জেলা পরিবহন ব্যবস্থায় নৈরাজ্য-আরটিসির অবৈধ সভাপতি চট্টগ্রামের ডিসি ফয়েজ! by নূপুর দেব

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহম্মদ দীর্ঘ ১৩ মাস ধরে অবৈধভাবে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির (আরটিসি) সভাপতি পদে বসে আছেন। প্রতি তিন বছর অন্তর আরটিসির নতুন কমিটি গঠনের নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নেওয়া বেশির ভাগ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় জেলায় সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় নেমে এসেছে


নৈরাজ্য। সীমাহীন দুর্ভোগ আর হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীসহ পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
অবৈধভাবে আরটিসি সভাপতির পদ ধরে রাখার ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহম্মদের বক্তব্য জানতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। একই বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আরটিসির সভায় অনেক সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে না। সড়কে অনিয়ম দূর করতে নিয়মিত মোবাইল টিম গঠিত হলেও তারা কোনোই ব্যবস্থা নিচ্ছে না। জেলা প্রশাসক নির্দেশ দিলেই সেগুলো বাস্তবায়ন হতো। কিন্তু কেন তিনি নির্দেশ দিচ্ছেন না তা জানি না।'
জানা গেছে, চলতি বছরের ৮ এপ্রিল জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আরটিসির সভায় পাঁচটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্তগুলো হলো- রাস্তায় নম্বরবিহীন অবৈধ গাড়ি চলাচল প্রতিরোধে অধিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা, আরটিসি পুনর্গঠনে টিও লাইসেন্সধারী মালিক সমিতি (মালবাহী) পরিবহনের জন্য একজন ও শ্রমিক ইউনিয়ন (মালবাহী) পরিবহনের জন্য একজন প্রতিনিধি মনোনয়নে বায়োডাটা সংগ্রহের জন্য তাগিদপত্র প্রেরণ, জমা করা ৪৬৭১টি সিএনজি অটোরিকশার আবেদন থেকে ভাড়ায়চালিত সব আবেদনকারীকে রেজিস্ট্রেশন প্রদান, জেলায় চলাচলকারী সিএনজি অটোরিকশা ফিটনেস সনদ গ্রহণের জন্য বিআরটিএ কার্যালয়ে যাওয়ার পথে মামলা না করার সুপারিশ এবং গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সরকারি রাজস্ব সঠিকভাবে পাওয়া গেলে রুট পারমিট ইস্যু করা। গত ৪ জুলাই ফয়েজ আহম্মদের সভাপতিত্বে আরটিসির আরেকটি সভা হলেও আগের সভায় গৃহীত পাঁচটি সিদ্ধান্তের একটিও আলোর মুখ দেখেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শুধু তাই নয়, ৪ জুলাইয়ের সভায় আলোচনার পর জেলা নম্বরের সিএনজি অটোরিকশার সামনে হলুদ এবং পেছনে সবুজ রং লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়। এটি বাস্তবায়নে প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসন। তা-ও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একই সভায় আরো পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি।
সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়া প্রসঙ্গে মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু বলেন, 'জেলায় বৈধ গাড়ির চেয়ে অবৈধ গাড়ির সংখ্যা বেশি। দেখা গেছে, ফিটনেস ও রুট পারমিটসহ বিভিন্ন যথাযথ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও বৈধ অনেক গাড়ির চালক নানাভাবে হয়রানি শিকার হন। অথচ অবৈধ গাড়ি চলাচল করলেও প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা নেই। প্রশাসনের নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।'
জানা যায়, ২০০৮ সালের ৩ জুলাই জেলা আরটিসির সর্বশেষ কমিটি গঠিত হয়। ফয়েজ আহম্মদ ২০১০ সালের ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন। ২০১১ সালের ৩ জুলাই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু দীর্ঘ ১৩ মাসেও কমিটি গঠনের কোনো উদ্যোগ নেই। ৯ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির সদস্য সচিব বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন।
পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চট্টগ্রাম মহানগরীতে কোন সড়কে কয়টি যানবাহন চলাচল করবে (সিলিং) তা নির্ধারিত আছে। অথচ জেলায় বছরের পর বছর গণপরিবহন চলাচল করলেও এখনো সিলিং নির্ধারণ হয়নি।
জেলায় প্রায় ৫০টি রুটে যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে মাত্র ১৩টি রুটে চলাচলের বৈধ অনুমতি রয়েছে। বাকি ৩৭টি রুটে পারমিট নেই। কিন্তু এসব রুটে অবাধে বাস-মিনিবাস ও হিউম্যান হলার চলাচল করলেও জেলা প্রশাসকের তা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।
এ ছাড়া সড়কের ওপরে আড়াআড়ি করে গাড়ি রাখা, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চলাচল, পর্যাপ্ত বাস টার্মিনাল না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে পরিবহন ব্যবস্থায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.