘরে তোলে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা।
কাঠমান্ডুতে তৃতীয় আসরে এসে সার্ক গোল্ড কাপ হয়ে যায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। ৬ দলের এ টুর্নামেন্টে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। মালদ্বীপের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্রর পর ভারতের কাছে ৩-০ গোলের হারে গ্রুপ পর্ব থেকেই বাংলাদেশ দলকে ধরতে হয় বাড়ির পথ। ফাইনালে মালদ্বীপকে ৫-১ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সেরা দলের খেতাব জয় করে ভারত। ১৯৯৯ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের পরের আসর বসে ভারতের গোয়ায়। এ টুর্নামেন্ট দিয়েই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সমীহ করার মতো দলে পরিণত হয়। গ্রুপ পর্বে ভারতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করলেও পাকিস্তানকে ৪-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। এরপর সেমিফাইনালে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি। কিন্তু শেষ হাসিটা থেকে যায় স্বাগতিকদের ঠোঁটেই। ব্রুনো কোটিনহো ও বাইচুং ভুটিয়ার গোলে বাংলাদেশকে ২-০ গোলে হারিয়ে তৃতীয়বারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করে শিরোপা ধরে রাখে ভারত।
১৯৯৯-এর পর চার বছরের বিরতিতে ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ গড়ায় ঢাকায়, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে আলোকিত অধ্যায়টা রচিত হয়েছিল এ আসরেই। বি গ্রুপে মালদ্বীপ ও নেপালকে ১-০ এবং ভুটানকে ৩-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে সাডেন ডেথে ভারতকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে মালদ্বীপের মুখোমুখি হয় স্বাগতিকরা। সাফ ফুটবলে ভারতের বিপক্ষে সেটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র জয়। ফাইনালে মালদ্বীপের সঙ্গে ম্যাচটি নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে শেষ হয় ১-১ সমতায়। টাইব্রেকারে মালদ্বীপকে ৫-৩ গোলে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপার স্বাদ পায় বাংলাদেশ।
শিরোপাজয়ী দল হিসেবেই ২০০৫ সালের সাফ ফুটবল খেলতে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে পা রেখেছিল বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে ভারতের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেও গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে এ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। স্বাগতিক পাকিস্তানকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে আবারও ভারতের মুখোমুখি হয় শিরোপাধারীরা, কিন্তু ভারতের কাছে ফাইনালে ২-০ গোলের হারে শেষ পর্যন্ত শিরোপা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে যৌথ আয়োজক ছিল মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা। সেই আসরে যেন পুনরাবৃত্তি হয় ১৯৯৭ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। দুর্বল ভুটান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে ড্র ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল বাংলাদেশ। দুই বছর পর পর আয়োজনের কথা থাকলেও ২০০৫-এর পরের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ হয় ২০০৮ সালে। সেই ঘাটতি পুষিয়ে নিতেই ২০০৯ সালে আবারও আয়োজন করা হয় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, দ্বিতীয়বারের মতো স্বাগতিক হয় বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে ভুটান ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই সেমিফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতীয় অনূর্ধ্ব ২৩ দলের কাছে ১-০ গোলের হার ফাইনালে দর্শক বানিয়ে দেয় স্বাগতিকদের। ফাইনালে গোলশূন্য সমতার পর টাইব্রেকারে মালদ্বীপকে ৩-১ গোলে হারিয়ে পঞ্চমবারের মতো 'দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ' জয় করে ভারত, বজায় রাখে তাদের নিরঙ্কুশ শ্রেষ্ঠত্ব।
রোল অব অনার
No comments