টাকায় ছয় ফুলকপি-কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য মেলে না
বাজারকে অনেকে দুধারী ছুরির সঙ্গে তুলনা করেন। দুধারী ছুরি যেতেও কাটে, আসতেও কাটে। বাজার তেমনি এক ব্যবস্থা। পণ্যের দাম কমলেও বিপদ, বাড়লে তো বিপদের সীমা থাকে না। বিশেষত, কৃষিপণ্যের বেলায় এটি এক অনিবার্য বাস্তবতা। কৃষিপণ্য বাজারজাত প্রক্রিয়ায় এর উৎপাদক অর্থাৎ কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন কি-না তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। উৎপাদন খরচ উঠিয়ে বিক্রীত পণ্য থেকে লাভ থাকছে কি-না সেটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এটি না ঘটলে কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আবার পণ্যমূল্য যদি অতিরিক্ত বেড়ে যায়, তবে ক্রেতাদের মাথায় হাত পড়বে। ক্রয়সীমার বাইরে গিয়ে খাদ্যপণ্য না কিনতে পারলে জনজীবনে তার বহুমুখী প্রভাব পড়ে। তবে বাজারের সাধারণ যে নিয়ম তাতে পণ্যের মূল্য যদি ন্যায্য থাকে তবে উৎপাদক ও ভোক্তা কারও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীরা যদি তৎপর হয়ে ওঠে তবে উৎপাদক ও ভোক্তা দু'পক্ষই ঠকে। একদিকে দেখা যায়, কৃষক ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করতে পারছেন না, অন্যদিকে ক্রেতাকেও বেশি দাম দিয়ে পণ্যটি কিনতে হচ্ছে। গ্রামে কৃষক যে টাকা পাচ্ছেন তার বহুগুণ বেশি দামে শহরে ক্রেতা পণ্যটি কিনছেন। অতিরিক্ত মূল্য আত্মসাৎ করছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। অধিকাংশ কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে এ নিয়ে লেখালেখিও হয়। বাজার পরিচালনার কার্যকর নীতি না থাকায় পণ্যের ন্যায্যমূল্য অধিকাংশ সময়েই বাস্তবায়িত হতে পারে না। এ অবস্থায় কোনো পণ্যের ফলন বেশি হলে অবস্থা হয় শোচনীয়। অতিরিক্ত উৎপাদন অনেক সময়ই কৃষকের জন্য দুঃখ বয়ে নিয়ে আসে। প্রার্থিত মূল্য দূরের কথা, নামমাত্র দামে পণ্য বিক্রি করতেও তাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। এ পরিস্থিতিতে সরকারি উদ্যোগে খাদ্যপণ্য হিমাগারে সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে তার প্রত্যক্ষ উপকার কৃষক পেতে পারেন। কিন্তু যদি তেমন ব্যবস্থা না থাকে তবে কৃষকের ক্ষতি অনিবার্য হয়ে ওঠে। এ বছর ফুলকপির ক্ষেত্রে এমন ঘটনাই ঘটছে। মেহেরপুরে টাকায় ছয়টি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য ঢাকার বাজারে ফুলকপির দামের সঙ্গে মেহেরপুরের বাজারের কোনো তুলনা হয় না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কৃষকের যে প্রত্যক্ষ ক্ষতি সেটি পুষিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব কার? নাকি ক্ষতির দায় শুধু কৃষককেই বহন করতে হবে?
No comments